Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

গ্রামের বাড়ি

IMG_20230311_230621
Dr. Aniruddha Deb

Dr. Aniruddha Deb

Psychiatrist, Writer
My Other Posts
  • March 12, 2023
  • 8:25 am
  • No Comments
১১
“ব্যাপারটা বুঝেছি। কিন্তু কোন দিক থেকে শুরু করি?”
স্বপ্ননীলের বয়স কুড়ির কোঠায় পৌঁছেছে বেশিদিন নয়। উজ্জ্বল চোখ, পরিষ্কার গাল, গোঁফ নেই, ছোটো করে ছাঁটা চুল। ব্যায়াম করা চেহারা। টি-শার্টে লেখা — ‘আমার শহর’, আর হাওড়া ব্রিজের একটা হাতে-আঁকা আঁকাবাঁকা ছবি। মিঞ্জিরি ভাবছিল, এ কি এখনও ছাত্র? কলেজের পড়াশোনার সঙ্গে সখের গোয়েন্দাগিরি করে?
দেবাঙ্কন বলল, “প্রথমে যা যা ইনফরমেশন আছে সেটা যাচাই করো।” স্বপ্ননীলকে বলল, “অ্যাভেলেব্ল্‌ ইনফরমেশন সামান্য। চৌধুরীবাড়ির একমাত্র ওয়ারিশ শানু, ওরফে শান্তা চৌধুরী, বিদেশে থাকতেন, কিছুদিন হলো দেশে ফিরেছেন স্বামীর সঙ্গে। স্বামীর নাম সোমেশ্বর — পদবী জানা নেই। কোথায় থাকতেন বিদেশে — তার কোনও হদিস আছে কি?”
মাথা নাড়তে যাবে শ্রীপর্ণ, মিঞ্জিরি হঠাৎ বলল, “সোমেশ্বর নাথ। ব্রাসেলস্‌। প্রথম দিন পরিচয় দেবার সময় বলেছিলেন। কোথায় কোথায় থেকেছেন বলতে গিয়ে বলেছিলেন ‘সব শেষে ব্রাসেলসে — ওখানেই আলাপ হয় শানুর সঙ্গে।’ আরও বলেছিলেন — তখন থেকেই ভবঘুরেপনার অন্ত।”
“কবে নাগাদ দেশে এসেছিলেন জানেন?” জানতে চাইল স্বপ্ননীল।
মিঞ্জিরি বলল, “না। কবে থেকে গ্রামের বাড়ি বানানো শুরু হলো সেই তারিখটা পাওয়া যাবে না? পঞ্চায়েত, ব্লক, কোথাও তো অনুমতি পেতে হয়েছে?”
স্বপ্ননীল জিজ্ঞেস করল, “গ্রামের লোকও বলতে পারতে পারে? মানে কবে বাড়ির কনস্ট্রাকশন শুরু হয়েছে…”
“সে হয়ত আমার দেওর — শ্রীপর্ণর ভাই-ই বলতে পারবে। পাশাপাশি বাড়ি তো…”
স্বপ্ননীল একটু ভেবে বলল, “ব্রাসেলসে উনি কোথায় ছিলেন জানেন? মানে কী করতেন… চাকরি-টাকরি, না কি সংসারী ছিলেন?”
শ্রীপর্ণ আর মিঞ্জিরি মুখ তাকাতাকি করল। শানু কী করত ওরা জানে না। প্রথম দিন শ্রীপর্ণ দু’চারবার প্রসঙ্গটা উত্থাপন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শানুর কাছ থেকে বিশেষ সাড়া পায়নি। কথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। শেষ দিন কি কিছু বলেছিল? মনে নেই শ্রীপর্ণর। ততক্ষণে ওর মাথায় অন্য চিন্তা ভীড় করেছিল…
“হুঁ, তার মানে প্লেস অফ ওয়ার্ক থেকেও ইনফরমেশন পাওয়ার উপায় নেই,” বলল স্বপ্ননীল।
মিঞ্জিরির হঠাৎ খেয়াল হলো। শ্রীপর্ণকে বলল, “আচ্ছা, জিতুদা বলতে পারবে না? জিতুদা কোথা থেকে জানতে পেরেছিল, শানু বাড়ি বানাচ্ছে?”
একটু ভুরু কুঁচকে থেকে শ্রীপর্ণ বলল, “ওকে চিতু-ই খবর দিয়েছিল। তবু — জানতে পারে। দাঁড়াও জিজ্ঞেস করি। এখন তো ওর প্রায় দুপুর। ইউনিভার্সিটিতেই থাকবে এখন।”
কপাল ভালো, হোয়াটস-অ্যাপে ‘তোকে এখন একটা ফোন করতে পারি?’
লেখার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ফোন করল জিতুদা। ওকে কিছু বলল না শ্রীপর্ণ। শুধু জানতে চাইল, শানু কোথায় থাকত, কী করত, ও জানে কি না।
“অ্যামেরিকায় ছিল না?” বলল জিতুদা। “কোথায় টোথায় জানি না।”
“অ্যামেরিকায়, না ব্রাসেলসে?” জানতে চাইল শ্রীপর্ণ।
“ব্রাসেলস?” জিতুদা অবাক। “কেন, ব্রাসেলস কেন? ওখানে কী? কোনও পলিটিকাল অর্গানাইজেশনে ছিল নাকি? ইউনাইটেড নেশনস বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন? কেমিস্ট্রি পড়াত না অ্যামেরিকায়?”
