জটবুড়িকে আজ রেফার করেছি|হাসপাতালে|সত্যিই আর উপায় ছিল না|যদিও সে বারে বারে বলত: আমারে কিন্তু হাসপাতালে দিবি না ভাই|যা করার তুইই করবি বড়দা|
করোনার লকডাউন ক্যাম্পে কিংবা সুহৃদ সঙ্ঘের দাতব্য ক্লিনিকে জট বুড়ি ছিল রেগুলার পেসেন্ট|রোগ বিশেষ কিছু ছিলো না|কিন্তু তবু সে আসতো|আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতো : নাড়িটা একবার দ্যাখ তো দাদা|দেখতাম|মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলতাম|এইবার তোমার জর্দা না ছাড়লে নাড়ির গতি কমবে না|সে হাসতো|দু একটা গ্যাসের ওষুধ, দুএকটা ভিটামিন বড়ি নিয়ে কি ভীষণ বিশ্বাসে, নিশ্চিন্তে চলে যেত সে|
তার সাথে রাগারাগি কি হয়নি|খুব হয়েছে|খুব ব্যস্ত চেম্বারে হুট্ করে দরজা ঠেলে ঢুকে গেছে সে|মনে আছে বিয়ের মাত্র কয়েকমাস গেছে|গল্পগুজবও একটু চুপি চুপি করতে ভালো লাগে|দরজা আলতো করে বন্ধ|হুট্ করে তিনি|সরাসরি দোতালার বেডরুমে|বিরক্ত হয়েছি|বকাঝকাও করেছি|সে কিন্তু রাগ করেনি|একগাল হেসে যাবার আগে বলেগেছে ..এট্টু হাসি মুখ করতো দাদা ..তুই রাগলে কিন্তু ভালো লাগেনা এট্টুও …
তাকে আমি ছোট থেকেই চিনি|ছেলেবেলার ভোরবেলায় তাকে দেখেছি, ফুল তুলতে|হঠাৎ বৃষ্টির রেইনি ডে-তে নাম ডেকে ছুটি হওয়া অঝোর দুপ্পুরে তাকে দেখেছি বাগানে বাগানে শাক তুলতে …অভাব তার সঙ্গী ছিল|কিন্তু গালভরা নিশ্চিন্ত হাসি তাকে ছেড়ে যায়নি কিছুদিন আগেও|
আজ হঠাৎ ডাক এলো তার|চেম্বারের ছেলেটি এসে বললো একজন এসেছে …বাড়ি নিয়ে যেতে|পরিচয়ে জানা গেলো জট বুড়ির মেয়ে|তো গেলাম|ভাঙ্গা টালি, ইঁটের উপর তক্তপোষ|ফুলে ওঠা চোখ মুখ ..প্রায় তলিয়ে আসা বিপি ..অচৈতন্য অলকা কর্মকার ..আমাদের জট বুড়ি …
একী!! এনাকে ভর্তি করেন নি কেন!
ওনার মেয়ে চুপ করে থাকে|মা ভর্তি হতে চাইতো না যে|বলতো আপনাকে খবর দিতে ..
সব চিকিৎসা কি বাইরে থেকে হয়? আমি বোঝাই|ভর্তির বেবস্থা করি|গোবর নিকোনো ঘরের তক্তপোষে অচৈতন্য জট বুড়ি শুয়ে থাকে ….থাপ্পড় মারতে থাকে আমাকেও ..আমার দামী গাড়ি ..আমার চকচকে পয়লা জানুয়ারী..অসভ্য লাগে ..
জানি এই খারাপ লাগাটাও ক্ষণিকের|তবে মিথ্যে নয়, বিশ্বাস করুন …
আমি জানি সব্বাই হাসে|এই টালি ত্রিপলের ছাদ হাসে ..ইঁটের উপর তক্তপোষ হাসে, স্বাস্থ্যসাথী হাসে, আয়ুষ্মান ভারত হাসে, সকলের জন্য স্বাস্থ্য হাসে …
..যাঁরা কথায় কথায় বিশ্বাস করুন বলে ..তাঁদেরকে বিশ্বাস করতে নেই …
দারুন।