“It is easier for a camel to go through the eye of the needle than a rich man to attain eternal life”,
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই অতি বিখ্যাত বাক্যটিকে স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী একটু পরিমার্জন করা যায় যে..”সুঁচের ছিদ্র মধ্য দিয়ে একটা গোটা উট গলে গেলেও যেতে পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের পক্ষে প্রবঞ্চনা ও লুন্ঠন থেকে বিরত থাকা সম্পূর্ণরূপে একান্তই অসম্ভব”। শাসক দলকে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা থেকে অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক সহজ কাজ সুঁচের ছিদ্র দিয়ে গোটা উট (পারস্যদেশে আবার এই ধরণের তুলনায় উটের বদলে ‘হাতি’ র উল্লেখ করা হয়)-টাকেই পার করে দেওয়া!!! বলা যায়,বর্তমান শাসক দলের এটা একটা principled stand যে বিনিময় ব্যতীত কোনও প্রাপ্তিই সম্ভব নয়। ঠিকই তো সেই কবে গুরুজনরা বলে গিয়েছিলেন, “ফেল কড়ি মাখো তেল……”এখন কড়িটা ক্রমশঃ কোটির কাছাকাছি পৌঁছচ্ছে, এই যা তফাৎ। অনৈতিক কাজের মধ্যেও একটা নীতি তো আছে!! নীতিহীন কীভাবে বলা সম্ভব??
যাহোক,’ভারতবর্ষ এরকম দুর্নীতি আগে দেখে নি’ সৌগত রায়ের এই আর্তনাদের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আমাদের ‘মেডিকেল কাউন্সিল’-এর নির্বাচন, যেখানে স্বশাসিত (autonomous) মেডিকেল কাউন্সিলের একশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একটা প্যানেল দাঁড়িয়েছে যারা প্রকাশ্যে শুধু নিজেদের আগমার্কা তৃণমূলী বা বিশেষ দুজনের ‘আশীর্ব্বাদধন্য’ বলে ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হয়নি, প্রচারপত্রে অশোক স্তম্ভ এবং বিশ্ববঙ্গের সবিশেষ ‘ব’ ব্যবহার করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। যাতে ভুল না হয়, এটাই বিশুদ্ধ সরকারি প্যানেল!!
মেডিকেল কাউন্সিলে শিক্ষক ও সাধারণ দুটো প্যানেল আছে। শিক্ষকদের কাছে দুটো আলাদা ব্যালট যায়,শিক্ষক ও সাধারণ.. তারা দুটোতেই ভোট দিতে পারে। আর, বাকিরা শুধূ সাধারণ প্যানেলে ভোটদানে eligible। শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় তেত্রিশ শ আর মোট ডাক্তারদের সংখ্যা বাষট্টি হাজারের কিছু বেশী, অন্ততঃ মেডিকেল কাউন্সিলের রেজিস্টার অনুযায়ী যদিও তাদের মধ্যে মৃত ও অনুপস্থিত ডাক্তারের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে।
কিন্তু মেডিকেল কাউন্সিলে কী এমন আছে যা দখলে রাখার জন্য শাসকদল এতটাই অতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে??
অর্থ, ক্ষমতা, খবরদারি আজকের পরিস্থিতিতে তো এগুলিই মূল নির্ণায়ক factors। এখানে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণ। মেডিকেল কাউন্সিলের ক্ষমতা আছে কোনও অভিযোগের ভিত্তিতে সাময়িক বা স্থায়ী ভাবে রেজিস্ট্রেসন বাতিল করার আর সেই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যই এতসব মরিয়া প্রচেষ্ঠা, কারণ ওখানেই তো একটা পেশার প্রাণভোমরা.. মরণকাঠি/জীয়নকাঠি যাই বলুন।
তাই, ‘সরকারি’ নেতারা যখন ফাঁকা ব্যালট জমা দিতে অনুরোধ cum আদেশ করেন তখন তাঁদের ‘না’ বলাটা কী খুব সহজ? স্বাভাবিক বুদ্ধিতে নিশ্চয়ই সহজ নয়। কিন্তু, সম্ভবতঃ দুটো factor এই আপাতঃ অসম্ভবকে সম্ভবপর করে ফেলতেও পারে…….…..
১) যতদিন যাচ্ছে তত পরিষ্কার হচ্ছে এই সরকারের expiry date পেরিয়ে গেছে, just surviving on borrowed time..তাই এই শাসকদলকে আশ্রয় করে যা খুশী করার দিন বোধহয় সমাপ্তিরই পথে…..
২) এই ‘সরকারি’ ব্যক্তিদের বিগত কয়েক বছরের কাজের (বা অকাজের) জবাব দেওয়ার এত বড় সুযোগ কী হাতছাড়া করবেন পশ্চিম বঙ্গের চিকিৎসকসমাজ?? অন্ততঃ, নবীন ও তরুণ চিকিৎসকরা কী আগ্রহী হবেন তাদের হাতেই নিজেদের পেশাগত ভবিষ্যত তুলে দিতে যারা একটাই জিনিস জানে..’ভয় দেখানো’???
প্রশাসনিক কর্তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে কিছু বলে লাভ নেই..আসলে প্রতিকুল পরিস্থিতি বোঝার সহজাত প্রবৃত্তি আধুনিক মানুষের মধ্যে অনুপস্থিত, পশুপক্ষী এমনকী আদিম জনজাতিদের মধ্যেও যা প্রায় জন্মগতভাবে অধিগত।
মেডিকেল কাউন্সিলকে ‘ভয়মুক্ত’ করার এই সুযোগ কার্যে রূপান্তরিত হবে কিনা সেখানে নিশ্চয়ই অনেক ‘ifs and buts’ আছে। তবে, শাসকদলের লোক ছাড়া যাদের আর কোনও বিশেষ গুণ নেই তাদের সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার এই অত্যুৎকৃষ্ট সুযোগের সদ্ব্যবহার তো করতেই হবে…………নাকি!!!