Scroll.in-এর সংবাদে (৩.০৫.২১) প্রশ্ন তোলা হয়েছে – “Where are the 300 tonnes of emergency Covid-19 supplies that have landed in Delhi in last five days?” এ খবর অনুযায়ী, ৩.০৫.২১-এর আগের ৫ দিনে ২৫টি ফ্লাইট দিল্লিতে এসেছে ৫,৫০০ অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর, ৩,২০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ১,৩৬,০০ রেমডেসিভির ইঞ্জেকশন নিয়ে। ৫০০টি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর এসেছে ইংল্যান্ড থেকে, ৭০০টি আয়ারল্যান্ড থেকে। ২রা মে আরও ১,০০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার এসেছে ইংল্যান্ড থেকে এবং ১৫০টি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর এসেছে উজবেকিস্তান থেকে। এছাড়াও আমেরিকা থেকে ৪টি ফ্লাইট এসেছে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে। কোথায় গেল এগুলো? এয়ারপোর্ট থেকে খালাস করার অনুমতি মিলছেনা আমলাতন্ত্রের ফাঁসে পড়ে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি এরকম অত্যাবশ্যক সামগ্রীগুলোকে হাসপাতালে এবং চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে। ১৫.০৫.২১-এর আগের চারদিনে গোয়ার হাসপাতালে ৭৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে অক্সিজেনের সংকটে – এ খবর সবাই জেনে গেছেন। এখবরও সবাই জানেন যে এমনকি ফুটপাতে শুয়ে অক্সিজেনের অভাবে খাবি খেয়ে বেশ কিছুসংখ্যক রোগী মারা গেছে।
ভারতে প্রতিদিন ৭,৫০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন তৈরি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় চিকিৎসার বা মেডিক্যাল ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিদিন ৬,০০০ মেট্রিক টন। বর্তমানের অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য চাহিদা বহু বহুগুণ বেড়ে গেছে। এক নারকীয় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগী এমনকি ফুটপাথেও খাবি খেতে খেতে মারা যাচ্ছে। Scroll.in সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী (১৮.০৪.২১) – “It took eight months to invite bids for over 150 oxygen generation plants costing just Rs 200 crore. Six months later, most still aren’t up and running.”
নেচার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে (১৪.০৫.২১) আমরা জানতে পারছি – “As India struggles under the weight of a massive surge of COVID-19, many of its neighbours in south and southeast Asia are experiencing some of their largest outbreaks yet. There are even surges in Bhutan, where 62% of the population has received at least one dose of a vaccine, and Laos, which has previously had very few cases — although these outbreaks are small compared with those in nearby nations.” নীচের ডায়াগ্রাম থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
কেন এমন হল ভারতবর্ষে? গত সেপ্টেম্বর মাসে ল্যান্সেট-এর একটি প্রতিবেদনে (“COVID-19 in India: the dangers of false optimism”) বলা হয়েছিল – “দেশের নেতাদের অবশ্যই বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণকে সম্মান করতে হবে, সম্মান করতে এক্সপার্টদের মতামতকে এবং অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে। অবশ্যই মিথ্যে আশার কথা (false optimism) শোনাবেন না।”
ল্যান্সেটের সম্পাদকীয় – “India’s COVID-19 emergency” (৮.০৫.২১)
সম্পাদকীয়টি শুরু হয়েছে এই বাক্যটি দিয়ে – “ভারতের যন্ত্রণার দৃশ্যগুলো হৃদয়ঙ্গম করা বড্ডো শক্ত।” এরপরে উল্লেখ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মার্চ মাসের ৭ তারিখের বিখ্যাত উক্তি “আমরা অতিমারির খেলা শেষ করে এনেছি (end game)।” প্রসঙ্গত দুটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করবো।
প্রথমত, দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ৬২তম বার্ষিক সম্মেলনে হর্ষবর্ধন একথাগুলো বলেছিলেন। তাঁর হুবহু বক্তব্য ছিল – “We are in the “end game” of the Covid-19 pandemic in India and to succeed at this stage, politics should be kept out the Covid-19 vaccination drive”। এরপরে আরও মনোজ্ঞ কথা বলেছিলেন – “we need to follow 3 steps: Keep politics out of the Covid-19 vaccination drive, trust the science behind Covid-19 vaccines, and ensure our near and dear ones get vaccinated on time.” এবং “If poor and underdeveloped countries continue to harbour the novel coronavirus, we shall not be able to ensure safety for all. A fair and equitable distribution of the vaccine is the biggest need of the hour”। সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন, অন্য অনেক দেশের যা নেই সেটা ভারতে আছে – “we have a steady supply of Covid-19 vaccines”। নিয়তির কি পরিহাস! আজ দেশজুড়ে ভ্যাক্সিন সংকটের সময় ভ্যাক্সিন নিজেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠলো, ভারতের মানুষ ভ্যক্সিনের জন্য হাহাকার করছে যে কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বলা বিজ্ঞানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দুটি ভ্যাক্সিনের মধ্যেকার ব্যবধান ক্রমাগত বেড়ে চলেছে (১৩.০৫.২১-এ সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১২ সপ্তাহের ব্যবধানের বিধান দেওয়া হয়েছে), এখনো অব্দি ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের ভ্যাক্সিন দেবার কাজ শুরুই করা গেলনা, অথচ মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন যে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাক্সিন আছে। সার্বজনীন টিকাকরণের সাফল্যের জন্য ১৯শে এপ্রিল থেকে ইজরায়েলে এবং ১৪ মে থেকে আমেরিকায় বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা আর বাধ্যতামূলক নয়।
