বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধের জন্য নানাবিধ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, সেটা আমরা জানি। শুনেছি।
কিন্তু কীভাবে এই রোগ প্রতিরোধ হয়, সেই ব্যাপারে আমাদের আইডিয়া ততটা গভীর নয়।
দেখা যাক, এই নিয়ে একটা সহজবোধ্য লেখা নামাতে পারি কিনা!
একটা দেশের যেমন নিজস্ব প্রতিরক্ষা সিস্টেম আছে, মানুষের (এবং অন্য প্রাণীরও) শরীরেও সেই সিস্টেমটা আছে। একে বলে ইম্যুনিটি সিস্টেম। বিদেশী শত্রু দেশে ঢুকলে, দেশের সৈনিক তাদের নিকেশ করে দেয়। মানব শরীরে এই শত্রুর একটা নাম আছে। অ্যান্টিজেন। আর মানব শরীরের নিজস্ব সৈনিকের নাম অ্যান্টিবডি। শরীরে যে জীবাণু বা ভাইরাস ঢুকে, তার ক্ষতিকারক বস্তুটা হল অ্যান্টিজেন। ইমিউন সিস্টেম এই জিনিসের উপস্থিতি টের পেলেই অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু করে। শুরু হয় যুদ্ধ । একজন জেতে, অন্যজন হারে। শরীর হারলে, ফল কি হবে, সহজেই অনুমেয়।
শরীরে কোন অবাঞ্ছিত আক্রমণ হলে এই যে ইমিউন সিস্টেম তার হাইপারসেনসিটিভ সফটঅয়্যারের মাধ্যমে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করে মাঠে নেমে পড়ে, এই অ্যান্টিবডি, শত্রু অ্যান্টিজেনকে যুদ্ধে হারিয়ে শরীরকে রোগমুক্ত করে ফেলে।
এই মেকানিজমকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা শরীরকে বোকা বানিয়ে অথচ তাকে বিপদমুক্ত রাখতে আবিষ্কার করেছে ভ্যাকসিন।
উদাহরণে বোঝা যাবে ব্যাপারটা।
স্মল পক্স ভ্যাকসিন দিয়ে শুরু হোক। রোগটা এই মূহূর্তে নির্মূল হয়ে গেছে। স্মল পক্স খুব বিপজ্জনক ভাইরাল রোগ। এই ভাইরাস কেবল মানুষের শরীরেই বেঁচে থাকতে পারে। এই পক্সের ভাইরাস শরীরে ঢুকলে অনেকেরই ইমিউন সিস্টেম লড়াইতে হেরে যায়।
বিজ্ঞানীরা করলো কি, এর ভাইরাস ল্যাবে পরীক্ষা করে তার ক্ষতিকারক ক্ষমতাটা নিষ্ক্রিয় করে ফেলল। এবার ঐ ক্ষমতাশূণ্য ভাইরাস মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেখা গেল, মানুষের ইমিউন সিস্টেম এই অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলেছে। এবার থেকে যদি পাওয়ারফুল স্মলপক্স ভাইরাস শরীরে ঢুকবার সামান্য চেষ্টা করে,তৎক্ষণাৎ ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ প্রতিরক্ষা দপ্তর হাইপারঅ্যাক্টিভ হয়ে প্রচুর অ্যান্টিবডি সৈন্য সিস্টেমে নামিয়ে রোগ প্রতিরোধ করে দেবে। এই ক্ষমতাশূণ্য ভাইরাসের নামই হল ভ্যাকসিন ।
পোলিও ভাইরাস, সহ আরো অনেক রোগের ভ্যাকসিন এভাবে তৈরি হয়েছে।
আবার, অনেকসময়, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নিঃসৃত মূল ক্ষতিকারক রসকে পরিবর্তন ঘটিয়ে একরকম অ্যান্টিজেন তৈরি করা হয়। যেমন, টিটেনাস টক্সয়েড।
নবজাতকের ইমিউন সিস্টেম অ্যাক্টিভেট হতে মাস দুই তিন সময় লাগে। ঐ সময়টা প্রোটেক্ট করবার দায়িত্ব মায়ের।
কীভাবে?
