তোকে আমরা কী দিইনি, কবি?
হৃদয় ভাসিয়ে দিবি বলে তোকে দিয়েছি এক অলকানন্দা জল। যথেচ্ছাচারের সুখে নতুন এক দার্শনিক হবি বলে তোকে দিয়েছি মগজের সব ধূসর কোষ। দেদার শান্তির জন্যে গণতান্ত্রিক রাজকোষ টুকরো করে মাসে মাসে পাঠিয়েছি তোর পকেটে। মুখে যাতে মাছি না-বসে, কাগুজে দিন আর রাতগুলো চামর দুলিয়ে গেছে সারাক্ষণ। শুধু তোর জন্যই কবিতা মণ্ডপে জিরোতে দিইনি দূরপাল্লার কোনও কলমকে। প্রতিষ্ঠানের দুন্দুভি বাজিয়ে কাল্পনিক সব চরিত্রকে বলেছি, সরে যাও, কবি এখন কবিতা লিখবে মহাকালে আঁচড় দিয়ে। ডুবে যাবার আগমনী লিখতে বাংলাভাষার সমস্ত দোয়াত কলম উপুড় করে দিয়েছি তোর মুঠোয়। অনাগত সেই কনকনে কালো রাতগুলোকে বলা ছিল, ও কখন আসবে ঠিক নেই, কিন্তু আসবেই, খালে যেন মৃতদেহ ভাসে
তোকে আমরা কী দিইনি, কবি?
মঞ্চে সবার আগে চেয়ার পেতে দিয়েছি তোকে। মাইকে সবার আগে তোর নাম। লিটল আর বিগ সব ম্যাগাজিনে সবার আগে তোর পদ্য। আড্ডায় সবার আগে তোর প্রলাপ। যখন পা টলমল, জড়িয়েছি বুকে। যখন চোখ হারিয়েছে পুরোনো ঘরে ফেরার ঠিকানা, পৌঁছে দিয়ে এসেছি নতুন ঘরে। যখন উদ্ধত, বলেছি — শান্ত হ। যখন আরজিকর, বলেছি — সেরে ওঠ সোনা। যখন পদ্য- কলমে ভাঁটা, বলেছি — গদ্য লেখ। যখন প্রবন্ধ — বলেছি অয়দিপাউস লেখ
তোকে আমরা কী দিইনি, কবি?
কবিতা নিখোঁজ। আমরা কেন্দ্রে-রাজ্যে-আকাদেমিতে পাঠিয়ে দিয়েছি চণ্ডালদের। তুই আদিষ্ট। আমরা যথার্থ সত্যি প্রতিপক্ষের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছি তোর সংশয়-ভানের বন্দুক। তুই পুরস্কৃত, আমরা ঝনঝনিয়ে উঠেছি উল্লাসে। আমরা বই-আলমারিতে সাজিয়ে রেখেছি তোর একশো রকমের ভান। আমাদের দৈনন্দিন যাপন ভরাট হয়ে থাকত তোর দুশো রকমের সমঝোতার গপ্পে। তুই কবিতা পড়বি। মেলা ঝেঁটিয়ে জড়ো করেছি সমস্ত হাঘরেদের। তুই লিখবি। সমস্ত আসবাব সরিয়ে বিছিয়ে দিয়েছি লেসার-এভিলের মখমল।
তোকে আমরা কী দিইনি, কবি?
বাংলা সাহিত্যের প্রাঙ্গণে যখন ক্রমে তোর দাড়ি গজালো! টাকমাথায় বাবড়ি। মনে হচ্ছিল, চশমা পরে টরে তুই সত্যিই রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠলি বুঝি। খানিক পরেই পড়বি অশান্তিনিকেতনে লেখা নতুন কবিতা। তখনও ভাবছি কবিকে ভয় পাবে প্রতিষ্ঠান। আগুন পড়ে নেবে চিতা-কবর যাত্রীদের ভবিষ্যৎ। পুড়ে আঙরা হালকা শরীরগুলোর জন্য গর্জে উঠবেই উঠবে কবিতার গান স্যালুট।
তখনও ভাবছি, দৈববাণীর মতো বলে উঠবি — কী বলবি — কী আর বলার আছে তোর?