সাইকেলটা চেপে সুধন্য হাসপাতালের দিকে চলল। আস্তেই চলছিল সাইকেলটা। পাশ থেকে একটা হরিণ দৌড়ে চলে গেল। এই সাইকেলগুলো নিজে নিজেই চলে। সোলার এনার্জিতে। শুধু প্রোগ্রাম করে দিতে হয়। নদীর ঘাটে সাইকেলটা রেখে নৌকোয় চেপে নৌকোটা খুলে দিল সুধন্য। নৌকাও চলে সৌরশক্তিতে। আসলে পৃথিবী থেকে জ্বালানি তেল অনেক বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। কমে গেছে দূষণ। ব্যক্তিগত গাড়ি বলে কিছু নেই। দূরে যাওয়ার জন্য আছে ট্রেন, বিমান। সব সৌরশক্তিতে চলে।
নদীর জল কাঁচের মত স্বচ্ছ। আকাশ গভীর নীল। বাতাসে গাছপালার বুনো গন্ধ ও মাটির সোঁদা গন্ধ মিলেমিশে একাকার।
এটা ২১৭০ সাল। দূরে দূরে ছোটবড় গ্রাম-গঞ্জ, মাঝে মাঝে জঙ্গল,পাহাড়। জেলা, রাজ্য, দেশ। শহর নামে কিছু মনুষ্য বসতি অনেক কাল আগে ছিল। এখনো জঙ্গলের মধ্যে, মাটির ঢিবির নীচে সেগুলোর চিহ্ন পাওয়া যায়। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে মানুষ থাকত সেখানে। কি করে কে জানে! ১৫০ বছর আগে নাকি বেশ কয়েক বার ভাইরাসের প্রকোপে মহামারী হয়ে সারা পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা কমে যায়। বিশেষ করে উজাড় হয়ে যায় শহরগুলো। ইতিহাস পড়তে খুব ভালো লাগে সুধন্য-র। ইতিহাসে সব লেখা আছে।
সুবর্ণরেখা-র ধারে চাপটি গ্রাম। দূরে দূরে বাড়ি। প্রচুর গাছপালা, মাঝে মাঝে ঘন জঙ্গল। হরিণ, ভাল্লুক, চিতা। কখনো কখনো বাঘের ডাক অবধি শোনা যায়। গ্রামের পাশেই হাসপাতাল। এটাই এই জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। ওখানেই সুধন্য কাজ করে । ও ডাক্তার, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। সাইকেলটা স্ট্যান্ডে রেখে টেলিহেল্থ সেন্টারে ঢুকে পড়ল সে। আউটডোর বলে কিছুই নেই এখন আর।
নিজের অফিসে ঢুকে সিস্টেম চালু করল সে। প্রথম রোগীর নামের উপর লেজার পয়েন্টার ফেলতেই থ্রি-ডি ছবি চালু হল। ডানদিকের স্ক্রিনে রোগীর ভাইটালস গুলো ফুটে উঠল। এক্সরে,ইসিজি, ইকো, মাল্টিফেজিক স্ক্যান,ফোর-ডি ডপলার ফ্লো মেট্রি, রক্তের রিপোর্ট- সব দেখে নিল সে। এরপর, ব্লু-টুথ অসকালটেটর মেশিনটা রোগী নিজেই নিজের বুকে চেপে ধরতেই হৃদযন্ত্রের শব্দ, শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শোনা যেতে লাগল। রোগীকে বাই করে প্রেসক্রিপ়্শন লিখতে বসল সে।
অপারেশন বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার-এর প্রয়োজন না হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। অপারেশন থিয়েটারে কাজ হয় রোবোটিক টেকনোলজি তে। দেড়শ বছর আগের বিশ্বব্যাপী সেই ভয়াবহ মহামারীর পরে রোগী-ডাক্তারেরফিজিক্যাল কন্ট্যাক্ট আর হয় না। সার্জেন তার অফিসে বসে রোবোটিক রিমোট কন্ট্রোলে অপারেশন করে। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের ডাক্তার ও নার্সরা ও একই ভাবে রোবোটিক টেকনোলজি ব্যবহার করে বেশিরভাগ কাজ দূর থেকেই করে। খুব জরুরী প্রয়োজনে রোগীর কাছে যেতে হলে নেগেটিভ প্রেশার অক্সিজেনেটেড স্যুট পরতে হয়। তখন ডাক্তার বা নার্সকে মহাকাশচারীর মত দেখতে লাগে।
সুধন্য এখন যে রোগীকে দেখছে, তার বয়স সাতানব্বই। চাষ-আবাদ করে। দুবার ভালভ্ রিজেনারেশন করানো হয়েছে। ভারতের মানুষের মধ্যে হার্টের রোগ এখন খুব কম। গড় আয়ু বেড়ে একশ দশ। আগে নাকি ভারতীয়রা ডায়াবেটিসে খুব ভুগত। জেনেটিক চেঞ্জ করে সেটাও প্রায় হয় না বললেই চলে। আগে অর্থোপেডিক সার্জেনরা হরবখত জয়েন্ট বদলে দিত। আর্কাইভে দেখেছে সুধন্য, হাস্যকর। এখন ওসব লাগেই না।২০২০-২১ এর ভয়ংকর বিপর্যয়ের পর পৃথিবীর অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে ডাক্তারী শাস্ত্রও আমূল বদলে গিয়েছিল। মানুষের জীবনযাত্রাও। দূষণ কমে গিয়ে, গাছপালা, জল-জঙ্গল বেড়ে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া অনেক জীবজন্তু ফিরে এসেছিল পৃথিবীতে। ইতিহাসে সব লেখা আছে।
একটা ছবি সুধন্যর অফিসের দেওয়ালে টাঙানো আছে। এটা নাকি অয়েল পেইন্টিং। অনেক কালের পুরোনো। সুধন্যর প্রপিতামহের আঁকা। তখনও মানুষ হাতে ছবি আঁকত। এখনকার মত লেজার দিয়ে নয়। ছবিতে এক পুরুষ ও নারীর যুগল মুর্তি। তখনকার দেবতা। কৃষ্ণবর্ণ পুরুষ। হাতে লম্বাটে কি একটা যন্ত্র। ওটা নাকি বাদ্যযন্ত্র। তখনকার মানুষ এইসব বাজিয়ে মিউজিক শুনত। মানুষের গলার আওয়াজেও নাকি মিউজিক হত। ভাবতেই অবাক লাগে। এখন তো লেজার দিয়ে মিউজিক কম্পোজ করা হয়। তবে ওই ছবিতে যেমন, এখনো তেমনি নারী-পুরুষের প্রেম হয়। যদিও সম্পর্কটা খুব জটিল।
প্রেসক্রিপশন করে সুধন্য সেটা ফার্মেসিতে পাঠিয়ে দিল। ড্রোন ডেলিভারিতে ফার্মেসি থেকে ওষুধপত্র পৌঁছে যাবে রোগীর বাড়িতে। আগে নাকি ওষুধের দোকান ছিল। সেটা কি, সুধন্য বোঝে না। দোকান-বাজার এসব আদৌ নেই এখন। দারিদ্র্যও উধাও হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। যুদ্ধও। হেল্থ ড্রিঙ্কে চুমুক দিয়ে পরের রোগীর প্রোফাইল ওপেন করল সে।
Excellent chobir moto dekhte pachi future ke
Excellent
Porte porte choley gechilam future a…time machine keo laglona. ??