২০২৪ সালের ৩১শে মার্চ আমার চাকরী জীবন শেষ হল। বছর খানেক আগে থেকেই এই বিশেষ দিনটির জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়েছি। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরী করে একটা নির্ভেজাল ছুটি পাওয়া যাবে, এটাই ছিল প্রধান ব্যাপার। চাকরী জীবনে একটানা সাতদিন ছুটি পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। তাই চাকরী জীবন শেষ হলেই একটা লম্বা ছুটিতে বেরিয়ে যাব, এই ছিল পরিকল্পনা। মাস দুই আগে ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি রাতের কোন গাড়ীতে জায়গা নেই। অগত্যা সকালের কাঞ্চনজঙ্ঘা গাড়িতেই যাব ঠিক করলাম।
২৩শে এপ্রিল সকালে বের হলাম বাড়ী থেকে। শিয়ালদা স্টেশন থেকে গাড়ী ধরে সন্ধ্যায় নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলাম। ওখানেই রেলের রিটায়ারিং রুম বুক করা ছিল, সন্ধ্যা আটটা থেকে পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত। ছটা থেকে আটটা পর্যন্ত ওয়েটিং হলে বসে থাকতে হল। NJP স্টেশনে আগেও থেকেছি। বেশ বড় ঘর, মোটামুটি পরিষ্কার। পরদিন বেশ ভোরেই উঠে স্নান করে তৈরী হয়ে নিলাম। সাড়ে সাতটায় গাড়ী আসার কথা ছিল, ঠিক সময়ে এসে গেল গাড়ী। ঐ ২৪ এপ্রিল সকাল থেকেই শুরু হল আমাদের আসল ভ্রমণ। শহর ছাড়িয়ে সেবকের কাছে পৌঁছতে আধ ঘণ্টা মত লাগল। তারপরই জঙ্গল আর পাহাড় শুরু হল।
তিস্তা নদীর ধার দিয়ে পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ি চলল। কালিঝোরায় তিস্তার ওপর বাঁধ পেরিয়ে অন্য পারে গেলাম। তারপরই শুরু হল শুধুই উপরে উঠতে থাকা। মাঝে মাঝে গাছপালার ফাঁক দিয়ে নিচে তিস্তা নদী দেখা যায়। বেশ কয়েক মাইল ওঠার পর, এক জায়গা থেকে নিচে সেবকের করোনেশন সেতু দেখা গেল। ড্রাইভার জানাল, পরে আরও ভালো দেখা যাবে। তাই এগিয়ে চললাম। বেশ কিছুটা উপরে ওঠার পর, পানবু নামে একটা জায়গায় পৌঁছলাম। ড্রাইভার জানাল ওটা একটা ভিউ পয়েন্ট। নেমে, রাস্তা থেকে একটু এগিয়ে নিচে দেখলাম দূরে তিস্তা নদী দেখা যাচ্ছে। একটু কুয়াশা থাকায় করোনেশন সেতু বোঝা গেল না। ওখানে কয়েকটা ছোট ছোট চায়ের দোকান মত আছে। একটাতে বসে মোমো খাওয়া হল। উল্টো দিকে পাহাড়ের ঢালে কয়েকটা কটেজ দেখা যায়, আমরা আর ওদিকে গেলাম না। প্রায় তিন ঘন্টা চলার পর লোলেগাঁও পৌঁছলাম। রাস্তার পাশে একটি ছোট বুদ্ধ মন্দির দেখিয়ে ড্রাইভার বলল, এটা দেখে নিতে পারেন। ওখান থেকে আমাদের হোম স্টে কাছেই জেনে, পরে আসা যাবে ভেবে আর নামলাম না। এবার গাড়ী পাহাড়ের উল্টো দিকে নামতে শুরু করল। বেশ ঘন পাইনের বনের ভেতর দিয়ে মাইল তিনেক নেমে পৌঁছে গেলাম কাফের হোমস্টে।
এই প্রবল গ্রীষ্মেও ওদের বাগানে প্রচুর ফুল। প্রথমেই ভালো লাগে। সাধারণ ভাবে লোকে যে সময় পৌঁছয় আমরা তার অনেক আগেই পৌঁছে গেছি, তাই একটু বাইরে বসে থাকতে হল। যে কোন কারণেই হোক, আমাদের একটা চার বেডের ঘর দেওয়া হলো। পরে জেনেছি, ওটা ওদের সবথেকে ভালো ঘর। এবারই প্রথম কোন হোমস্টেতে থাকা। তাই সব কিছুই নতুন নতুন লাগছিল। আসলে আমরা বছর দুই ধরে ইউটিউবে বিভিন্ন লোকের দেখানো অনেক হোমস্টে দেখেই, এবার চারটি জায়গায় থাকার জন্য বেরিয়েছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই এটাই আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা। তিনদিন থাকার পর আমাদের অভিজ্ঞতা খারাপ না।
