(এ লেখাটি প্রায় মাসখানেক আগে চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম ওয়েবজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমান প্রবন্ধটি পূর্ব প্রকাশিত লেখাটির পরিমার্জিত, বৃহত্তর ও খানিকটা ভিন্নতর রূপ।)
প্রায় মাস পাঁচেক হল অশনাক্ত জ্বরে শিশুরা অনেক বেশি করে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। মৃত্যুও ঘটছে, সংখ্যায় ১৩২ কোটি মানুষের তুলনায় নিতান্ত কম হলেও। আসলে ঠিক কত শিশুর মৃত্যু হলে তাকে বিপর্যয় বলব এটা আমরা বুঝে উঠতে পারিনা ঠিকঠাক। রাষ্ট্র পরিচালকেরা এ ব্যাপারে আমাদের জন্য কোন পাঠ্যক্রমও রচনা করেননি।
প্রসঙ্গত, এটা কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের চিত্র নয়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এবং অঞ্চলেই এর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনা বোধ করি যেকোন মানুষকেই ভাবাবে কতকগুলো বিষয়ে। এখানে আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে বব ডিলানের কালজয়ী ক্ল্যাসিক –
“Yes, ’n’ how many ears must one man have
Before he can hear people cry?
Yes, ’n’ how many deaths will it take till he knows
That too many people have died?
The answer, my friend, is blowin’ in the wind
The answer is blowin’ in the wind”
সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে যে বিষয়গুলো ভাবাচ্ছে সেগুলো হল –
(১) এগুলো কি কোভিডের কোন উপসর্গ?
(২) যদি তা হয়, তাহলে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ কি সমাসন্ন, যেখানে অনেক বিশেষজ্ঞের এপিডেমিওলজিক্যাল মডেল বলছে যে অক্টোবরের কোন এক সময়ে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ শিখর স্পর্শ করতে পারে?
(৩) যদি কোভিড-জনিত কারণে শিশুদের মাঝে জ্বরের হঠাৎ করে প্রাদুর্ভাব এবং পরিণতিতে হাসপাতাল বা নার্সিং হোমে ভর্তি হতে বাধ্য হওয়া কি ভিন্ন ভিন্ন কারণে হচ্ছে?
(৪) এবং এই ভিন্ন ভিন্ন কারণ একটি সময়কালে সমাপতিত হচ্ছে? যদি তা হয়, তাহলে তার সম্ভাব্য কারণগুলো কি?
মোটের উপরে এই প্রশ্নগুলোকে নিয়ে প্রাথমিক স্তরের একটি আলোচনা হওয়া উচিত, বিশেষত জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং যে পরিস্থিতিতে আমাদের আদরের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রথমে কোভিডের কারণে শিশুদের যে বিশেষ ধরণের সংক্রমণ সে বিষয়ে কিছু কথা বলে নিই। গতবছর অর্থাৎ ২০২০-র ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই আমেরিকা এবং ইউরোপের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের নজরে আসে যে শিশুদের একটি আলাদা ধরণের কোভিড সংক্রমণ ঘটছে। ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০-তে জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এ একটি স্টাডি প্রকাশিত হয় “Association of Intravenous Immunoglobulins Plus Methylprednisolone
vs Immunoglobulins Alone With Course of Fever in Multisystem Inflammatory Syndrome in Children” শিরোনামে। সেখানে বলা হয় – “Multisystem inflammatory syndrome in children (MIS-C) is the most severe pediatric disease associated with severe acute respiratory syndrome coronavirus 2 infection, potentially life-threatening, but the optimal therapeutic strategy remains unknown.” এই Multisystem inflammatory syndrome in children (MIS-C)-কে অনেক চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী সন্দেহ করেছিলেন ভারতে শিশুদের এখনকার এই জ্বরের কারণ হিসেবে। কিন্তু সার্স-কোভ-২-এর কোন নমুনা এদের মধ্যে শনাক্ত করা যায়নি।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ একটি ট্রিটমেন্ট প্রোটোকলও দেওয়া হয়েছিল।
২০২১-এর ১৬ মার্চ, পূর্বোক্ত আমেরিকান জার্নাল অফ মেডিসিন-এ একটি বড় স্টাডি প্রকাশিত হয় “Characteristics and Outcomes of US Children and Adolescents With Multisystem Inflammatory Syndrome in Children (MIS-C) Compared With Severe Acute COVID-19” শিরোনামে। এখানে বলা হয় – “In this case series that included 539 patients with MIS-C and 577 patients with severe COVID-19, patients with MIS-C were more likely than those with severe COVID-19 to be 6 to 12 years old, be non-Hispanic Black, and have severe cardiovascular or mucocutaneous involvement and more extreme inflammation.”