দ্বিতীয় ঘটনা, ২৮ জানুয়ারি, ২০২১-এ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে মোদী স্বয়ং বলেছিলেন – “India took a proactive public participation approach and developed a COVID-specific health infrastructure and trained its resources to fight COVID”। ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন যে কোভিডের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই সমগ্র বিশ্বকে উজ্জীবিত করেছে। ভারত “বিশ্বগুরু”-র আসনে বসবে। আর আজ? মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৪০, ০০,০০০। মৃত্যুর সংখ্যা ২ লক্ষ ৬২,০০০। প্রায় প্রতিদিন ৪০০০ মানুষ মৃত্যু মিছিলে যোগ দিচ্ছে (১৪.০৫.২১ তারিখ পর্যন্ত)।
নেচার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন (“India’s COVID-vaccine woes – by the numbers”, ১৫.০৪.২০২১) জানাচ্ছে – “গতবছর জুন মাসে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ঘোষণা করেছিল সিরাম ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়াকে ১০০ কোটি ভ্যাক্সিন ডোজের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে low- and middle-income দেশগুলোর কাছে পৌঁছনোর জন্য। কিন্তু গত মার্চ মাসে যখন ভারতের তরফ থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন অব্দি মাত্র ৬ কোটি ৪০ লক্ষ ডোজ রপ্তানি হয়েছে। এবং এর মধ্যে ২ কোটি ৮০ লক্ষ ডোজ রপ্তানি হয়েছে COVAX (দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের দেশে সবার কাছে ভ্যাক্সিন পৌঁছে দেবার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা) মারফৎ।” ২১.০৪.২১ তারিখের আনন্দবাজার পত্রিকা-র সংবাদ “টিকাঃ এখন দামও বেশি, দায়ও রাজ্যের”। টিকাকে অন্যান্য পলিসির সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে বাজারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে সিরাম ইন্সটিটিউট যে টিকা ১৫০ টাকায় এবং ভারত বায়োটেক ২০৬ টাকায় দিচ্ছে সে দাম (দুটি ডোজ মিলে) ২০০০ টাকা থেকে ৮০০-১০০০ টাকা অব্দি লাগতে পারে। যেদেশে সামাজিক সুরক্ষা বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব প্রায় নেই, কয়েককোটি মানুষ কর্মহীন, দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি সেদেশে এভাবে, এই অর্থমূল্যে কজন টিকা কিনতে পারবে? মোদ্দা কথা হল, সার্বজনীন টিকাকরণ হয়তো একটি কুহকী আশা হিসেবে রয়ে যাবে।
ভারতে শুরু হয়েছে টিকার সংকট। সিরাম ইন্সটিটিউটের প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ তৈরি করার কথা ছিল। বর্তমানে তৈরি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ লক্ষ ডোজ। আমেরিকার সিএনএন সংবাদসংস্থার খবর হচ্ছে “The world’s biggest vaccine producer is running out of Covid-19 vaccines, as second wave accelerates” (১৮.০৪.২১)। এ খবরে বলা হচ্ছে – “In the face of crisis, the government and SII have shifted focus from supplying vaccines to COVAX to prioritizing their own citizens at home. “Deliveries of doses from the Serum Institute of India will be delayed in March and April,” said COVAX, which is run by a coalition including international vaccine organization Gavi and the World Health Organization, in a news release on March 25. “Delays in securing supplies of SII-produced Covid-19 vaccine doses are due to the increased demand for Covid-19 vaccines in India.”
আরেকটি টিকা সংক্রান্ত তথ্য এখানে মাথায় রাখা দরকার। ‘ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ’ সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, টিকা পাওয়ার কথা মোট ৮৪.১৯ কোটি নাগরিকের। ধরা যাক (এই অনুমান সমীক্ষায় নেই) কেন্দ্রের পূর্বেকার নির্ধারিত দরে ডোজ়প্রতি দাম ১৫০ টাকা। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিককে দু’ডোজ় টিকা দিতে লাগবে ২৫,২৫০ কোটির সামান্য বেশি। ডোজ়প্রতি ২০০ টাকা ধরলেও মোট খরচ ৩৩,৭০০ কোটির কম। এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে কোভিডের টিকাবাবদ বিশেষ বরাদ্দ ৩৫,০০০ কোটি। বলা হয়েছিল, দরকার পড়লে অঙ্কটা বাড়ানো হবে। এবং, টাকাটা রাজ্যগুলিকে হস্তান্তর করা হবে। আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে (১৫.০৫.২১) সুকান্ত চৌধুরী লিখেছেন –“সমীক্ষার হিসাব অন্য রকম, কেন্দ্রের নতুন বিধানে। সেই অনুসারে রাজ্যগুলিকে বেশি দামে খোলা বাজার থেকে টিকা কিনতে হবে। সেই দাম ডোজ়প্রতি ৪০০ টাকা ধরে কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে মোট খরচ দাঁড়াচ্ছে ৬৭,১৯৩ কোটি অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ; তার মধ্যে কেন্দ্রের ভাগ মাত্র ২০,৮৭০ কোটি, অর্থাৎ তিন ভাগের এক ভাগও নয়। অন্য ভাবে বললে, করদাতার বিপুল অর্থ অতিরিক্ত ব্যয় হবে। লাভবান হবে কতিপয় টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা— যদিও দেশের বৃহত্তম উৎপাদক কবুল করেছেন, ডোজ়প্রতি ১৫০ টাকা দামেও তাঁদের খানিক লাভ থাকছে।“
একে কি দূরদৃষ্টির অভাব বলবো কিংবা বিজ্ঞানীদের উপেক্ষা করার ফসল বলবো? অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি এবং তৈরি করা পলিসির ওপরে অটল বিশ্বাস? জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবার কথা ছিল – এপিডেমিওলজিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ, গবেষক, মেডিক্যাল এক্সপার্ট, মেডিক্যাল মডেলার, সামাজিক কর্মী প্রভৃতি – তাদের প্রায় কোন ভূমিকা নেই। নীতি নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতা, আমলা এবং রাজনীতিবিদরা। ফলে এদেশে বৈজ্ঞানিক নীতি নির্ধারণের ভবিষ্যৎ প্রায় অথৈ জলে।
