শ্মশানের সব কাজ শেষে যখন আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী ঘরে ফেরার পথে ছেলেটি বাবাকে শোয়ানো খাট থেকে একটা ফুল তুলে নিজের মানি ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।
শ্মশান থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকান। একটা চা ,সিগারেট চাইলো।
কৌতূহলী আত্মীয় স্বজন শুধু দেখে যাচ্ছে ছেলেটিকে। জাস্ট নেওয়া যাচ্ছে না।কোনো পারলৌকিক কাজ কর্মের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, কোনো নিয়ম মানার বালাই নেই!! অথচ তার বাবা নাকি ছেলে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করতো।
একজন দূর সম্পর্কের আত্মীয় আর কৌতূহল চাপতে না পেরে ছেলেটির সঙ্গে কথা বলতে চায়ের দোকানে যায়।
কদিন থাকবে তো?
না, আজ দুপুরেই ফ্লাইট। চলে যাবো।
এবাবা! এইসময় কেউ এইভাবে যায় নাকি!
বাবা বলেছিল, এসব না মানতে। বাবা যা চেয়েছিল তার অবর্তমানে সেটাই করবো, তবে সেটা কাউকে না জানিয়ে।
সেটা হলেও, কিছু তো মানতে হয়!
যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন অনেক কিছু মানা উচিত ছিল আমার ,সেটাই মানি নি। আবার সেটা বাবাও চাইতো না।পরিষ্কার বলেই দিত দেওয়া নেওয়া সম্পর্ক তোর সঙ্গে নেই আমার। আমার পক্ষেও ওতো দূর থেকে সব কিছু সামলানো সম্ভব নয় ,সেটাও বুঝতে পারতো। আসলে দুজনেই একটু বেশি মাত্রায় স্বাধীনচেতা ছিলাম।
কথা বার্তার মাঝে ছেলেটির চোখ ছলছল করে ওঠে, রুমাল দিয়ে মুছে নেয়।
আত্মীয় ভদ্রলোক একটু নিশ্চিত হয়ে বললেন–যাক একটু অন্তত কাঁদতে দেখলাম তোমাকে। সেটাও তো দেখি নি! সবটাই বড্ড অন্যরকম।
চোখে সিগারেটের ছাই ঢুকে গিয়েছিল। কান্না এইভাবে আসে না। বড়ো পিসিকে দেখলাম একবার বাবার খাট ধরে কাঁদতে, পরক্ষণেই আর একজনের সঙ্গে অন্য কিছু নিয়ে খোশগল্পে মত্ত।
তোমার বাবা বলতেন তুমি অন্য রকম। সেটা বুঝলাম আজ। তবে ভালো কিছু নয়, খারাপটাই, বলতে বলতে উনি ও চোখ মুছলেন।
ছেলেটি বলে উঠলো–এটাও ওই irritant tear। সিগারেটের ধোঁয়ায় জন্য। তিন রকমের চোখের জল হয়। Basal, reflex, আর ইমোশনাল। Basal হলো সব সময় চোখকে ভিজে রাখে, চোখকে ভালো রাখে। পেঁয়াজ কাটলে, কোনো কিছু চোখে পড়লে যে জল বেরোয় সেটা রিফ্লেক্স tear। আর শারীরিক মানসিক যন্ত্রণার জন্য ইমোশনাল tear।
যাদের টেস্টোস্টেরন বেশি, তাদের সহজে ইমোশনের ক্ষেত্রে চোখে জল আসে না। একই ভাবে মেয়েদের prolactin হরমোনের জন্য কান্না সহজেই আসে। কাঁদলে শরীর মন শান্ত হয়। Endorphin রিলিজ হয়, যা শরীর মনকে শান্ত করে।
আমার মত দুর্ভাগাদের শান্ত করার কেউ নেই যে।
চলি। দমদম যেতে অনেক সময় লাগবে।
বাবা আমার বন্ধু ছিল। বন্ধু হারানোর ব্যথা আপনি বা আপনারা বুঝবেন না।
চলি…