কিন্তু এগুলো তো আমেরিকান স্টাডির খবর। ভারতের ক্ষেত্রে বা আমাদের রাজ্যে জলপাইগুড়ি, মালদা, দুই দিনাজপুর বা কলকাতায় কি হচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের ১ থেকে ১৫ সেপ্টেমবরের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১৫০০ শিশু আক্রান্ত হয়েছে অশনাক্ত এই জ্বরে, মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এসময় ডেঙ্গুরও প্রাদুর্ভাব ঘটছে। ফলে অনেকের সন্দেহের সংক্রামকের তালিকায় ডেঙ্গুও ছিল। কিন্তু ডেঙ্গুর হেমোরেজিক সংক্রমণ না হলে এরকম মৃত্যু ঘটার কারণ নেই। চিকিৎসকদের অনুমান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগা এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠবে, একসাথে এতগুলো শিশু হঠাৎ এরকম সময়েই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে যাবে কেন?
বিবিসি নিউজে (১ সেপ্টেম্বর, ২০২১) খবর হয়েছে – “The mystery fever killing children in India”। বিবিসি উত্তরপ্রদেশের খবর করেছে – “At least 50 people, mostly children, have died of the fever, and several hundred have been admitted to hospital in six districts in the eastern part of the state. None of the dead tested positive for Covid-19.”
ভর্তি হবার পরে দ্রুত শিশু মৃত্যু ঘটছে, উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে। সেখানে ডেঙ্গু এবং স্ক্রাব টাইফাসকে কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কারণ এখনও অজ্ঞাত। এই প্রতিবেদনের শেষ কথা হচ্ছে – “Clearly, only more investigations and genome analysis will reveal whether the latest spate of “mystery fevers” in India are triggered by dengue alone, or a host of other diseases. This would mean training local clinics and hospitals in collecting samples of people suffering from fever and send them for genome testing to labs.” অর্থাৎ, উন্নততর জনস্বাস্থ্যের কাঠামো এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রসঙ্গ যথেষ্ট গুরুত্ব নিয়ে সামনে এলো।
২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, সায়ান্স ম্যাগাজিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর – ““Mystery Fever” Claims the Lives of Dozens of Indian Children। এ খবরে বলা হল – “According to multiple news outlets, the hundreds of people hospitalized by the illness have experienced fever, headaches, joint pain, nausea, rashes, and dehydration. A drop in platelet count has also been observed in many fatal cases. Though many of these symptoms can occur in severe dengue cases, The Hindustan Times and others report that the likely culprit is a bacterial disease called scrub typhus. Scrub typhus can occur after a person is bitten by chiggers infected with Orientia tsutsugamushi bacteria.”
Multisystem inflammatory syndrome in children (MIS-C)-এর ক্ষেত্রেও জ্বর, মাথাব্যথা, অস্বাভাবিক দুর্বলতা, গায়ে লাল লাল ছোপ বেরনো, পেট ব্যথা বমি ডায়ারিয়া, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা যায়। ফলে চট করে সন্দেহমুক্ত হওয়া মুশকিল। বিশেষ করে, বারংবার যখন আন্তর্জাতিক মহলে ভারত রাষ্ট্রের তরফে রোগের তথ্য চেপে যাওয়া, উপযুক্ত অনুসন্ধান না চালানো বা ভুল তথ্য দেবার মতো অভিযোগ উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রেস্পিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসকে দায়ী করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের তরফে। তাহলে কি ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ালো যে কোভিড পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে?