এখানে এক প্রয়োজনীয় ইতিহাসকে স্মরণ করা প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকায় যুদ্ধাস্ত্র তৈরির মধ্য দিয়ে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে প্রেসিডেন্ট আঈজেনহাওয়ার তাঁর বিদায়ী ভাষণে দেশবাসী এবং রাজনৈতিক নেতাদের এই জায়মান “মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল এই কমপ্লেক্স রাষ্ট্রিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে এবং রাজনীতির গতিমুখ নির্ধারণ করবে। বর্তমান সময়ে এর পরিবর্ধিত এবং ভিন্নতর যে চেহারা দেখতে তাকে আমার মনে হয় “মেডিক্যাল-ইন্ডাস্ট্রিয়াল-স্টেট-পলিটিক্স কমপ্লেক্স”। এই কমপ্লেক্সের কাছে বিজ্ঞানকে বারংবার নতজানু হতে হয় – সে আমেরিকায় ট্রাম্পের দম্ভের বিভিন্ন প্রকাশই হোক বা আমাদের দেশে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য স্বচ্ছতা নিয়ে পূর্ণত প্রকাশ না করা হোক। আমি এ বিষয়টিকে নিয়ে পরে আলোচনা করছি।
ঠিক কি বলা হয়েছে ল্যান্সেট-এর সম্পাদকীয়তে?
ল্যান্সেট-এ বলা হয়েছিল ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি মডেল দেখিয়েছিল ভারতে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে। অথচ বিজ্ঞানীমহলে এখন এটা স্বীকৃত ধারণা, জনসমষ্টির ৬০-৭০%-এর মধ্যে ইমিউনিটি গড়ে না উঠলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব নয়। আইসিএমআর-এর জানুয়ারিতে (২০২১) করা একটি স্টাডি দেখিয়েছিল মাত্র ২২% জনসংখ্যার মাঝে সার্স-কোভ-২-এর প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আছে। এ তথ্যকেও আমল দেওয়া হয়নি। টিকার অন্তত ১টি ডোজ পেয়েছে এরকম সংখ্যা (১২.০৫.২১-এর তথ্য অনুযায়ী) মানুষের সংখ্যা ১৭ কোটি ৮০ লক্ষ। দুটি ডোজই পেয়েছে এমন সংখ্যা ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ, অর্থাৎ জনসংখ্যার ২.৯%। এ থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে ৬০-৭০% জনসংখ্যার টিকাকরণ সম্পূর্ণ করতে কতদিন লাগতে পারে!
এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ল্যান্সেটের তরফে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল – প্রথমত, স্থগিত এবং জটপাকানো টিকাকরণ প্রোগ্রামকে যুক্তিসংগত করতে হবে এবং উপযুক্ত দ্রুততায় কার্যকরী করতে হবে। সম্পাদকীয়র মন্তব্য ছিল – “ The government must work with local and primary health-care centres that know their communities and create an equitable distribution system for the vaccine.” আমরা চাক্ষুষ করছি equitable distribution-এর নমুনা। এখনও অবধি টিকা দেবার অভিন্ন নীতি তৈরি হয়নি। প্রত্যাশিত ছিল এবারের বাজেটে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে টিকার জন্য যে ৩৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সেখান থেকে সরকার বিনামূল্যে গণটিকাকরণ করবে। কিন্তু একদিকে টিকার সাপ্লাই নেই, অন্যদিকে সরকারি তরফে কত টিকা দেওয়া হবে আর প্রাইভেট সেক্টরে কত দামে কত টিকা পাওয়া যাবে – এ দুই ক্ষেত্রেও সরকারকে নিশিতে পাওয়া, চিন্তাক্ষমতা বিবর্জিত অবস্থায় দেখাচ্ছে।
ল্যান্সেটের দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, যে হারে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে তার মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রতি ১৪ দিনে সবার কাছে অবারিত করতে হবে – যাতে মানুষ স্বচ্ছভাবে বুঝতে পারে কি ঘটছে এবং অতিমারির রেখচিত্রকে বাঁকিয়ে দেবার জন্য কি করা প্রয়োজন।
সম্পাদকীয়তে অতিকেন্দ্রিক নীতির পরিবর্তে “federal government” শব্দটি একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে – “Modi’s actions in attempting to stifle criticism and open discussion during the crisis are inexcusable … Modi’s Government would be responsible for presiding over a self-inflicted national catastrophe.” এখানেই যত ক্রোধ এবং গোঁসার জন্ম হয়েছে।
বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসকদল যখন ভ্যাক্সিন, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি জীবনদায়ী উপকরণ নিয়ে ল্যাজেগোবরে হচ্ছে সেসময় হঠাৎ অন্যভাবে বড্ডো “ফেডারাল” হয়ে উঠেছে অতিরাষ্ট্রিক কেন্দ্রীয় সরকার। অক্সিজেন থেকে ভ্যাক্সিন, ওষুধ থেকে প্রযুক্তি সমস্ত দায়িত্ব রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে। যুক্তি হিসেবে রয়েছে – স্বাস্থ্য রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয়, কেন্দ্রের নয়। ১৯৪৭ থেকে ৭৪ বছর পার করে এসেও স্বাস্থ্য না মৌলিক অধিকারের মর্যাদা পেয়েছে, না গৃহীত হয়েছে মানবাধিকার হিসেবে। তেমনি স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত উপকরণ যেগুলো public goods বা জনসাধারণের সবার জন্য সুগম এবং অধিকার ও আয়ত্তের মধ্যে থাকা বিষয় হবার কথা ছিল সেগুলো স্বাস্থ্যের বদলে স্বাস্থ্যপরিষেবায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়ে রাষ্ট্রের তরফে খোলা বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে ক্রয়যোগ্য পণ্য হয়ে উঠলো। এই অতিমারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার একেবারে ভাঙ্গাচোরা অবস্থা, জনস্বাস্থ্যের অবর্ণনীয় পরিণতি এবং সামাজিক সুরক্ষার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি নিষ্ঠুরভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে হবে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের ভরকেন্দ্রে কে থাকবে – মানুষ কিংবা মুনাফা?
