সেমিস্টার শেষ হলো… মাথায় তখন 3rd Proff Part 1 এর কর্মহীনতার ইউফোরিয়া গিজগিজ করছে! কিন্তু এই সদ্য অতীত একটা সপ্তাহ – আমাদের কান ধরে হিড়হিড় করে নামিয়ে আনলো অদ্ভুত শুষ্ক বাস্তবে! যাদের সাথে আনন্দনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ছিল তারা আজ অনশনে,চার চারটে দিন অতিক্রান্ত, ভ্রুক্ষেপ নেই অথরিটির! প্রতিদিন যখন Adminitrative ব্লক এর করিডোর ক্রস করি, কম্বল চাপা আমার ব্যাচমেট, সিনিয়র আর জুনিয়রদের দেখতে পাই, কখনো গল্প হয়, কখনো দেখি তারা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে!
সকালে ঋতম অসুস্থ হয়ে এখন ভর্তি হাসপাতালে। আজ সেই করিডোরই অনশন মঞ্চ, অভুক্ত ক্লান্ত পড়ুয়ারা সব ছেড়েছুড়ে সেখানে বুকে আশা বেঁধে রয়েছে, দুর্বলতা ক্রমেই গিলতে শুরু করেছে তাদের!
নিজের কলেজের উন্নতির জন্য দাবি রাখা কি অপরাধ? নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার চাওয়া কি অপরাধ? এ কোন স্বৈরচারি ব্যবস্থা তবে?
সমাজের সকল স্তরের মানুষকে অনুরোধ এগিয়ে আসুন, পাশে থাকুন আমাদের! খুব সাধারণ গণতান্ত্রিক কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে আপনার ছেলের, নাতির, দাদার বা ভাইয়ের বয়সী ছেলেরা বসে আছে অনশনে ! আজ আরো দুজন যোগ দিল অনশনে – আমার বন্ধু Subha ও Soumit। ওদের জন্য রইলো লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মনোবল, রইলো আমাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার।
আমরা জানি আর মনে প্রাণে মানি শীঘ্রই সূর্য উঠবে স্বাধীনতার …উঠবেই!
রণবীরের লেখা, ১৩/১২/২০২২
অনশনের ১২০ ঘন্টা। নর্মাল সময় ক্লাস বা পরীক্ষার জন্য একবেলার মেসের খাবার মিস করলে যেখানে পেটে ছুঁচো চেঁচামেচি করে সেখানে ৫ দিন না খেয়ে আছি আমি।
অনশন শুরু করার পর থেকে প্রিন্সিপাল-প্রফেসর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সচিব-স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী – কারোর বলা বাকি নেই অনশন তুলে নিতে। কিন্তু অনশন তো আমিও করতে চাইনি। আমিও না। সাবিতও না। রীতম প্রত্যুষ কৌশিকরাও না। শুভ সৌমিতও না।
খালি মনে হচ্ছে পুঁটিরামের রাধাবল্লভী আর ছোলার ডাল। সাথে নলেন গুড়ের রসগোল্লা। বৌবাজারের চিস বড়া পাও কলেজস্ট্রিট কিচেনের বাসন্তী পোলাও দিয়ে মাটন রোগাঞ্জোস। ভুখা পেটে দিনের পর দিন শুয়ে থাকতে আমরা কেউই চাই নি। চাইনা। চোখের সামনে দেখছি আমার জুনিয়ার, আমার ভাই, আমার বন্ধু ঋতম ১০০ ঘন্টা অনশনের মাথায় গ্লুকোজ লেভেল ৪৬ নিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। বন্ধুরা ট্রলি নিয়ে এসে ওকে নিয়ে চলে গেল এমার্জেন্সি তে। তারপর শুনলাম CCU তে যেতে হয়েছে ওকে। পাশে কাঁদছে প্রত্যুষ। আমরা চাইনি এসব। আমরা একটা ভোট চেয়েছিলাম।
তারপরও। তারপরও আমরা প্রত্যেকে প্রস্তুত লড়াই চালিয়ে যেতে, অনশন চালিয়ে যেতে। কিন্তু কেন?
অ্যানাটমি-প্যাথোলজি-মেডিসিন থেকে শুরু করে শিঁড়দাড়া উচুঁ করে মানুষ হওয়ার শিক্ষা, সব কিছুই আমাকে দিয়েছে মেডিকেল কলেজ। সেই কলেজকে বাঁচানোর দায়িত্ব আজ আমাদের ওপর। ছয় বছর ধরে বন্ধ ইউনিয়ন ভোট। চার বছর হয়নি কলেজ ফেস্ট। ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা, হোস্টেলের সমস্যা, মেয়েদের সমস্যা, হাসপাতালের নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব, বেডের সমস্যা, স্বাস্থ্যসাথীর সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলার জন্য নেই একটাও ইলেক্টেড বডি।
তাহলে কথা কী রইল?? কলেজ কাউন্সিলের ঠিক করে দেওয়া ওই ২২ তারিখ। ওই ২২ তারিখ ভোট করিয়েই আমাদের ছুটি। আপাতত আমি, সাবিত, প্রত্যূষ আর কৌশিক মিলে আমরা অনশন ওঠার পর কি কি খাবো তার একটা লিস্ট বানাচ্ছি। লিস্টটা বেশ লম্বা হয়েছে পাঁচ দিনে।
লড়াই এখনো অনেক বাকি। এই লড়াই জিততে আমরা একা পারব না। আমাদের একার লড়াইও না। মেডিকেল কলেজের একার নয়। লড়াই ছড়িয়ে পড়ুক বাংলার সব কলেজ ইউনিভার্সিটিতে। ছড়িয়ে পড়ুক বাংলার সব গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষদের মধ্যে।
পা মেলান নাগরিক মিছিলে। বেলা দুটোয় আমাদের অনশন মঞ্চের সামনে। আমরা যেতে পারব না। তবু আমরা জানি আপনারা আছেন।
নগর কলকাতা দেখুক শহরের বুকে গণতন্ত্রের উপর আঘাত নামলে, কিভাবে পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দেওয়া হয়।