কে দেবে উত্তর? কোন নির্ভরযোগ্য জেনোমিক বা এপিডেমিওলজিক্যাল স্টাডি নেই। কিন্তু উন্নত দেশে এগুলো তো জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য একান্ত আবশ্যকীয় কার্যক্রম।
অতীত স্মরণ
১২ ডিসেম্বর, ১৯৯১, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ লরেন্স সামার্স একটি গোপন নোট তৈরি করে সহকর্মীদের মধ্যে বিলি করেন, মতামত চান। ১৯৯২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বিখ্যাত পত্রিকা The Economist নোটটি প্রকাশ করে দেয় “Let Them Eat Pollution (ওদেরকে দূষণ খেতে দাও)” শিরোনামে। নোটটির মোদ্দা কথা ছিল, ধনী বিশ্বের সমস্ত প্রাণঘাতী, দূষিত আবর্জনা আফ্রিকা বা কম উন্নত দেশগুলো তথা LDC (Less Developed Countries)-তে পাচার করতে হবে। এজন্য একটি স্বাস্থ্যের যুক্তিও দিয়েছিলেন সামার্স।তাঁর বক্তব্য ছিল আমেরিকার মতো দেশে ১,০০,০০০ জনে ১ জনেরও যদি দূষিত বর্জ্যের জন্য প্রোস্টেট ক্যান্সার হয় তাহলেও এর গুরুত্ব আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে যেখানে ৫ বছরের নীচে শিশুমৃত্যুর হার ১০০০ শিশুতে ৫ জন তার চাইতে বেশি। এবং সেখানেই প্রথম বিশ্বের দেশের এই দূষণ পাচার করতে হবে, পাচার করতে হবে এই বিষাক্ত বর্জ্য। এরকম “চমৎকার ও অভিনব” ধারণার পুরস্কার হিসেবে ক্লিন্টন প্রশাসনে ৭ বছর U.S. Treasury Secretary পদে ছিলেন। সে মেয়াদ শেষ হলে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
আমরা এরকম একটা প্রেক্ষিতকে যদি স্বাস্থ্যের চোখ দিয়ে দেখি তাহলে সহজেই বুঝবো স্বাস্থ্যের জগতে দু’ধরনের নাগরিকত্ব (health citizenship) তৈরি হল। একটি পূর্ণ রাশি ১, আরেকটি ০। আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও এরকম integer দেখা হয় – হয় (শূণ্য) ০ কিংবা ১। এখানে ভগ্নাংশের কোন জায়গা নেই। যেমনটা আজকের ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দেখছি আমরা। স্বাস্থ্য নাগরিকত্বের প্রশ্নটিতে আমাদের মনোযোগ দেবার প্রয়োজন এ জন্য যে বিশ্ব স্বাস্থ্যের দুনিয়ায় একজন নাগরিক নৈতিকভাবে স্বাস্থ্যের সমস্ত সুবিধে ভোগ করার অধিকারী, “স্বাস্থ্য আমার অধিকার” এই শ্লোগানের বাইরে গিয়েও। কারণ স্বাস্থ্যকে একটি public good হিসেবে দেখতে হবে – এমন দাবী উঠেছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর মতো মান্য জার্নালে। এরকম স্বাস্থ্য নাগরিকত্বের অবস্থান থেকে বরেণ্য জনস্বাস্থ্য গবেষক এবং দার্শনিক (যিনি social determinants of health-এর ধারণার প্রবক্তাও বটে) মাইকেল মার্মট প্রশ্ন করেন – “রোগীদের কেন চিকিৎসা করছ এবং যে পরিস্থিতিতে থেকে তাদের অসুখ শুরু হয়েছিল সেখানে আবার ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছ?” প্রশ্ন করেন সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য – “আমরা কি হয় ব্যক্তি চিকিৎসক কিংবা ডাক্তার-সমাজ হিসেবে যুক্ত হব না?” (“Shouldn’t the doctor, or at least this doctor, be involved?”) (The Health Gap, ২০১৬)
আমাদের কাছে সত্যিই কি এসব প্রশ্নের সদুত্তর আছে? আমাদের দেশে এবং সমগ্র বিশ্ব জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো করোনা-কাহিনী স্বাস্থ্য নাগরিকত্বের এই দ্বিত্বতা প্রকট করেছে।