ল্যান্সেটের শেষ পরামর্শ হল এসমস্ত কাজের সাফল্য নির্ভর করবে “on the government owning up to its mistakes, providing responsible leadership and transparency, and implementing a public health response that has science at its heart.” এখানে গোমূত্র, গোবিষ্ঠা, করোনিল, গঙ্গাজল পান, করোনামাতার পুজো কিংবা থালা বাজানোর কোন জায়গা নেই। কেবলমাত্র কঠোর, যুক্তিনির্ভর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আমাদেরকে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারবে।
ল্যান্সেটের সম্পাদকীয়র আগে প্রথমে দ্য সানডে টাইমস পত্রিকায় (২৫.০৪.২১) এবং পরের দিন দ্য অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রে (২৬.০৪.২১) ফিলিপ শেরওয়েলের লেখা একই নিবন্ধ ছাপা হয়। সে নিবন্ধের শিরোনাম ছিল “Modi leads India into viral apocalypse”। এ নিবন্ধে কড়া ভাষায় বলা হয় – “ঔদ্ধত্য, অতি-জাতীয়তাবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক অযোগ্যতা একসাথে জুড়ে ভারতে এক বিপুল বিপর্যয়ের (epic proportions) সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যখন জনতার ভিড় উপভোগ করছেন (basking) তখন ভারতীয় জনতা দমবন্ধ অবস্থায় রয়েছে (suffocating)।” এরপরে যোগ করা হয়েছে – “India has also been felled by a cocktail of hubris, complacency and nationalist policies, all exacerbated by a slow domestic vaccine roll-out, an ill-equiped health system, lax protection, pandemic fatigue and promotion of the economy over containment.”
এরকম তীক্ষ্ণ সমালোচনার পরে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় হাই কমিশন একটি কড়া জবাব দেয় ২৬.০৪.২১ তারিখে। এই জবাবের ৪ নম্বর পয়েন্টটি বেশ কৌতুকজনক। এখানে বলা হয় – “the article has strangely rushed to blame the surge on the restricted election campaign by Hon’ble Prime Minister of India and one religious gathering.” সত্যিইতো! আমরা নিজেরাই তো দেখেছি প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের সময় হাতে গোণা দুয়েকটি মাত্র প্রচার করেছেন! আবার একটিমাত্র ২, ৫০,০০০ লোকেরও বেশি কুম্ভমেলায় মানুষের সমাগমকে দোষারোপ করা হয়েছে। বড্ডো আক্ষেপের কথা। অবশ্য এখন গঙ্গায় যে কয়েকশ মৃতদেহে ভেসে পশ্চিমবঙ্গের দিকে আসছে সেগুলো অনেকে সন্দেহ করছে কুম্ভমেলার উপজাত। তাছাড়া সরকারি হিসেবেই (হিসেবের সত্যতা নিয়ে সংশয় থাকলেও) কুম্ভমেলা পরবর্তী কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা ২০০০-এর বেশি।
“Modi leads India into viral apocalypse” নিবন্ধটিতে বাইডেন প্রশাসনকেও বিদ্ধ করা হয় – “The administration has been widely criticised for continuing Donald Trump’s “America First” policy when it comes to vaccine.” কিন্তু আমেরিকা কড়া বা মৃদু কোন ভাষাতেই জবাব দেয়নি। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে ভিন্নমতকে, সে যতই কটু হোকনা কেন, সম্মান করা হবে এটাই রীতি। তার বিপরীতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি অসহিষ্ণুতার সন্ত্রাসের সামাজিক বাতাবরণে।
নেচার-এর সতর্কবাণী
নেচার পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল (৬.০৫.২১) “India, Brazil and the human cost of sidelining science” শিরোনামে। দক্ষিণপন্থী বলসোনারো এবং ট্রাম্পের বিজ্ঞান-বিরোধী নীতি এবং ভারতের তথ্য গোপন করা নিয়ে এ প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। ভারতের আত্মতুষ্টির কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছে গতবছর সেপ্টেম্বরে কোভিড কেসের সংখ্যা ৯৬,০০০ থেকে এ বছরের মার্চের গোড়ায় ১২,০০০-এর নীচে নেমে আসে। অথচ বিজ্ঞানীরা বারংবার মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে জানুয়ারি থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন। নেচার-এর পর্যবেক্ষণ – “India has other problems. One is that it’s not easy for scientists to access data for COVID-19 research. That, in turn, prevents them from providing accurate predictions and evidence-based advice to the government. Even in the absence of such data, researchers warned the government last September to be cautious about relaxing COVID-19 restrictions.” পরবর্তীতে স্পষ্ট করে বলা হল – “It’s never good when research communities have a difficult relationship with their national governments. But this can be fatal in the middle of a pandemic — when decisions need to be swift and evidence-based. By sidelining their scientists, the governments of Brazil and India have missed out on a crucial opportunity to reduce the loss of life.”
