সেলাম হুজুর, সেলাম ।
এই এদ্দিনে আপনার শ্রীচরণের দর্শন পেলাম, এবার মরেও শান্তি।
যদিও কাছে যেতে পারবো না, ইংরেজির শেষ অক্ষর আপনার করে দেখাশোনা,
একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই চিত্তির,
নামের আগে বাংলার শেষ অক্ষর এসে হবে স্থির।
দরকার নেই আর সেই ভাগ্যের,
এতটা পথ হেঁটে এসে এখনো দাঁড়িয়ে আছি, এটাই তো ঢের!
কতটা পথ শুনবেন হুজুর?
আপনাদের হিসেবে এমন কি আর দূর,
হুস করে চলে যাবেন হেলিকপটারে,
আমাদেরই কেবল পায়ে পায়ে রাস্তাটা বাড়ে।
সোজা পথ ভেবে বেরিয়েছিলাম হুজুর,
হাঁটতে পিছপা আর কবে ছিলো চাষী মজদুর,
সেই সভ্যতার শুরু থেকে এই কাজটাই তো করে চলেছি। আপনারা মানচিত্রে যেমন দাগিয়েছেন সেইখানে গেছি,
কখনো ঢাকা থেকে কলকাতার দিকে হয়েছি অগ্রসর,
কখনো লাহোর করাচির থেকে অমৃতসর,
আমরা হেঁটেছি,
বউ ছেলে মেয়ের সাথে সব সম্বল আর পোষা মুর্গিছাগল নিয়ে শিকড়ের নাড়িছেঁড়া মানুষ মিছিলে,
কখনো মাথা তুলে প্রশ্ন করিনি দেশকে, বদলে আমায় কি দিলে।
মরিচঝাঁপিই বলুন বা আসামের চা বাগান,
ঘরকে উপড়ে দিলে যেই দিকে হাঁটা হোক সবই তো সমান।
তবে হুজুর, সে সবের থেকে এই হাঁটাটা আলাদা ।
এটা তো নিজের দেশ , মন্ত্রী আমলা নেতা কেরানী পেয়াদা , সকলেই আমাদের।
দাবী যদি জানাতেই হয় আজ কারো কাছে,
শান্তি বজায় রেখে সেটা বলবার তাই অধিকার আছে,
শুধু আমাদেরই নয়, নাগরিক পরিচয় যার আছে তারই। সুতরাং আনাড়ি কজন চাষা ভাবলাম রাজধানী হেঁটে যেতে পারি।
পথে কারা বাধা হলো জলকামান নিয়ে।
হয়তো বা ভেবেছিলো এ আগুন ফেলবে নিভিয়ে.
ওরে বাবা, সে কি জল, জলের কি তোড়!
যেন বেনোজল ধারা চলে ক্ষেতের ওপর,
আমাদের ক্ষোভ রাগ দুঃখ আবেগ সব যেন ভাসাবেই কামানের স্রোতে,
ঢিবি হয়ে জমে থাকা বঞ্চনা-খতিয়ান অতই সহজে কি পারা যায় ধুতে?
সুতরাং গা মাথা পা ভিজে চললো মিছিল।
কাঁটাতার বাধা দিলো, তবুও কি এতটুকু টললো মিছিল? সশস্ত্র বাহিনীরা ফিরে যাও বলে দিলো কড়া হুংকার
পায়ের আওয়াজ তবু আরো জোরদার,
হাজারের থেকে লাখ, লাখ থেকে কোটি হলো মিছিল বরং, দেখুন হুজুর ভিড়ে লাল নীল নেই কোনোখানে,
সকলের সেই এক ক্ষেতচষা রঙ।
আজকে অবশেষে হুজুরের হয়েছে দয়া,
মঞ্চ উঠেছে গড়ে, সূর্য আড়াল করে দেওয়া আছে সোনালী চাঁদোয়া,
দূর থেকে দেখি, আপনার চারদিক ইংরাজি শেষ অক্ষর দিয়ে ঘেরা,
যেখানে পাত্তা পায়না আমার দিশি বর্ণমালারা ,
তাই আমি বুঝতে পারিনা আপনার বক্তৃতার ভাষা , আপনারও উপায় নেই আমাদের মধ্যে নেমে আসা।
আসলে কি জানেন হুজুর,
দুটোতেই জল থাকলেও কান্না আর কামানের মাঝের ফাঁকে সাতটা সমুদ্দুর,
যেখানে বেচারি চাষীর কোনো ডিঙিনৌকারও নেই মালিকানা,
আমাদের কাজ শুধু পাঁচটা বছরে দেওয়া ভোট একখানা।
আমরা হাঁটতে থাকি। পৌঁছাবো কিনা সেটা আজও অজানা।