“ব্রাসেলসেও হয়ত পড়াত? ইউনিভার্সিটি নেই ওখানে?”
জিতুদা বলল, “আহা, থাকবে না কেন? তবে কেউ শুনেছিস কখনও ব্রাসেলসে পড়াতে গেছে?”
শোনেনি। তা বলে কি কেউ যেতে পারে না? কথা শেষ করতে না করতে ফোন থেকে চোখ তুলে মিঞ্জিরি বলল, “ব্রাসেলসে কেমিস্ট্রি — ভ্রাই বা ভ্রাজে ইউনিভার্সিটি হতে পারে।”
স্বপ্ননীল বলল, “আর কিছু না পেলে ওখানে খোঁজ করা যেতে পারে — ডিপার্টমেন্টে ফোন করে জানতে চাওয়া — শান্তা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চাই… কিন্তু সে সব পরে। কয়েকটা ব্যাপার আবার কনফার্ম করে নিই — আপনার সন্দেহের কারণ হলো এক, শান্তা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, উনি আপনাকে একেবারেই চিনতে পারেননি, যদিও আপনাকে ভুলে যাবার কোনও কারণই নেই…”
শ্রীপর্ণ বলল, “শুধু তাই নয়, ও নিজেই বলেছে, গ্রামের কিছুই বা কাউকেই ওর মনে নেই। স্কুল, নিজের বাড়ি সমন্ধে যে কোনও অতীত আলোচনা সবসময়ই এড়িয়ে যায়।
স্বপ্ননীল বলল, “বেশ। দুই, শান্তা চৌধুরীর শরীরে দুটো জন্মগত বৈষম্য ছিল — এক পায়ে ছ’টা আঙুল, আর কিছু জন্মদাগ, যেগুলো আর নেই। ঠিক?”
মিঞ্জিরি বলল, “তবে দুটোই সম্ভবত প্লাস্টিক সার্জারি করে ঠিক করা যায়। কিছু জন্মদাগ বয়স বাড়লে মিলিয়ে আসে। আমি গুগ্‌ল্‌ করে দেখেছি, লেজার ট্রিটমেন্টের আগে-পরে জন্মদাগের ছবিতে দাগ খুঁজে পাওয়া কিন্তু দুষ্কর।”
শ্রীপর্ণ বলল, “আবার শানু নিজেই বলেছে, যে ওর স্বামী ওকে গা-ঢাকা ছাড়া পোশাক পরতে দেয় না।”
ভুরু কুঁচকে দেবাঙ্কন বলল, “কেন?”
শ্রীপর্ণ বলল, “আমার ধারণা যেহেতু শানু নকল, তাই সোমেশ্বর চানস নিচ্ছে না। শানুর শরীরের যেখানে যেখানে জন্মদাগ থাকার কথা, সেসব জায়গার অনেকটাই শাড়ি পরলে দেখা যাবে। গ্রামে অনেকেই শানুকে ছোটোবেলায় দেখেছে। অত বড়ো, বিস্তৃত জন্মদাগ দেখে থাকলে অনেকেরই মনে থাকা উচিত। আদতে শানু সবসময়ই শরীর ঢাকা পোষাক পরত। স্কুলেও যে বয়সে মেয়েদের শাড়ি পরতেই হবে, তখন ওর বাবা বিশেষ অনুমতি করিয়েছিল ও যাতে স্কার্ট-ব্লাউজ পরেই স্কুলে যেতে পারে। ফলে ওর সমবয়সীদের থেকে ও আরও আলাদা হয়ে যায়। পরে যখন শাড়ি পরেও, ওর ব্লাউজ আর পাঁচজন মেয়ের মতন ছিল না, কলার তোলা গলাবন্ধ, আর ঝুল প্রায় কোমর অবধি। কিন্তু সোমেশ্বর হয়ত সে সব কথা জানে না?”
স্বপ্ননীল বলল, “আপনার অস্বস্তিটা বুঝতে পারছি, কিন্তু কোনও সলিড গ্রাউন্ড নেই, এগোনোরও উপায় খুব অল্প।”
হঠাৎ শ্রীপর্ণ লাফিয়ে উঠে বলল, “আর একটা আছে, আরে, আমি ভুলেই গেছিলাম। এটাও আশ্চর্য। শানু মিনিকে বলেছে, ও নাকি ভীষণ ভীতু। সোমেশ্বর না থাকলে ও রাতে একা থাকতেই পারে না। কী, বলো?”
মিঞ্জিরি বলল, “বলেছে। তো?”
শ্রীপর্ণ বলল, “আরে, ওর মতো সাহসী খুব কম ছিল। একবার মাঝরাতে শ্মশানে গিয়ে ছেলেদের ভয় দেখিয়েছিল। একা।”
কেউ কিছু বলছে না, ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে শ্রীপর্ণ বলে চলল, “ওই সময়েরই কথা — ক্লাস নাইন, বা টেন বড়োজোর। আমাকে ক্লাসের ছেলেরা চ্যালেঞ্জ করেছিল অমাবস্যার রাতে শ্মশানে যেতে। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাত্তিরে শ্মশানে যাচ্ছি, আর আমার বন্ধুরা তিনজন মুখে চুন-কালি মেখে ভয় দেখাতে আসছে। ওদিকে শানু করেছে কী, আমার কাছ থেকে শুনে রাতে কয়লার বস্তায় ফুটো করে মাথায় পরে এসেছে শ্মশানে — একা একা। তারপরে ছেলেরা যখন কাছাকাছি এসেছে, ও রাস্তার ধার থেকে উঠে এসে ওদের ‘আঁয়, আঁয়,” বলে ডেকেছে। ওরা তো দুদ্দাড়িয়ে পালিয়েছে। তারপর আমি যখন যাচ্ছি, তখন নাকি সুরে, ‘শীঁতুঁ এঁলিঁ? এঁখাঁনেঁ আঁয়…’ বলে ডেকেছে।”