কাফের হোমস্টেতে আমাদের রুম থেকে সামনের দিকে তাকালে, দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু এবার প্রায় সবদিনই আকাশে কুয়াশা থাকায় কাফের থেকে সামনের দুই সারি সবুজ পাহাড় দেখেছি। আমাদের রুম ছিল তিনতলায়। আমাদের থেকে ঘন্টা দেড়েক পরে আর একটা দলে সাত আট জন গেষ্ট এলেন। ওদের কয়েকজন আমাদের নিচের রুমে উঠলেন। আমরা একটার পর খাওয়ার খোঁজ করতে গিয়ে জানলাম, দুটোর আগে হবে না। এটা একটা সমস্যা। আমাদের একটার আগেই খাবার অভ্যেস। ওদের বলাতে এক কাপ করে লিকার চা পেলাম। তাই নিয়ে বাগানে রঙিন ছাতার নিচে বসে থাকলাম। আগেই বলেছি, ওদের বাগান খুব সুন্দর। ফুলের বাগান ছাড়াও একটু নিচেই ওদের সব্জী বাগানও আছে। এই হোম স্টের নিজের অনেকটাই সব্জী বাগান আছে। আলু পেঁয়াজ কপি মটরসুটি বাগানেই হচ্ছে। এছাড়া ওদের গোয়ালে দুধের গরুও আছে। কিন্তু বাগান নষ্ট করে দেয় বলে মুরগী নেই। বাগানে বসলে, বা সামনের বারান্দায় বসলে পিছন দিকে বিরাট ঘন পাইন গাছের জঙ্গল দেখা যায়। পিচের রাস্তা এদের হোমস্টে ছাড়িয়ে আরও দুই তিনশ মিটার নেমে গেছে, পঞ্চায়েত আপিস পর্যন্ত। কিন্তু গাড়ী সারাদিনে দশটাও চলে না। দূরে দূরে পাহাড়ের ঢালে গ্রামের বাড়ি দেখা যায়, কিন্তু মানুষের সাড়া শব্দ আসে না। ভোরের দিকে মোরগের ডাক, আর মাঝে মাঝে কুকুরের ডাক আসে। এই হোমস্টের সাত আটটি কুকুর আছে। যাঁরা কুকুর পছন্দ করেন, তাঁদের ভালো লাগবে। আমরা যখনই যেদিকে হাঁটতে বেড়িয়েছি, গোটা দুই তিন কুকুর আমাদের সাথে সাথে চলেছে। এদের ডাইনিং হলটিও বেশ বড় আর সাজানো। এক সাথে বারো চোদ্দ জন বসে যাওয়া যায়। খাওয়া প্রায় সব হোমস্টেতে একই রকম। দিনে ডাল তরকারী আলু ভাজা পাঁপড় ভাজা আর ডিমের ঝোল। রাত্রে চিকেন, রুটি বা ভাত যে যা খায়। সকালের চা দিতেও বেশ দেরী করে, সব জায়গায়। সকালের টিফিন লুচি, পরোটা বা রুটি চাইলে রুটি। বিকেলে চায়ের সাথে পাকোড়া। শুধু এই একই রকম খাওয়ারের জন্যই একটানা তিন দিনের বেশী থাকা বিরক্তিকর হবে। আর আমাদের মত যারা আলু প্রায় খায় না, তাদের তো আরও মুশকিল। প্রথম দিন বিকেলে আমরা পাইন বনের ভেতরে হাঁটতে চললাম। সাথে চলল তিনটি কুকুর। বনের ভিতরে ট্রাক চলে যাওয়ার মত পাথর বাঁধানো রাস্তা আছে। আমরা প্রায় এক কিমি হেঁটে গেলাম, রাস্তা খুব একটা খাড়া নয়। একটিই ট্রাকে কাঠ কেটে ফিরল দেখেছি। সন্ধ্যার পর সব হোমস্টেতেই সময় কাটানো মুশকিল। এই সময় আইপিএল-এর খেলা ছিল বলে মোবাইলে খেলা দেখে সময় কাটিয়েছি। এছাড়া ভোটের সময় বলে মাঝে মাঝে মোবাইলেই খবরও দেখেছি। সকাল বিকাল রাস্তা ধরে দেড় দু কিমি হাঁটা, তাছাড়া আর করার কিছুই নেই। ২৬ তারিখ ওখানে ভোট ছিল। আগের দিন সকালে মালিক সুনীল