করেছো টা কী? ওষুধপত্র সব বন্ধ কেন? কোলকাতায় গিয়ে পরীক্ষাগুলো করাতে বলেছিলাম। করাও নি? ডা.ঘোষের গলায় বিরক্তির ভাব স্পষ্ট।
– কচ্ছিলাম গ বাপু। কোলকেতায় অনেক পয়সার টেস করাইছ্যা। তুমি যা বলছল অরাও সেউটাই বলছ্যা। বাচ্চার লিভারের নালিটা জন্ম থ্যিকানু বন্দ। সেউজন্য বাচ্চার জোন্ডিস কাটে নি। অপ্রেশন করতে হবে। আবার নাকি দরকার পড়ল্যা লিভার বদলাইতেও হতে পারে।
– হুঁ। সে তো বুঝলাম। তারপর? লিভারের রোগের জন্য যে ওষুধগুলো নিয়মিত খাওয়াতে বলেছিলাম সেগুলো বন্ধ কেন? অপারেশনটাও তো করাও নি..
– কী বলব বাপু, তুমি ত বকব বল্যা লোজ্জায় আসতেও ভয় লাগছল..
– বকবো তো বটেই। আগে লজ্জা আর ভয়ের মাথাটা টকাস করে মটকে বলে ফেলো তো বাপু এদ্দিন কী কী কচ্ছিলে?
– বকব নি বল?
– আচ্ছা বলো, বলো। কিন্তু একদম সত্যি কথা বলবে।
হেসে ফেললেন ডা.ঘোষ। পরিবেশের গুমোট ভাবটা কাটতে আমরাও একটু স্বস্তি পেলাম। এ আমাদের বহুদিনের চেনা ব্যাপার – ডা.ঘোষ বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারেন না।
– বাপু শুন, কোলকেতায় যাবা-আসা, বাইর্যা দুটা লোকের খাবা, ওসুদ সব মিলিয়া অনেক টাকা খরচা হয়েইছল। পরীক্ষাগুলাও অনেকগুলা বাইরে থেক্যানু করতে হছল। আরও টাকা লাগত, মোরা আর পারছিলি নি..
ডা.ঘোষ কনুইটা টেবিলে রেখে, গালে হাত দিয়ে বসলেন।
ষাটোর্ধ্বা ভদ্রমহিলা বলে চললেন- তখন বাপু যে যেমন বলছ্যা করছি। একজন হেমাপাতি খাবাইতে বলল। হেমাপাতি ডাক্তারের কাছে যেতে সে বলল, সব এলাপাতি ওষুদ বন্দ কর্যা হেমাপাতি বিসসাস লিয়্যা খাবাইলে ঠিক হোয়েইব্যা। তিন হপ্তা খাবাইলি বাপু, কিচ্ছু কমা ত দূরের কথা মেয়াঝিটার মোর গায়ের চুলকানি বেড়েইল। ক’দিনে আরও যেন হলুদ হয়্যা, পাদলা পাইখানা, কাশি-শ্বাসকষ্ট সব আরম্ব হয়েইল।
ডা.ঘোষ নির্বাক ছবির মতো বসে থাকলেন।
নিস্তব্ধ ঘরে বয়স্কা ভদ্রমহিলা ততক্ষণে ফোঁপাচ্ছেন- তারপর ঠাকুরের মানত, মক্কার জল, সুলেমান পাথর, হনুমান চালিশা যন্ত্র, গাছের শিকড় বাটা.. কিচ্ছু বাদ দেইনি বাপু। তবু মেয়াঝি টা মোর.. কী ফুটফুটাটি ছিল গো..
বেশ খানিকক্ষণের নীরবতা ভেঙে ডা.ঘোষ বললেন- আর কোলকাতা যাও নি তাহলে?
– আগের হপ্তায় একবার গেছলি। দেখ্যা-টেখ্যা বলল, এখন লিভারটা পুরা পচেইছ্যা। অপ্রেশন কর্যা নালি খুল্যা লাভ নাই। লিভার বদলিয়াও খুব বেশি আশা নাই। তার উপ্রে লিভার এখন পাবাও মুশকিল আর যদি বা পাবা যায় অত খরচাপাতি কোর্যা, অতদিন ভোত্তি রেখ্যা, অত ওসুদ দিব্যার ক্ষমতাও মোদের নাই। অখন যা হবে হবে, মোদের ভাগ্যে নাই। গোরিব লোকের আবার শরীর..
হঠাৎ মাস ছয়েকের শিশুকন্যা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। যে হাসিতে পাথরে ফুল ফোটে এখনও। যে হাসি দখিনা হয়ে ঘর্মক্লান্ত বুকের তাপ শুষে নেয়।
ডা.ঘোষ আলতো করে বাচ্চাটার গাল টিপে দেন।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে থাকেন ভদ্রমহিলা – হাঁস রে মা, হাঁস। য’টা দিন আছু ভাল কর্যা হেঁসে লে ত মা।
তারপর ডা. ঘোষকে বললেন- বাচ্চাটা যদ্দিন আছে তুমি যেমন পার ওসুদ দিয়্যা ভাল রাখ ত দেখি। আমরা আর কথাও যাব নি। বেশি কিছু টেস-ফেস লিখ নি। আর পারব নি।
– একটা মাত্র রক্ত পরীক্ষা করতে দিচ্ছি, এইটুকু করাতেই হবে। এই ওষুধগুলো শুরু করে দাও। আমি দেখছি কিছু ওষুধ জোগাড় করা যায় কিনা। তোমরা বাইরে একটু দাঁড়াও। মেশিনের গ্যাস দিতে হবে।
তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে স্যার বলতে থাকলেন, মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়েই এইসব অপবিজ্ঞান আর বুজরুকির চক্র গড়ে উঠেছে। টিভি খুললেই দেখবি উমুক আংটি, তমুক পাথরের জালিয়াতি কারবারের বিজ্ঞাপন। এগুলো সম্প্রচারের ছাড়পত্রও পেয়ে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। লোকে তার ফাঁদে পা ফেলছে। মানুষেরই বা দোষ কী বল? আজ যদি সরকার সবার স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিত তাহলে এই পরিবারটাকে টাকার অভাবে মাঝপথে চিকিৎসা থামানোর দরকার পড়তো না। বুজরুকির ফাঁদে পড়ারও দরকার হ’ত না। বিলিয়ারি আট্রেসিয়া এমনিতেই খুব খারাপ রোগ। তারপর এইসব করতে গিয়ে এখন অবস্থা পুরো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যাক গে, সেসব ছাড়। বাচ্চাটা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। নেবুলাইজেশন আর ওষুধগুলো তাড়াতাড়ি শুরু কর..
– স্যার, তাহলে বাচ্চাটা কি আর..
– শোন, আমরা ডাক্তার। যতক্ষণ হৃৎপিণ্ডটা বুকের খাঁচার মধ্যে ধুকপুক করছে ততক্ষণ আমরা ‘না’ বলতে পারি না। সব লড়াই তো জেতা যায়না.. তবু লড়াই ছাড়বো নাকি?
পাথর, আংটি যখন ডাকতার বাবুদের হাতে দেখি তখন ভীষণ অবাক হয়ে যাই।এনারা যদি বিশসাস করেন তবে অশিক্ষিত মানুষ দের দোষ দেব কি করে।
Like!! I blog quite often and I genuinely thank you for your information. The article has truly peaked my interest.
I learn something new and challenging on blogs I stumbleupon everyday.