“তুমি কী করেছিলে?” জানতে চাইল মিঞ্জিরি।
“আমি কি জানি ওটা কে? আমি ভেবেছি আমার বন্ধুরাই কেউ। লাঠি উঁচিয়ে ‘তবে রে’ বলে তেড়ে গেছি। তখন দৌড়ে আমার সঙ্গে পারবে না বলে, ‘শীতু, শীতু, আমি…’ বলে বস্তা খুলেছে। ওর কাছে শুনলাম বন্ধুরা আমাকে ভয় দেখাতে আসছিল, ও ওদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়েছে। ওকে বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে আমি ফিরি। তারপরে কয়েক দিন স্কুলে আসেনি। সকালে ঘুম ভাঙার আগে মা দেখেছিল সারা গায়ে কয়লার কালি, ঘরের মেঝেতে বস্তা। এমন মার খেয়েছিল — গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছিল — সময় লেগেছিল সারতে… মা-বাবা দু’জনেই খুব মারত। জমিদারের মেয়ে, জমিদারী চালে চলতে হবে… আর শানু ছিল গেছো মেয়ে। মা-বাবা যত কনট্রোল করার চেষ্টা করত, ততই চুপচাপ বিদ্রোহ করে মা-বাবার বিরুদ্ধে যেত… সেই জন্যেই আমার সঙ্গে অত বন্ধুত্ব…” একটু চুপ করে থেকে শ্রীপর্ণ বলল, “এই শানু আমাকে আজ চিনতে পারছে না, আমি মেনে নিতে পারব?”
মিঞ্জিরি বলল, “শুধু তাই নয়, এরকম একজন ভূতের ভয়ে রাতে একা থাকতে পারে না?”
হাত নেড়ে স্বপ্ননীল বলল, “পরিণত বয়সে সত্যি ভূত দেখেছেন হয়ত? শোনা যায় তো এমন…”
মিঞ্জিরি বলল, “না। আমাকে বলেছে ছোটো থেকে ভীষণ ভূতের ভয়। সোমেশ্বর যখন গ্রামের বাড়ির কনস্ট্রাকশনে যেত, তখন একা থাকতেই পারত না শহরের ফ্ল্যাটে।”
স্বপ্ননীল একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল, “কোন শহরে? কী ফ্ল্যাট?”
মিঞ্জিরি বলল, “এখানে ওদের ফ্ল্যাট আছে তো।”
দেবাঙ্কন বলল, “আচ্ছা লোক তো? এতক্ষণ ব্রাসেলস আর ক্যানাডা করলি — এখানে ফ্ল্যাট আছে বলছিস না?”
শ্রীপর্ণ বলল, “আমি জানতামই না। কোথায় ফ্ল্যাট?”
মিঞ্জিরি লজ্জা পেয়ে বলল, “আমাকে বলেছিল। মনে ছিল না। ওপিডান অ্যাপার্টমেন্টস-এ।”
শ্রীপর্ণ বলল, “বাব্বা! ওপিডান? ওখানে সব আপমার্কেট ফ্ল্যাট। এন.আর.আই!”
দেবাঙ্কন বলল, “এন.আর.আই-ই তো। তাহলে, স্বপ্ননীল, শুরু করার জায়গা পেয়ে গেলে…”
স্বপ্ননীল বলল, “কোনও ছবি আছে?”
আবার মুখ তাকাতাকি করল শ্রীপর্ণ আর মিঞ্জিরি। স্বপ্ননীল বলল, “কোই বাত নেহি। নেক্সট কবে যাচ্ছেন?”
শ্রীপর্ণ বলল, “এখন তো তেমন কোনও কারণ নেই…”
স্বপ্ননীল বলল, “একটা অজুহাত বানিয়ে যান। একটা ছেলে সঙ্গে যাবে। বলবেন আপনার কোলিগের-টোলিগের ছেলে কেউ। পাখি দেখে। তাই অ্যাত্তোবড়ো লেন্‌স্‌ লাগানো ক্যামেরা নিয়ে গ্রামে গেছে। পাখি-টাখি আছে নিশ্চয়ই বাগানে?”
পাখি! দ্রুতগতিতে পরিস্থিতি শ্রীপর্ণর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। অসহায়ের মতো তাকাল মিঞ্জিরির দিকে। মিঞ্জিরি বলল, “পেছনের বাগানে আছে। দোয়েল, হাঁড়িচাচা, ছাতারে…”
স্বপ্ননীল বলল, “তাই চলবে। অভাবে কাক, চিল, চড়াই দিয়েই কাজ চালানো হবে।”
শ্রীপর্ণ বলল, “খরচের একটা আন্দাজ যদি পেতাম…”
স্বপ্ননীল বলল, “সত্যি বলতে কী, ফাইনালি খরচ কত হতে পারে বলা খুব কঠিন। সেইজন্যই ডিটেকটিভরা দৈনিক ফি, আর তার সঙ্গে এক্সপেনসেস বলে কড়ার করে। ক্লায়েন্ট বাজেট অনুযায়ী বলে দেয় এতদিনের এক্সপেনস দেবে, তার বেশি হলে আবার অনুমতি নিতে হবে। আমার ওসব নেই। এতটুকু বলতে পারি, আপনার অসুবিধে হবে এমন অ্যামাউন্ট বিল করব না।”