একই প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হল ভারতের নীতি নির্ধারকদের ক্ষেত্রে সময় এসেছে “to trust those with relevant expertise, to make sure the necessary data are collected and available, and to accept the value of scientific findings, even if they do not fit the government narrative.” অস্যার্থ, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের স্বাধীনতা দাও। জুতোর মাপে পা-কে কেটে ছোট না করে, অপছন্দের হলেও, সরকারি ভাষ্যের সাথে খাপ না খেলেও বৈজ্ঞানিকভাবে লব্ধ ধারণাকে গ্রহণ করো।
বিজ্ঞানীদের সতর্কবাণী
গার্ডিয়ান সংবাদপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছিল (১.০৫.২১) – “India Covid crisis: government ignored warnings on variant, scientists say”। সংবাদে বলা হয়েছে – “সরকারের তরফে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি যাতে ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর জন্য জনসমাবেশগুলোকে বন্ধ করা যায়। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এখন অন্তত ১৭টি দেশে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, ইরান রয়েছে।”
আমাদের নীতি নির্ধারকদের কি কোন অনুমানই ছিলনা যে এরকম এক পরিস্থিতি জন্ম নিতে পারে? আমাদের রাষ্ট্রিক নীতি নির্ধারণের মাঝে জনস্বাস্থ্যের কি কোন স্থানই নেই? যে মানুষটি মারা যাচ্ছে সে কখনো এ প্রশ্ন করতে পারবেনা। কিন্তু ঢাল-তলোয়ারহীন প্রতিটি স্তরের নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মীদের যে বাহিনী লাঠি দিয়ে কোভিডের কামানের গোলার মোকাবিলা করছে তারা এই সঙ্গত প্রশ্ন নিশ্চয়ই করবেন। এ সংকট তো আসলে ভারতের জনস্বাস্থ্যের মহাবিপর্যয়। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণার পরেই ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম সরকারের কাছে করোনা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে বারংবার চিঠি দিয়েছে। সতর্ক করেছে। কিন্তু সতর্কতার বিধি শিকেয় তুলে নির্বাচন কমিশন ৮ দফায় এ রাজ্যে ভোট করিয়েছে। কোভিড ছড়িয়ে পড়ার পথ সুগম হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার কুম্ভমেলায় ধর্মাচরণের জন্য কয়েক লক্ষ লোকের জমায়েতে অনুমতি দিয়েছে। সংক্রমণ ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্ট (B.1.617) এমন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে সে ব্যাপারে Indian SAARS-CoV-2 Genetics Consortium বা INSACOG-এর বিজ্ঞানীরা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সরকারকে সতর্ক করে আসছিলেন। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিচ্ছিলেন। রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের নিয়ে তৈরি নীতি নির্ধারক সংস্থা এগুলোকে পাত্তা দেয়নি। নিজেদের আত্মম্ভরিতা এবং প্রবল আত্মতুষ্টিতে মগ্ন হয়ে ছিলেন। INSACOG-এর বিজ্ঞানীরা তাদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (NCDC)-কে দিয়ে সতর্ক করেছিলেন যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল মানুষ বেশি বিশ্বাস করে রাজনীতিকদের, বিজ্ঞানীদের নয়।
ডেটা বা তথ্যের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, ভুল তথ্য, পছন্দমতো তৈরি-করে-নেওয়া তথ্য এবং বিজ্ঞানীদের হাতে পূর্ণ তথ্য তুলে না দেওয়া আজকের অতিমারিকে অনেক বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছে। সায়ান্স-এর মতো বন্দিত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে (৪.০৫.২১) “‘There are so many hurdles,’ Indian scientists plead with government to unlock COVID-19 data”। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে – “Why the Indian government is so reticent to share data is unclear.”
২৯.০৪.২১-এ এখন অব্দি ৯০০-র বেশি বিজ্ঞানী ও স্বাধীন চিন্তা সম্পন্ন মানুষের স্বাক্ষর সমন্বিত (যার একজন স্বাক্ষরকারী এই প্রবন্ধ লেখকও) চিঠি প্রধানম্নত্রীকে দেওয়া হয়েছে “AN OPEN APPEAL TO THE HON’BLE PRIME MINISTER OF INDIA” শিরোনামে। সেখানে একেবারে নীচের দিকের (granular) ডেটা চাওয়া হয়েছে। চিঠির কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি –
We emphasize the need for systematic collection and timely release of data on:
(a) large-scale genomic surveillance for new variants,
(b) testing and clinical data for better predictions of the spread of infection,
(c) the clinical outcomes of hospitalized patients, and
(d) immune response to vaccination in our population.
