একটি সহজ বিষয় নিয়ে লিখবো।
ধরা যাক- হঠাৎ রাস্তায় যেতে যেতে আপনি দেখলেন – একজন লোক প্রতিদিন বসে বসে নিজের চুল টেনে তুলছে! যখন যেখানে যাচ্ছে, সেখানে বসেই একটাই কাজ করে চলছে- টেনে টেনে চুল ছিঁড়ছে বা তুলছে! হতে পারে শরীরের যেখানে সেখানে টাক ও পড়ে গেছে !
কি ভাববেন? চুল বেশি হয়েছে? নাকি চুলের গোড়ায় খুসকি অথবা উকুন আছে? হতেই পারে। আবার এর কোনটাই নাও হতে পারে। এটি হতে পারে একটি অসুখ। অতএব , খিল্লি করবেন না প্লিজ। একে বলে -ট্রাইকটিলোম্যানিয়া – সোজা বাংলায় বললে বার বার টেনে টেনে চুল তোলা। দয়া করে কেউ হিন্দিতে অনুবাদ করে বসবেন না!
এটি একটি কম্পালসিভ বিহেভিয়ার। না, অলৌকিক কিছু নয়। এটি অবসেসিভ কম্পালসিভ বিহেভিয়ারের অংশ। বেশ কিছু মানুষ আছেন, তাঁরা বারবার কিছু কাজ করেন, যেটা করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়, কিন্তু নিজেকে কিছুতেই নিবৃত্ত করতে পারেন না। বার বার একই কাজ করেন। এবং এমন কিছু কাজ , যেটার আদৌ কোন প্রয়োজন নেই বা ব্যবহারিক জীবনে নিতান্তই বিরক্তিকর একটি অভ্যাস। এবং এর ফলে যেটা হয় – ব্যক্তি জীবনে, সমাজ জীবনে নানান সম্পর্কের উপর এর প্রভাব পড়তে শুরু করে।
এদের যদি প্রশ্ন করেন- শুধুই কি চুল টানা এর লক্ষণ? না, মোটেই না। কম্পালসিভ বিহেভিয়ার এর মধ্যে পড়ে এমন কিছু উদাহরণ – ভুলভাল কথা বলা, শপিং করা, বারবার হাত মুখ ধোয়া, জুয়া খেলা , বারবার কিছু গোনা, সেক্স করার চিন্তা, চামড়া টেনে বা খুঁচিয়ে তোলা ।
আরেকটি আছে। দেখতে বদভ্যাস হলেও সেটিও কম্পালসিভ বিহেভিয়ারের মধ্যে পড়ে। ধরতে পারছেন?
সেটি হলো- চুলকানি! হ্যাঁ চুলকানি। কেউ যদি কোন কারণ ছাড়াই এদিক ওদিক চুলকে বেড়ায়, হয়তো তেমন কোন দাদ বা একজিমা বা জণ্ডিস বা এই জাতীয় চুলকানির কারণ নেই, মানে
“পাগলা চুলকে নে” না বললেও যে অনবরত চুলকাতে থাকে, তাদেরকে নিয়ে খিল্লি না করে ভাবুন – এটি অসুখ। এবং সিরিয়াসলি এটি অসুখ। এবং এর ট্রিটমেন্টও আছে। কিছু ওষুধের পাশাপাশি হ্যাবিট রিভার্সাল ট্রেনিং এবং কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি করা হয়। ভালো সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেওয়া দরকার এসব ক্ষেত্রে।
পারে না …. সত্যি সত্যিই কেউ কেউ পারে না নিজের বিহেভিয়ার বদলাতে।আমাদের সবার আশেপাশেই এরকম দু’চারজন মানুষকে দেখতে পাবেন। পুরো শরীর টাকলা হয়ে যাবার আগেই,
ঘাবড়ে না গিয়ে বিজ্ঞানের সাহায্য নিন।
সবশেষে একটাই সতর্কবাণীঃ
আপনার যদি মনে হয় অকারণে কেউ অন্যের চুল টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলতে চায় বা কোন বিজ্ঞানসম্মত কারণ ছাড়াই অন্যকে চুলকে দেয়, তাহলে চিকিৎসাটা নিজেই করুন।
একটা রেজর নিন… নির্দ্বিধায় সব চুল মানবহিতার্থে দান করে দিন … অথবা আদর করে একটু বিছুটি পাতা ঘষে দিন তার শরীরে …