১২
দিন পাঁচেক পরে দেবাঙ্কনের ফোন এল। “সন্ধেবেলা আয়।”
“রেজাল্ট কিছু এল? পজিটিভ?”
“পুলিশ বা ডাক্তার যদি বলে রেজাল্ট পজিটিভ সেটা কি আদতে পজিটিভ? আয় তো, খেয়ে যাবি। স্বপ্ননীলকেও ডেকেছি।”
সাড়ে আটটায় এসে ওরা দেখল স্বপ্ননীল অপেক্ষমান। তৈরি ছিল শ্রীমানও, সঙ্গে কফি আর পকোড়া।
“পকোড়া?” ঠাট্টা করে বলল মিঞ্জিরি। “রাতে শুনলাম খাওয়াবে?”
“খাওয়াব তো। সোনামুগের ডাল, পোস্ত-বড়া, ধোঁকার ডালনা আর পাবদা মাছের ঝাল। আগের দিন সময় দাওনি, দোকানের খাবার আনতে হয়েছিল।”
“রাত্তিরে দুপুরের ভোজ খাওয়াচ্ছিস?” জানতে চাইল দেবাঙ্কন।
শ্রীমান বলল, “দুপুরে আসলেই দুপুরে খাওয়াব। ভাবলাম সুযোগ তো পাইনে, তাছাড়া কাল রোববার আছে…”
শ্রীমান চলে গেল রান্নাঘর সামলাতে, ওরা তাকাল স্বপ্ননীলের দিকে।
“এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি তার ওপর এগোন’ যায়।”
“কী জানতে পারলেন?” ঝুঁকে পড়ল মিঞ্জিরি।
“ওয়েল, প্রথমত ওপিডানের টাওয়ার ‘সি’-তে ২২০২ নম্বর ফ্ল্যাট কিনেছিলেন ডঃ শান্তা চৌধুরী। বাইশ তলার দু’নম্বর ফ্ল্যাট। বছরখানেক আগে দিয়ে দেন স্বামী সোমেশ্বর নাথ-কে। এই যে, ওনারশিপ, আর দানপত্রের দলিলের ছবি। দুটোতেই শান্তা চৌধুরীর সই আছে, আর দশ আঙুলের ছাপ।”
ওরা শান্তা চৌধুরীর সই দেখল, বড়ো ছবি, স্পষ্ট পড়া যায় শান্তার নাম।
“এটা গ্রাম পঞ্চায়েত আর ব্লক অফিসে গ্রামে নতুন বাড়ি বানানোর আবেদনপত্র। সেই সঙ্গে আঙুলের ছাপ…”
মন দিয়ে দেখে শ্রীপর্ণ বলল, “একই?”
মাথা নাড়ল স্বপ্ননীল। “হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্ট দেখেছেন। ফ্ল্যাট যিনি কিনেছেন, আর যিনি হ্যান্ডওভার করেছেন তিনি একই লোক, কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত, আর ব্লক অফিসে আবেদনে হাতের লেখা আলাদা।”
মিঞ্জিরি জানতে চাইল, “আর আঙুলের ছাপ?”
এবার উত্তর এল দেবাঙ্কনের কাছ থেকে। “আলাদা। ওই একই ব্যাপার। ফ্ল্যাট কিনেছেন, আর হ্যান্ডওভার করেছেন একই আঙুল, কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন করেছে অন্য লোক।”
“কোনটা আসল, কোনটা নকল — বোঝার কি উপায় আছে?”
“নকল লোক ফ্ল্যাট কিনে দান করল, আর আসল লোক এসে গ্রামে বাড়ি বানাল? বোধহয় না। এখন যে আছে, সে-ই নকল। যিনি আজ থেকে চার বছর আগে বিদেশ থেকে এসে ‘একদিন এখানেই সেটল করব’ বলে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তাঁর সই আর আঙুলের ছাপ মিলে যাচ্ছে দানপত্রের আঙুলের ছাপের সঙ্গে। ওপিডানের ফাইলে ছবিও রয়েছে… এই যে।”
পাসপোর্ট ছবিটা দেখেই লাফিয়ে উঠল শ্রীপর্ণ। “এই যে শানু, এইটা শানু। কোনও সমস্যা নেই। দেখেই চেনা যাচ্ছে।”
উঁকি মেরে পাশ থেকে ছবিটা দেখল মিঞ্জিরি। “কিন্তু এটা কোনও ভাবেই আমাদের দেখা শানু নয়। তাহলে এখন কে রয়েছে গ্রামে?”
স্বপ্ননীল বলল, “শুধু তা-ই নয়। ছবির এই মহিলা — শান্তা চৌধুরী বলে তাঁকে এখন কনফিডেন্টলি ডাকতেই পারি… প্রায়ই শাড়ি পরতেন। তখন ওনার ব্লাউজের নিচে, পেটের বাঁদিকে, এবং ব্লাউজের বাঁ হাতার নিচে হাতের কিছুটা অংশে হালকা জন্মদাগ পরিষ্কার দেখা যেত। সিকিউরিটি সার্ভিসের একাধিক মেম্বার, বাড়িতে যে মেয়েটা কাজ করত, কমিউনিটি সেন্টারের লাইব্রেরিয়ান, সবাই দেখেছে। তবে যা করার এবারে তাড়াতাড়ি করতে হবে। কোনও রকমে যদি ওপিডান, বা গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস থেকে ওদের কাছে খবর পৌঁছয় যে কেউ খোঁজ নিয়েছে, তাহলে ওরা সাবধান হয়ে যাবে”
