যে বয়সে দিদিমার নাতি নাতনিদের রূপকথার গল্প শোনানোর কথা, সংসারের দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা সেই বয়সে দুই নাবালিকার ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মধ্য পঞ্চাশের এক মহিলা। বাবা, মা দুজনের ভূমিকা একসঙ্গে পালন করেন তিনি। তাঁরই নাতনি এবছর টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর নাম স্প্রিন্টার রেবতী ভিরামানি।
বিশ্বদরবারে নিজের দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম, জেদ এবং সে জেদ জাগিয়ে রাখার জন্য কারও পাশে থাকা। আর এই পাশে থাকার কাজটা করেছেন ৭৬ বছরের কে আরাম্মল, তাঁর দিদিমা। তামিলনাড়ুর মাদুরাই জেলার সাক্কিমঙ্গলম গ্রামের রেবতীর সবচেয়ে বড় সহায় ছিল দিদিমার আশীর্বাদ। একেবারে ছোটবেলায় বাবা, মাকে হারিয়ে সে ও তার ছোট বোন আশ্রয় নিয়েছিল হতদরিদ্র দিদিমার কাছে। দিদিমা কখনও ইঁটভাটায় কাজ করে আবার কখনও অন্যের জমিতে কাজ করে সামান্য যা রোজগার হোত তাই দিয়ে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। দিদিমার স্বপ্ন ছিল নাতনিদের লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করানো।
যদিও দুবেলা খাবার জোটানো যেখানে কঠিন কাজ সেখানে লেখাপড়া শেখানো অত সহজ ব্যাপার ছিল না। অনেকেই দিদিমাকে পরামর্শ দিত, নাতনিদের লেখাপড়া না শিখিয়ে কাজ করে কিছু উপার্জন করতে পাঠাতে। কিন্তু দিদিমা তা চাননি। তিনি নিজে সবটা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। যদিও প্রথমদিকে রেবতীর অ্যাথলিট হওয়ার বিষয়ে আপত্তি ছিল। তবে রেবতী বুঝিয়েসুঝিয়ে রাজি করান।
কাজটা বড় সহজ ছিল না। দৌড়নোর জন্য ন্যূনতম পায়ের জুতোও জোগার করতে পারেননি। কিন্তু রেবতীর প্রতিভা দেখে প্রশিক্ষক তাঁকে সাহায্য করেন। বেশ কিছুদিন লড়াই করার পর নিজে কিছুটা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর দক্ষিণ রেলে চাকরি পান। তার বোন চেন্নাইয়ের পুলিশ অফিসারের পদে চাকরিরত।
দিদিমার স্বপ্ন সফল হয়েছে। এখন বিশ্বদরবারে দেশের নাম উজ্জ্বল করার স্বপ্ন যাতে সফল হয় রেবতীর নজর সেদিকে। আর তার সঙ্গে আছে দিদিমা ছাড়াও ভারতের কোটি কোটি মানুষের শুভেচ্ছা।