– তোমার নাম?
– লক্ষ্মী মাহাতো।
– বয়স?
– জানি নি বাপু। তুমি দেখ্যাশুন্যা বুঝে লও..
– আরে দেখেশুনে কী করে বুঝবো? বলো, কতো বয়স?
– অত বলত্যে পারবনি। তুমি বুঝে লও।
– আচ্ছা, তোমার ছেলেমেয়ে আছে?
– দুটা ছেল্যা, এক মেয়্যা।
– বাড়ির ঠিকানা বলো..
– জঙ্গলমহল নাম শুনছ? শালবনী থেক্যা টেকারে কর্যা আরঅ দু’ঘন্টা।
– কী কাজ করো?
– কী আর কাজ.. মোদের ত জমিজায়গা নাই। লোকের জমিতে চাষ করি। জঙ্গলে শালপাতা কুড়াই। কুব কষ্ট বাপু। পাঁচটা পেট যে কেমন কর্যা চালাইতে হয়.. মেয়্যাটার বিয়্যা দিসলি। দু বচ্ছরের বেশি ঘর করত্যা পারল নি। বরটা মদ খেত, রোজ মেয়্যাটাকে মোর মের্যা মের্যা কালশিটা ফেলি দিত। চুলের মুঠি আস্ত রাখে নি। তখন অর পেটে বাচ্চা। একদিন এমন মারল বাচ্চাটাই নষ্ট হয়্যেইল। কত রক্ত!! ডাক্তর ঘর থেক্যা আসার পর অকে আর সোসুরঘর পাঠাই নি। মোর কাছে থাকু, যেমন হোক কষ্ট কর্যা চালি লিতে হবে। অর কষ্ট আর দেখত্যা পারছিলি নি..
– আচ্ছা, সরকার থেকে তো অনেক কিছু সাহায্য করে। ঘর বানিয়ে দেয়। তুমি কিছু পাও নি?
– শুদু দু’টাকার চালটা পাই। পতিবার ভোট এলে বাবুরা বলে ভোট হয়্যা গেলেই ঘর বানি দিবে। ভোট গ্যালেই অদের আর দ্যাখা নাই। ইদিকে অদের দ্যাখ..ভোটের আগে যার কুঁড়াঘর ছিল তার কত বোড় ঘর, নতুন নতুন গাড়ি। মোদের ভাগ্যে কিচ্ছু নাই।
– তোমরা কিছু বলো না?
– বলতে গ্যালে আর গেরামে থাকতে হবে নি। ঘরদর সমেত জ্বালি দিবে। লাতনি টারও বয়স বাড়েহ্র্যা.. বুঝই ত সব। যা দিনকাল..
– তুমি ইস্কুলে যাও নি?
– মোদের যুগে মেয়্যামানুষ ইস্কুল যেত বাপু? মা পাতা কুড়াইতে যেত। আমি ভাত রেঁধ্যা ছোট ছোট তিন ভাই-বোনকে খাবাইতি। আমি ত বোড়ো। ভাই আট কেলাস পোজ্জুন্ত পড়ছ্যা।
– প্রত্যেক বছর ভোট দাও তো?
– না দিয়্যা উপায় নাই। ভোট না দিল্যা র্যাশনটাও ঘরে ঢুকবে কিনা সন্দেহ.. আচ্ছা, তুমি ত অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলঅ, ইবার মোর একট্যা জিনিস জানার আছে। তমরা পড়ালিখা লোক। মোকে বুঝি দও।
– বলো
– কদিন থেক্যা শুনিছি মোরা ইখানকারই লোক না বাইরে থেক্যা আসছি তার জন্য পমাণ দিতে হবে। মোদের পাড়ার মহন খবরের কাগজ দেয়। সে বল্যা নাকি মোর ভোটের কাগজ দিয়্যা হবে নি। আগেকার পমাণ লাগবে। কথা থেক্যা পাব বল ত? মোদের জমি নাই, ইস্কুলের কাগজ নাই.. বাপ-ঠাকুদ্দার কাগজের ঠিক আছে? কথা গ্যাছে সেসব কাগজ কথায় পাব?
– কাগজ তো সব বানানো যাবে। নতুন করে বানিয়ে নাও..