“মহিলাটি কে?” আবার জানতে চাইল মিঞ্জিরি।
মাথা নাড়ল স্বপ্ননীল। “বোঝা যাচ্ছে না। চার বছর আগে বাড়ি কেনার পর শান্তা চৌধুরী প্রতি বছর এসেছেন, থেকেছেন। দু’বছর আগে প্রথম আসেন এই ভদ্রলোককে নিয়ে — নাম সোমেশ্বর নাথ, পরিচয় — স্বামী। পরে নেমপ্লেটে সোমেশ্বর নাথের নাম যোগ করা হয়। এখনও আছে। বছরখানেক আগে দু’জনের সঙ্গে আসেন এই মহিলা। এনার নাম ধাম কেউ জানে না, কিন্তু মাস দুয়েক পরে সবাই একসঙ্গে চলে যান। তার আগে সোমেশ্বর নাথ কথায় কথায় কিছু লোককে জানান, পরদিন ভোরে শান্তার গ্রামের বাড়িতে শিফট করব — কবে ফিরব জানা নেই। গ্রামের বাড়ি নতুন করে বানানো হবে, ইত্যাদি। রেজিস্টারে লেখা আছে পরদিন ভোর চারটেয় ওদের গাড়ি বেরিয়ে যায়। গাড়িতে কে কে ছিল সেটা লেখার কথা নয়, তাই লেখাও নেই; অন-ডিউটি সিকিউরিটির গাড়ির ভেতরে দেখার অধিকার নেই, তাই দেখেওনি। তার পর থেকে ডঃ শান্তা চৌধুরীকে কেউ দেখেনি। ফ্ল্যাটও বন্ধ, কারও হদিস নেই।”
“ওরকম সব বাড়ি-টাড়িতে তো সিসিটিভি থাকে?” জানতে চাইল শ্রীপর্ণ।
“অত পুরোনো ফুটেজ থাকে না। মাসখানেক, বড়োজোর মাস দেড়েক… তার বেশি মেমরি কারও কম্পিউটারে নেই। কোনও প্রব্লেম যদি তার মধ্যে রিপোর্ট করে কেউ, তাহলে সেই জায়গাটা হয়ত রাখা হয়। নইলে নিজে নিজেই ওভার-রাইট হতে থাকে।”
শ্রীপর্ণ দেবাঙ্কনের দিকে তাকিয়ে বলল, “অতঃ কিম?”
“এবার তুই থানায় যাবি? কমপ্লেন করতে?”
“যাব। বোঝা-ই যাচ্ছে মহিলা দু’নম্বরী, আর সোমেশ্বর নাথ ইজ সামহাউ ইনভলভড।”
দেবাঙ্কন বলল, “সামহাউ না, দেখা যাবে ও-ই ব্রেন। মহিলা ইজ আ পন।”
“দেখিস বাবা, ভালো করে তদন্ত করিস। শেষে বেকসুর খালাস পেয়ে ফিরে হাজির না হয়…”
“দেরি করা যাবে না। আজ রাতেই গেলে ভালো হত, কিন্তু অফিশিয়াল কিছু কাজ সেরে যেতে হবে… তাই কাল সকালেই…”
১৩
পরদিন শ্রীপর্ণ আর মিঞ্জিরির সঙ্গে ওদেরই গাড়িতে দেবাঙ্কন আর স্বপ্ননীল রওয়ানা দিল। প্রথমে ডিস্ট্রিক্ট হেডকোয়ার্টার অফ পুলিশ — সেখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মহঃ সয়েফকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল দেবাঙ্কন।
“স্যার, বুঝতেই পারছেন, উই ফিয়ার দ্য ওয়ার্স্ট। পুলিশ মাস্ট মুভ কুইকলি।”
মহঃ সয়েফ হাসলেন। “এখনও ঘোড়ায় জিন দিয়েই চলো, দেবাঙ্কন? গুড। তবে ঠিক, দেরি করে লাভ নেই। কোন থানা বললে? নিয়োগীপাড়া?” ফোন তুলে বললেন, “নিয়োগীপাড়ায় বড়োবাবু কে?… বেশ… ফোন করে আমাকে কানেক্ট করে দাও…”
ফোন নামিয়ে কী বলতে যাবেন, আবার ফোন বাজল। ফোন তুলে বললেন, “পেয়েছ? বড়োবাবুকেই? বাঃ, লাইন দাও…” তারপরে বড়োবাবুকে কম কথায় বলে দিলেন কে যাচ্ছে, এবং কেন। বললেন, “দেখো, চট করে মুভ করতে হবে। রেডি থাকো, ওরা যাচ্ছে, ডায়রি করেই মুভ করবে। কতদূরে থানা থেকে?… ও, আচ্ছা… কী হয় আমাকে জানাবে।”
ফোন নামিয়ে বললেন, “সবই হলো, এবার এর পরিচয়? নাম তো স্বপ্ননীল — তার পরে? এই কেসে ওর কী রোল?”
দেবাঙ্কন বলল, “ও-ই কেসটা ক্র্যাক করেছে। প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর। ব্রাইট ফিউচার…”
“সম্ভাবনাময়?” হাসলেন সয়েফ। স্বপ্ননীলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এর চেয়ে বড়ো বার্ডেন আর হয় না, জানো তো?”
নম্রভাবে স্বপ্ননীল বলল, “হ্যাঁ, স্যার।”
“বেশ বেশ। মাই বেস্ট উইশেস। মনে থাকবে তোমার কথা। কার্ড আছে?”
