Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

দল-মতের উর্ধ্বে উঠে, ‘মানুষ’ই পারে জাতিকে বাঁচাতে

Screenshot_2025-11-20-07-18-06-19_680d03679600f7af0b4c700c6b270fe7
Dipak Piplai

Dipak Piplai

Retired government employee and social worker.
My Other Posts
  • November 20, 2025
  • 7:19 am
  • No Comments

(এক)

দুই হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস যে ‘বাঙালি’ জাতির, তাঁরা আজ নানাভাবে অবহেলিত, শোষিত, অপমানিত। তার সবচেয়ে বড়ো কারণ, তাঁরা নিজেদের ইতিহাসকেই ভুলে বসে আছে! অতি সামান্য কারণেই শুধু নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, গালাগালি, মারামারি-কাটাকাটি, এইসবেই তাঁদের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা ব্যাস্ত। আমরা যে সকলকে কী দিচ্ছি, দিতে পারি, তা নিয়ে ভাবনাই নেই!

অবিভক্ত বাংলার (অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ’ আর ‘পশ্চিমবাংলা’) মোট জনসংখ্যা বর্তমানে যথাক্রমে ১৭ কোটি + ১১ কোটি, মোট ২৮ কোটি। ইংল্যান্ড ৫.৭১ কোটি, জার্মানি ৮.৩৫ কোটি, ফ্রান্স ৬.৮৫ কোটি, কানাডা ৪.১৩ কোটি, এবং অস্ট্রেলিয়া ২.৭২ কোটি — এদের মোট জনসংখ্যার (২৭.৭৬ কোটি)-র চেয়েও যুক্ত-বাংলার মানবসম্পদ বেশি। অর্থাৎ, (শতকরা ৬০ ভাগ হিসাবে) অন্তত সাড়ে তেত্রিশ কোটি কর্মক্ষম হাত মজুত রয়েছে বাংলায়। এই হাতগুলো যদি সমষ্টিগতভাবে বাংলা গড়ার কাজে লাগে, তবে মানববিকাশের দুরন্ত উদাহরণ তৈরি হতে পারে পৃথিবীর বুকে। কিন্তু সেই সুযোগটুকু তো থাকতে হবে। ‘গণতন্ত্র’, ‘নির্বাচন’ ইত্যাদির অকার্যকারী ঢাক নিয়মিত বেজেই চলেছে যুগযুগ ধরে। কিন্তু প্রায় সতেরো কোটি মানুষের হাত বাংলা গড়ার কাজেই লাগছে না!

‘দুই বাংলা’-র প্রাকৃতিক সম্পদ বিশাল। সমুদ্র-নদী-হ্রদ। বরফে মোড়া পর্বতমালা ও পাহাড়। ওষধি ও দুর্মূল্য বৃক্ষ-গাছ-লতায় ভরা বিশাল বিশাল বনাঞ্চল। দিগন্ত বিস্তৃত মালভূমি। বালুকাময় মরুভূমি। অজস্র জলপ্রপাত… কী নেই বাংলায়? কেনো বাংলা অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকবে! সোনা, কয়লা, লোহা, তামা, ডলোমাইট, বক্সাইট,‌ চুনাপাথর, প্রাকৃতিক গ্যাস… সবকিছুই রয়েছে এখানে। এমনকি আধুনিকতম প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মূল যে দুষ্প্রাপ্য চাবিকাঠি ‘রেয়ার অর্থ মেটিরিয়াল’, তা-ও রয়েছে বাংলায়।

তা হলে, কীসের অভাবে বাংলাকে ধুঁকতে হবে? বাংলা কী শুধুই পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী আর পশ্চিমা বেনিয়াদের শোষণ ক্ষেত্র!

(দুই)

বাঙালি তথা বাংলার অন্যতম সম্পদ হলো তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। গান, বাজনা, নাচ, নাটক, সাহিত্য ইত্যাদিতে ভরপুর। সকল জাত-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার যে প্রবহমান সম্প্রীতি, বিশ্বে তার তুলনা মেলা ভার। পাশাপাশি থাকলেই কখনোসখনো ঠোকাঠুকি লাগে। পরিবার, পাড়া থেকে শুরু করে ধর্ম-বর্ণ-জাত-জাতি সবক্ষেত্রেই একথা সত্য। ঠোকাঠুকি-কলহ মানে বিভেদ বা বিচ্ছেদ না। শত-সহস্র বছর ধরে যে অকল্পনীয় ঐক্যের প্রবাহ বাঙালির সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব অটুট রেখেছে, তা-ও অনেকেই সহ্য করতে পারেন না!

