Facebook down memory lane পরপর তিন বছরের আমার তিনটে বহুপঠিত লেখা তুলে এনে দেখাল। পড়ে ফেললাম, আর ভাবতে বসলাম, বোধহয় আজকাল আর তেমন কিছু লিখতে পারিনা। অভিনব ধরণের ডায়েরী লেখার স্টাইলে তারিখ সহ তিনটে লেখাই টুকলি পোস্ট করে দিলাম। তিনটে পোস্টই ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ। শুধু নিজের জন্য। আর, যাদের ধৈর্য্য আছে, তাদের জন্য।
___________________
25 Feb 2016.
চার দেওয়ালের একটা বদ্ধ ঘরে সারাদিন কাটালাম। গ্লাভস, মনিটর, টেলিসকোপ, স্ক্যালপেল, সিজার্সের সাথেই আমার বন্ধুত্ব। দিনভর মেঘের গুড় গুড় শুনে এলাম।
কাজ শেষ হল রাত সাড়ে এগারোটা। বাইক নিয়ে বেরিয়েই, আহা, মাথার উপর রিম ঝিম ঝিম। বাড়ির রাস্তার উল্টো দিকে দিলাম বাঁকিয়ে আমার বাহন। একটা পান দোকান চাই। একশ বিশ সুরভিত জর্দা।
ভেজা প্যান্টের ভেতর মোবাইলটা বাজছে। বাজুক গে।
আমার মনে আহা কি আনন্দ…
গেট খুলতে যাব, দেখি, তিনি ব্যালকনির জানালায় দাঁড়িয়ে।
‘কি ব্যাপার? বৃষ্টির আগেই বেরিয়েছ, পাঁচ মিনিটেই পৌঁছানোর কথা, ওরা তাই বলল, তুমি পঁচিশ মিনিট ধরে ভিজে ভিজে কোত্থেকে এলে? ফোনটাও ধরতে কি ইচ্ছে হয়না ?’
কি করে বোঝাই, মনের বয়সটা যে বাড়েনি এখনও।
_____________________________
25 Feb 2017
আশির দশক পর্যন্ত কোলকাতায় হাই পেয়িং প্রাইভেট হাসপাতাল ছিল গুটি কয়েক; উডল্যাণ্ডস, বেলভিউ আর CMRI. বলা বাহুল্য, এই সেন্টারগুলির মেরুদণ্ড ছিল কোলকাতার চারটি মেডিক্যাল কলেজের সব নাম করা শিক্ষক প্রফেসর ডাক্তাররা। ওনারা যেমন সকাল আটটায় থিওরি ক্লাস নিতে পটু ছিলেন, তেমনই OTর দিনে সকাল 9টা থেকে 2টোর মধ্যে 14টা মেজর Operation সেরে তারপরেও আশ্চর্যজনকভাবে রাত নটা দশটা পর্যন্ত প্রাইভেট প্র্যাকটিশ করে ক্যালকাটা ক্লাব, স্যাটারডে ক্লাব করে, তার উপর হাউসস্টাফদের মারফৎ ফোনে হাসপাতালের রোগিদের খবরাখবর নিয়ে মাঝরাত্তিরে বাড়ি ঢুকতেন। তাঁরা অনেকেই প্রাইভেটের অনেক জটিল কেস হাসপাতালে ভর্তি করা প্রেফার করতেন। অনেকে আবার ক্লাসিক কেস, যেগুলি ছাত্রদের শিক্ষায় কাজে লাগবে, সেগুলিকেও হাসপাতালে টেনে আনতেন। তাঁদেরই ছিল মৌরসীপাট্টা, যেটা তৎকালীন প্রশাসন নিতে পারেনি। (পরে বলছি)
81 থেকে 87 পর্যন্ত ন্যাশন্যালে আমার জনপ্রিয়তা ছিল সাংঘাতিক। অল্প বয়সেই সার্জারি শিখে গেছলাম। MD ছাত্র থাকাকালীন ওয়ার্ডে খুব পড়াতাম। 84 সালে, যেদিন ইন্দিরা গান্ধী মারা যান, তারপর থেকে প্রায় তিনদিন কোলকাতা থেমেছিল, ঐ তিনদিন, হসপিটাল ক্যামপাসে একমাত্র আমিই ছিলাম একমাত্র available doctor যে পেট কেটে জুড়তে পারত। এ পরেই আমি স্যারেদের অতি প্রিয়পাত্র হয়ে উঠি।
আমারও ভেতরে ভেতরে প্রফেসর হয়ে ওঠার ইচ্ছে লালিত হতে থাকে।
যখন MD কমপ্লিট হল, তখন স্যার বলেছিলেন আগের জমানা হলে তোকে এই হাসপাতালের বাইরে পা ফেলতে দিতাম না।
ততদিনে বামফ্রন্ট স্বনামধন্য ডাক্তারদের নিয়ে ট্রান্সফারবাজি শুরু করেছে। তার অল্পদিন পরেই এল সরকারি ডাক্তারদের নন-প্র্যাকটিশিং নিদান। ঐ একই সময়ে কোলকাতার বুকে বাড়ল কর্পোরেট চিকিৎসা। প্রথমে PPP মডেলে, যেমন AMRI, নিরাময় ইত্যাদি, পরে সংখ্যাটা আরো বাড়ার সাথে সাথে ঐ ফিল্ড থেকে সরকার একেবারে হাত ধুয়ে নিয়ে সরে যায়।
এবারে কর্পোরেট জগৎ শুরু করল বানিয়া ডাক্তার তল্লাশি। পেয়েও গেল। এতদিন যা ছিল কোলকাতার স্বনামধন্য্যদের আয়ত্বে তা হল হাতছাড়া। এর আগে যে মেডিক্যাল ছাত্ররা লণ্ডনে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেত, পাঠান্তে তাদের অনেকেই ফিরে এসে নিজের কলেজে বিনা পারিশ্রমিকে সাময়িকভাবে কাজে যোগদান করত। সরকার সেই যোগদানকে বৈধ করে দিত। তাদের বলা হত Pool officer. উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়, নিজের যোগ্যতা দেখিয়ে পরিচিতি বাড়িয়ে প্রফেশনালি সফল হওয়ার এক অধ্যায়। বামফ্রন্টের Non practising আইন একদিকে যেমন উজ্জ্বল ছেলেদের চাকরিবিমুখ করল, তেমনি প্রাইভেট সেক্টরে ভিনপ্রদেশি বানিয়া ডাক্তারের influx ঘটাল। (প্রাদেশিক হয়ে গেলাম কি?)
