করোনা ভাইরাস বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। পাশে পড়ে আছে গরম জলের ব্যাগ, ব্যথার মলম প্রভৃতি। এমন সময় দরজা খুলে ডেঙ্গু-র প্রবেশ।
‘কি রে, কি হল? একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছিস দেখছি!’ ডেঙ্গু বলল।
‘আর বলিস না, গতকাল সন্ধ্যাবেলা একটু ধর্মতলার দিকে গিয়েছিলাম।’
‘কেন, কি করতে?’
‘আরে কাঁহাতক আর অফিস-কাছারি, ট্রাম-বাস, হাসপাতাল-ক্লিনিকে ঘোরাঘুরি করা যায়! তাই ভাবলাম পুজোর বাজারটা একটু ঘুরে দেখে আসি।’
‘তারপর?’
‘তার আর পর নাই। কী ভীড়, কী ভীড়! ভীড়ে ভাসতে ভাসতে লিন্ডস স্ট্রীট হয়ে নিউ মার্কেট অবধি পৌঁছতে চিঁড়ে-চ্যাপটা হয়ে গেছি।’
‘তারপর?’
‘খুব কষ্ট হচ্ছিল, তবু ভাবলাম মজাটা দেখি। চারিদিকে দলে দলে লোক মরছে, তার মধ্যে এরা কি করে বাজার করে- সেটা একটু দেখে আসি।’
‘তুই নতুন তো, তাই অবাক হচ্ছিস। আরে ভাই, বাঙ্গালী এক অদ্ভুত জাতি! সবাই সব জানে যে কিভাবে ডেঙ্গু হয়। তবু ষ্টাইল মেরে হাফপ্যান্ট, হাতকাটা জামা পরে ঘুরে বেড়ায় আর বাড়িতে বাড়িতে জল জমিয়ে রাখে।’
‘বাঙ্গালী যা পারে করুক। কিন্তু আমি তো ব্যথায় আর উঠতেই পারছি না।’
‘এতটা চোট লাগল কি করে?’
‘ডিসপ্লে বোর্ডে ৫০% ডিসকাউন্ট দিচ্ছে দেখে একটা বড় জুতোর দোকানে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়লাম। একে তো এসি শোরুম। গিজগিজে ভীড়। তাতে একজন আর একজনের বগলের তলা দিয়ে গিয়ে ডিসকাউন্টের জুতো বাছছে। দম আটকে আসছিল আমার! হঠাৎ মাথায় জুতোর বাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে সব অন্ধকার।’
‘তাহলে বলছিস পুজোর ভীড়ে জুতোর বাড়ি খেয়ে তোরা বিদায় নিবি?’
‘এঁহ! আমি দুদিন বিছানায় পড়েছি তো কি হয়েছে! আমার জ্ঞাতি-গুষ্টি, চ্যালাচামুন্ডারা দলে দলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। পুজোর পরে দেখ না কি হয়! প্যান্ডেলের সামনে দলে দলে শুয়ে থাকতে হবে। হাসপাতালে বেড জুটবে না।’
‘ওসব ছাড়। নিজের ব্যাথার চিকিৎসাটা আগে করা।’
‘ভাই, তোর তো এবছর কাজ নেই। বেকার। একটু গা হাত পা ম্যাসাজ করে দে না!’
ডেঙ্গু করোনা ভাইরাসকে গরম সেঁক ও ম্যাসাজ করতে লাগল।
(বি.দ্র. লেখাটা আমার। ছবিটা নয়। মনের আনন্দে শেয়ার করা যেতে পারে)