সন্তানসম্ভবা অবস্থায় যত রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা মূত্রনালীর সংক্রমণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যে কোনো বয়সী মহিলার কম-বেশি এমন সমস্যা হওয়ার আশংকা থাকে। তবে গর্ভাবস্থায় এই সংক্রমণ হলে বেশি ক্ষতি হয়। তাই ঠিক সময় চিকিৎসা শুরু না হলে সন্তানসম্ভবা মা ও সন্তান দুজনেরই জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে।
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় অনেক সময়েই ইউটিআইয়ের কোনো লক্ষণ আগে থেকে বোঝা যায় না। এই ধরনের সমস্যাকে আসিমটোমেটিক (asymptomatic) বলা হয়। সংক্রমণের উপসর্গ থাকলে অসুখকে সিমটোমেটিক বলে চিহ্নিত করা হয়।
সিমটোমেটিক ইনফেকশন আবার দু রকম হয়। একটি হল সিস্টাইটিস বা মুত্রনালীর ইনফেকশন আর অন্যটি হল পাইলোনেফ্রাইটিস।
প্রথম অসুখের উপসর্গ হিসেবে বারবার প্রস্রাব পাওয়া, জ্বালাভাব, মনে হয় প্রস্রাব সম্পূর্ণ হল না, তলপেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প ধরা, প্রস্রাবের পরিমাণ কম বা বেশি হওয়া, রঙ ঘোলাটে হওয়া আবার কখনো কখনো প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও বেরোতে পারে।
আর পাইলোনেফ্রাইটিসে এই সব লক্ষণের সঙ্গে জ্বর, কোমর ব্যথা, বমি হতে পারে। দ্বিতীয় সমস্যার কারণ কিডনির ইনফেকশন। কিডনির এই সংক্রমণ আবার প্রি ম্যাচিওর ডেলিভারির আশংকা বাড়িয়ে দেয়।
কাজেই সিস্টাইটিসের চিকিৎসায় দেরি করা যাবে না। দেরি করলে এই সমস্যা থেকে পাইলোনেফ্রাইটিস হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইউটিআইয়ের কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও প্রস্রাবের পরীক্ষা করে সংক্রমণ ধরা পড়ে।
কেন গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা বেশি হয়?
নানা কারণে এমন সমস্যা হতে পারে। যেমন, এ সময়ে শরীরে কিছু হরমোনের পরিবর্তন হয়। প্রোজেস্টেরন নামে হরমোনের পরিমাণ শরীরে বেড়ে যায় বলে ইউরেটর বা ব্লাডার রিল্যাক্সড হয়ে যায়। ফলে প্রস্রাব বেশি জমে থাকে। দ্বিতীয়ত, জরায়ু ঠিক ব্লাডারের ওপরে থাকে। সন্তানসম্ভবা অবস্থায় জরায়ু বড় হতে থাকে বলে ব্লাডারের ওপরে চাপ পড়ে। প্রস্রাব বেরনোর রাস্তা সরু হয়ে যায়। তখনই ইনফেকশন হয়। এছাড়া এ সময়ে প্রস্রাব চেপে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নোংরা ও অপরিষ্কার জায়গায় প্রস্রাব করার জন্যও ইনফেকশন হওয়ার চান্স বেড়ে যায়।
চিকিৎসা
আসিমটোমেটিক (asymptomatic) ইনফেকশন ও সিস্টাইটিস ইনফেকশনে বাড়িতে রেখে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু পাইলোনেফ্রাইটিস হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার হতে পারে। এক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় এবং মাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।
সতর্ক থাকুন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে, শরীরের ওজন বেশি হলে ও যাঁদের আগেও এ ধরনের প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়েছে তাদের বেশি সতর্ক থাকা দরকার। পাইলোনেফ্রাইটিস হলে বাচ্চা ও মায়ের উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। এমনকী সিস্টাইটিস হলেও প্রি ম্যাচিওর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণেই মা ও বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হয়। কাজেই প্রস্রাব পরীক্ষায় মুত্রনালীর ইনফেকশনের পজিটিভ ফল ধরা পড়লে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজেরা দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। শুধু তাই নয়, এ ধরনের সংক্রমণ হলে ডাক্তার দেখালেও আগে প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে তারপর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করতে হবে। আগে থেকে খাওয়া যাবে না। না হলে প্রস্রাবের কালচার রিপোর্টকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাবিত করতে পারে। ফলে পরীক্ষার ফল ঠিক নাও আসতে পারে। এই রিপোর্ট পেতে যেহেতু ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে তাই অনেক সময় ওষুধ চালু করা হয়। তবে রিপোর্টে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থাকলে ডাক্তারবাবু আগের ওষুশুঢপালটে দিতে পারেন। অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক চালু হয়ে গেছে বলে আর রিপোর্ট দেখানোয় গাফিলতি করেন। এটা করা একদম উচিত নয়। আবার একই ধরনের উপসর্গ আগে হয়েছে বলে যে ওষুধ ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপশন করেছেন সেই পুরনো প্রেসক্রিপশন অনুযায়ীও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। এতে সমস্যা জটিল থেকে জটলতর হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
- অসুখ সম্পর্কে সচেতন থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি ও গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডাক্তারের চেক আপে থাকা দরকার.
- কোনোরকম প্রস্রাবজনিত সমস্যা হলেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- বেশি করে জল খাওয়া দরকার। দিনে দেড় থেকে ২ লিটার জল পান করুন।
- প্রস্রাব চেপে রাখবেন না। বেগ এলেই প্রস্রাব করুন। এমনিতেও ২-৩ ঘণ্টা অন্তর টয়লেটে যান।
- পরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার করুন।
- ক্রেনবেরি জুস হয়তো প্রস্রাবের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
Good and supportive…