তামাং ভোটের ডিউটি করতে চলে গেল। ওর স্ত্রী আর অন্য কর্মচারীরা আমাদের দেখাশোনা করল। ভোটের দিন সকালে চা ফ্লাস্কে রেখে , ডাইনিং হলে বিস্কুটের কৌটোর সাথে রেখে সবাই ভোট দিতে চলে গেল। টিফিন পেতে দেরী হবে বুঝলাম। কিন্তু প্রায় অন্য দিনের মতই সময় টিফিন দিয়ে দিল। একটিই মেয়ে আমাদের খাওয়ার দিচ্ছিল। সে বলল, ভোরে উঠে ভোট দিতে গিয়েছিল। আমরা একদিন নিচের দিকে প্রায় এক কিমি হেঁটে কাফের গ্রামের শেষ পর্যন্ত গেলাম। আর একদিন উপরের দিকে হাঁটতে লাগলাম, বৌদ্ধ মন্দির পর্যন্ত যেতে পারি কি না দেখতে। কিন্তু মাইল দেড় দুই হেঁটে বুঝলাম, যেতে পারব না। ফিরে এলাম। ২৭ এপ্রিল সকালে টিফিন খেয়ে পরের হোমস্টে, সামথারে যাওয়ার জন্য দশটা নাগাদ গাড়ী ডাকা ছিল। গাড়ী ঠিক সময়ে চলে এল। কাফের হোমস্টে থেকে বিদায় নিলাম।
তৃতীয় পর্ব
কাফের থেকে সামথার বেশী দূর নয়। গাড়ীতে দেড় ঘণ্টাও লাগল না। কাফের থেকে মাইল তিনেক উঠে এসে বৌদ্ধ মন্দির পেলাম। ওটা লেলেগাঁও-এর ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশে। মন্দিরের পাশে একটি সুন্দর বাগান আছে। আমরা মন্দিরে না ঢুকে ঐ বাগানের দিকে গিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে ফিরে এলাম। বড় রাস্তা ধরে কয়েক মাইল এগিয়ে আবার পাহাড়ী রাস্তায় ঢুকল গাড়ী। সামথারের বাজার থেকে ডান দিকে সরু রাস্তায় ঢুকল গাড়ী। এক কিমি মত গিয়ে একটা সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখা গেল। তারপর থেকেই পাথুরে রাস্তা ধরে নেমে চলল গাড়ী। দু কিমি মত নেমে আমিহুদ হোমস্টেতে পৌঁছলাম। বেশ ঝকঝকে তিনতলা বাড়ী। পাশের বড় বাড়িটা থেকে একজন পাহাড়ী লোক বেরিয়ে এসে, আমাদের ব্যাগ দুটি তিন তলায় তুলল। তিন তলার কোনের ঘরটি আমাদের দিল। এখনকার ঘরটি কাফেরের ঘরের প্রায় অর্ধেক। কিন্তু বারান্দায় বেরিয়ে মন ভালো হয়ে গেল। এখানেও সামনে সবুজ পাহাড়ের ঢেউ। কুয়াশার জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। হোমস্টের কর্মচারী ডোনাল্ড দেখিয়ে দিল, কোনদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর দূরের কোন পাহাড়ে কি কি বেড়ানোর আছে। এখানে নিচের দিকে তাকালে পর পর বাড়ী ঘর দেখা যায়। ডোনাল্ড দেখাল, বাঁ দিকে একটি চার্চের প্রেয়ার হল। ওটা ছাড়িয়ে এগোলে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে বলল। এদের খাওয়ার জায়গা বেসমেন্টে। এদের এখানে আবার কাঁসার থালায় খাওয়া। ডোনাল্ড ছাড়া আর জন দুই কম বয়সী কর্মচারী আছে। বিকেলে চার্চের মাঠ পেরিয়ে ভিউ পয়েন্টে গেলাম। সত্যিই দেখার মত। কয়েক হাজার ফুট নিচে গ্রামের বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে; যেন এরোপ্লেন থেকে দেখছি। এখানেও আমরা তিনদিন ছিলাম। কোনদিন নীচের দিকের রাস্তা ধরে হেঁটে মাইল খানেক নামলাম। কোনদিন উপরের দিকে উঠে চললাম। একদিন খুব সকালে উপরের দিকে হাঁটতে লাগলাম, স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত চলে গেলাম। অত সকালে হাসপাতালের কোন কর্মচারীকে