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী লুঠেরার দল সেইজন্যেই বাঙালির ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ইসলামি ও হিন্দুদের মধ্যে স্থায়ী ভেদাভেদের বীজ বপন করেছিলো। সেই সর্বনাশা পরিকল্পনাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিলো মুম্বাইয়ের (মহারাষ্ট্র) ইসলামি ইস্পাহানি এবং মাড়োয়ারের (রাজস্থান) হিন্দু বিড়লা — এইসব বেনিয়ার দল। নিজেদের জন্মভূমি ছেড়ে, এই শোষক বেনিয়ারা দু’হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাংলায় এসেছিলো সস্তা শ্রমিক আর প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে। কেউ ঘাঁটি গেড়েছে চট্টগ্রামে (ইস্পাহানি), কেউ বা কলকাতায় (বিড়লা)। বর্তমানে শুধু এরাই না। গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের বিভিন্ন বেনিয়ারাই এখন বাংলার অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক মাতব্বর হয়ে উঠেছে। এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভেই এইসব পশ্চিম ভারতীয় বেনিয়ার দল বাংলা-ভাগের চক্রান্তে অন্যতম প্রধান পাণ্ডা হয়ে উঠেছিলো। বাংলা-ভাগের কাজে এরা পুরোপুরি সহযোগিতা পেয়েছিলো দুজন গুজরাটি রাজনীতিবিদ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী আর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল; সঙ্গে দিল্লীবাসী কাশ্মীরি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। এঁরা যে শুধু বাংলা-ভাগের পক্ষে ছিলেন তা-ই না। বাংলাকে অবিভক্ত আর স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসাবে গড়ে তোলার যে দাবি উঠছিলো ব্যাপক মেহনতী মানুষের মধ্য থেকে, তার-ও তীব্র বিরোধিতা করেছিলো। ধর্মীয় (ইসলামি ও হিন্দু) সাম্প্রদায়িক মানসিকতাসম্পন্ন কিছু বঙ্গসন্তানও সেদিন বাংলাভাগে মদত যুগিয়েছিলো, ব্রিটিশ সহ পশ্চিমা বেনিয়াদের তাঁবেদার হিসাবে! বাঙালি জাতিকে ইসলামি ‘বাংলাদেশ’ আর হিন্দু ‘পশ্চিমবাংলা’-য় ভাগ করার যে স্থায়ী (!) ভিত বা পাপ গড়ে উঠলো, তার ভিত তখনই তৈরি হয়েছিলো।

(তিন)

বাংলাভাগের সময় ব্যাপক বাঙালি মেহনতী সমাজের কাছে কোনও গণভোট নেওয়া হয়নি। শোষক-শাসক-অত্যাচারী ব্রিটিশদের তাঁবেদার উচ্চবর্গের শিক্ষিত সমাজপতিরাই ছিলো বাংলা ভাগাভাগির প্রধান কুশীলব। নিজেদের আখের ছাড়া কোনোদিনই তাঁরা কিছু বুঝতেন না; সেদিনও বোঝেন নি। রাজা-নবাব, জমিদার-তালুকদার, ডাক্তার-ব্যারিস্টার, উকিল-অধ্যাপক, সমাজের এইসব মাতব্বরদের মোড়লিতেই বাংলাভাগের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। লাঙল-জোয়াল, হাতুড়ি-শাবল, ইত্যাদি হাতে নিয়ে জল-কাদা-তেল-কালি মাখা কোটিকোটি মেহনতি মানুষের কথা সেদিন শুনতেই চায়নি কেউ! অথচ এঁরাই অবিভক্ত বাংলার সমস্ত সম্পদ সৃষ্টিকারী। দেশের জল-জঙ্গল-জমি-খনিতে কোনোদিন হাত না লাগানো সামাজিক পরগাছা মাতব্বররাই বাংলাদেশটাকে ভাগ করলো!

