সেল্ফি
করোনা ভাইরাস দুর্গামন্ডপের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল।
অষ্টমী পুজোর অঞ্জলি হয়ে গেছে। মন্ডপ প্রায় ফাঁকা। চার-পাঁচ জন সুন্দরী মহিলা প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে সেল্ফি, থুড়ি গ্রুপফি, তুলছিল। নানা রঙের শাড়ি। কারো মুখে মাস্ক নেই।
পুরোহিতের মুখে সাদা থান কেটে বানানো পুজো কমিটির ছাপ দেওয়া একটা কাপড়ের মাস্ক।
কার্তিক একটা শসায় কামড় দিয়ে করোনার কাছে এসে বলল- ‘কি রে, আলসেমি করছিস যে! কাজকর্ম নেই না কি?’
‘নাঃ, কাজ যা করার সকালে অঞ্জলির সময়ই করা হয়ে গেছে। ও পাড়ার ঘনাদা, নতুন গলির মেসোমশাই, পুকুরপাড়ের দিদিমা- সব কটাতে ঢুকে গেছি। এখন আমার রেষ্ট।’
‘সে কি রে! এখনো তো সামনে এতগুলো লোক! শুধু পুরোহিত মশাই-এর মুখে মাস্ক পরা। আর কারো মুখেই তো মাস্ক নেই!’
‘পুজোটা যাক, তারপর পুরুতমশাইকে দেখছি! তবে ছোবলটা ছোট করে দেব। নাহলে বেচারা সামলাতে পারবে না।’
‘পুরুত মশাই-এর তো তবু মুখ ঢাকা আছে!’
‘আরে, ওই ধুতি-কাটা মাস্কে কি হবে? ও জিনিস টপকানো আমার ‘বাঁয়া হাত কা খেল’।’
‘তাই না কি?’
‘হ্যাঁ, আমরা হলাম করোনা প্রজাতি। এন-৯৫ ছাড়া অন্য কিছুতে আটকালে বংশের বদনাম হয়ে যাবে একেবারে!’
‘আর যারা মাস্ক ছাড়া ঘেঁষাঘেঁষি করে সেল্ফি তুলছে, তাদের?’
‘এই জন্যেই গনেশ দাদা তোমার উপর রেগে যায়। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছোঁকছোঁক করাটা তোমার স্বভাব!’
‘কিন্তু এটা অন্যায় নয়? নতুন গলির মেসোমশাইকে ধরবি, পুকুর পাড়ের দিদিমাকে ধরবি আর এদের ছেড়ে দিবি!’
‘রূপের আগুন। বুঝলে কার্তিকদা, রূপের আগুন। ওই আগুনে হস্তিনাপুর ঝলসে গেল, ট্রয়নগরীর পতন হল- আর ভাইরাস তো কোন ছার! পুড়ে মরার কোনো ইচ্ছে আমার অন্ততঃ নেই। ম্যাচিং মাস্ক পরে বা না পরে যত খুশী সেল্ফি তুলুক গে – আমি ওদের ধারে কাছে নেই। তোমার ইচ্ছা হয় ফ্লার্ট করোগে যাও!’
‘না রে ভাই, যুগ বদলে গেছে। বয়সও হয়েছে। দেখছিস না, আপেল-টাপেল না, শসা খাচ্ছি।’
খুব সুন্দর, এই অতিমারির সময় যেখানে সবাই চিন্তায় আছে সেইসময় এই ধরনের লেখা মনকে হাল্কা করতে অবশ্য সাহায্য করে থাকে
ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন আর আমাদের এই ভাবেই চিন্তমুক্ত হতে সাহায্য করুন
দারুন উপভোগ্য লেখা।।।
বেশ মজাদার লেখা। আর হাসির মাধ্যমে স্পষ্ট করে সামাজিক বার্তা। ভালো লাগলো।