বিএলও দের নিয়ে তাদের দুঃখ কষ্ট দুর্দশা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে ট্রোল করা দেখে দুটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল।
প্রথম ঘটনা: কোনো একদিন নিজের সন্তানকে দু ফোঁটা পোলিও খাইয়ে সুস্থ রাখার তাগিদে একবুক বন্যার জলে নেমে এসেছিল বাবা-মা। আর তাদের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে একবুক বন্যার জলে নেমে এসেছিলেন ক্যানিং এক নম্বর ব্লকের স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে ছাঁটুইপাড়া সাবসেন্টারের তিন স্বাস্থ্যকর্মী তিথি মন্ডল, প্রথম এএনএম; অনিতা ছাঁটুই, দ্বিতীয় এএনএম, মিনতি মন্ডল, আশাকর্মী। একজন মাথায় তুলে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার বাক্সটা যাতে আছে বহুমূল্য ভ্যাকসিন। জলে ডোবা বিষাক্ত সাপের কামড়ে প্রাণ চলে গেলেও ভ্যাকসিনগুলো যেন বেঁচে থাকে।। ছবিতে এটা দেখা যাচ্ছে।
দ্বিতীয় ঘটনা: সুদীপ্ত চ্যাটার্জি, ডিস্ট্রিক্ট স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানেজার আর অরবিন্দ পাল ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। দুজনেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী। দুজনেই নন্দীগ্রামে মেস বাড়িতে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। দুজনেই কোভিভ আক্রান্ত হয়ে নন্দীগ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দুজনেই খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে করছিলেন। কোউইন পোর্টাল যার সাহায্যে স্বাস্থ্য দপ্তর এত মানুষকে কোভিড ভ্যাকসিন দিয়ে ছিল তার হিসেবে নিকেশ করতেন এই দুজন। দপ্তরের এতো কর্মী নেই ব্যাক আপ হিসেবে। আর হট করে যাকে তাকে শেখানোও যাবে না। তাই দুজনেই স্বেচ্ছায় হাসপাতালের বিছানায় বসে ল্যাপটপ আর মোবাইল দিয়ে কাজ চালিয়ে ছিলেন। দুজনেই কথা দিয়েছিলেন যতদিন শরীর দেবে ততদিন চালিয়ে যাবেন। ছবিতে এটা দেখা যাচ্ছে।
তৃতীয় ঘটনা: চোপড়ার চুটিয়াখোর পঞ্চায়েতের ১৮৮ নং বুথের BLO মোস্তাক কামাল। উনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সামান্য সুস্থ হয়েই হাসপাতালের বেডে বসে অনলাইনে ভোটারদের তথ্য আপলোড করতে বসে গেছেন। ছবিতে এটা দেখা যাচ্ছে।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারী (যাদের মধ্যে শিক্ষক শিক্ষিকা, পার্শ্ব শিক্ষকরাও আছেন) এরা নানান প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে বিএল ও এর কাজ করছেন, তাদের কাজের সুবিধে অসুবিধে নিয়ে যাদের বিন্দু মাত্র প্রত্যক্ষ জ্ঞান নেই,সেই সব কিছু মানুষ তাদের উপহাস করছেন হাতে একখানা স্মার্ট মোবাইল ফোন আর ডেটা প্যাক থাকার দৌলতে। বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজের চাপের সাথে তুলনা করে BLO দের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। সরকারি দপ্তরের কর্মীরাও যে নিবেদিত প্রাণ হয়ে অনেক সময় কাজ করেন, তাদের অবদানের ফলেই আমাদের স্বাস্থ্য এর অধিকার, শিক্ষার অধিকার, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার এই সব সুরক্ষিত হয় এটা ওই সব বিদ্রূপকারীরা ভুলে যান। এই কর্মচারীদের অনেকেই তাদের পরিশ্রমের তুলনায় যোগ্যতার তুলনায় অনেক কম পারিশ্রমিক পান। সরকারি মানেই মোটা মাইনের চাকরি নয়, সেটাও অক্লেশে ভুলে যাওয়া হচ্ছে।
“হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের করেছ অপমান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
মানুষের অধিকারে
বঞ্চিত করেছ যারে,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।”











বেশ। খুব ভালো লেখা।😔🙏💐 শেয়ার করলাম প্রোফাইলে।।