অবিভক্ত বাংলার শক্তি, সামর্থ্য, সম্ভাবনা নিয়ে কোনও চর্চাই দেখা যায় না! বাঙালি শাসক কাঁটাতারের দুই পারেই আছে। কিন্তু বাঙালি মেহনতী মানুষের দুঃখকষ্ট নিয়ে শাসকরা কেউই ভাবিত না! শুধুমাত্র নিজেদের শাসনক্ষমতা বজায় রাখা নিয়েই তাঁরা ব্যাস্ত। শতসহস্র বাঙালি জনতার কর্মহীনতা কিংবা মৃত্যু অথবা আত্মহত্যা বা দুরবস্থা তাঁদের কাছে কোনও ব্যাপারই না। সব মৃত্যু অথবা আত্মহত্যার যা-হোক কিছু একটা সাফাই দিতে তাঁরা সকলেই ওস্তাদ। সীমান্তের কাঁটাতারে এই অমানবিকতার সংখ্যায় কিছু হেরফের ছাড়া, কোনও ফারাক হয় না।

(চার)

বাঙালি জাতি একটি সংকর জাতি। পুরাকালে অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও আর্য জাতি মিলেমিশে ‘বাঙালি’ জাতির সৃষ্টি হয়েছে। ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তা-ই। বর্তমান পৃথিবীতে কোনও মানবজাতি-ই ‘বিশুদ্ধ’ না। অতীতে কোনও না কোনও সময়ে, নানা জনগোষ্ঠী মিলেমিশেই তাঁদের পরবর্তী বংশধরেরা এসেছেন। বিশুদ্ধতার চিন্তা একধরনের সামাজিক ভ্রান্তি। বিজ্ঞানের গবেষণা বলে, আড়াই লক্ষ থেকে তিন লক্ষ বছর আগে মানবজাতির সৃষ্টি হয়েছিলো আফ্রিকায়। তারপর পরস্পর মিলেমিশে, লক্ষ-হাজার বছর ধরে ছড়িয়ে পরে পৃথিবী জুড়ে। কেউই কোনও জায়গাযর ‘স্থায়ী’ বাসিন্দা না।

কিন্তু তবুও ‘বর্তমান’ বাস্তব। আছে তার বৈশিষ্ট্য। দর্শন, সমাজ, ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা, ধর্ম, ইত্যাদি সবই একেকটি জাতির সম্পদ। নানাসময়ে নানান যোগ-বিয়োগ-পরিবর্তন হতে হতেই বর্তমান অবস্থায় এসেছেন তাঁরা। এখন, প্রতিদিনই সেই বর্তমানকে কেউ / কারা যদি অবহেলা বা অপমান কিংবা বিরোধিতা অথবা দমন করতে চান, তবে সেই জাতি ফুঁসে ওঠাই স্বাভাবিক, কর্তব্য।

ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ, সোনার বেনে, গন্ধ বেনে, শাঁখারি, কাসারি, বাগদি, বাউড়ি, মাহিষ্য, কৈবর্ত, ক্যাওড়া, তিওর, পোদ, মালো, জেলে, কাঁসারি, স্যাকরা, তাঁতি, মোদক, গয়লা, তিলি, বারুই, কলু, বৈশ্য সাহা, বৈশ্য কপালি, যুগি, নাপিত ইত্যাদি। এগুলো ‘বাঙালি’ জাতির মধ্যে পেশাগত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভাগ। এইসব ভাগাভাগিকে বিকৃত করে যারা পারস্পরিক ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াতে চায়, তাঁদের বিরুদ্ধেও বাঙালিকে লড়তে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।

(পাঁচ)

বাংলায় প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর। মানব সম্পদ বিশাল। বাঙালি জাতির মেধা চারটি নোবেল আর একটি অস্কারে ভূষিত। বিজ্ঞান গবেষণায় বিশ্ববিশ্রুত দিকপাল রথী-মহারথীদের জন্মদাতা। পৃথিবীকে আত্মবিশ্বাস আর আত্মনির্ভরতার রাস্তায় সামাজিক-অর্থনৈতিক বিকাশে পথ দেখানোর কাজে পথিকৃৎ বাঙালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর তাঁর ভাবশিষ্য পান্নালাল দাশগুপ্ত। পুঁজিবাদী আধিপত্যের কব্জা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য সারা পৃথিবী আজ সেই আত্মনির্ভরতার পথে এগোতে চাইছে। কলকাতার: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, মহীশূর ও ত্রিপুরার রাজবাড়ি, বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মন্দির, এসপ্লানেড ম্যানশন ইত্যাদি অনেক বিস্ময়কর স্থাপত্য বাঙালি – স্যার রাজেন মুখার্জীর অবদান। ভারতবর্ষের প্রথম ভারি ইস্পাত শিল্পের শুরুও বাঙালির হাতে। এককথায়, খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান বানিজ্য বিজ্ঞান স্থাপত্য সাহিত্য চলচ্চিত্র ইত্যাদিতে বাঙালির দক্ষতা প্রমাণিত সত্য।

