লোকজনের মুখে প্রায়শই হাহাকার শুনি, শিক্ষিত মানুষ কেন রাজনীতিতে আসেন না।।
এলে কী হয়, নিজেরাই দেখুন। এই প্রচারপুস্তিকা যাঁদের লেখা, তাঁরা সকলে চিকিৎসক। অর্থাৎ খাতায়কলমে এঁদের অশিক্ষিত বলা যায় না। এটি প্রচারপুস্তিকার প্রথম পাতা মাত্র। গত কয়েক বছরে রাজ্যজুড়ে ‘সাফল্য’ তো কিছু কম নয়, কাজেই ফিরিস্তি যে কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হবে, সে তো বলাই বাহুল্য। তবে খাটের তলা বক্স খাট ফাঁকা ফ্ল্যাটের নিউ রিয়্যালিটি – ডাক্তারি পড়ার সময় ‘রিসেন্ট অ্যাডভান্স’ বলে একটা আলাদা পেপার থাকে – সেসব ইনক্লুডেড হয়নি, ওটুকু খামতি রয়ে গিয়েছে। আসলে তলায় তলায় যে ‘শিল্প হয়ে গিয়েছে’, সে খবর এই চিকিৎসককুল পুরোপুরি জেনে উঠতে পারেননি। কিন্তু সে তো ভিন্ন প্রসঙ্গ।
কথাটা হলো, গোঁড়া দলীয় রাজনীতির অংশ হলে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে মানুষটা সেই দলের অ্যাজেন্ডাবাহীর বেশি কিছু হয়ে ওঠেন না। হয়ে উঠতে পারেন না।
এঁরা লড়ছেন মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচনে। কিন্তু মেডিকেল কাউন্সিলের কাজ কী, তা-ই জানেন না। প্রচারপুস্তিকায় নিজেদের কৃতিত্ব তথা উন্নয়নের ফিরিস্তি যা দিয়েছেন – তাকে যদি সত্যি বলে মেনেও নিই – সে সাফল্য (বা অসাফল্য) রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের। সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি বা ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান কিংবা বিনেপয়সায় স্বাস্থ্যপরিষেবা জোগানো – এর কোনোটিই মেডিকেল কাউন্সিলের এক্তিয়ারে পড়ে না। অথচ এঁরা সকলেই ডাক্তার। অর্থাৎ খাতায়কলমে শিক্ষিত। সেই জ্ঞানটুকু বিস্মৃত হয়েছেন দলীয় আনুগত্যের ঠেলায়। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক।
আবার দেখুন, ক্লজ জি-তে এঁদের হয়ে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, প্রত্যেকেই মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। সেই সাতজনই সরকারি কর্মচারী। ক্লজ এইচ-এও যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও একাধিকজন সরকারি পদাধিকারী। অথচ, খাতায়কলমে শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও এঁদের মাথায় থাকেনি, সরকারি লোগো যত্রতত্র ব্যবহার করা যায় না। অসামান্য ও বহুমাত্রিক ‘ব’ লোগোর কথা ছেড়ে দিচ্ছি – কেননা তার সত্ত্বাধিকার নিয়ে বিভিন্ন কথা এদিক-ওদিক শোনা যায় – কিন্তু অশোকস্তম্ভ!! একেবারে জাতীয় প্রতীক!!!! হাজার সরকারপন্থী হলেও, নির্বাচনী প্রচারপুস্তিকায়?? এঁরা কি জানতেন না কথাটা? জানতেন, অবশ্যই জানতেন। কিন্তু দলীয় আনুগত্য এক্ষেত্রে – প্রায় লোকাল ট্রেনে সাঁটানো বিজ্ঞাপন-কথিত ‘কৈশোরের বদভ্যাস’-এর মতোই – ক্ষতিকর। অন্যান্য ক্ষতিও করে, কিন্তু পড়াশোনা যে ভুলিয়ে দেয় – তা নিশ্চিত।
তদুপরি এঁরা শুরুতেই ঘোষণা করেছেন, এই টিম নাকি ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মনোনীত’!! সত্যি? সরকারি অর্ডারটা দেখাবেন, প্লিজ? উন্নয়নের ফিরিস্তির সত্যিমিথ্যে তর্কযোগ্য অবশ্যই, কিন্তু – সরকারি অর্ডার যদি না দেখাতে পারেন – এটা তো একেবারে পুকুরচুরি!!
তবে তাঁরা তো শুরুই করেছেন এই ‘অভয়বাণী’ শুনিয়ে – ‘আপনারা নির্ভয়ে কাজ করুন, আপনাদের কোনও কাজে হস্তক্ষেপ করা হবে না…’
অভয়বাণী কারা শোনান, সে তো সুকুমার রায়ই চিনিয়ে গিয়েছেন।
“ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না”
কারা বলেন? কাদের দায় এমন অভয়বাণী শোনানো??
ওই যে, যাঁদের ‘অভয়বাণী’-র তলায় লুকিয়ে থাকে এই কথাটাও…
“অভয় দিচ্ছি শুনছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা?
বসলে তোমার মুণ্ডু চেপে বুঝবে তখন কাণ্ডটা!
আমি আছি, গিন্নী আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে
সবাই মিলে কামড়ে দেব মিথ্যে অমন ভয় পেলে।”
অতএব…
চয়েস আপনার। ফাঁকা ব্যালট নয়, ভোট দিন। নিজের ভোট নিজে দিন।
ভোট যাকে খুশি দিন, কিন্তু মনে করানো যাক – পেচ্ছাপ-পায়খানা-ভোটাধিকার প্রয়োগ এই কাজগুলো নিজে নিজেই করাটা ভালো।