আমি তখন লন্ডনে রয়েল ন্যাশনাল থ্রোট নোজ এন্ড ইয়ার হাসপাতালে কাজ করি। লন্ডনের কেন্দ্রে কিংস ক্রস স্টেশনের কোনাকুনি রাস্তা গ্রেস ইন রোড তাতে ছোট্ট এবং অত্যাধুনিক হাসপাতাল। এইধরনের হাসপাতালের বাড়িগুলো সাধারণত বিখ্যাত লর্ডদের রক্ষিতাদের বাড়ি পরে হাসপাতালকে দান করা।কিছুটা অবস্থানগত এবং অনেকটা গুণগত কারণে লন্ডনের সেলিব্রিটিদের আনাগোনা লেগে থাকতো এই হাসপাতালে। বিবিসির সংবাদ পরিবেশক, বিভিন্ন জনপ্রিয় সিরিয়ালের অভিনেতা, অভিনেত্রী ইত্যাদি।
তো একদিন আমি ক্লিনিক করছি। মস্ত হলঘরে কাঠের খুপরি করে অনেক চেম্বার। কিছু নতুন ও কিছু পুরোনো পেশেন্টের মিশ্রণ। আমার নার্স হঠাৎ এসে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো , বাইরে টনি বেন বসে আছেন।
টনি বেন ইংল্যান্ডের হাউজ অফ লর্ডসের ( রাজ্য সভার) এক বরিষ্ঠ সাংসদ। আপোষহীন এক বামপন্থী। সোজা কথা সোজাভাবে বলার জন্য সরকার ও বিরোধীপক্ষ উভয়ের ত্রাস।
আমি বাইরে এসে দেখলাম বেঞ্চিতে রোগীদের লাইনে টনি বেন বসে আছেন। আমি তাকে আগে দেখে দেবার এবং প্রয়োজন হলে হাসপাতালের আরো সিনিয়রদের সাথে দেখা করিয়ে দেবার অনুরোধ জানালাম। তিনি মৃদু হেসে ভদ্রতার সাথে অসম্মতি জানালেন। বললেন তিনি তার ডাক পড়লে তবেই আসবেন। এবং হাসিমুখে দু ঘন্টা রোগীদের ভিড়ে চুপ করে বসে রইলেন।
এই কথাটা আজ খুব বেশি করে মনে পড়ছে।
এখনকার নেতা মন্ত্রীরা যেরকম সোজা উডবার্ন ওয়ার্ডে ঢুকে যান বা বাড়িতে সরকারি চিকিৎসকদের আসতে বাধ্য করেন তাতে মনে প্রশ্ন জাগে যে ভিভিআইপিদের জন্য কি অন্য কোন নিয়ম আছে? যে কেউ কি উডবার্নে ঢুকে বিভাগীয় প্রধানদের বিপি মেপে দেবার অনুরোধ করতে পারে? এইরকম নিয়ম থাকলে সরকার সেটা প্রকাশ্যে আনুক। আমরা সবাই দেখি। নইলে এই হাস্যকর সার্কাস তামাশা বন্ধ হোক।