১৯৮১ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ কংগ্রেসের ৩৪তম অধিবেশন বসেছিল জেনেভাতে, ৪-২২ মে, ১৯৮১ সালে। সে সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, “আমাদের অবশ্যই অসামান্য আধুনিক হাসপাতাল প্রয়োজন।” তাঁর পরবর্তী বক্তব্যই ছিলো, “স্বাস্থ্যকে মানুষের কাছে পৌঁছুতে হবে। কেন্দ্রাভিমুখী হবার বদলে প্রান্তাভিমুখী হবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা।” আরও বললেন, ”স্বাস্থ্য কোন পণ্য নয় যা পয়সা দিয়ে কেনা যায় কিংবা এটা কোন ‘সার্ভিস’ নয় যা দেওয়া হবে। “এটা জানার, বেঁচে থাকার, কাজে অংশগ্রহণ করার এবং আমাদের অস্তিত্বসম্পন্ন হবার চলমান একটি প্রক্রিয়া”। আরও বলেছিলেন, “আমাদের স্বাস্থ্যসেবা শুরু হবে সেখান থেকে যেখানে মানুষ রয়েছে, সেখান থেকে যেখানে রোগের সমস্যার শুরু”। আধুনিক সময়ের পূর্ণত পণ্যায়িত ঝকমকে, চোখ-ধাঁধানো স্বাস্থ্য পরিষেবার (স্বাস্থ্য নয় কিন্তু, এই ভুল করবেন না) যুগে ৪০ বছর আগের এ উচ্চারণ এবং উপলব্ধি বৈপ্লবিক বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ক্লিনিক্যাল হেলথ তথা ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং পাবলিক হেলথ তথা জনস্বাস্থ্য এ দুয়ের মাঝে বিস্তর ফারাক – দুটি আলাদা দর্শনের জগৎ। আমরা আমাদের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ৫-৭ বছর বা তার বেশি সময় ধরে যা শিখি তা হল একজন ব্যক্তি রোগীকে সবচেয়ে ভালোভাবে কি করে চিকিৎসা করা যায়। এখানে জনস্বাস্থ্য বা জনতার স্বাস্থ্য একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে পাস করে বেরনো চিকিৎসক সমাজের মানসিক অবস্থানে এবং সামাজিক দর্শনে ক্লিনিক্যাল হেলথের ছাপ রয়ে যায় কিংবা এ ছাপ রয়ে যায় চিকিৎসকের চেম্বারে অথবা সরকারি কিংবা প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগীর চিকিৎসার মাঝে – এক দুর্মর ছাপ। পাবলিক হেলথ এখানে দুয়োরাণী। একটা উদাহরণ হচ্ছে, এ মুহূর্তে ভারতে ৩০,০০,০০০-এর বেশি মানুষ মারাত্মক এবং মারণান্তক সিলিকোসিস রোগে ভুগছে। এ রোগ আমাদের প্রায় পড়ানো হয়না বললেই চলে। এ রোগ দরিদ্র হবার রোগ, দারিদ্র্যের অভিশাপের রোগ – কৃষিতে সংকুলান না হবার জন্য পেটের দায়ে খাদানের কাজ কিংবা বিভিন্ন ক্রাশার নিয়ে কাজ করার রোগ। ক্লিনিকাল হেলথের শিক্ষা আমাদের কাছে এ রোগকে অদৃশ্য (invisible), অশ্রুত (indiscernible) করে রেখেছে। একে দৃশ্যমানতা বা visibility এবং শ্রুতিসীমা বা discernibility-র স্তরে তুলে আনার প্রচেষ্টা কি আমরা চালাবো? এরকম আরও অনেক রোগের কথা বলা যায়। প্রসঙ্গত, আমেরিকায় অ্যাসেবেস্টোসিস রোগে (সিলিকোসিস ধরনের একটি রোগ) বছরে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ মারা যায়। এ নিয়ে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল (NEJM) পত্রিকায় ১৫ আগস্ট, ২০১৯, সংখ্যায় বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হল “A Most Reckless Proposal – A Plan to Continue Asbestos Use in the United States”। এ প্রবন্ধে বলা হল – “Each year, nearly 40,000 Americans die often painful, protracted deaths from diseases caused by asbestos. These deaths occur in firefighters, police officers, construction workers, miners, military veterans, shipyard workers, and maintenance workers whose exposures to asbestos are primarily occupational. Death also occurs in partners and children of such workers, whose only exposures to asbestos were from dust on clothing brought home from work by a family member.”
আরও বলা হল – “We believe that this administration’s brazen attempt to continue and potentially expand asbestos use in the United States is an affront to public health and human dignity.” শুধু এটুকুই নয়, প্রবন্ধটিতে জোর দেওয়া হল – “We believe the Ban Asbestos Now bill is long-overdue legislation that deserves to be enacted into law. Industries should no longer be allowed to propose new uses for asbestos while ignoring its inevitable effects on human health. No state — red or blue — and no congressional district has been spared the ravages of asbestos exposure. Health professionals can support this legislation individually and through our state and national organizations in order to protect the health of all Americans.”
আমরা কবে পারবো এরকম এক পদক্ষেপ নিতে? আমেরিকায় ৪০,০০০ মানুষের মৃত্যুর জন্য মান্য মেডিক্যাল জার্নালে (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ৭৪.৭) খবর হয়। আমাদের এখানে করোনার মতো অতিমারিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে অগণন মৃত্যুর মতো ঘটনা খানিকটা আলোড়ন তোলে। এছাড়া এসব “ফালতু” ও “অবান্তর” মৃত্যুগুলো আমাদের গোচরেই আসেনা। কোন পদক্ষেপ তো অনেক কষ্ট-কল্পিত ব্যাপার – রূপকথার কাহিনীর মতো।
এরকম একটি প্রেক্ষিত মাথায় থাকলে আমরা বুঝতে পারবো মিডিয়ার তরফে তাৎক্ষণিক কিছু খবর করে টিআরপি রেটিং বাড়ানো ছাড়া শিশুদের মৃত্যুর আর কোন সুদূরপরসারী অভিঘাত বা ফলাফল নেই। আমাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রামের মধ্যে স্বাস্থ্য আদৌ কোন বিষয় নয়। ফলে যা হচ্ছে তা সবসময়েই অ্যাড হক প্রোগ্রাম। এর সাথে জনস্বাস্থ্যের কোন সম্পর্ক নেই।
শিশুদের মৃত্যু আমাদের জনস্বাস্থ্যের ভঙ্গুর চেহারা, দুয়ো রাণীর মতো প্রান্তিক হয়ে যাওয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে আরেকবার সিরিয়াসলি ভাবতে শেখাক। তা নইলে অরণ্যে রোদনের বা কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনের কোন অর্থ নেই।
‘ধর তক্তা মার পেড়েক’ করে বিষয় থেকে কোনক্রমে বেরিয়ে যাওয়া বা with ample negligence শেষ করা বোধহয় আমাদের মজ্জাগত। তাই ঘরের চালে আগুন না লাগলে আমরা গাত্রথ্বান করতে পারি না। এ অচলায়তনের আতুরঘর কোথায় আমরা জানি না, বা নিরবিচ্ছিন্ন অলসতায় আঘাত লাগতে পারে ভেবে জেনেও এড়িয়ে যাই। পশ্চিমবঙ্গে কি যথেষ্ট ‘কেসের’ অভাব ঘটেছে? মনে তো হয় না,,, তাহলে দায়িত্ব এড়িয়ে বিশেষজ্ঞরা বসে আছেন কেন? না হয়, grant কবে আসবে সেই চিন্তা ছেড়ে নিজেদের খরচেই একটু গবেষণা শুরু করুন না,,,, সরকারি সাহয্যের কতটুকুই বা আমরা গবেষণার কাজে পাই?
একদম ঠিক
খুবই প্রয়োজনীয় একটি আলোচনা – লেখক কে ধন্যবাদ
তোমার গবেষণা মূলক লেখা গুলো পড়ি আর ভাবছি সত্যি তুমি কতো গভীর ভাবে মানুষের জন্য ভাবছো।
ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যের এই লেখাটা অন্য পত্রিকায় পড়ার সুযোগ হয়েছিল। অনবদ্য লেখা। স্বাস্থ্য মানব স্বার্থে ব্যবহার না করে ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহার করার অন্তহিহীন প্রচেষ্টা যে ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
ধন্যবাদ লেখককে তাঁর স্বচ্ছ ভাবনা ও তার স্পষ্ট প্রকাশের জন্য।