দক্ষিণ তুর্কিস্তানের ছোট্ট শহর কুয়ান বুলাখ। যারা কার্পেট বোনে তেমনই দরিদ্র হাঘরে ক’জন তাঁতি তখন সন্ধ্যাবেলায় জ্বরে কাঁপছে। রেল স্টেশন অবধি গোটা এলাকাটা ভোঁ ভোঁ শব্দে ভরে গেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে মশার পাল তখন উটদের কবরখানা আর জলাজমি থেকে ধেয়ে আসছে ম্যালেরিয়া নিয়ে।
যে ট্রেনটা দু সপ্তাহে একবার করে খাওয়ার জল বয়ে নিয়ে আসে সে এবার একটা খবরও বয়ে এনেছে – সামনেই লেনিনের জন্মদিন। হাঘরে তাঁতির দল সেই শুনে ঠিক করে ফেলেছে যে এবার লেনিনের একটা মূর্তি বসাবে জিপসাম দিয়ে বানিয়ে। জ্বর গায়ে কাঁপতে থাকা লোকগুলো একের পর এক চাঁদা দিচ্ছে। রেড আর্মির প্রাক্তন সৈনিক স্টেপা জামাল সরু চোখে নজর রাখছে কত কপেক জমা হচ্ছে। সাগ্রহে বাড়ানো হাতগুলো থেকে ঝরে পড়ছে মুদ্রারাশি আর জামালের বুকটা ভরে যাচ্ছে আনন্দে লেনিনের জন্য এই সম্মান জানানো দেখে।
জামালের সৈনিক চোখের নজর এড়ায়নি যে কিছু হাত কিন্তু থমকে থেকে গেছে। হঠাৎ করে সব্বাইকে চমকে দিয়ে জামালের প্রস্তাব – ওই পয়সা দিয়ে কেনা জিপসাম দিয়ে মূর্তি না বানিয়ে বরং কবরখানার পেছনের জলাভূমিতে ঢেলে দিয়ে ভরাট করা হোক। জমা জল না থাকলে মশা থাকবে না। মশা না থাকলে জ্বর থাকবে না।
মিলে গেল মত। যেই কথা সেই কাজ। লেনিনের জন্মদিনে সবাই মিলে তোবড়ানো বালতি করে নিয়ে আসলো কালো পেট্রোলিয়াম। একজনের পেছনে আরেক জন। লাইন দিয়ে বালতি উপুড় করে ঢেলে দিল।
শেষে লেনিনের মূর্তির বদলে এই গল্পটা ছোট করে লিখে একটা পাথরের টুকরো বসানো হল। বর্তমান উজবেকিস্তানের ফারগানা প্রদেশের ছোট্ট রেল স্টেশনের নাম কুয়ান বুলাখ, এর গায়ে আজও আছে ফলকটা।
আগরতলা থেকে এস্তোনিয়া, তাঁর সব মূর্তি আজ গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক। কোনো দুঃখ নেই। কমিউনিস্ট শব্দটা যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে, কারুর বাপের সাধ্য নেই তাঁর নাম মুছে ফেলার। পৃথিবীর প্রতিটা কমিউনিস্ট পার্টি যার নাম অনুসরণ করে নিজেদের মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী বলেন সেই পেশাদার বিপ্লবীর আজ জন্মদিন।
কুয়ান বুলাখ-এর সেই সংগ্রামী মানুষগুলোর মতো আমরাও তাঁর মূর্তি না বানিয়েই তাঁকে অমর করে রাখবো। ভ্লাদিমির ইলিচ উইলিয়ানভ লেনিন অমর রহে।