‘আনন্দ আশ্রম’ এর গানটা মনে পড়ে গেল।
“কথা কিছু কিছু বুঝে নিতে হয়…
….
চোখের কথাই মনের কথা
চোখ-ই মনের আয়না”
আজকাল চোখের ভাষাটাই যেন বেশি করে বুঝতে হচ্ছে। চেম্বারে আসা পেশেন্টদের তাও দুটো চোখই একসাথে দেখতে পাই। অনলাইন ভিডিও কনসালটেশনে কাজটা আরো কঠিন। মোবাইলের পর্দায় দেখতে পাচ্ছি পেশেন্ট এবং তাঁর হাজব্যান্ডের আর্ধেক আর্ধেক মুখ। মাস্ক না থাকলেও লম্বালম্বি দ্বিথন্ডিত মুখই দেখতে বাধ্য হই। একজনের ডান কানে ইয়ার ফোন তো আরেকজনের বাঁ কানে। কারোরই পুরো মুখ দেখার সৌভাগ্য আর হয় না।
তবে, বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা হচ্ছে।
দুজনের মধ্যিখান দিয়ে আমি তখন ঘরের দেওয়াল দেখতে পাচ্ছি। কখনো টেক্সচারড সারফেসে সিদ্ধিদাতার অভয়। আবার কখনো সাদামাটা দেওয়ালে ঝুলছে বেতের বোনা ধামা কুলো। সামান্য সিঁদুর ছোঁয়ানো। আর হাতের কালচে ছোপ। চিকিৎসা হয়তো দু’বাড়ির জন্যই সমান। তবু একটু প্রভাব তো পড়বেই!
একদিন দুটো অর্ধমুখের মাঝে দেখি আর একটি আস্ত মুখ। এক ক্ষুদ্র মার্জার! দম্পতি তাঁদের সর্বক্ষণের সঙ্গীর সাথে আলাপও করিয়ে দিলেন। এরপর আমার অধিকাংশ কথাই ল্যান্ড করলো সেই নিস্পাপ প্রাণীমুখে। কমলাকান্তের দপ্তর আর কী!
একজন ভিডিও কল করেছেন সন্ধ্যে বেলায়। তাঁদের শুনতে পাচ্ছি অথচ দেখতে পাচ্ছি না! বললেন বাড়িতে ভালো ‘টাওয়ার’ নাই। তাই ফাঁকা মাঠে। তাহলে এমনি ফোনে কল করলেই তো হতো। সাবলীল উত্তর, ডাক্তারবাবু আপনার মুখটাও তো আমাদের দেখতে হবে!
একদিন এক ভদ্রমহিলা দু তিন মিনিট কথা বলার পরই আমাকে তুই-তোকারি করতে শুরু করলেন। বয়েসে আমার চেয়ে অনেকটাই ছোট। আমি একটু থতমত খেয়ে যাওয়াতে হাজব্যান্ড উত্তর দিলেন। উনি শিক্ষকতা করেন। সারাদিন অনলাইন ক্লাস নিতে নিতে ভিডিও কলে আজকাল সবাইকে নিজের স্টুডেন্ট ভেবে ফেলেন। মনে কিছু করবেন না।
ডাক্তারির খুব কম কাজই হয়তো ফোনে সারা যায়। তবু এই পনেরো মাসে প্রমাণিত হয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রেই শারীরিক উপস্থিতির দরকার নেই। যেমন রিপোর্ট দেখানো, কিছু প্রসিডিওর করার আগে/পরে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা ইত্যাদি। অতিমারি মিটে গেলেও এই কালচার হয়তো চলতে থাকবে। থেকে যাবে Zoom ইত্যাদি অন লাইন মিটিংগুলিও। এতে দুপক্ষেরই লাভ।
WBDF এর তরফে গত এক মাস ধরে টেলি-কনসাল্টেশন চালিয়ে যাচ্ছি বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক। কোভিড পজিটিভ, হোম আইসোলেটেড কয়েক হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। প্রাণভরা আশীর্বাদ পেয়েছি। এখন সংক্রমণ কমেছে, কলও কমেছে। আরও কমুক।
খুব ভালো খবর। ????