প্রায় তিরিশ মাস (আড়াই বছর লিখে লিখে আঙুল পচে গিয়েচে) পরে ফেসবুকে ফিরে কেমন একটা ‘গিমি গড়গড়ি কেরোসিন বোম’ টাইপের ফিল হচ্চে।
সদ্য সংশোধনাগার (জেল লেখা যাবেনি, নঠ পোলিটিক্যালি করেক্ট) থেকে বেরোলুম মালুম দিচ্চে — ফেসবুকের রাস্তা, দেওয়াল, পাঁচিল সবই অপরিচিত লাগচে।
দুটি শব্দবন্ধের কিঞ্চিৎ আধিক্য দেকচি। এক, ডিজিটাল ক্রিয়েটর আর দুই, রিল।
ডিজিটাল ইন্ডিয়া পর্যন্ত শুনে ফেসবুকগৃহ ত্যাগ করেছিলুম — এখন ডিজিটাল ক্রিয়েটর শুনে ফের সাইবার ডিকশনারি ঘাঁটতে হলো। ব্যাপার বুঝলুম, কিন্তু নিজেকে কিছুতেই সেই বোঝা-টার সঙ্গে ফিট করাতে পারলুম না। আর ‘রিল’ শুনে এবং দেখে সেরেফ রাজকন্যের গুলিসুতো গিলে ফেলার দশা হলো আমার।
আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স না কি এক ধম্মের ষাঁড় এসে সারা ফেবু জুড়ে জাল্লিকাট্টু খেলচে দেখলুম — আমার ঊনবিংশ শতাব্দীর সাজানো বাগানখানা তচনচ হয়ে গেল, কিচ্ছুটি করতে পারলুম না।
এদানীং ডকের শ্রমিককুলের ফাটা গোড়ালির কাটা ঘা সেলাই করে করে আর কাউয়া বিরিয়ানিজনিত দাস্ত-বমিতে শিরায় শিরায় ‘পানি’ চড়িয়ে, মাতার ঘাম পায়ে ফেলে বাড়ি ফিরে দু’পাতা নন্দনতত্ত্ব লেখা আমার এমনিতেই ডকে উঠে গিয়েচে।
তবুও, পূর্বতন বায়বীয় জগতের কিছু বন্ধুজন এখনো পুরনো মমতাবশত রয়েচেন দেখলুম সঙ্গে — নিতান্ত করুণায় আমার কলম্বসের আমলের কলমবাজি দু’চারখানা পড়চেনও তাঁরা — কিন্তু পষ্ট বুঝচি, সুর কেটে গিয়েচে কোথাও, জীবনবীণাটি বেসুরে বেজে বেজে এখন শুধুই শব্দদূষণ ছড়াচ্চে।
এমনিতেই প্রাচীনপন্থী ছিলুম — লেখায় দারিদ্র্য আর ফ্যাঁচফেঁচে অনুভূতির আধিক্য ছিল, কিছুটা ঠাকমা মার্কা ছুঁচিবাইও যে ছিল, এ কতা অস্বীকার করবার নয়। আমার ফেবুর দেওয়ালেও তাই যে ক’টা লেখা থেপেচি, সেগুলো ঘুঁটের মতোই বেরঙ এবং অনুজ্জ্বল বটে।
তবে আমার নন আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ঘুঁটের প্রপার মার্কেটিংটুকুও করে উঠতে পারলো না, এই দুঃখু! নয়ত পোষ্কার দেখিচি কাউডাং কেকও আমাজনে বিক্কিরি হচ্চে সগর্বে!
