সম্প্রতি, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল, ডাঃ সন্দীপ ঘোষ- এর বদলি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানোত্তর ফের সামনে এসেছে। বর্তমানে, সন্দীপ ঘোষকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অর্থপেডিকস ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক পদে বদলি করা হয়েছে।
সন্দীপ ঘোষের বর্বরোচিত ইতিহাসটা একটু ফিরে দেখা যাক। আর জি করের প্রিন্সিপালের দায়িত্বে থাকাকালীন, একের পর এক ছাত্র ছাত্রী বিরোধী নিয়মাবলী নামিয়েছেন। ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের সমস্যা ও ন্যায্য দাবি দাওয়া নিয়ে অপদার্থ অথরিটির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে, তাদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দেন। তৃণমূল ও কলেজ অথরিটি হাতে হাত মিলিয়ে, সেই আন্দোলন একেবারে দমন করে দেয়। আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করে কলেজের তৃণমূল শিবির। সন্দীপ ঘোষের নির্দেশে, সেই সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেয় অথরিটি। কিছুজনের ইন্টার্নশিপ কমপ্লিশন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। এমনকি, বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর পরের দিন, ছাত্র ছাত্রীদের তীব্র রোষের মুখে পড়ে, একটি ভিডিওতে সন্দীপ ঘোষকে পালাতে দেখা যায়।
বর্তমানে, সন্দীপ ঘোষের বদলিকে কেন্দ্র করে দেখা যায়, কিভাবে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজগুলির TMCP ইউনিটের চাপে পড়ে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের সন্দীপ ঘোষ এর সপক্ষে সমাজিক মাধ্যমে প্রচার করতে হচ্ছে। ঠিক একই ধাঁচে, গত বছর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের ইউনিয়ন ইলেকশনের দাবিতে আন্দোলন কে কালিমালিপ্ত করতে, TMCP বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা রটিয়েছিল। এবং এখনও সন্দীপ ঘোষের বদলির বিরুদ্ধে ছাত্র ছাত্রীদের সামাজিক মাধ্যমে নামিয়ে ফেলেছে।
এই বদলির রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাজ্য ও কেন্দ্র, উভয়ই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলির প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করতে লেলীহান। সম্প্রতি, রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সরিয়ে, রাজ্য প্রশাসনের পরামর্শ ছাড়াই, সাময়িক ভিসি নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল । ছাত্র ছাত্রীদের পঠন পাঠনের বর্তমান অবস্থা, কলেজের পরিকাঠামো, এই ধরনের গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র একদমই চিন্তিত নয়। অন্যদিকে, কেন্দ্র সরকার NExT পরীক্ষা, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছার, শিক্ষাব্যবস্থায় NEP লাগু করার মাধ্যমে, একের পর এক ছাত্র স্বার্থ বিরোধী নীতি নামাচ্ছে। আর এই সমস্ত নীতির বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কোনো নামগন্ধ নেই, বরং, অনেক ক্ষেত্রে এই নীতিগুলো সক্রিয়ভাবে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। রাজ্যের একাধিক সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
উপরন্তু, মেডিকেল কলেজ গুলিতে পঠন পাঠনের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, শিক্ষকদের অভাবে, মেডিকেল শিক্ষার মান অনেকটাই কমে যাচ্ছে।
এর আগেও আমরা দেখেছি, শাসক দলগুলি, বিরোধী কণ্ঠ কে দমিয়ে দিতে কিভাবে বদলি কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। সরকার বা শাসকের দালাল অথরিটির, কিংবা অথরিটির মধ্যে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ, প্রভাবশালী প্রশাসকের বিরুদ্ধে কথা বললেই, সেই সমস্ত শিক্ষক, চিকিৎসকদের বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এই একই কারণে, বছর দুয়েক আগে, ডাঃ অবন্তিকা ভট্টাচার্যের মতো একজন চিকিৎসককে আমাদের হারাতে হয়। কিছু ন্যায্য কারণে, তার বদলি বাতিল করার জন্যে একাধিক বার আবেদন করা সত্ত্বেও, তিনি বদলি আটকাতে পারেননি। এই বদলির রাজনীতির স্বীকার হয়ে, আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। গত বছরের ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও, শাসক বিরোধী চিকিৎসক সংগঠনগুলির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানো চিকিৎসকদের, নির্বাচনের ফলাফল বেরোতেই, রাতারাতি বদলি করে দেওয়া হয়। সরকারের ক্ষমতা প্রদর্শনের ফলে, চিকিৎসক সমাজ কে বাড়ে বাড়ে পেশাগত, মানসিক হেনস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, ছাত্র ছাত্রীদের প্রকৃত সমস্যা, দাবি দাওয়াগুলি অবহেলিত হয়ে চলেছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলির প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করতে কেন্দ্র-রাজ্য কেবল নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও চাপান-উতোরের রাজনীতি করে চলেছে।