Pool officer systemটা নিশ্চয়ই এখন নেই। সেটা ওমুখো হয়ে গেছে।
কর্পোরেট জগৎ অনেক Advanced চিন্তা ভাবনা করে। MCI এর মাধ্যমে কত Private Medical College রোজ খুলছে! আজকাল শুনছি, সেখানেই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পড়াশোনা হচ্ছে!
আবার শুনছি, এবছর ঐ সেন্টারগুলোর ছাত্রছাত্রীরাই নাকি MD/MS entrance এ সবচেয়ে ভালো ফল করে বসে আছে, যারা এককালে jointএ ফেল ছিল!
হ্যাঁ, হতেই পারে, অস্বীকার করছিনা। After all, অনেক নামকরা প্রফেসর ডাক্তারকে retirement এর পরে ওরা recruit করেছে।
তাও, আমার মত সন্দেহবাতিক মন কূ গাইছে, শুনছি, judicial enquiry হবে! ঘোড়ার কচু।
তাহলে পরবর্তী চিকিৎসাজগৎ কেমন হবে?
____________________________
25 Feb 2018.
शोलवा शावन , Solva Sawan.
ষোড়শী শ্রীদেবীর প্রথম হিন্দি ছবি। আমাদের তখন ঊনিশ পেরোয়নি। রাস্তায় পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ। প্রায় বিপদসীমা পর্যন্ত শাড়ি তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে জলের উপরে। ভারী পুরুষ্টু ভারতীয় নায়িকার পা যুগলের সেই প্রথম উন্মুক্ত প্রদর্শন।
তখন রেখার যুগ চলছে। সুন্দরী, আদুরী, দক্ষিণী শ্রীদেবীকে নিয়ে এলেন অমল পালেকার। তিনিই হিরো। আমরা দল বেঁধে উতলা হলাম। চললাম হিন্দএ। শ্রীদেবী দর্শন হল। ফিরে এলাম পালেকারকে দেখে। অমল পালেকার যে চরিত্রটা করেছিল, সেটা, এক পাগলাটে চরিত্র, একসময়ে যার অর্ধেক শরীর প্যারালিসিস ছিল, যাকে হেমিপ্লেজিয়া বলে। সারা সিনেমাতে পালেকার সেই হেমিপ্লেজিক গ্যেট-এ (চলনভঙ্গী) হেঁটে গেছে। মুখের এককোণায় কষ বইছে। ডান পা হাফ সার্কেলে ঘষটে ঘষটে হেঁটেছে, কনুই অর্দ্ধেক ভাঁজ।
ঐ একই সময়ে অন্য হিন্দি ছবি দেখিয়েছে এক বিছানায় বচ্চন শুয়ে আছে, পাশে অন্য বিছানায় বিনোদ খান্না। একটা পাইপের মাধ্যমে বিনোদ, রক্ত দিচ্ছে বচ্চনকে। ডাইরেক্ট, কে কাকে, সেটা কে ধারে! এখনও পাবলিক, রক্তের প্রয়োজন হলে, বলে ফেলে, আমি শুয়ে পড়ছি, আমার রোগীকে রক্ত দিয়ে দিন! পুরো মনমোহন দেশাই স্টাইল!
সেই সময়েই আমরা শিখছি, লোকের হাঁটার ভঙ্গি (Gait) দেখে বলে দিতে হবে তার কি অসুখ হয়েছে বা হয়েছিল। তাই, অমল পালেকারের ওরকম ডেডিকেটেড অভিনয়ের কথা ও সেই প্রসঙ্গে শ্রীদেবীর শারীরিক আবেদনের কথা মনে রয়ে গেছে।
লাস্যময়ী আজ চলে গেছে। একা একা, হোটেলে, অবরুদ্ধ বাথরুমে। ডাকসাইটে অভিনেত্রী! সতীনকে সঙ্গে নিয়ে বিবাহিত জীবন, মরার সময় পাশে কেউ নেই! এইই ভালো।
জীবন, জীবনে সাফল্য, অর্থ, কী দাম এই সবের!
সব বেকার!
RIP Sridevi.