কিন্তু এখন অব্দি অরণ্যে রোদন ছাড়া কিছু হয়নি।
আমেরিকার নির্বাচনের প্রাক্কালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সমস্ত সদস্যের যৌথভাবে লেখা সম্পাদকীয়তে (৮.১০.২০২০) বলা হয়েছিল যে কোভিড-১৯ বিশ্ব জুড়ে সংকট তৈরি করেছে। এবং এ সংকট দেশের নেতৃত্বকে বুঝে নেবার একটা পরীক্ষা। আমেরিকাতে নেতৃত্ব এ পরীক্ষায় পূর্ণত বিফল হয়েছে। ২০০,০০০ মানুষের উপরে জীবনহানি হয়েছে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, অসংখ্য বেকার তৈরি হয়েছে। সম্পাদকীয়টির সিদ্ধান্ত – সম্পাদকীয়র শিরোনাম “Dying in a Leadership Vacuum – “নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কেউ এভাবে হঠকারীভাবে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে কিংবা টাকা তছনছ করলে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হত। এরপরেও আমাদের নেতৃত্ব তাদের কৃতকর্মের জন্য আমাদের কাছে অব্যাহতি দাবী করেছে। কিন্তু এই নির্বাচন আমাদের হাতে বিচারের ক্ষমতা দিয়েছে। যৌক্তিক মানুষেরা আমাদের প্রার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আপত্তি জানাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সত্য কখনো ‘লিবারাল’ বা ‘কনজারভেটিভ’ নয়। কিন্তু আমাদের জীবদ্দশার সবচেয়ে বড়ো জনস্বাস্থ্যের সংকটের প্রশ্ন যখন আসে তখন পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বিপজ্জনকভাবে অকর্মণ্য। আমরা এদেরকে আর উৎসাহ কিংবা সামর্থ্য জোগাতে পারিনা যাতে তারা আবার নেতা হিসেবে ফিরে আসে এবং হাজার হাজার আমেরিকানের মৃত্যু ঘটে। আমরা এদের আর ফেরার অনুমতি দিতে পারিনা।” সম্পাদকীয়টির শুরুতেই বলা হয়েছিল – “Here in the United States, our leaders have failed that test. They have taken a crisis and turned it into a tragedy.” আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে কোন মিল বা সংযোগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে?
কেবলমাত্র এই সম্পাদকীয়টি নয়, আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ একই জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল নির্বাচনের প্রাক্কালে – “Implications of the 2020 Election for U.S. Health Policy” এবং “Health Policy after a Trump Election Victory” – শিরোনামে। দুটি প্রবন্ধেই রিপাব্লিকনরা পুনরায় ফিরে এলে স্বাস্থ্যনীতি যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে একথা স্পষ্ট করে জানানো হয়েছিল।
পৃথিবীর সবচেয়ে মান্য মেডিক্যাল জার্নালে (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ৭৮-এর বেশি) আমেরিকার নির্বাচনের প্রাক্কালে এরকম সম্পাদকীয় এবং একাধিক প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে স্বাস্থ্য ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে, রাজনীতির চেয়ে বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে। আমরা এখানে এ কাজটি করতে কবে পারবো? সময় উত্তর দেবে।
Disgusting! Is the government refusing to prioritise the pandemic? India has enough resources including trained staff to deal with this problem. Why aren’t NGOs being brought into the campaign? Where are the PM CARES funds? The problem is mind set: refusal to acknowledge the problem, proven medical science and the lack of both information and transparency.
ভালো। গবেষণাধর্মী লেখা। লেখককে ধন্যবাদ। সমস্যা অতলান্ত। মানুষ মরছে কাতারে কাতারে। এখন মানুষের কী করা উচিৎ, তা জানালে ভালো হতো।
তথ্য ভিত্তিক ভালো লেখা ও সতর্কবার্তা
সময়োচিত ও যুক্তি-তথ্যনির্ভর একটি লেখা।
“জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবার কথা ছিল – এপিডেমিওলজিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ, গবেষক, মেডিক্যাল এক্সপার্ট, মেডিক্যাল মডেলার, সামাজিক কর্মী প্রভৃতি – তাদের প্রায় কোন ভূমিকা নেই। নীতি নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতা, আমলা এবং রাজনীতিবিদরা। ফলে এদেশে বৈজ্ঞানিক নীতি নির্ধারণের ভবিষ্যৎ প্রায় অথৈ জলে।”
ভারত একের পর এক ভুল করেছে মহামারিটির প্রথম দিন থেকে, যার ফল আজকে বহু নিরীহ তরুণ প্রাণের বিনিময়ে পেতে হচ্ছে । প্রথম ভুল, যখন জানা ছিল যে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, তখন বিমান বন্দর এবং বিমান পরিষেবা ও বিমানবন্দর গুলোতে পরীক্ষার বন্দোবস্ত রাখা প্রয়োজন ছিল, করা হয়নি ।