গলার সুরে বোঝা গেল সময় শেষ হয়ে গেছে। স্বপ্ননীল বিজনেস কার্ড দিল, ওরা উঠে পড়ল।
দু-আড়াই ঘণ্টা লাগল না, এক ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটেই পৌঁছে গেল নিয়োগীপাড়া। ডায়েরি নিয়ে বড়োবাবু বললেন, “আপনারা সকলেই যাবেন তো?”
দেবাঙ্কন শ্রীপর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল, “তোরা যাবি? ওরা জেনে যাবে কে কমপ্লেইন্যান্ট। জামিন তো হবেই… তখন যদি গ্রামেই ফিরে যায়?”
এক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে শ্রীপর্ণ বলল, “না, রে। আমাদের না দেখলে অন্য কাউকে সন্দেহ করবে — যেমন চিতু, হারান, বা সৌদামিনী। সঙ্গেই যাই বরং…”
এবারে দেবাঙ্কন ও-সির সঙ্গে জিপে উঠল, পুলিশের দুটো জিপ আর শ্রীপর্ণর গাড়ি সারি বেঁধে গ্রামে ঢুকে সবাইকে সচকিত করে দিল। গ্রামটা ছড়ানো ছেটানো — প্রথমে প্রাইমারি স্কুল, তারপরে হোমিওপ্যাথ নারায়ণচন্দ্র ভটচাজের আদি বাড়ি, তারপরে কুমোরপাড়া। বাজারের পরে ডানদিকে ঘুরে মুখুজ্জেদের বাড়ি। ইংরেজদের আমলে এদের বদনাম ছিল, সাহেবদের পা’চাটা বলে। ছোটোবেলায় শুনত এই বদনামের জন্যই ওরা গাঁ-ছাড়া হয়েছে। এবারে ডাইনে গেলে শ্রীপর্ণদের বাড়ি, আর সোজা গেলে জমিদার চৌধুরীদের বসত।
পুলিশের জিপ দুটো গিয়ে দাঁড়াল গেট জুড়ে। হারান তখনই ঢুকছে, পুলিশ দেখে বিনা-বাক্যে গেট খুলে দিল। জিপগুলো ঢুকল, শ্রীপর্ণর গাড়ি রইল বাইরেই।
“স্বপ্ননীল, তুমি যাবে না?”
“না, স্যার। আমি থাকলাম আপনাদের সঙ্গে। পুলিশের কাজ পুলিশ করবে।”
মিঞ্জিরি বলল, “তুমি কেসটা সল্‌ভ্‌ করলে, ওদের কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে না?”
মাথা নাড়ল স্বপ্ননীল। বলল, “কাছ থেকে দেখেছি, ম্যা’ম। ইনভেস্টিগেশনে এসেছিলাম।”
চমকে শ্রীপর্ণ বলল, “মানে? এই বাড়িতে?”
স্বপ্ননীল বলল, “হ্যাঁ, স্যার। একটা প্রশ্নের উত্তর আমরা এখনও জানি না। ডঃ শান্তা চৌধুরী কোথায়? সেটাই বোঝা যায় কি না দেখতে এসেছিলাম।”
মিঞ্জিরি জিজ্ঞেস করল, “কিছু বুঝলে?”
মাথা নাড়ল স্বপ্ননীল। “না। দুটো বাড়িই ভালো করে খুঁজতে হবে।”
চমকে শ্রীপর্ণ বলল, “ওই ভাঙা বাড়িতেও থাকতে পারে?”
স্বপ্ননীল বলল, “ওখানেই থাকার সম্ভাবনা বেশি। এ বাড়িটা বেশি বড়ো না। আপনারা দেখেছেন কি না জানি না, দুটো বেডরুম — একটা পিসিমার, একটা ওদের। মাঝখানে ড্রইং রুম, ওদিকে একটা বইয়ের ঘর, আর কিচেন কাম ডাইনিং। এ বাড়িতে সৌদামিনী প্রায় সারাক্ষণ থাকে, আরও দুজন কাজের লোক আসে — হারানকে আসতে হয় বাড়ির ভেতরের গাছপালাগুলোর দেখাশোনা করতে, আর সপ্তাহে দু’দিন আসে নিয়তি — ওর কাজ সোফা, টেবিল, খাট বিছানা — এগুলোর ধুলো ঝাড়া। এখানে লুকিয়ে রাখা কঠিন, নয়, অসম্ভব।”
অবাক হয়ে মিঞ্জিরি বলল, “এত সব জেনে গেলে এক দিনে? আমি তো প্রতিবেশী হয়ে এত খবর জানি না!”
স্বপ্ননীল হেসে বলল, “আপনি তো গোয়েন্দাগিরি করতে আসেননি। আমি এসেছিলাম জমি-বাড়ির দালাল হয়ে। বলেছিলাম, পুরোনো বাড়িটা কিনতে চাই। যেমন বেচবেন — জমিসুদ্ধ গোটা বাড়ি, জমি ছাড়া বাড়ি… যদি বলেন, বাড়ি ভাঙবেন, তাহলে পুরোনো ইঁট, কাঠ, জানলা, দরজা, কড়ি-বরগা কিনব।”
শ্রীপর্ণ বলল, “কী বললেন?”
“বললেন, বাড়ি সারিয়ে বাসযোগ্য করবেন! আমিও ছাড়বার পাত্তর নই, বললাম, আমার কনস্ট্রাকশন বিজনেস আছে। বাড়ি সারিয়ে নতুন করে দেব।”
শ্রীপর্ণ আর মিঞ্জিরি হাসল। বলল, “রাজি হলেন?”
স্বপ্ননীল বলল, “না। হাঁকিয়ে দিলেন। তাই ভাবছি ওই বাড়িটাতে শান্তা চৌধুরী থাকতেও পারেন। বার বার বলা সত্ত্বেও দেখতে দিলেন না বাড়িটা।”