দেখলাম না। একজন পাহাড়ী মহিলা বসে ছিলাম। উনি মাকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছেন বললেন। পরে ডোনাল্ডের কাছে জেনেছি, দুজন ডাক্তার আছেন। হাসপাতালের পরিষেবায় ওরা খুশী। হোমস্টের একটু উপরে একটি ডনবস্কো স্কুল। সোমবার সকাল থেকে নিচের গ্রামের দিক থেকে ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলের দিকে উঠে আসছে দেখলাম। উপরের দিক থেকেও অনেক বাচ্চা গাড়ী করে এল। আমরা বিকেলে স্কুলের মাঠে বাচ্চাদের খেলতে দেখলাম। রবিবার সকাল থেকেই নিচের গ্রামের থেকে লোকজন চার্চের দিকে আসছে দেখা গেল। অনেকে গাড়ী করেও এল। সারাদিন থেকে বিকেলের দিকে একে একে ফিরে গেলেন। চার্চের অনুষ্ঠানের জন্য, ডোনাল্ড আমাদের জন্যও মাটন পেয়ে গেল। একটা জিনিস লক্ষ করে খারাপ লাগছিল, এত ভালো একটা হোমস্টে অথচ গেষ্ট নেই। আমরা তিনদিন ছিলাম, তার মধ্যে একদিন রাত্রে নিচের একটি রুমে গেষ্ট এসেছিল। ডোনাল্ড একটা গাড়ি ঠিক করে দিলে আমরা একদিন ঘন্টা তিন চার ঘুরে এলাম। প্রথমে গেলাম লামাদারা । একটি পাহাড়ের মাথায় কয়েকটি কটেজ। আশপাশের দৃশ্য মনোরম। ওখান থেকে গেলাম চারখোল। পাহাড়ের মাথায় অনেকটা জায়গা জুড়ে বেশ কয়েকটি কটেজ আর হোটেল। কটেজের বাগান দেখে বোঝা যায় একসময় বেশ সাজানো ছিল। ড্রাইভার জানাল বছর ছয়েক আগে মালিক মারা যাওয়ার পর আর দেখার কেউ নেই। মালিকের একমাত্র কন্যা বিদেশে থাকেন, এদিকে আসেন না। সম্ভবত পুরোনো কর্মচারীরা গেষ্ট এলে কটেজ খুলে দেয়। একসময়ের প্রাণ চঞ্চল একটি জায়গা কেমন নির্জীব পড়ে আছে। মনটা ভারী হয়ে গেল। নামার সময় ড্রাইভার দেখাম, উল্টো দিকের পাহাড়ে আমাদের হোমস্টে আর ডনবস্কো স্কুল দেখা যাচ্ছে। ঐ গাড়িকেই বলে দিলাম, পরদিন সকাল দশটায় চলে আসতে, আমরা এখান থেকে যাব দার্জিলিং এর দিকে ঋষিহাটের হোমস্টেতে। অমিহুদের এই ডোনাল্ড লোকটি খুব ভদ্র। প্রথমদিন বলেছিলাম, আলু খাই না। ও আমাদের আর আলু দিল না। মাছ আছে কি না জানতে চেয়েছিলাম,; আমাদের প্রায় চার পাঁচ বার মাছ দিয়েছিল। তিনদিন সামথারে থেকে রওনা দিলাম ঋষিহাটের দিকে। পথে আমাদের জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছে, জানতাম না।
চতুর্থ পর্ব
সুন্দর নামের আমাদের ড্রাইভার। আমরা দুজন মাত্র যাত্রী, কিন্তু গাড়ি আট জন বসার মত, টাটা সুমো। সামথার বাজার থেকে ডান দিকে, সাতাশ মাইলে-এর রাস্তা ধরল। গাড়ির ভাড়া থেকেই বোঝা গেল আজ বেশ দূরে যাচ্ছি। পাহাড়ের ঢালে ঢালে গাড়ী নেমেই চলল। সাতাশ মাইল একেবারে তিস্তা নদীর পাড়ে। এখানে তিস্তা নদী পেরিয়ে আবার পাহাড়ী রাস্তায় উপরে ওঠা। এসব রাস্তায় কোনদিন আসিনি। ড্রাইভার কাকে যেন ফোনে বলল, মংপো হয়ে যাচ্ছে। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত জায়গাটা মংপু। তাই কোনরকম মানসিক প্রস্তুতি ছিল না। হঠাৎ দেখি পাহাড়ী রাস্তার পাশে একটি উঁচু তোরণে লেখা, রবীন্দ্র ভবন। হৈ হৈ করে গাড়ী থামাতে বললাম। এমন একটি পুণ্য তীর্থের পাশ দিয়ে চলে যাবে, নামবে না, এমন আহাম্মক বাঙালি পাওয়া যাবে না। ডান দিকের রাস্তা ধরে হেঁটে গেলাম রবীন্দ্র ভবনের দিকে। একজন মহিলা ডেকে টিকিট নিতে বললেন। পঁচিশ টাকা করে টিকিট। পুরনো বাড়ীটি এখন একটি সংগ্রহশালা, আমরা দু জনই শুধু যাত্রী। নিজেরাই ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বাগানে কয়েকটা ছবি তুলে ফিরে এলাম। আমাদের উচ্ছাসের কারণটা ড্রাইভার বুঝলই না। এই মংপুন-কে ড্রাইভার মংপো বলছিল। এমন আর একটি জায়গা আছে, রংপো। গত অক্টোবরে পুর্ব সিকিম থেকে ফেরার সময় ধ্বসে রাস্তা আটকে ঋষিখোলা থেকে ফেরার সময়, রংপো ঘুরে ফিরেছিলাম। সে এক উৎকণ্ঠার যাত্রা ছিল। মংপু থেকে জোড়বাংলো পর্যন্ত রাস্তাটা বেশ উপভোগ্য হয়েছিল। ঘন পাইন বনের ভেতর দিয়ে মাইলের পর মাইল রাস্তা। মাঝ মাঝে মেঘ এসে রাস্তা ঢেকে দিচ্ছিল। জোড়বাংলায় এসে দার্জিলিং এর মূল রাস্তায় গাড়ি চলল। এটাই ঘুম। ঘুমে রাস্তায় একেবারে কলকাতার রাস্তার মত গাড়ীর ভিড়। কিছুটা এগিয়েই আমরা বাম দিকে ছোট রাস্তায় ঢুকে গেলাম। পরে জেনেছি, ওটাই মিরিক যাওয়ার রাস্তা। কয়েক কিমি এগিয়ে ডান দিকের রাস্তায় ঢুকল গাড়ী। এখন থেকে রাস্তা বেশ খারাপ। মাঝে মাঝে রাস্তা সারানোর কাজ চলছে। বেশ ঘন বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা। ফেরার সময় ড্রাইভার তার মোবাইলে ছবি দেখিয়েছে, সন্ধ্যার পর ঐ রাস্তায় চিতা বাঘ দেখা যায়। ঋষিহাট ঘুম থেকে অনেকটা নিচে। পিচের রাস্তা ঋষিহাট ছাড়িয়ে চলে গেছে। একটা মোড়ের কাছের থেকে রাস্তা খাড়া উঠে গেছে, হোমস্টের নিচে পর্যন্ত। তারপরও প্রায় পঞ্চাশ গজ হেঁটে উঠতে হয়। ওদের ছেলেরাই লাগেজ তুলে নিয়ে যায়। এদেরও কয়েকটা কটেজ আর একটি তিনতলা বাড়ী। আমরা তিন তলার একটি ঘর পেলাম। এদের বাড়ী আর কটেজগুলি চা বাগানের মধ্যে, উপর নিচ সব দিকেই চা বাগান। এখানেও সামনে সবুজ পাহাড়ের ঢেউ। একটু বাঁ দিকে তাঁর দেখা পাওয়ার কথা। দেখা যাক, দেখা যায় কি না।
আগের পর্বগুলো পড়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। কেই ২৫ বছর আগে ললেগাঁও ঘুরে এসেছেন। কেউ যেতে চান। আমার কাছে যেটা সবথেকে বড় খবর মনে হয়েছে তা হল, আবহাওয়া। কলকাতায় তখন ৪০-৪২ চলছে। আমরা ওখানে কম্বল গায়ে ঘুমিয়েছি। সন্ধ্যার পর সোয়েটার আর মাথায় টুপি। চারটি জায়গার মধ্যে ঋষিহাটেই সবথেকে বেশী ঠাণ্ডা পেয়েছি।
পঞ্চম পর্ব
ঋষিহাটে আমাদের দু দিন থাকার কথা। প্রথমদিন বিকেলে ওদের চা বাগানের মধ্যে দিয়ে উপরের দিকে হাঁটতে লাগলাম। নিচে থেকে দেখে বোঝা যায় না, উপরে অনেক বাড়ী ঘর আছে। একটি প্রাইমারী স্কুল আর তার ছোট্ট মাঠও আছে। ঐ মাঠে ছেলেরা ক্রিকেট খেলছিল। আরও উপরে উঠে একটি মোনাস্ট্রী পেলাম। বড় বাড়ী ঘর থাকলেও কোন মানুষ জন দেখলাম না। উল্টো দিকে বড় গেটের থেকে সোজা রাস্তা নেমে গেছে। ওদিকে কয়েকজন যুবক বসে ছিলেন। একজন এগিয়ে এসে আলাপ করলেন। ওনারা সাত জনের দলে এসেছেন। কোন্নগরের ওদিককার স্কুলের শিক্ষক। ওনারা বিকেল চারটে নাগাদ পৌঁছে খাওয়ার প্রায় কিছুই পাননি বলে অনুযোগ করলেন। সন্ধ্যা হতেই সামনের, বিশেষ করে ডান দিকের পাহাড়গুলি আলোয় ঝলমল করে উঠল। ওদিকটা দার্জিলিং শহর। সন্ধ্যার পর বেশ ঠাণ্ডা, বারান্দায় বসা যাচ্ছিল না। এদের খাওয়ার জায়গা বেশ ছোট। রাতের খাওয়ার আমাদের ঘরেই দিয়ে গেল। পরদিন সকালে আমরা নিচের দিকে হাঁটতে বেরোলাম। হোমস্টের একটি সাদা কুকুর আমাদের সাথে চলল। দেড়শ মিটার মত নেমে যেখানে পিচ রাস্তায় পড়লাম, সেখানের একটি বাড়ী থেকে একটি লাল কুকুরকে ডেকে আনল সাদা কুকুরটি। দুজনে চলল আমাদের সাথে। আমরা প্রায় এক কিমি নেমে আবার উঠে এলাম। এদের এখানে চায়ের সাথে বিস্কুট দেয় না, বলবার পর এনে দিল। ঐ দিন ছিল মে মাসের এক তারিখ। এগারোটা নাগাদ আমার মোবাইলে ব্যাংক থেকে মেসেজ এল, আমার প্রথম পেনশন পেয়েছি। বেশ অবাক করার মত ব্যাপার। মে ডে তে ব্যাংক খোলা থাকবে আশা করিনি। আমার বাবা পঞ্চাশ বছর আগে স্কুলের শিক্ষক হিসাবে অবসর নিয়ে, পেনশনের জন্য নয় বছর দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। আমি একেবারে প্রথম মাসেই পেয়ে গেলাম! দুই তারিখ আমাদের পরিবারের একটি বিশেষ দিন। এবার দিনটা ঋষিহাটে শুরু হল। ভোরে জানালা দিয়ে তাকিয়ে মনে হল তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এবার সবদিনই, সব জায়গা থেকে ঘোলা আকাশ দেখেছি, তাই ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। সকাল হতেই দেখলাম, ঠিক, কাঞ্চনজঙ্ঘা। সারা সময় ঐ দিকেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। বারান্দায় বেরিয়ে কয়েকটা ছবি তোলা হল। আজও নিচের দিকে হাঁটতে বেরোলাম, সাথে সেই সাদা কুকুরটি। লাল কুকুরকে আজ আর ডাকতে হল না, নিজেই এসে আমাদের দলে যোগ দিল। আজ আরও প্রায় এক কিমি নিচে নামলাম। একটা মোড়ের মাথায় একটি লোহার বেঞ্চ তৈরী করা হয়েছে, এখান থেকে কাঞ্চন জঙ্ঘা সুন্দর দেখা যাচ্ছে। বসলাম। সাথে সাথে লাল কুকুর এসে পায়ে হেলান দিয়ে বসলো। এ যেন আমার কত দিনের বন্ধু। ওখান থেকে ফেরার রাস্তা ধরলাম। সেই হোমস্টের মোড়ে এসে দেখি একটি ছোট্ট দোকান খুলেছে। ওদের কাছে একটি বিস্ক্রটের প্যাকেট কিনে দুই কুকুরকে খাওয়ানো হল। এদের দোকানে চায়ের অর্ডার দিয়ে বসে ছিলাম; হোমস্টে থেকে কম বয়সী দুই স্বামী স্ত্রী নেমে এল। এরা মোনাস্ট্রী কোন দিক দিয়ে ওঠা যায় জানতে চাইলে দু দিক দিয়েই ওঠা যায় জানালাম। আমরা চা খেতে খেতে দেখলাম ওরা পিচের রাস্তা ধরে উপরের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে। আমরাও ওদিকে রওনা দিলাম। আমাদের সাথে চলল সাদা কুকুরটি। কয়েকশ গজ এগিয়ে যাওয়ার পর অন্য দুটি কুকুরকে দেখলাম, ওরা সাদা কুকুরকে তেড়ে গেল। একটু এগিয়ে দেখি দুটি বাচ্চা কুকুর রাস্তার পাশে খেলছে। একেবারে নেকড়ের বাচ্চার মত। অনেকটা উঠে, বাঁদিকে মোনাষ্ট্রীতে ওঠার রাস্তা পেলাম। সকালে এদিক থেকে মাইকে মন্ত্র পাঠের শব্দ শুনেছি। এখন আবার সব শুনশান। বড় গেটের পাশে ছোট গেট, তাই দিয়ে আমরা চারজন ঢুকলাম। বেশ বড় চত্বর কিন্তু একজনও লোক নেই। আমরা কয়েকটা ছবি তুলে পিছন দিকের রাস্তা দিয়ে নেমে এলাম। হোমষ্টের