আজকাল দেখবেন ডাক্তাররা খুব লিখছে IG, অর্থাৎ ইমিউনোগ্লোবিউলিন টেস্ট। এটা একটা অ্যান্টিবডি। অর্থাৎ রেডিমেড সৈনিক। কিছু রোগ আছে, যেখানে IG কিনে প্রয়োগ করতে হয়। কিছুক্ষেত্রে লক্ষ টাকা দাম। মায়ের শরীরের রক্তের বা বুকের দুধের IG তার বাচ্চাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
আমার বড়দির ছেলে ইণ্ডিয়ান নেভির ডাক্তার। ইউনাইটেড নেশনসএর শান্তি বাহিনীর অংশ হয়ে বেশ কয়েকবছর অশান্ত সোমালিয়াতে কাটিয়েছে। এটা ঐরকম IG নেওয়ার মতো ব্যাপার। সোমালিয়াতে তখন বাইরে থেকে IG নেওয়ার দরকার পড়েছিল। বারবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচবার জন্য আজকাল ইমিউনোগ্লোবিউলিন ট্যাবলেট এসেছে মার্কেটে।
আমরা সবাই জানি, গর্ভবতী মায়েদের টিটেনাস ভ্যাকসিন নিতে হয়। মা ও বেবি, দুজনেরই স্বার্থে।
এখন চলুন দেখি, মডার্ন মেডিসিন আর কী কী ভ্যাকসিন নিতে বলছে হবু মায়েদের।
TDAP ( Tetanus Toxoid, Reduced Diphtheria Toxoid, and Acellular Pertussis Vaccine): টিটেনাস, ডিপথেরিয়া ও পার্টুসিস, অর্থাৎ হুপিং কাশির ভ্যাকসিন দিতে বলা হচ্ছে, শেষের তিনমাস শুরুর সময়ে। এর ফলে নবজাতক সুরক্ষিত থাকবে জীবনের প্রথম তিনমাস। আমাদের দেশে এর বহুল প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি তেমনভাবে।
Influenza Vaccination: USAতে নিয়মিত। স্টাডি (Large, randomized controlled clinical trial) হয়ে আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট বেরিয়েছে Bangladesh South Africa, Mali & Nepalএ। আমরা এখনো নিয়মিত শুরু করিনি।
যে ভ্যাকসিনগুলো নিয়মিত নয়, কিন্তু চাপে পড়লে নিতেই হবে, যেমন ধরুন, ঐসব রোগের প্রাদুর্ভাব আছে বা outbreak হয়েছে যে অঞ্চলে, সেখানে যেতে হবে, অথবা, ঐ রোগের রোগীর সান্নিধ্যে আসতে হবে (Pregnant Health worker, or sex provider, home or commercial) সেক্ষেত্রে, Benefit outways risk, এই ভিত্তিতে নিতেই হবে।
সেগুলি হল,
Pneumococcal Vaccine. (নিউমোনিয়া)
Meningococcal Vaccine. (মেনিনজাইটিস)
Hepatitis A. সাধারণ জণ্ডিস ।
Hepatitis B. (হেপাটাইটিস B আক্রান্ত গর্ভবতীর কথা বলা হচ্ছেনা। ঐযে বললাম, sex provider যদি Hepatitis B positive হয়, তাহলে।)
Polio Vaccine.
Yellow Fever vaccine. সাব সাহারান ও সাউথ আফ্রিকা।
Japanese Encephalitis Vaccine
Rabies Vaccine. যেহেতু 100% fatal, নিতেই হবে।
Anthrax vaccine.
