সতেরোটা দিন ধরে কেউ জিজ্ঞেস করেনি,
ওরা হিন্দু না মুসলমান, কজন শিখ আর কজন খ্রীষ্টান।
সতেরোটা দিন ধরে কেউ ভাবেনি কজন বাংলার
শ্রমিক আর ক’জন ঝাড়খণ্ড বা ছত্তিশগড়ের,
সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রাদেশিকতা তেমন অন্ধকার ছড়াতে পারেনি।
সতেরোটা দিন ভগবান আল্লাহ গড অসংখ্য দেশবাসীর প্রার্থনা শুনেছেন,
যাদের প্রায় কেউই ওই একচল্লিশ জনের রক্তের সম্পর্কিত নন,
তবুও সবাই ভারতবর্ষের অংশ,
সেই হেতু পরমাত্মীয়।
সতেরোটা দিন ভগবান আল্লাহ গড নিশ্চুপ থেকেছেন,
আর সশব্দে দিনরাত এক করে কাজ করে গিয়েছেন
এক ঝাঁক মানুষ,
একটার পর একটা যন্ত্র ভেঙেছে,
নতুন ধস নেমে সামনে এগোনোর পথ বন্ধ করেছে,
তবু হারাতে পারেনি তাঁদের।
শুধু তো পাহাড় খোদা নয়,
ভেতরের মানুষগুলোর পুষ্টি ও মনোবল ভাঙতে দেননি যাঁরা,
কেউ তাদের নাম না জানলেও, আমরা জানি,
তাঁরা সবাই ছদ্মবেশী ঈশ্বর।
সতেরোটা দিন ভারত অপেক্ষা করেছে তার সন্তানদের ঘরে ফিরে আসার।
কেউ প্রশ্ন করেনি আপতকালীন সুড়ঙ্গ ছিলো না কেন,
কেউ খোঁজ করেনি বরাত পাওয়া সংস্থার মালিকরা কোথায় ছিলেন,
কেউ জিজ্ঞেস করেনি ওই নিয়ত-ভঙ্গুর পাহাড়ি এলাকায় আদৌ সুড়ঙ্গের দরকার ছিলো কিনা।
দেশ শুধু গুনেই গেছে.. আজ একদিন.. আজ দুদিন।
সামনের সতেরো দিনে যদি কেউ এই সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন না করে,
তবে সতেরো মাস বাদে,
বলিউডের একটা সিনেমা ছাড়া আর কিছু চিহ্ন থাকবে না এই ভয়ানক বিপজ্জনক ভুলের্,
আর সেই প্রবল পক্ষপাতী চিত্রনাট্যকে আমরা
ইতিহাস বলে ভুল করবো।
আর হয়তো বা সতেরো বছরের মধ্যেই, হিমালয় বুঝিয়ে দেবে,
সে কিছুই ভোলেনি,
বারবার একই ভুল হয়তো করবেও না সে ক্ষমা আর।
হয়তো একচল্লিশটা ভুলে যাওয়া মানুষ নিভৃত প্রার্থনায় বলবে তখন,
‘ বাঁচুক আটক লোক। আলোয় ফিরুক তারা আরো একবার’
‘হয়তো’ ঘটনা যেন কখনো না হয়,
দরকার তাই আজ প্রশ্ন তোলার।