গুঁফো ডাক্তার চেম্বারে বসে আছেন এমন সময় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো রোরুদ্যমানা একজন মহিলা ওনার বরের কাঁধে ভর দিয়ে চেম্বারে ঢুকে ভয়ানক হাঁফাতে লাগলেন ।
ওনার স্বামী বললেন “টিটেনাস”
ডাক্তার এই দীর্ঘ জীবনে টিটেনাস রোগীকে অমন হেঁটে হেঁটে আসতে দ্যাখেন নি, তাই চশমা ভুরু সব টপকে ওনার চোখ কপালে উঠে গেলো ।
ভদ্রমহিলা বললেন “আমার পায়ে জং-ধরা পেরেক ফুটে গেছে – ও ডাক্তারবাবু আমার কি টিটেনাস হবে?”
ডাক্তার এতোক্ষণে দম ফেলার ফুরসৎ পান
“আরে আপনারা দাঁড়িয়ে ক্যানো? বসুন বসুন …”
বেশি কিছু বলার আগে জেনে নিই টিটেনাস রোগে কী কী হয় এবং কতটা ক্ষতিকর এই রোগ।
এই রোগের জীবাণুর নাম ক্লস্ট্রিডিয়া টিটানি। এরা স্বাভাবিকভাবে মল দ্বারা দূষিত মাটি, নোংরা পাথর, রাস্তা ইত্যাদিতে বাসা বাঁধে। সাধারণত মলের মধ্যেই এই জীবাণুর অবস্থান। এই রোগ শরীরে ঢুকলে চার থেকে পনেরো দিনের মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। এতে গোটা শরীরের মাংসপেশির খিঁচুনি আরম্ভ হয় এবং এতটাই শক্তিশালী এই খিঁচুনি যে শরীরের হাড়গোড় পর্যন্ত ভেঙে যায় – শেষ পর্যন্ত বুকের পেশি এতটাই সঙ্কুচিত হয়ে যায় যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। রোগটি বড়োই ভয়ংকর। তাই আমরা কেটে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে ইনজেকশন নিতে ছুটি।
সাধারণ টিটেনাস ইনজেকশনের মাধ্যমে আমাদের শরীরে অক্ষম জীবাণুদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দেখে দেখে শরীর ওদের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আসলে আমাদের শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে।
যার আগে ভ্যাকসিন নেওয়াই নেই, কাটার পরে একটা ইনজেকশন তার কিন্তু প্রায় কোনো কাজই করে না। প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আরেকটা এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন। সুতরাং প্রতি দশ বছরে একটা করে বুস্টার ডোজ ইনজেকশন নিতেই হবে।
যদি আগের সব ডোজ ঠিকমতো না নেওয়া থাকে অথবা ক্ষতটা মাটি বা রাস্তার বা পায়খানার মলে দূষিত হয়ে থাকে, তা হলে টিটেনাস ইনজেকশনের ডোজ আরম্ভ করতে হবে এবং যে হেতু এই ওষুধ শরীরের ভেতর প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলতে বেশ কিছু দিন সময় নেয় তাই বাইরে থেকে তৈরি করা ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা রেডিমেড প্রতিরোধক অন্য একটা ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
টিটেনাস জীবাণু শরীরে ঢুকলে সাধারণত দশ দিনের মাথায় রোগের লক্ষণ প্রকাশ করতে শুরু করে। এই রোগে প্রথমে চোয়ালের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। তারপর মুখের মাংসপেশির সঙ্কোচন হয়ে বীভৎস একটি হাসির মতো মুখের আকৃতি হয়ে ওঠে। এই হাসির পোশাকি নাম রাইশাস সার্ডোনিকাস। তার পরে মৃত্যুহদূতের মতো হাজির হয় সমস্ত মাংসপেশির খিঁচুনি – রোগীর হাড়গোড় সব মাংসপেশির সঙ্কোচনে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
সুতরাং শিশুর জন্মের পর থেকেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলুন। কাটার আগেই ইনজেকশন দিন। নিজেও নিয়মিত ইনজেকশন নিন। মনে রাখবেন প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যানন কিওর।
কিছু প্রশ্ন রয়ে গেল, যদি উত্তর দেন তাহলে বিষয়টা আরও শচছ হয়ে যাবে। ডঃ ঘোষ।
১) জং ধরা লোহায় কাটলে কি টিটেনাস হয় না?
২) দশবছরে একটি করে বুস্টার ডোজ বলতে কি আপনি টিটেনাস টকসাইড ইনজেকশনর প্রথম ডোজ, ছয় সপ্তাহে দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাসে তৃতীয় ডোজ বুঝিয়ে ছেন?
৩) যদি আগের সব ডোজ ঠিকমতো না নেওয়া থাকে অথবা ক্ষতটা মাটি বা রাস্তার বা পায়খানার মলে দূষিত হয়ে থাকে তাহলে কি করতে হবে, ওনুচছেদ টি যদি আর একটু সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেন তাহলে বিশেষ উপকৃত হই। নমস্কার নেবেন।
আমি আপনার জি মেইলে উত্তর দিয়েছি । দয়া করে একটু দেখে নেবেন ।
এই প্রশ্নের সম্পুর্ন উত্তর আমিও জানতে চাই।
আমার পায়ে পেরেক ঢুকছে আজ ৬দিন,,পেরেক ঢোকার সাথে সাথে পা পুরিয়েছি লাম,,তার পরে ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষুধ নিয়েছি,,পেরেক ঢোকার পরের দিন টিটি নাজ এর ইনজেকশন নিয়েছি,,এখুনও ক্ষতটা শোকায়নি,,হালকা ব্যথা আছে,,এখনও কোন সমস্যার সম্ভবনা আছে,,একটু জানাবেন কি কেউ দয়া করে
জং একটা কেমিক্যাল, এর সঙ্গে টিটেনাসের কোনও যোগাযোগ নেই।