বিভাসের মাথার চুল খাড়া হয়ে গেল হারুর প্রশ্ন শুনে।
বিভাস ছেলেটা ভদ্র। নরম প্রকৃতির। ক্লাবঘরে আজ সে বেচারা ছেলেটি আমাদের ডাকসাইটে জিজ্ঞাসু হারুর সফট টারগেট হয়ে গেল। দোষের মধ্যে দোষ, বিভাস একদা ফিজিক্সে ডক্টরেট করেছিল। ডঃ বিভাস ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন করার ব্যাপারে হারুর প্রসিদ্ধি আছে। বস্তুত তার জ্ঞানতৃষ্ণা অসীম। সেই জন্যে সে বিপদের সৃষ্টিও করে ফেলে মাঝে মধ্যে।
এই যেমন গত বছরই।
জ্ঞানকৃষ্ণ বাবুর ছোটো মেয়ে, পাশের পাড়ায় বিয়ে হওয়া নীতুর সঙ্গে নরোত্তম দা’র একটু ইয়ের সম্পর্ক ছিল এককালে। তো সেই নীতুর ছেলে টিউশনি পড়তে আসত এ পাড়ায়। ওই বিভাসের কাছেই। আমাদের ক্লাব ঘরের সবাইকে সেই ছেলে কাকু বলে ডাকত যদিও, নরোত্তম সরকারকে ডাকত নরুমামা।
আমাদের হারু রহস্যটা জানতে প্রশ্ন করেছিল জ্ঞানবাবুর কাছে।- আচ্ছা গেনুকাকু, এই যে আপনার নাতি, তার হলেও হতে পারত বাবা নরোত্তমকে মামা ডাকে, এটা কি উচিত?
আমরা কিন্তু রহস্যটা জানতাম। নরোত্তমদা’র উৎপাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে, জ্ঞানবাবু নীতুকে দিয়ে ভাইফোঁটা দেওয়াতেন ফিবছর।
এই যে আলটপকা, প্রায়শই শ্লীলতার গণ্ডীর মধ্যে না থাকা প্রশ্ন করা, এ হল হারুর রেজিস্টার্ড ট্রেড মার্ক।
সে যাই হোক, হারুর আজকের প্রশ্নটা একেবারেই মাথার ওপর দিয়ে গেল বিভাসের। শুধু ওর নয়, আমাদেরও। বিভাস তো ফিজিক্সের প্রফেসর। জুলজির নয়।
হারু শুধোল, – হ্যাঁ রে বিভাস, এই যে বাঘ আর বেড়াল প্রায় একই, শুনেছি জিনেও নাকি ৯৫.৫% মিল, তা ওদের সব নিয়ম কানুনই কি এক?
বলেই ফস্ করে কী একটা কাগজ বার করল পকেট থেকে। উঁকি মেরে দেখলাম, একটা কাগজে কোত্থেকে কী সব টুকে এনেছে। তাতে লেখা, ” Both domestic house cats and tigers are found in the scientific kingdom Animalia, phylum Chordata, class Mammalia, order Carnivora, and family Felidae. The reason that both types of cats are organized identically until genus, is due to the many similarities they share with each other.”
বিভাস তো প্রশ্ন শুনেই বোমকে গেছে। এর পরের জিজ্ঞাসা কী রে বাবা? বেড়াল কি বাঘের হলেও হতে পারত বাবা, এই সব জিজ্ঞেস করবে নাকি এর পরে?
ব্যাপার যে সেরকম জীববিজ্ঞানের নয় বোঝা গেল পরের প্রশ্ন শুনে।
– না, মানে তুই তো ফিজিক্সের বিশাল হনু। আচ্ছা ওই যে শ্রোডিঞ্জার না শ্রোডিংগার কী যেন বলিস তোরা, সেই তার বেড়ালের গপ্পোটা কি বাঘের কেসেও খাটবে?
বিভাস, ফিজিক্সের পণ্ডিত বিভাস তার পরেও ক্যাবলার মত তাকিয়ে রয়েছে দেখে বিশদ হল হারুচন্দ্র। – সন্দেশখালির বাঘ যে খাঁচায় ঢুকল, এর পরেও সে খাঁচায় আছে না কি পাঁচতারা হোটেলে আছে, কাস্টডিতে না উডবার্নে, এই যে অনিশ্চিত অবস্থান কি বেড়ালের মত বাঘের কেসেও অ্যাপ্লাই করা যাবে?
যাঃ বাবা, কোথার থেকে কোথায় চলে এল!
‘অ্যাপ্লিকেশন অব ফিজিক্স ইন সেমিপারমিয়েবেল ডার্টি পলিটিকস’
এই রকমের কী যেন বলল বিভাস ফিসফিস করে।
এবং জীবনে প্রথমবার হারুর গুগলি এড়িয়ে সপাটে ব্যাট হাঁকড়াল বিভাস, – বুঝলে হারু, অসংখ্য সমান্তরাল বিশ্বে এই রকমের অসংখ্যতর ঘটনা ঘটবে। শুধু ওই বাঘটা না। অনেক হচ্ছে এই রকম। সেই সব বিশ্বের কোনওটায় চোর কুনাল জেলের ভেতরে, কোনওটায় সে তোলামূলের মুখপাত্র, কোনওটায় হাইকোর্টের কেস খাবার ভয়ে কেন্নোর মত কুঁকড়ে, কোনওটায় রাজ্যসভায় যেতে না পেরে অভিমানে থরোথরো।
এই না শুনে হারু আউট।
আমরা কিন্তু শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, বিভাস ওই ‘অসংখ্যতর’ বলল, কথাটা কি ঠিক?
মানে মোর দ্যান ইনফিনিটি বলে হায়ার ফিজিক্সে কিছু হয় নাকি?
★