আমার WBDF সাথীরা
★
একজন পরাজিতর হলফনামা
(মিথ্যে প্রমাণ হলে আমার মত সুখী আর খুশি আর কেউ হবে না)
________________
★
আমি একজন প্রান্তিক চিকিৎসক। সব দিক থেকেই প্রান্তিক। বয়সের হিসেবে এক প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। উপার্জনে প্রান্তিক। জ্ঞানে মেধায় আর চিকিৎসা কুশলতায়ও তাই। সেই জন্যেই মুখোমুখি দেখা হলেও WBDF-এর যাঁরা কাউন্সিল ইলেকশনে দাঁড়িয়েছেন, প্রায় সবাইকেই আপনি আজ্ঞে করে কথা বলি।
তবু, আজকের এই লেখাটায় সবাইকে বয়সের দাবীতেই তুমি করে বলছি।
জানি, তোমরা সবাই খুব আহত হবে। তবু তোমাদের মানতেই হবে দুর্মর আশাবাদ নিয়ে দিনে ও রাত জেগে পাহারা দিয়েও তোমরা হেরে যাবে। হারবেই। এতদিন ভোট দেবার পালা চলছিল। তাই বলিনি। এখন বলছি।
পুরোনো একটা গল্প বলে শুরু করি? পঞ্চাশ বছর আগের গল্প। আমার কলেজ মেডিকেল কলেজের গল্প। তখন রাজ্য দাপাচ্ছে ছাত্র পরিষদ। মেডিকেল কলেজেও তারাই। ছাত্র সংসদের ভোট হবে। আমরা মানে এসএফআই-রা তাদের প্রতিপক্ষ। একমাত্র প্রতিপক্ষ। ( MCDSA আসবে আরও কয়েকবছর পর।)
হ্যাঁ, যা বলছিলাম। পাঁচ জন করে সিআর মানে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ।
ভোট হল। প্রবল উন্মাদনা। বিস্তর জনসংযোগ করেছি। গ্রামের ছেলেরা, যারা স্পষ্টতই তৎকালে ইংরেজিতে সড়গড় ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা শ্রেণীর, তাদের সঙ্গেও খুব মিশেছি যাতে তারা ভোটটা দেয়। এবং ভোটের দিন অবধি আমরা কনফিডেন্ট পালটে যাচ্ছে ইউনিয়ন। ভোট দেবার সময়েই আমি অবধি বুঝে গেলাম, না কিছুই পালটাবে না। ওরা চাইলেই নিজেদের ইচ্ছেমত ভোটের ফলাফল বানাতে পারবে। ওরা মানে ইউনিয়ন যাদের দখলে, মানে ছাত্র পরিষদেরা। এতটাই ফাঁক ফোকর ছিল পুরো ভোটের ব্যবস্থাটায়। ভোট দেওয়া আর গোনায় কারচুপির অসংখ্য সুযোগ।
আর হলও তাই। না, এই অধুনা ঘেসোদের মত নির্বোধ ছিল না তারা। প্রত্যেক ক্লাসে একজন দুজন করে জিতিয়েছিল এসএফআই-দের। পুরোটাই আই ওয়াশ। দ্যাখো, গণতন্ত্র আছে! হেঁটে চলে না বেড়ালেও অন্তত ভেন্টিলেটারে বেঁচে আছে। আমাদের ক্লাসে জিতেছিলাম আমি আর শিবার্জুন। বাকি তিনটেই ওরা।
ইদানীং কালের তথাকথিত সরকারি প্যানেলের ডাক্তারেরা সেই সময়ের সেই ছাত্রপরিষদেরই পরিণত রূপ। কয়েকটা তো সেই সময়ের ছাত্রপরিষদ নেতাই, রূপ বদলে ঘেসো হয়েছে। তখন বলা হত আধাফ্যাসিস্ট। এখন এরা নিজেদের পুরো ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করতে পারলে নিজেরাই গর্বিত হয়। অনুব্রতকে বীর ভাবে।
না, তোমাদের পুরো প্যানেলকে হারাবে না। একটা দুটোকে জেতাবে। ওই তখনকারই মত হিসেব কষে। এমনকি ওই থার্ড প্যানেল যাদের দাঁড় করানোই হয়েছে তোমাদের হারানোর জন্য, তাদেরও একটা দুটো জিতবে। মানে জেতানো হবে। সে ওরা আমাদের কলেজের তরুণ বলে একটাকে এমপি অবধি বানিয়েছিল এই রকমের কৌশলে। ওদের অভ্যেস আছে।
কেন হারবে তার ফাঁক ফোকরগুলো তোমরা আমার চাইতে ভালো জানো।
প্রিন্সিপ্যাল থেকে সুপার, বা যে কোনও প্রশাসনিক ঘেসো যে তাদের আন্ডারে থাকা চাকরিরতদের ব্যালট ছলে বলে কৌশলে হাতাবে এতে অবাক হবার কিছু নেই। সরকারি তাদের নানান পিছুটান। আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ তো প্রায় সবকটাই ঘেসোদের। তোমরা তাদের ম্যানেজমেন্টের কাছে অপ্রয়োজনীয়। এর পরে হয়তো শুনব কর্পোরেট কর্তারা অবধি ব্যালট চেয়ে নিয়েছে। আরে, রুজি রোজগার ভাবতে হবে তো!
কিন্তু আমি জেনে অবাক হয়েছি, মানে যাকে বলে বিস্ময়ের সীমানা ছিল না যখন জেনেছি, মেডিক্যাল কলেজের একটা ভিএস তার পিজিটিদেরকে ‘নির্দেশ’ দিয়েছে, (বস্তুত হুমকি দিয়েছে), বাড়ি থেকে ব্যালট এনে সই করে ফাঁকা ব্যালট ওর হাতে দিতে হবে। একজন পিজিটি কতখানি ভাঙা মন নিয়ে তবু এই ভিএসএর অনৈতিক নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়, আন্দাজ করে আমিও ভেতরে ভেতরে ভেঙে গেছি একেবারে।
না, শুনে তোমরা রাগ কোর না। তোমরা হারছ।
তবু, আমি মনে করি লাভ হয়েছে অনেকই।
এই যে কনসোলিডেশন আমরা দেখালাম রাত জেগে… গান গেয়ে… হাতে হাত ধরে, এর অভিঘাতও ফেলনা নয়। আমরাই আমাদের দেখে রাখব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ধ্বজাধারী হয়ে সরকারি কোনও বোর্ডের মাথায় বসার দরকার নেই আমাদের, আমরা প্রমাণ করে ছেড়েছি।