এতো সমৃদ্ধ একটা জাতি নিজস্ব বিকাশের দায়িত্ব নিজেরাই কেন নেবে না? শোষকের তাঁবেদারি না; শোষিত মেহনতী মানুষের স্বার্থেই হবে সেই কাজ।

অবিভক্ত বাংলা ভেঙেছে প্রধানত লুঠেরা অত্যাচারি খুনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আর তাদের মদত জুগিয়েছে ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক মানসিকতা সম্পন্ন একদল রাজনৈতিক মাতব্বরের দল। ‘দুই বাংলা’র মাঝখানে ব্রিটিশের এঁকে দেওয়া সীমানার বেড়াকে উপড়ে ফেলে দেওয়াই কোটিকোটি মেহনতি জনতার কর্তব্য। ‘দ্বিধাবিভক্ত’ বাঙালি জাতিকে আবার ঐক্যবদ্ধ করবেন তাঁরাই। রাষ্ট্রশক্তি আর বাঙালির শত্রুশক্তি কীভাবে কোটিকোটি বাঙালির এই শুভ উদ্যোগ সম্পর্কে আচরণ করে, তার উপরেই নির্ভর করবে বাঙালির কর্মপদ্ধতি।

বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলাই সজীব মানুষের ধর্ম। নাহলে আজও তাঁরা পাথর ঠুকেই আগুন জ্বালাতো; চাকা আবিষ্কার করতে না পেরে এক জায়গাতেই স্থবির হয়ে থাকতো। সভ্যতার প্রতি পদক্ষেপই বাধা অতিক্রমের ইতিহাস।

(ছয়)

শতসহস্র বছর যাবৎ একসাথে থাকা; একের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অপরের অংশগ্রহণ; এক ভাষা, এক সংস্কৃতি, এক খাদ্য, এক সঙ্গীত, একই কৃষিজমি আর নদ-নদী নির্ভর পেশা। এই ছিল অবিভক্ত বাংলায় বাঙালির জীবন।

ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাবাদের বিষ বাঙালি জাতির ঐক্যকে সাময়িকভাবে প্রায় তছনছ করে দিয়েছে! বহু ‘ইসলামি’ ভাবছে হিন্দুরাই যত নষ্টের গোড়া; ‘হিন্দু’ ভাবতে শিখছে ইসলামিরা তাদের শত্রু! মাঝখান থেকে যারা বাঙালি জাতির আসল শত্রু, যারা সর্বনাশের মূলে, সেই ব্রিটিশ পুঁজিবাদী-সাম্রাদ্যবাদী আর পশ্চিম ভারতীয় বেনিয়ার দল লাভের গুড় খেয়েই চলেছে। এইসব দুর্বৃত্তদের কথাবার্তা-কাজকর্ম বেশিরভাগ বাঙালিকে আজও বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করেই চলেছে।

শস্যশ্যামলা ও নানান সম্পদশালী বাংলা, ১৭৪১ থেকে ১৭৫২ সাল অবধি বারবার ‘হিন্দু’ অনুপ্রবেশকারী মারাঠা দস্যুদের (বর্গী) আক্রমণ-হত্যা-নির্যাতন-লুন্ঠনের শিকার হয়েছে। গ্রামকে গ্রাম তারা পুড়িয়েছে। লক্ষলক্ষ বাঙালিকে ‘বর্গী’রা হত্যা করেছিলো; লুঠপাট চালিয়ে পুরো বাংলার অর্থনীতি ও সম্পদকে তছনছ করে দিয়েছিলো। ঐক্যবদ্ধভাবে সেই অবিভক্ত ও সম্পদশালী বাংলাই গড়ে তুলতে হবে আবার। একতাবদ্ধভাবে আসল শত্রুর মোকাবিলা করাই ইজ্জত ও অধিকার নিয়ে বাঁচার এবং বিকাশের একমাত্র পথ। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাবাদের বিষ বাঙালি-ঐক্যের সর্বনাশ ঘটিয়েছে। পারস্পরিক অবিশ্বাস সন্দেহ ঘৃণা ব্যাপক হয়েছে। এই বিষবৃক্ষকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।