– (প্রথমবার ঝাঁঝিয়ে ওঠে লক্ষ্মী মাহাতো) খুব সজা না? ওই যে কী.. আধার কাড়। ওউটা করত্যা দু’বার মোর নাম, গেরামের নাম ভুল লিখছ্যা। মোরা কতবার ঘুরব? মেদনিপুর যেতে আসতে পঞ্চাশ পঞ্চাশ একশ টাকা খরচ। তারপর লাইন দিব। সারাদিন লাইনে দাঁড়ি দাঁড়ি তবু কাগজ হবে কিনা ঠিক নাই। আর রোজ এউরকম লাইনে দাঁড়ি থাকল্যে কাজ করব কখন? খাব কী?
– আরে, তবু দেশে থাকতে হলে প্রমাণ তো তোমাকে দিতেই হবে..
– দেশ ফেশ বুঝিনি বাপু। জিবনে কুন্যো দিন মেদনিপুর ছেড়্যা যাই নি। মোর বাপ-ঠাকুদ্দাও কেউ যায় নি। আজ পমাণ চাইলে কী দুব? মোদের অত কাগজ-ফাগজ নাই। কথা থেক্যা পাব? আগে আরও জঙ্গলের মধ্যে কুঁড়াঘর ছিল। একদিন মোর বাপ ঘরের সামনে চাল মিল্যা রোদ দিসল। সোন্দার দিকে পার্টির লোক এস্যা অদের ফিস্টির জন্য পাঁচ কেজি চাল দিতে বলছল। মোর বাপ বলে, মোরা গরীব মানুষ। কথা পাব চাল? আমি তখন অনেক ছোট। মোর মনে আছে, বাপকে মের্যাধর্যা, ঘরের জিনিসপত্র ভেঙ্যা, আগুন লাগি দিসল। আবার ভোটের সময় অদেরই কত মিস্টি কথা..
– থানায় জানালে না?
– উসব বোড়োলোকদের জন্য বাপু। গরীবের জন্য কেউ ভাবে নি। ই পার্টি, উ পার্টি কেউ না। মোর নিজের ভোটের কার্ড আছে। পোত্তেক বছর ভোট দেই। তবু মোকে পুরানো কাগজ দ্যাখাইতে হবে কেন? মোর ভোটের কার্ডের দাম না থাকলে অদের ভোটেরও দাম নাই। যারা ভোটে জিতছ্যা তাদেরও দাম নাই।
– ওরা ভোটে জিতে এসেছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তুমি তাদের সম্পর্কে এরকম বলতে পারো না..
– কেন বলব নি? মোরে গাঁটে গাঁটে ব্যথা। লাতির ঘন ঘন ঠান্ডা লেগে যায়, কী শ্বাসকষ্ট!! ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করত্যা বলছ্যা। ওইগুল্যা হাসপাতালে হয় নি। যা ওসুদ দেয় তাতে কাজ হয় নি। ডাক্তারটা ভাল। কম বয়স। হেসে হেসে কথা বল্যা। সেদিন মোকে বল্যা, মাসি তমার লাতির জন্য অন্য ওসুদ লাগবে। সেইগুলা হাসপাতালে নাই। মোকে কিনতে বলছল। কী করব.. পয়সা নাই। এখন আর ভোটবাবুদের দ্যাখা নাই। তোদের এতকিছু পমাণ লাগবে, এত কাগজ লাগবে.. ইবার ওসুদ কিনার পয়সাটা দে?
মন্তব্য করার মত কোনো ভাষা খুঁজে পেলাম না আমি, কি নিদারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলে ধরেছেন এই বাস্তব জীবন এর সমস্যা টিকে। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, যাদের মাথায় থাকে যে আজকের খাবার শেষ হতে না হতেই মাথায় ঘুরপাক খায় যে কাল কি খাবে তারাও কিন্তু এদেশের নাগরিক। আমাদের সবাইকে প্রথমে নাগরিকত্বের প্রমান দিতে হচ্ছে কিন্তু এই নাগরিকরা কি খেয়ে বেঁচে আছে আদৌ কি পেট ভরে দুবেলা খেতে পাচ্ছে সে নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই।
পুরো চাবুক! কিছু বলার নেই। শুধু চুপ করে বসে থাকতে হবে। চালিয়ে যাও ভাই।
Darun observation.
Speechless
Sottie sir… Salboni,jangalmahal ar obostha khub kharap.
Love this Dada. Ami o thik ei tukui bujhi. Joto kosto pabe gorib Manish gulo. Taka thakle pakisthan theke asa Muslims holeo kagoj ghor e pouche jabe.
সত্যি একটা জ্বলন্ত প্রশ্ন যার উত্তর নেই।
Like!! I blog frequently and I really thank you for your content. The article has truly peaked my interest.
A big thank you for your article.
Thanks so much for the blog post.