করোনাভাইরাস এমন একটি অসুখ যা কিনা overdispersed , অর্থাৎ অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যেকার সংক্রমণ অখিকাংশ মানুষের সংক্রমণের কারণ হয় (১০% -> ৮০%), এই অসুখ ক্লাস্টার এর মাধ্যমে বিস্তার পায় , এবং কিছু মানুষ “superspreader ” হিসেবে পরিগণিত হন, তবে আসলে কয়েকটি “superspreading event” এর মাধ্যমে ছড়ায় । এই অসুখ বায়ুবাহিত অর্থাৎ ভাইরাস হাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়, এবং প্রাথমিক ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন মানুষ কোন রকম অসুখের লক্ষণ ব্যতিরেকে অন্যদের এই অসুখ ছড়াতে পারেন । এইসব নানান কারণে “চিকিৎসার’ চেয়েও অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল অসুখ টিকে প্রতিষেধন করা, কারণ ভেবে দেখলে দেখবেন, এই অসুখের সত্যি সেভাবে কোনো ওষুধ নেই । যে সময়ে মানুষের রোগ ধরা পড়ে এবং বাড়াবাড়ির পর্যায় পৌঁছয় , তখন স্টেরোয়েড বাদ দিলে আর অন্য কোনো ওষুধেই বিশেষ কিছু করার থাকে না, সাপোর্ট দেওয়া ছাড়া ।
গত এক বছর ধরে আমরা যে এগুলো জানি না তা নয়, কিন্তু কিছু করতে গেলে সরকারকেই করতে হতো, এমন অনেক preventive কাজকর্ম ছিল যেগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে করে ওঠা সম্ভব ছিল না, অন্তত ব্যক্তিগত তরফে কখনই সম্ভব ছিল না ।
যেমন ধরুন, বিভিন্ন রাজ্যে ও গোটা দেশ জুড়ে টেস্টিং এর বন্দোবস্ত করা এবং প্রচুর পরিমানে টেস্ট এর আয়োজন করা । সরকার করে উঠলেন না, উল্টে সাধারণ মানুষকে থালা বাজিয়ে প্রদীপ দেখিয়ে অসুখ তাড়াবার কুপরামর্শ দিলেন । এতে করে কাজের কাজ কিছু হল না, সে বিষয়ে তাঁরা নীরব রইলেন ।
দ্বিতীয়, অসুখ টিকে বাড়তে না দিতে হলে দেশ জুড়ে কন্টাক্ট ট্রেসিং (শুধু forward কন্টাক্ট ট্রেসিং ই নয়, backward কন্টাক্ট ট্রেসিং করার প্রয়োজন ছিল) । লক্ষ্য করে দেখুন, আজ অবধি সেই কাজ সরকার সুষ্ঠু ভাবে করে উঠতে পারেন নি । উল্টে এমন কয়েকটি app বাজারে মানুষের হাতে তুলে দিলেন, যে app গুলোতে কোন কাজ হলো না, মানুষ ব্যবহার করলেন না । সরকার বিবেচনা করে দেখলেন না বা কোনো রিপোর্ট চাইলেন না, কেন মানুষ এই app গুলো ব্যবহার করতে চাইছেন না ।
তৃতীয়, সময় কাল বিবেচনা না করে লক ডাউন ডেকে বসলেন, অথচ, যে কোনো লক ডাউন এ মানুষের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে (হয় মানুষ লুকোবেন, নয় তাঁরা পালাবেন), দুটোর একটাও কি ভাবে মোকাবিলা করবেন স্থির করতে পারলেন না । ফলে অসহায় মজুর রা পালাতে শুরু করলেন, এবং তাঁদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করা হলো, শুধু তাই নয়, তাঁরা এইভাবে অসুখটিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিলেন ।
চতুর্থ, সম্পূর্ণ ভুলভাল মডেলিং করা হল । আমি নিজে একজন এপিডেমিওলোজিস্ট , আমি নিজে মডেলিং করি, এবং আমাদের দেশ New Zealand এ এখন যে করোনা অনুপস্থিত, তার বড় কারণ আমরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে আমাদের অসুখের প্রায় নিখুঁত মডেল তৈরী করেছিলাম, কখনো ভাবিনি যে এই তো অসুখ কমছে, তার মানে আমাদের herd immunity এসে গেলো । ভারতে যাঁরা মডেল করছিলেন, এবং এখনো করছেন, তাঁদের মডেল কখনোই সেভাবে peer review করা হয়নি, যার জন্য অজস্র ভুল সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছেন ও নিয়ে চলেছেন । এর দায় মিটবে অজস্র নিরীহ ভারতবাসীর মৃত্যুর বিনিময়ে – অত্যন্ত মর্মান্তিক!
পঞ্চম, november-december মাস নাগাদ যখন বিলেতে ১৬১৭ স্ট্রেন প্রবল আকার ধারণ করছে , অধিকাংশ দেশ তাদের বিমান চলাচল স্থগিত রাখছেন, তখন দেখা গেলো বাইরের দেশগুলো থেকে বহু মানুষ ভারতে প্রবেশ করছেন, এনাদের কার কি ধরণের ইনফেকশন তাই নিয়ে দেশের কারোর কোনো রিপোর্ট নেই, আমরা কেউ জানি না, এনাদের কারা কারা প্রাথমিক ইনফেকশন নতুন স্ট্রেনগুলো থেকে ছড়িয়েছেন । মনে রাখা যেতে পারে, যে, যেহেতু কোভিড overdispersed , অনেক বার ইনফেকশন হতে হতে একসময় সে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর্যায় চলে আসে ।
ষষ্টত, এখানেও, দেখুন সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছেন, কোবিদ-১৯ বহুদিন আগে ভারতে প্রবল community transmission এর পর্যায় চলে গিয়েছিলো, সরকার বার বার আশ্বস্ত করছিলেন যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়নি । যার জন্যে এনাদের নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা পুরোটাই ভুল ছিল ।
সপ্তম, ইলেকশান এবং কুম্ভমেলা দুটোর একযোগে ভয়াবহ রকমের সংক্রমণ ছড়িয়েছে, বিশেষ করে যে সময়ে বোঝা যাচ্ছিল যে বেশ কয়েকটি রাজ্যে যেমন মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাবে নতুন স্ট্রেন এর সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে ।
অষ্টম, বাজারে যখন ভ্যাকসিন এলো,তখন অন্যান্য সমস্ত দেশ পরিকল্পনা মাফিক দুটি dose হিসেবে করে, নষ্ট হবে ধরে নিয়ে order দিলেন, তখন ভারত সরকার কালক্ষেপ করলেন, এবং শেষে এমন একটি ভ্যাকসিন বাছলেন, যার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । কেন সরকার Pfizer vaccine ব্যবহার করার অনুমতি দিলেন না শুধু পরীক্ষা করার অছিলায় (দামের প্রশ্নে নয় কিন্তু), যেখানে অন্য কোনো ভ্যাকসিন ই সেভাবে পরীক্ষিত হলো না । সবটাই ই “আদরের” লোককে পাইয়ে দেবার রাজনীতি?
