খ্যাত মানুষের চেয়ে অখ্যাতর অসামান্য কাজ হৃদয়কে মোহিত করে অনেক বেশি| মাত করে দেয় একেবারে| ঠিক যেমন দ্বিপ্রহরের জ্বলজ্বলে সূর্য্যের চেয়ে ডোবা সূর্য্যের কমলা আলোয় মনের আরাম জমে| জমে একেবারে পূর্ণ করে দেয় ধরাভূমি|
বেশ কবছর ধরে এক সদালাপী মানুষের সাথে আলাপ চলছে আমার| আলাপ চলছে মানে আলাপে প্রলাপে গড়ছে একটি সম্পর্ক| প্রৌঢ় মানুষ –গণ্য না করার চেহারা| পাশ দিয়ে যদি চলে যান কেউ খেয়াল করবে না– এক মানুষ চলে গেলো| কিন্তু বড় মায়াবী যে সে| মাঝে মাঝে আমার স্কুলের বাচ্চাদের জন্য মিষ্টান্ন কখনো চকোলেট আনতেন| বেশ বুঝতাম মূক বধির বাচ্চাগুলোকে কারণে অকারণে মিষ্টান্ন দেয়াই তাঁর লক্ষ্য| মিষ্টি মিষ্টি দ্রব্যে ভরবেন কথাহীনের কলস|
আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম| সামান্য পরিচিত কাউকে সামনে দেখলেও ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করতেন, ভালো আছেন তো? ভাবতাম এ বুঝি একটা মুদ্রাদোষ তাঁর| এমন হড়বড় করে কুশল জিজ্ঞেস করতেন যে উল্টোপিঠের লোকটি যথারীতি ভ্যাবাচাকা খেয়ে যেতেন ও পাল্টা কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতে ভুলে যেতেন|
এরই মাঝে একদিন হাসতে হাসতে এলেন ভদ্রলোক| হাতে যথারীতি একটি মিষ্টির বাক্স| বললাম, এত হাসি? বললেন— জিভে ক্যান্সার| ডাক্তার বলেছেন কিছুদিন পরে জিভের জল শুকিয়ে যাবে আমার| খাদ্যে আর স্বাদ পাব না| এরপর তো আর কোনটার কী স্বাদ তাই বুঝতে পারব না| তাই ভাবলাম আজি বাচ্চাগুলোকে মিষ্টি খাইয়ে যাই|
সেদিন ভদ্রলোকের হাতের আঙুলগুলো ছুঁয়েছিলাম| সান্ত্বনা দিই নি| উনি তা চান নি| আজ আবার বেশ কিছুদিন পরে দেখা হলো ভদ্রলোকের সাথে| আরো রোগা| বেঁকেচুরে যাওয়া গালে শীতের বিকেল তার ফুরোনো আলো ফেলেছে| দেখা হওয়া মাত্তরই –“ভালো আছেন তো দিদি?”
এই যাহ! আজো জিজ্ঞেস করলাম না তো আপনি কেমন আছেন!
জলের পদ্ম ফুটেই রইল| ঝরতে দেরি কর এট্টু|
সহজ সরল সুন্দর লেখা।
সুন্দর এক চরিত্রের সাথে সুন্দর মানিয়েছে ।
লেখা পড়ে মনের গভীর থেকে শ্রদ্ধা এলো সেই মানুষের জন্য যে নিজের শেষ আনন্দটুকু ভাগ করে নিলেন বিশেষ শিশুদের সাথে। এতো সুন্দর করে আপনার দেখা ও উপলব্ধির কথা লিখেছেন সেটা আমি ও অন্য পাঠকও উপলব্ধি করতে পারি। এই ধরনের মানুষ এখনও আছেন। তাই পাঁচিলের খাঁজে বেড়ে আগাছায় ফুল ফোটে। নিজের ভেতরে বড়ো হৃদয় নিয়ে এই মানুষ জন আমাদের সাথে ঘর করে। ময়ূরী মিত্র নিজস্ব ভঙ্গিমায় দারুণ ভাবে যত্নের সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ভালোবাসার কথা।