শ্রীপর্ণ চেয়ে রইল গাছপালার আড়ালে পুরোনো জমিদারবাড়ির দিকে। আছে ওখানে শানু? কী অবস্থায় রয়েছে? এখনই ছুটে যাওয়া যায়? হঠাৎ বুঝতে পারল ওর বুকের ভেতরে দুম দুম করে ধাক্কা দিয়ে হার্ট ছুটতে শুরু করেছে দ্রুতগতিতে। মুখের ভেতরটা শুকনো। হাঁটুতে জোর কম… একটু দম নিয়ে চোখ বন্ধ করল। গাড়ির বনেটে হেলান দিয়ে দাঁড়াল।
অন্যরা খেয়াল করেনি। শ্রীপর্ণর মনের অবস্থা। মিঞ্জিরি বলল, “বাড়িতে কেউ থাকলে জানা যাবে না? সামনে রাস্তা, বাগানে লোক কাজ করছে…”
স্বপ্ননীল বলল, “বাগান তো এখানে। ও বাড়িটা আরও কতটা ওদিকে দেখেছেন? এ রাস্তায় তো কেউ যাতায়াতও করে না, আরও ওদিকে তো কেবল ধানজমি। আগেকার দিনের বাড়ি, হয়ত জানলা-টানলা নেই এমন ঘর আছে। বা কোথাও বেঁধে রেখেছে — একবেলা আধপেটা খেতে দেয়, দুর্বল — ডাকাডাকি চেঁচামেচি করতে পারেন না… ওই, যে পুলিশ বেরিয়ে আসছে। সঙ্গে ওরাও রয়েছে দেখছি। বেশ চটপট অ্যারেস্ট করেছে তো!”
একটা জিপ নকল শানু আর সোমশ্বরকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। যাবার সময় ওরা দেখতে পেল ভেতর থেকে কটমট করে ওদের দিকে চেয়ে রয়েছে সোমেশ্বর। হঠাৎ আর বুকের কষ্টটা নেই — বরং হাত তুলে টা-টা বলার একটা অদম্য ইচ্ছে চেপে রাখতে হলো শ্রীপর্ণকে। বাড়ির সামনে থেকেই হাত নেড়ে ওদের ডাকল দেবাঙ্কন। ওরা ঢুকল।
দেবাঙ্কন বলল, “বেশি দেরি হয়নি স্বীকারোক্তি পেতে। এস-আই গিয়ে ডঃ শান্তা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন — প্রথমে তো ওই মহিলাকেই শান্তা চৌধুরী বলে চালাবার চেষ্টা করেছে, তখন ও শান্তা চৌধুরীর ছবি দেখিয়ে বলেছে, কই, এঁরা তো একই ব্যক্তি নন? দেখি, পাসপোর্ট? তখন বলেছে পাসপোর্ট ওপিডানের ফ্ল্যাটে রয়েছে। পুলিশ বলেছে, কোনও ব্যাপার না। জন্মদাগটা দেখি? তখন আবার গরম নিচ্ছে — একজন মহিলার শরীরে জন্মদাগ দেখতে চাইছেন কেন, এই সব। তখন পুলিশ স্বরূপ ধারণ করেছে। বলেছে দাগ গলাতেও রয়েছে, পেটেও। আমরা মহিলা এস্কর্ট দিয়ে নিজেরাই খুলিয়ে দেখে নিচ্ছি, চলুন থানায়। আর আপনার পেপার্স কোথায়? বের করুন। তখন মহিলা ভেঙে পড়ে। বলে ওর নাম শ্যামলী খান। সোমেশ্বর ওকে জোর করে শান্তা চৌধুরীর ভূমিকায় নাটক করাচ্ছে।”
শ্রীপর্ণ বলল, “আর শানু?”
একটু চুপ করে থেকে দেবাঙ্কন বলল, “বলেছে মেরে ফেলেছে। ভিতের মধ্যে পুঁতে রেখেছে।”
এক লহমায় শ্রীপর্ণর ভেতরটা ঠাণ্ডা হয়ে এল। শানু নেই! যদিও ওর-ও মনে হচ্ছিল — বিশেষত স্বপ্ননীল ছবিগুলো দেখানোর পরে — যে শানুকে আর কোনও দিন দেখতে পাবে না, তবু মনে যে একটা আশা ছিল না, তা নয়।
ও-সি এগিয়ে এলেন। “আসুন। ও বাড়িটাও ভালো করে খুঁজে দেখতে হবে… হতেও তো পারে ওরা মিথ্যে বলছে… এখানকার ব্যবস্থা করেই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যাব। কনফেশন আজই লিখিয়ে নিতে হবে। সোমেশ্বরের মাথা ঠাণ্ডা হলে নইলে স্টেটমেন্ট উইথড্র করে নেবে।”
দেবাঙ্কন বলল, “আপনি আপনার কাজ করুন। ওই বৃদ্ধার দেখাশোনারও ব্যবস্থা করতে হবে। আপনারা ওবাড়িটা সার্চ করে বেরোনোর পরে আমরাও বেরিয়ে যাব।”
চট করে বললেও চট করে হলো না। প্রায় সাতজন পুলিশকর্মী তিনতলা বাড়িটা ঘুরে, অজস্র বন্ধ দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে ঢুকে খুঁজতে সময় নিল প্রায় ঘণ্টা তিনেক। শানুর কোনও হদিসই পাওয়া গেল না।
(ক্রমশঃ — আগামী রবিবার শেষ)