নবম, দিনের পর দিন সরকারি তরফে এমন কিছু চিকিৎসাকে প্রোমোট করা হয়েছে বা হচ্ছে যাদের করোনা র অসুখে কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না, তবুও মন্ত্রীরা , বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থমন্ত্রী, যিনি নিজে একজন নাক কান গলার ডাক্তার তাকে প্রোমোট করলেন, যেমন, রামদেবের করোনীল , বা কানের কাছে গায়ত্রীমন্ত্র । এগুলোর কি দরকার ছিল, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এতে ।
এই ভুলগুলোর মাশুল কাদের জীবনের বিনিময় দিতে হচ্ছে?
ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য কোভিড, আমাদের সরকারী ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন সব কিছু নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা করেছেন।
দেশ চালানোর জন্য বিজ্ঞানী চাই না। কিন্তু এই ধরণের সমস্যায় রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ গ্রহণ এ রূপায়ন করলে মানুষ বাঁচত।
আমাদের দেশে নেতা এবং নির্বাচন যন্ত্রের কাছে ভোটারের থেকে ভোট বেশী দামী। অতএব, …।
ভ্যাক্সিন লক্ষ লক্ষ আসছে- এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন Dr Gangadeep Kang অর মূল্যায়ন খুব কাছাকাছি।
চলুক আপনার লেখা। কোন সময়ে তো আমরা শুধরে যেতেও পারি আপনার মত মানুষদের লেখা পড়ে।
একে জাতীয় লজ্জা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বলিষ্ঠ লেখনী।
গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। সরকারের ব্যর্থতাটি সকলেই যথেষ্ট দাম দিয়ে বুঝছেন। তার anatomy টা প্রাঞ্জল হল অনেকটাই। অক্সিজেন নিয়ে পরিসংখ্যানগত ত্রুটি একটু রয়েছে মনে হয়। উৎপাদন সাড়ে 7 হাজার মেট্রিক টন। কোভিডের আগে মেডিকেল consumption ছিল 1000 মে.টন। কোভিডে বেড়ে হয়েছে 4000 মে. টন। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। সমস্যা distribution এ।
আর বিভিন্ন পত্রিকা থেকে তথ্য আহরণ করে তার নির্যাসটি পরিবেশন করবেন লেখক। বদলে সমস্ত পত্রিকার ও প্রবন্ধের উদ্ধৃতি পাঠকের সামনে তুলে দিলে কিছু ধৈর্যচ্যুতি হয়, পাঠ শেষ অব্দি পৌঁছয় না, ফলে মেসেজটি অধরা থেকে যায়। এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মত।
মোদির অহংকারের ফল ভুগতে হচ্ছে আজ গোটা দেশকে।
অসাধারণ বিশ্লেষণ।
স্যার, জনস্বাস্থ্য বরাবরই উপেক্ষিত। এখন যুক্ত হয়েছে অজ্ঞানতার ঔদ্ধত্য। সর্বোপরি চিন্তার জগতে স্বৈরাচার। ধর্মের পেয়াদারা আবারও চাইছে “পৃথিবীকে বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে সূর্যকে তার চারদিকে ওঠবোস করাতে!” তবু, বিজ্ঞান অকুতোভয়ে এখনও বলে –“রাস্তা কারও একার নয়।” আপনারা কলম ধরেন, গর্জে ওঠেন বলেই এখনও দেশটা গো-শালা হয়ে যায়নি।
লেখক নিজে একজন সমাজ-সম্পৃক্ত চিকিৎসক এবং কোভিডকালে লাগাতার চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকায় লেখায় রাষ্ট্রর চূড়ান্ত নাীতিহীনতাজনিত অসহায়তার যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে এক বিশেষ সংবেদন নিয়ে। লেখার যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও লক্ষ্য মুখ অনন্য।
তবে অতি-তথ্যর হুবহু উপস্থাপনে মনঃসংযোগ অনেকাংশে বিঘ্নিত হয়।
পরিশেষে একটাই প্রশ্ন, এই প্রবন্ধ, অরুন্ধতী রায়ের খোলা চিঠি, ল্যান্সেটের সম্পাদকীয় কিংবা সুকান্ত চৌধুরীর (আবাপ) উত্তর সম্পাদকীয় কি কোনোভাবেই সেই কপিকলের সন্ধান আনতে পারবে যা Abyss of politico-moral depravity থেকে তুলতে পারে?
Excellent
অসাধারণ লেখা। অনেক কিছু জানতে পারলাম। মানুষ কে আরও সচেতন হতে হবে
স্যার, জনস্বাস্থ্য বরাবরই উপেক্ষিত। এখন যুক্ত হয়েছে অজ্ঞানতার ঔদ্ধত্য। সর্বোপরি চিন্তার জগতে স্বৈরাচার। ধর্মের পেয়াদারা আবারও চাইছে “পৃথিবীকে বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে সূর্যকে তার চারদিকে ওঠবোস করাতে!” তবু,বিজ্ঞান অকুতোভয়ে এখনও বলে –“রাস্তা কারও একার নয়।” আপনারা কলম ধরেন, গর্জে ওঠেন বলেই এখনও দেশটা গো-শালা হয়ে যায়নি।
নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত যুক্তি। ডা: ভট্টাচার্যের কাছে ঠিক যেমনটি প্রত্যাশিত। লেখা চলুক।
এরকম খারাপ সময়ে সত্যিই এগুলি দুর্ভাগ্যজনক।