ডাইনিং রুমে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে বিল করতে বলে গেলাম। কটেজগুলির পাশে একটি ছোট্ট ঘরই অফিস। ওখানেই ওদের নিজেদের বাগানের চা পাতার প্যাকেট কিনলাম। চায়ের চাষই ওদের আসল কাজ, কয়েক বছর হল হোমস্টে করেছে। এখনকার মালিকের বাবা একজন প্রাক্তন সেনা কর্মী। অন্য সব কর্মচারীর সাথে সমানে কাজ করে যাচ্ছেন। দশটা নাগাদ আমরা ঋষিেহাট থেকে টুকভার হোমস্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তখনও কাঞ্চনজঙ্ঘা সুন্দর দেখা যাচ্ছে।
দার্জিলিং পর্ব
এবারও আমাদের দু জনের জন্য বড় গাড়ী। সেই ঘুম থেকে কলকাতার রাস্তার মত গাড়ীর ভিড়। বাতাসিয়া পৌঁছে ড্রাইভারকে বললাম, এখানে দশ মিনিট দাঁড়ানো যায়? সে বলল, এখানে না দাঁড়িয়ে ম্যালে চলুন। ঘন্টা খানেক লাগল ম্যালের কাছে পৌঁছতে। মাঝে দুবার পাশ দিয়ে ঝকঝকে টয় ট্রেন যেতে দেখলাম। পরে জেনেছি, এখন আর শিলিগুড়ি পর্যন্ত চলে না টয় ট্রেন। আমরা সাড়ে এগারোটার পর ম্যালে পৌঁছালাম। তখনও সেখানে অনেক যাত্রী ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এবার নতুন যা দেখলাম, ম্যাল রোডে সরকারী ভাবেই হকারদের বসানো হয়েছে। ঝকঝকে রোদ থাকলেও বেশ ঠাণ্ডা বাতাস ছিল। আমরা এক কাপ করে কফি খেয়ে গাড়ীতে ফিরে এলাম। দার্জিলিং ছাড়িয়ে গাড়ী চলল টুকভারের দিকে। এবার গাড়ী পাহাড়ের ঢালে ক্রমশ নেমেই চলল। মাত্র আট কিমি রাস্তা। টুকভারের মিটমা হোমস্টে একেবারে রাস্তার পাশে। এই রাস্তা দিয়ে দিন রাত অবিরাম গাড়ী চলে। এটাকে ঠিক অফ বিট জায়গা বলা যায় না। এদেরও ঘর বেশ ভালো। খাওয়া দাওয়া খারাপ না। অনেকেই বলেছেন, বিকেলে এখান থেকে একটা গাড়ী নিয়ে দার্জিলিং ঘুরে যায়। আমরা বিকেলে পাহাড়ী রাস্তায় উপরে উঠলাম হেঁটে। আর সঙ্গীও একজন চারপেয়ে চলল আমাদের সাথে। এখানে রাস্তা বেশ খাড়া। উপরে উঠে সুন্দর চা বাগানের মধ্যে পৌঁছলাম। এরা বিকেলে চায়ের সাথে বিস্কুট দেয়, পাকোড়া নয়। এখানে একজন বয়স্ক সহযাত্রী পেয়েছিলাম, তার সাথে গল্প করে অনেক সময় কাটল। পরদিন সকালে বেরোতে গিয়ে সমস্যা হল। এরা গেটে তালা দিয়ে রাখে। তালা খুলল সাতটা নাগাদ। চা খেয়ে হাঁটতে বেরোলাম, এবার নিচের দিকে। একশ মিটার মত নেমে বাঁ দিকে একটা ফুটবল মাঠ পেলাম। পাহাড়ের উপরে এত বড় মাঠ সহসা দেখা যায় না। মাঠে এক চক্কর দিয়ে ফিরে এলাম। দশটা নাগাদ শিলিগুড়ি ফেরার গাড়ীতে উঠলাম। আমাদের ট্রেন রাত্রে, তাই রাস্তায় কয়েকটা জায়গা ঘুরে নামব বলেছিলাম। হোমস্টে মালিকই বলে দিলেন, মিরিক ঘুরে নামতে। এবার আর দার্জিলিং-এ নামলাম না। কিন্তু ঘুম পর্যন্ত আসতেই দেড় ঘণ্টা লাগল। ঘুমের পরে মিরিকের রাস্তা ফাঁকা। ঘুম থেকে দশ বারো কিমি নেমে একটা বাজার মত এলাকা পেলাম। ড্রাইভার বলল, লেপচা জগৎ।
