শরীর মন সব উথাল পাথাল করছে। এ্যাকে নিজে শয্যাশায়ী- এ্যাক্কেবারে অকেজো হয়ে গেছি- তায় একের পর ভ্রাতৃপ্রতিম- কন্যাসমা পুত্রসম সহকর্মীদের মৃত্যুসংবাদ আসছে। পাশ করার পরের দিন থেকে উপার্জনের জন্যে ছুটেছি। সারা রাতের ডিউটি করে ষাঠ টাকা, হিপ প্রোস্থেসিসে অ্যাসিস্ট করে এ্যাকশো, ছানি কাটাতে পঞ্চাশ – এ্যামন কি কোভিডের দিনগুলোতেও বসে থাকি নি। অথচ কোটিপতি তো নইই- মহৎ হওয়ার ব্যর্থ অহংকারে টাকাকড়িও ত্যামন কিছু জমে নি। কয়েক বছর পরে কী খাবো সেটাই চিন্তার ব্যাপার।
এই উথাল পাথাল সময়ে একটা ছোট সাউন্ড বক্সে পেন ড্রাইভ লাগিয়ে প্রাণপণ গান খুঁজছিলাম। এটাই আমার নেশা। অথচ কোনও গানেই মন বসছিলো না। হঠাৎ বহু পুরোনো একটা গান এক ঝলক শান্তি নিয়ে এলো। ছোটবেলার দুপুরে অনুরোধের আসরটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
সত্যিই তো! মা সরকারি ডাক্তার, বাবা সরকারি বড়ো অফিসার, ছোটোবেলায় অভাব কথাটার সঙ্গেই পরিচয় ছিলো না। সে ভারি চমৎকার সময় ছিলো।
দীননাথ সুজিত টোটোন ভানুকাকুদা মিলন বাপি মণি গৌতম চূণী খোকন বাপ্তু শিবুদা গোপু তারক , এই – এখানে আমি থামি নৈলে ফর্দ বাড়তে বাড়তে চাঁদ সুয্যি ছুঁয়ে ফেলবে। অর্থাৎ একটা হৈহৈ দলপার্টি। যাকে বলে আদি অন্ত নেই।
তখন দীননাথের জামায় বোতাম থাকতো না বলে সেফটিপিন লাগিয়ে ঘুরতো। সুতরাং হাওয়াই চটির ফিতে ছিঁড়লে সেফটিপিন লাগিয়ে ঘোরাটা দিব্যি স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো। অভাব কোথা থেকে নাক গলাবে বলুন দেখি?
গৌতম সকালে ফ্যানা ভাত খেয়ে মাঠে আসতো। ওকে ডাকতে গিয়ে আমিও জ্যেঠিমার দেওয়া ফ্যানাভাত গোগ্রাসে গিলে মাঠে এসেছি। লঙ্কা পেঁয়াজ দিয়ে। অল্প নুন । উফঃ সেই খেয়েই কী শক্তি!
সুজিতের প্যান্টের পোস্টাপিসে প্রায়ই বোতাম থাকতো না। ফাঁক দিয়ে ওর ছোট্ট চুঙ্কু উঁকি দিলেই সে ভারি একটা হাসি হতো। তাই পুজোর সময় যখন স্কুলের ইউনিফর্মই পুজোর জামা বলে কিনে দেওয়া হতো তখন আশ্চর্য হতাম না। ক্লাস সেভেনে একবার একটা পলিয়েস্টারের নীলের ওপর সাদা বড়ো বড়ো চেক জামা পেয়েছিলাম। সে বছর গর্বে মাটিতে পা পড়ে নি।
তখন বাঁকুড়ায়। তখন গরমকালে সকালে পিচুটি মুছতে মুছতে ইস্কুল। রোদ যখন চড়বড় করতো তখন ছাতা বগলে মুখ কালো করে বাড়ি ফেরা। তারপর শুরু হতো আমাদের চাঁদের পাহাড় অভিযান। টিউকল থেকে ওয়াটার বোতলে জল ভরে’ আল পথ ধরে ধরে চলে যাওয়া। সাঁওতাল পাড়া- ছোটো ছোটো নিকোনো দাওয়া- হাসিমুখ মাসিদের দল কুথায় যেঁছো গো সোনাবাবুরা .. নীল দাঁতের বাক্সে বাজতে থাকে জিন্দেগী হ্যায় এক সফর আ যা সনম মধুর চাঁদনীমে হাম তুম ….
শীতকাল।
গৌতমের পকেট ভর্তি নলেনগুড়। দু পাশে অড়হড় ডালের ঝোপ ঝুঁকে রয়েছে। নাকের ডগা আর কান ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমরা যাচ্ছি গোপেশ্বরের মটরশুঁটি ক্ষেতে। গোপেশ্বর অফিসের দড়ি টানাটানি খেলায় খুঁটি হয়। ওদের দলকে কেউ নড়াতে পারে নি। য্যামন মোটা ওর গোঁফ তেমনই মোটা ওর ভুঁড়ি। ক্ষেতে ইয়াঃ মোটা একটা তেল মাখানো লাঠি নিয়ে পাহারা দ্যায়। লোকটা অফিস যায় না কেন? একটা গাছও না নড়িয়ে দুহাতে মটরশুঁটি ছিঁড়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা চূণীকে ছুঁড়ে দেওয়া। ও সবচেয়ে ছোটো আর ছোটেও সবচেয়ে ভালো। মটরশুঁটি নিয়ে ঝিলের পাড়ে বসে গুড় দিয়ে খাওয়া। ঐ ঝিলেই দোদোর (মাতামহের) তৈরি করে দেওয়া ছিপ দিয়ে খলসে পুঁটি আর কৈ মাছ ধরা।
তখন যদি অভাব আমাদের শরীরে মনে দাগ ফোটাতে পারে নি আজও পারবে না। শাম ঢলে যমুনা কিনারে কভি রুখে কভি চলে রাধা চলে যমুনা কিনারে। গান বাজতে থাকুক। আমি ফিরে যাই অভাবহীন শৈশবে।
বা!
ধন্যবাদ দাদা
Fire gelam aamader soishab er din gulote. Darun likhecho. Boes barar sathe sathe aamra garib hoechi . Soisab e aamra sujjer mato ujjwal chilam
লিলি দেবী সহস্র ধন্যবাদ
তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী……
তোমার মতো হয় কৈ প্রভু?