PrevPreviousডাক্তারির কথকতা-৬ : যাত্রা
Nextএক অভিনব আন্দোলনNext
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

দীপ জ্বেলে যাও ২

March 22, 2023 No Comments

আত্মারাম ও তার সঙ্গীরা রওনা দিল দানীটোলার উদ্দেশ্যে। দল্লিরাজহরা থেকে দানীটোলা বাইশ কিলোমিটার হবে। বিশ না বাইশ, ওরা অত গ্রাহ্য করে না। ওরা জানে এই

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

March 21, 2023 1 Comment

পশ্চিমবাংলা এই মুহূর্তে অ্যাডেনভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত। আইসিএমআর-নাইসেড-এর সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ সমীক্ষা  জানাচ্ছে, ভারতের ৩৮% অ্যাডেনোভাইরাস রোগী পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এমনকি সুপরিচিত ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান-এ একটি

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

March 20, 2023 No Comments

৪/৩/১৯৯০ শৈবাল–আমাকে প্রথমে নির্বাচনের খবর। আমরা একটাও জিততে পারিনি। জনকও হেরেছে। ভেড়িয়া ৭০০০ ভোটে জিতেছে। আমরা গ্রামে ১২ হাজার ভোট পেয়েছি। বি. জে. পি. ২১

গ্রামের বাড়ি

March 19, 2023 No Comments

১৪ দিন দশেক পরে দেবাঙ্কন এসে হাজির। বলল, “তোদের কফি ধ্বংস করতে এলাম। বাপরে বাপ, যা গেল! যাক, চার্জশিট হয়ে গেছে। সাংঘাতিক কনস্পিরেসি। সোমেশ্বর নাথ

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

March 18, 2023 No Comments

খবরের কাগজে কত খবরই তো আসে। বড় একটা অবাক হই না। কিন্তু একখানা খবর পড়ে একেবারে চমকে গেলাম। কলকাতার একটি নামকরা কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে

সাম্প্রতিক পোস্ট

দীপ জ্বেলে যাও ২

Rumjhum Bhattacharya March 22, 2023

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

Dr. Jayanta Bhattacharya March 21, 2023

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

Dr. Asish Kumar Kundu March 20, 2023

গ্রামের বাড়ি

Dr. Aniruddha Deb March 19, 2023

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

Dr. Bishan Basu March 18, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

428442
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]