আমাদের সকলেরই ওষুধ কিনতে পাড়ার ওষুধের দোকান বা পথচলতি ঔষধালয়ে যেতেই হয়। ডাক্তারবাবুর প্রেস্ক্রিপশন দেখে দোকানী ওষুধ দিয়ে দেন, খাবার নিয়মাবলী বুঝিয়ে দেন এবং খামের উপরে নির্দেশও দিয়ে দেন। বেশ ভাল কথা।
তো মশায়, এটাতো সকলেই জানি। এই নিয়ে কী বলতে এসেছেন আবার!
না, না। এই নিয়ে বলতে আসিনি মোটেই…
যেটা বলব সেটা হয়তো আরও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। দেখতেও বেশ নিরীহ ।
কীরকম??
প্রথমে, ওষুধের দোকানে গিয়ে উপসর্গগুলো বলবেন। তারপর, সেটা শুনে কোনও রকম ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়াই দোকানদারও তার জ্ঞানবুদ্ধি মতো আপনাকে ওষুধ দিয়ে দেবেন । কী সহজ না!
যেমন ধরুন-
“দাদা, খুব গ্যাস হয়েছে। একটা গ্যাসের ওষুধ দিন।”
“এটা নিন। এক নম্বর ওষুধ ।”
” ভাল একটা টনিক দিন তো।”
” এটা খান। হেব্বি কাজ করে।”
” দুদিনের জ্বর কাকু। কী খাব?”
” মাথা ব্যথা আছে? এই নাও , এখনই খেয়ে নাও।”
“এই কাশি কমছে না সপ্তা খানেক হলো। একটা ভাল অ্যান্টিবায়োটিক দাও তো।”
” তাই? এই নেন। কড়া নয় বেশি।”
উপরোক্ত কিছু নমুনা, হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ওষুধের দোকানদার নির্দ্বিধায় বিলি করছেন প্রেসারের ওষুধ, সুগারের ওষুধ, থাইরয়েডের ওষুধ থেকে শুরু করে হার্টের বা নার্ভের ওষুধ অবধি! দায় অবশ্যই দোকানীর একার নয়। আমরা দিনের পর দিন ডাক্তার এড়িয়ে এই স্বঘোষিত হাফ ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছি । ওষুধের ব্যাপারীরাও যথেচ্ছভাবে বিক্রি করছেন নানা রকমের ওষুধ।
ড্রাগ ইন্টারাকশন? জানার দরকারই নেই! মানে, কী ওষুধ কোন্ ওষুধের সঙ্গে খাওয়া সমীচীন নয়, খেলে তার ডোজ কত হবে, দুটো ওষুধের ক্রিয়া বিক্রিয়ায় কী হতে পারে এগুলো কিচ্ছু না বুঝে, না জেনে দিনের পর দিন ওষুধের দোকানদাররা দিয়ে চলেছেন নানাপ্রকার ওষুধ।
তারা কখনও জানতে চান না রোগীর ওজন কত। জানতে চান না রোগী আর কী কী ওষুধ খাচ্ছে। জানতে চান না তার অন্য আর কী রোগ আছে।
অথচ, মুড়ি মুড়কির মতো ওষুধ বিক্রি হচ্ছে ডাক্তারবাবুদের উপদেশনামা ছাড়াই।
আর, আমরা? কোনও এক অজ্ঞাত কারণে, প্রতিদিন কিনছি, আর ঠকাচ্ছি নিজেদেরকে । বুঝতেও পারছি না, কী মারাত্মক সুদূরপ্রসারী বা অনতিদূরপ্রসারী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স নিয়ে সারা বিশ্বে চর্চা চলছে। ইচ্ছে হলেই দেদারে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যায় না। তার ডোজ আছে, নিয়ম আছে, গাইডলাইন আছে। অপকারটা দোকানীর হচ্ছে না। হচ্ছে আমার, আপনার পরিজনদের।
আমরা চিকিৎসকরাও এর ফল ভুগছি প্রতিদিন। বেশ কয়েকদিন, কখনও কয়েক মাস স্রেফ ঔষধালয়ের দাদা , কাকু, জেঠুর স্বনির্ধারিত ওষুধ খেয়ে রোগ জটিলতর হয়ে পড়ছে। রোগের গতিপ্রকৃতি পালটে যাচ্ছে।
ওভার দ্য কাউন্টার বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ, নিয়ম বহির্ভূত ভাবেই। দোকানে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে। এর কবলে পড়ে অজান্তেই, অসচেতনতা বশত আমরা কিন্তু নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি।
হাসপাতালে ডাক্তারবাবুরা রয়েছেন। আমরা যাচ্ছি না। গ্রামে বা শহরে জেনেরাল প্র্যাকটিশনার রয়েছেন, আমরা যাচ্ছি না। চটজলদি সুরাহা বা সামান্য কম খরচের আশায় নিজেদেরকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। প্রত্যেকটা দিন।
আর, দোকানদাররা?
বলি, একটু বেশি লাভের আশায় দয়া করে ডাক্তার সাজতে যাবেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞান অত সোজা নয়। অনুগ্রহ করে রোগীদের কাছে প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইবেন এবং ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মেনেই ওষুধ দেবেন। এতেই রোগীর মঙ্গল, সমাজের কল্যাণ ।
E niea anek katha balaer aache. Dr. Hater kache nei. Thakle fees 300 . Hospital anek dur ki korbo¿?
বন্ধু, লেখাটা পড়তেই হলো. মলমহীন ঘা যেখানে… সেই পিঠটা নেহাত ছোট নয়. হাসপাতালে যেতে বাধ্যদের অগণিত বঞ্চনার কান্নার খবরে এ লেখা পৌঁছবে না এইজন্য যে চিকিৎসককুল আজ পুলিশকুলের চেও……
এ একপেশে লেখা ‘মানুষ’-এর কথা বলতে চেয়েছিলো হয়তো…..,
পারেনি.