তা এই অত্যাধুনিক, রঙবাহারি, চূড়ান্ত স্মার্ট, পুরাতনপন্থার নাক ঘ্যাচাং করে কেটে ফেলার মতো আল্ট্রামডের্ন ফেসবুক দেকে আমার দাঁতের, হাতের, কেত-এর সমস্ত আক্কেল বিলকুল গুড়ুম হয়ে গেচে! এই তীব্র প্রগতিশীল(তথা গতিশীল) মাধ্যমের ধাক্কায় আমি এক্কেবারে টেবিলের পায়াকে শায়া পরানোর ভিক্তোরীয় যুগে পিছিয়ে গিয়েচি — এখনো পিছোচ্চি, পিছোতে পিছোতে শেষতক কোদাল-দেঁতো বাঘেদের হিমযুগে গিয়ে পড়ব মনে হচ্চে।
এইসব ভেবে ভয়ে এবং শীতে জব্বর হৃৎকম্প হচ্চে, নেহাৎ আক্কেলের ব্যথার চোটে দাঁতকপাটিটা লাগব লাগব করেও লাগচে না — লাঙ্গুল (ভাব্বেন না, কভার পরানো আচে) উত্তোলন করে পলায়ন করব কিনা খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবচিলাম!
এমন সময় (টেলিপ্যাথির জোরেই হবে) আমার কিছু ডেঁপো ও তেঁয়েটে বন্ধু — না না, বায়বীয় নয়, রীতিমত রক্তমাংসের — গত মাসেও তাদের হাতে কানমলা খেইচি — আমাকে মুঠোফোনে হুমকে গেল, ‘ফের যদি ফেসবুক ছেড়ে একগোছা রজনীগন্ধা হাতে নিয়ে বল্লাম, চল্লাম — টাইপের ন্যাকামো করেচ, তো পেঁদিয়ে (ঠিক এই লব্জটাই বলল) বৃন্দাবন পাঠিয়ে দোব! সেখেনে ন্যাড়া মাতায় হাতে ঝাঁটা আর প্রদীপ নিয়ে মন্দির প্রদক্ষিণ করিস চৌপর দিনভর — জনগণেশের চাগরি আর করতে হবে না, যাঃ!’
অগত্যা পলায়নস্পৃহা দমন করেই রয়ে গেলুম।
কতা দিলুম —
১) পোস্টের ‘রিচ’ ফিচ নিয়ে খিচখিচ করব না।
২) ব্যক্তিগত দুঃখু নিয়ে সকাল বিকেল ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে নাকে কেঁদে সুধীজনের বিরক্তি উৎপাদন করব না।
৩) প্রতি পোস্টের সঙ্গে ছবি পোস্টাব — সে খাঁদা বোঁচা যাই হোক। চালচিত্তিরহীন লেখা নৈব নৈব চ।
৪) সুধীজন আমার পোস্ট নজরঅন্দাজ করে মন্তব্য/লাইক করা থেকে বিরত থাকলেও পাড়ার গুন্ডিনেত্রীর মতো গা-জোয়ারি করে তাঁদের পোস্টে কমেন্ট সেকশনে আপন লেখনীপ্রসূত মণিমুক্তো ছড়িয়ে আসব — আসবই।
৫) মোর পোস্টে কেউ যদি মন্তব্য না-ও করেন, অবহেলিত ফিল করে সেদিন নিরামিষ খাব না।
৬) জ্ঞান হওয়া ইস্তক এই নিয়ে ছেচল্লিশ নম্বর বইমেলা এসে গেল, অথচ কাঁড়ি কাঁড়ি অক্ষর ঘেঁটেও মোর একপিস পুস্তক ছাপার মেশিনে ঢুকল না কেনওওওও — এই বলে সন্ধ্যারাণীতুল্য কান্নাকাটি জুড়ব না, জুড়ব না, জুড়ব না।
৭) মিসফিট হয়েও বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে অনাহূত বদনখানি দেকিয়ে বেড়াব — যতক্ষণ না সুভদ্র অ্যাডমিন এসে গলাধাক্কা দিয়ে বলচেন —‘হেথায় তোরে মানাইছে না রে, এক্কেবারে মানাইছে না রে’—
৮) ধুত্তোর, আর মনে পড়চে না — পড়লে পরের পোস্টে কয়ে দেব’খন।
সঙ্গে একপিস জন্তুর বাগান সুলভ ছবি সাঁটালুম — রণবীর কাপুর সৎসাহস যুগিয়েচেন! 😁