বিভাগ-পরবর্তী ‘দুই বাংলা’ বর্তমানে বিচিত্র সমস্যায় জর্জরিত। অবিভক্ত বাংলা গঠনের পথে আরও কী কী সমস্যা এসে হাজির হবে, কেউ-ই জানি না। কিন্তু একটা কথাই দৃঢ়ভাবে মনে রাখতে হবে – যেকোনও সমস্যাকেই পরাস্ত করতে হবে। রাষ্ট্রগুলো কী ভূমিকা নেবে; ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিগুলো কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে; পৃথিবীর বড়ো বড়ো ‘উন্নত’ দেশগুলো এব্যাপারে কী করবে, এই সবকিছুই অনিশ্চিত।

শুধুমাত্র একটা ব্যাপারই নিশ্চিত। ঐক্যবদ্ধ বাঙালির অদম্য ইচ্ছাশক্তি, তাঁর বিবিধ সম্পদ, তাঁর মেধা, কর্মশক্তি, দেশপ্রেম ইত্যাদির সামনে সকল বিরোধী শক্তিই পরাজিত হতে বাধ্য। সবদিক থেকে বিচারে, পৃথিবীর অন্যতম বিকশিত ও সফল জাতি / দেশ হিসাবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ শুধু সময়ের অপেক্ষায়।

(সাত)

বাঙালির অভিজ্ঞতা সীমাবদ্ধ। কিন্ত অবিভক্ত বাংলার সম্ভাবনা অসীম। দার্শনিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বৌদ্ধিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রাযুক্তিক, সাহিত্যিক, মানবিক… সব বিষয়েই। তাঁর বৈকাশিক সম্ভাবনার নাগাল পাওয়া দুষ্কর। বাঙালি সেই বিকাশেরই অনন্ত পথযাত্রী।

পরিকল্পিত দুরভিসন্ধির ফলে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ইসলামি আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে, যত বেশি সম্ভব যাতায়াত ও মেলামেশার মাধ্যমে তা ক্রমশ কমিয়ে আনতে হবে। শুধুমাত্র লেখালেখি না, নিয়মিত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান অত্যন্ত জরুরি। বাস্তব জীবনযাপনের মাধ্যমে দুই সম্প্রদায়কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে, “আমাদের ধর্মবিশ্বাস আলাদা, কিন্তু আর সকল সামাজিক-ভাষিক-সাংস্কৃতিক বিষয়েই আমরা এক জাতি – বাঙালি।”

‘দুই বাংলা’-র মধ্যে, আর বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলার ভিতরেও এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের আন্দোলন জোরদার করে তুলতে হবে। যে বৈরি ভাব আর মানসিক দূরত্ব গড়ে উঠেছে, তার অবলুপ্তি ঘটাবার জন্য। সবকিছুরই মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই – স্বাধীন, সার্বভৌম, গণপ্রজাতন্ত্রী, অবিভক্ত বাংলা গঠন।

(আট)

বাংলার বেশিরভাগ জমিদার-তালুকদার ছিলেন উচ্চবর্ণের হিন্দু; ইসলামি-নমঃশূদ্র-বাগদি-পোদ ইত্যাদি মানুষরাই বাঙালি জাতির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। উচ্চবর্ণের আর উচ্চবর্গের বাঙালিরা ছিলেন ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা-ভাগের সপক্ষে। অন্যদিকে, জল-কাদায় আর তেল-কালিতে মাখামাখি হয়ে যেসব নিম্নবর্গের মানুষ জীবন কাটাতেন, তাঁরা হাজারে হাজারে মিছিলে-মিটিংয়ে দাবি তুলেছিলেন, “বাংলা ভাগ হলে সর্বনাশ হবে।” কিন্তু উচ্চবর্গীয় স্বচ্ছল পরিবারের মাতব্বরগণ সে কথায় কান দেন নি! বর্তমানে তাঁরাই আবার নানা সময়ে বিভিন্ন সুরে বাংলা ভাগের জন্য মেকি কান্না কাঁদেন!