ওখানে না নেমে এক কিমি মত এগিয়ে একটি অপূর্ব সুন্দর জায়গায় পৌঁছলাম। একটু আগে থেকেই রাস্তার পাশে সব গাড়ী দাঁড়িয়ে গেছে। ডান দিকে রাস্তার পাশে সুন্দর পাইন গাছের জঙ্গল। এক একটা গাছ বোধহয় একশ ফুটের বেশি লম্বা। কুড়ি টাকা করে টিকিট কেটে পাইন বনের মধ্যে ঢুকলাম। সকলেই ছবি তুলতে ব্যস্ত। আমরাও ছবি তুলে নেমে এলাম। রাস্তার পাশের দোকানে কফি খেয়ে গাড়ীতে ফিরে এলাম। কিছুটা এগিয়েই গাড়ী বড় রাস্তা ছেড়ে বাঁ দিকে উপরে উঠতে থাকল। ড্রাইভার বলল, সকলে এদিকে নিয়ে যায় না, এটাও একটা ভালো দেখার জায়গা। এক কিমি মত পাইনের বনের ভেতর দিয়ে উঠে একটা ফাঁকা চত্বরে পৌঁছলাম। অনেকটা জায়গা জুড়ে দুটি বড় পুকুরের মত জল, সিমেন্টে বাঁধানো। বড় জলাশয়ে প্রচুর মাছ দেখলাম। এই জায়গার নাম জোড় পোখড়ি। এখানেই কয়েকটা কটেজ আছে দেখলাম। উল্টো দিকে দিয়ে নেমে বড় পিচ রাস্তায় পড়লাম। এবার আধ ঘণ্টা মত চলে বেশ একটা মজার জায়গায় পৌঁছলাম। ড্রাইভার জানাল রাস্তার ডান দিকের বাড়ী সকল নেপালের। আর বাঁ দিকে ভারত। কয়েকশ মিটার এগিয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় পৌঁছলাম। ঐ জায়গার নাম সীমানা। অনেক গাড়ী দাঁড়িয়ে গেছে। আমরাও নামলাম। ড্রাইভার দেখল, দূরের বড় পাহাড়টার মাথায় সন্দাকফু। ফাঁকা চত্বরে অনেক দোকানপাট বসে গেছে, মেলার মত। বেশিরভাগই শীতের পোশাক। আমরা কিছু চকলেট কিনে ফিরে এলাম। গাড়ী পাহাড়ী রাস্তা ধরে কয়েক কিমি এগিয়ে আবার একটা বাজার এলাকায় পৌঁছল। ড্রাইভার বলল এখানে নামতে পারেন, নেপালে ঢুকতে হলে আ ই কার্ড লাগবে। দেখার কিছুই নেই জেনে আর নামলাম না। আরও আধ ঘণ্টা মত চলে একটি সুন্দর চা বাগানের মধ্যে পৌঁছালাম। গোপালধারা চা বাগান। অনেক গাড়ী থেমেছে। ড্রাইভার বলল ফটো তোলার জন্য নামতে পারেন। বেশ বেলা হয়েছিল, তাই নামলাম না। আমাদের মিরিক পৌঁছে খাওয়ার কথা। আমাদের তিরিশ বছর আগে দেখা মিরিক চেনা গেল না। এত বেশী গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে যে গাড়ী রাখার জায়গা পাওয়াই মুসকিল। লেকের পাশে একটি হোটেলে মাছ ভাত খেলাম। ভালো না। এরপর ব্রীজ পেরিয়ে অন্য পারে গিয়ে, হেঁটে প্রায় গোটা লেকই ঘুরে নিলাম। ঐ দুপুর রোদেও কেউ কেউ নৌকায় ঘুরছে, কেউ ঘোড়ার পিঠে। এক ঘন্টা ওখানে কাটিয়ে ফেরার রাস্তা ধরলাম। সেই তিরিশ বছর আগে মিরিক যাওয়ার রাস্তায় অনেক চায়ের বাগান দেখেছিলাম যেন। এবারও অনেক দেখলাম, কিন্তু আগের মত সেরকম সবুজ মনে হল না। এবার ক্রমশ নেমেই চলল গাড়ী। দুধিয়ায় একেবারে সমতলে পৌঁছলাম। আগেরবার যেন শিলিগুড়ি থেকে দুধিয়া অনেক কম সময়ে পৌছেছিলাম। এবার রাস্তাটা অনেক চওড়া দেখলাম। বিকেলে শিলিগুড়ি শহরে ঢুকেও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পৌঁছতে প্রায় এক ঘন্টা লাগল। আমাদের গাড়ী রাত আটটা চল্লিশে। সাড়ে ছটা থেকে স্টেশনে বসে থাকতে হল। এবার যাওয়ার সময়, ট্রেনে মালদা স্টেশনে আর ফেরার সময় এনজেপিতে অনলাইনে খাওয়ার অর্ডার দিয়েছিলাম। IRCTC থেকে, ক্যাশ অন ডেলিভারী। খাওয়ার মোটামুটি। পদাতিক এক্সপ্রেস নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিয়ালদা পৌঁছে গেলাম। এবারের ঘোর গ্রীষ্মের গরমের বেশিরভাগ সময় পাহাড়ে কাটিয়ে এলাম। এত লম্বা ছুটি চাকরীতে থাকলে পেতাম না।