Small pox Vaccine. (পরে জানাচ্ছি)
যেসব ভ্যাকসিন, contraindicated in pregnancy, অর্থাৎ প্রেগন্যান্সিতে কোনমতেই নেওয়া চলবেনা, সেইগুলি হল,
MMR, মাম্পস, মিজ্লস্, রুবেলা বা জার্মান মিজ্লস্।
Varicella, চিকেন পক্স ও হার্পিস। এইদুটি ননপ্রেগন্যান্ট অবস্থায় নিয়ে নেওয়া ভালো। জরায়ু ক্যানসার ভ্যাকসিন, কুমারীত্ব অটুট থাকতে থাকতে নিয়ে নেওয়া সর্বোত্তম ।
যে দুটি রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে, সেইদুটি হল,
RSV vaccine. রেসপিরেটরি সিনসিয়াল ভাইরাস নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রচুর বাচ্চা মারা যায় ।
Group B Streptococcus Vaccine. নিওনেটাল সেপসিস অর্থাৎ নবজাতকের সেপটিসিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা খুব বেশি। যদি এই দুইক্ষেত্রে pregnancy safe ভালো vaccine আবিষ্কার হয়ে যায়, নবজাতকের মৃত্যুহার অনেক কমে যাবে।
______
Small pox নিয়ে বলছিলাম। এই ভাইরাস মানুষের দেহ ছাড়া বাঁচতে পারেনা। ক্রমাগত আইসোলেট বা বিচ্ছিন্ন করে করে সমগ্র পৃথিবী থেকে এই রোগ নির্মূল করা গেছে। কৃত্রিমভাবে কয়েকটি ল্যাবে এই ভাইরাস সংরক্ষণ করে রাখা আছে, ভবিষ্যতে রিসার্চ বা প্রতিষেধক তৈরি করতে যদি কাজে লাগে, সেজন্য। কিন্তু কোনো দুষ্টু দেশ, এই ভাইরাসকে কাজে লাগিয়ে জৈব অস্ত্র তৈরি করে ফেলতেই পারে। জৈব অস্ত্রের ফাণ্ডা বহু পুরোনো। সেটা জানতে গেলে নেটে পড়ে নেবেন।
আমি শুধু একটা ক্ষুদ্র লিস্ট তুলে দিচ্ছি, কীভাবে জৈব অস্ত্রের প্রয়োগে একটা দেশ, জনজাতি বা মানবসমাজের পেছনে নানা মারণরোগের বাহকদের লেলিয়ে দেওয়া যায়!
ব্যাক্টেরিয়াল বায়ো-এজেন্ট রোগগুলো।
এন্থ্রাক্স, ব্রুসেলোসিস, তুলারেমিয়া, লিস্টেরিওসিস, গ্লেন্ডার, প্লেগ, কলেরা, ডিপথেরিয়া, শিগেলোসিস।
ভাইরাল বায়ো-এজেন্ট রোগগুলো।
পক্স, ইকুয়াইন এন্সেফালাইটিস, ইয়েলো ফিভার, রিফট ভ্যালি ফিভার, ইবোলা ভাইরাস, লাসা ভাইরাস, হান্টা ভাইরাস ইত্যাদি।
মাইকোটিক টক্সিন হল কক্সিডিয়া ইমিটিস।
এছাড়া আছে বিভিন্ন বায়োলজিক্যালটক্সিন;যেমন
এব্রিন,রিসিন,বটুলিনাম টক্সিন,টেট্রোডোটক্সিন।
মশা এবংওরিয়েন্টাল র্যাট ফ্লিকেও বায়ো এজেন্ট বলা হয়। মশা নানা রোগ যেমন জিকা, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ছড়িয়ে বেড়ায় আর র্যাট ফ্লি হল প্লেগ রোগের প্রধান কারণ।
_____
লিখে রাখতে গেছলাম, Vaccinations in Pregnancy.
লিখলাম, অন্যকিছু।
অসংখ্য ধন্যবাদ, আরো লেখা চাই
Please many many (more) times write.
Kon Kon vacc bayaskara nite pari o kakhan
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো, আরো লিখতে থাকুন।
খুব ভালে লেখা।