অবিভক্ত বাংলার দাবি আসলে মেহনতী শোষিত নিপীড়িত অবহেলিত শ্রেণীর কোটিকোটি বাঙালির নিজস্ব দাবি। তাঁদের নিজেদের ইজ্জত ও অধিকার নিয়ে বাঁচার দাবি। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “পৃথিবীর সমস্ত বড়ো বড়ো সভ্যতাই দুঃসাহসের সৃষ্টি। শক্তির দুঃসাহস, বুদ্ধির দুঃসাহস, আকাঙ্ক্ষার দুঃসাহস।… এই দুঃসাহসিকের দল নিজের সমাজের মধ্যেও যে লক্ষ্মীছেলে হইয়া ঠাণ্ডা হইয়া বসিয়া আছে তাহা নহে।… ইহারা দুঃখ পায়, দুঃখ দেয়, মানুষকে অস্থির করিয়া তোলে এবং মরিবার বেলায় ইহারাই মরে। কিন্তু বাঁচিবার পথ ইহারাই বাহির করিয়া দেয়।” (প্রবন্ধ: ‘বিবেচনা ও অবিবেচনা’, বৈশাখ ১৩২১)।

কোটিকোটি মেহনতী মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার সেই দুঃসাহসিকের দলই আবার গড়ে তুলবেন তাঁদের অবিভক্ত জন্মভূমি। তাঁরাই ভবিষ্যৎ বাংলার কারিগর।।¶

PrevPreviousমদ্যপান কী আদৌ হাইপোথার্মিয়া আটকাতে পারে?
Nextরামপ্রসাদের কড়াই এবং পপ কর্ন সিনড্রোমNext
1 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার নতুন সংলাপে রবীন্দ্রনাথ

November 29, 2025 No Comments

(এ প্রবন্ধটি বেশ কয়েক বছর আগে আবহমান ওয়েবজিনে ভিন্ন চেহারায় প্রকাশিত হয়েছিল) ওয়াল্টার লিপম্যান তাঁর Public Opinion (1921) একটি নজর করার মতো মন্তুব্য করেছেন –

নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভয়া মঞ্চ

November 29, 2025 No Comments

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ গড়িয়া, পাঁচপোতায় ধর্ষণ কাণ্ডের ঘটনায় ৬ জন অ্যারেস্ট হয়েছে। অপরাধীরা প্রভাব খাটিয়ে যাতে কোনভাবেই জামিন না পেয়ে যায়, নির্যাতিতা মেয়েটির ন্যায়বিচার যেন

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসোনোগ্রাফি

November 29, 2025 No Comments

লড়াই আরো জোরালো হোক, প্রতিবাদ আরো দৃঢ় হোক

November 28, 2025 No Comments

মেডিক্যাল কলেজে হোস্টেলে একটা জিনিস শিখেছিলাম, সিনিয়রের প্রতি অগাধ আনুগত্য। সিনিয়রের কথা অমৃত সমান, সে পড়াশোনার ক্ষেত্রে হোক বা জীবনের চলার পথে। উভয় ক্ষেত্রেই যে

পোষ্ট কার্ড

November 28, 2025 No Comments

আর কদিন পরেই যাদুঘর এর বাইরে তাদের আর দেখাই যাবে না। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেই এরা প্রায় আমাদের জীবনের অঙ্গ ছিল। আমি বলছি পোষ্ট

সাম্প্রতিক পোস্ট

জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার নতুন সংলাপে রবীন্দ্রনাথ

Dr. Jayanta Bhattacharya November 29, 2025

নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভয়া মঞ্চ

Abhaya Mancha November 29, 2025

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসোনোগ্রাফি

Dr. Kanchan Mukherjee November 29, 2025

লড়াই আরো জোরালো হোক, প্রতিবাদ আরো দৃঢ় হোক

Dr. Subhanshu Pal November 28, 2025

পোষ্ট কার্ড

Dr. Dayalbandhu Majumdar November 28, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

593071
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]