আবার একটা বিতর্কিত ক্যাচাল। সামান্য এডিট করে
________
এক হাজার বছর পাশাপাশি থেকেও ইদ আজ অবধি সব বাঙালির উৎসব হয়ে উঠল না। যেমনটি এপার বাংলায় কিছুটা হয়েছে বড়দিন।
বাংলাদেশ ঐতিহাসিক কারণে(কী ভাবে সে’টা সবাই জানে) মোটামুটিভাবে এক ধরণের ধর্মীয় বিশুদ্ধতা পেয়েছে। তাই সে’খানে ইদ সার্বজনীন প্রায়।
কিন্তু বাংলাভাষী ভারতীয় অংশে রাজনীতি ছাড়া(যেমনটি উপবাসের মাসে লোক দেখানো ইফতার ইত্যাদি) অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে বিধর্মী বা অধর্মী কেউ ইদ উৎসবে মেতে উঠেছে এই ঘটনা প্রায়শই বিরল। অন্তত সে রকম বিধর্মী কাউকে গরজ করে ইদে নিজের বাড়িতে আলাদা রকম খাওয়া, যেমন উৎসবের দিনে খাওয়া হয় বা নতুন জামাকাপড় পরতে দেখা অতীব বিরল ঘটনা।
অথচ বড়দিনে এই বিধর্মী বা অধর্মী অনেকেই মেতে ওঠেন কেক, পুডিং,অন্যান্য খাবার খেতে বা পার্ক স্ট্রিটের ভিড়ে। নাচে, গানে। আজ্ঞে হ্যাঁ, কিঞ্চিৎ গরিবরাও। মেসেজ বক্স উপচে পড়ে হ্যাপি ক্রিসমাসে।
কেন?
১) স্বীকার করি না করি, প্রতি উৎসবেই ঋতু নির্ভরতা থাকে, অন্ততঃ থাকলে সুবিধে হয় উৎসবকামী জনগণের। শীত ঋতু, মাস এমনকি তারিখটিও নির্দিষ্ট থাকায়, বড়দিনে সেই সুবিধে পাওয়া যায় সম্ভবত।
২) ইদ আর বড়দিন দু’টি উৎসবই এই দেশে বাইরে থেকে এসেছে। বড়দিন যারা এনেছিল তারা ধর্মান্তরকরণে মনোযোগী ছিল হয় তো। কিন্তু তার চাইতেও লুঠে বেশি উৎসাহী ছিল। তারা ধর্মান্তরকরণ বেশি করে উঠতে পারেনি। বরং যা সম্পদ পেয়েছে জাহাজ ভর্তি করে সাগরপারে পাচার করেছে। আর নিজেদের উৎসবকে রাজার উৎসব বলে চালিয়েছে।
ইদ যারা এনেছিল তারা নাদির শাহ ইত্যাদি হাতে গোণা কয়েকজনকে বাদ দিলে, এ’দেশে থেকে যেতে আর ধর্মান্তরিত করতে অধিক উৎসাহী ছিল। যে কারণে এই উপমহাদেশের এক বড় অংশ আজ ধর্মীয় ভাবে তাদের অনুগামী। এবং এই ব্যাপক ধর্মান্তরকরণের অভিঘাত কোনও ভাবে নতুন উৎসবে পুরোনো ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে বাদ সেধেছে, তৎকাল থেকেই হয় তো বা।
আরও একটা ব্যাপার স্মর্তব্য। নতুন ধর্মে এলেই নতুন বিদেশি ভাষায় নামকরণ এইটিরও একটা অভিঘাত ছিল বোধ হয়। যা এই বিচ্ছিন্নতা জাগাতে ইন্ধন দিয়েছে।
এ’দেশীয়রা নিজেদের মধ্যে মারপিট কলহ সেই মহাভারতের সময়েরও আগে থেকেই করেছে। বৌদ্ধ বনাম ব্রাহ্মণ লড়াইও কম রক্তপাত ঘটায়নি।
কিন্তু বেশি আঘাত দিয়েছে আরবিতে নামান্তরিত প্রতিবেশীর অধীনতা। শ’য়ে শ’য়ে নাম পাল্টানোর ব্যাপারটা গ্রিক শক হুন এ’দেশ জয়ীরা কেউ করেনি। এই ব্যাপারটি ঘটল বলেই এক ধরণের প্রতিবাদে হয় তো নতুন উৎসবে মাতামাতি করেনি অ-ধর্মান্তরিতরা।
৩) এই আবহে যখন ব্রিটিশ শাসকেরা এল, শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু এই মনোভাব নতুন শাসকদের ওপর নির্ভরতা বাড়ালো। তাদের ভাষা ও উৎসব আঁকড়ে ধরায় উৎসাহ যোগাল আরবি ফারসী আক্রান্ত অনিচ্ছুক অভিমানী জনগোষ্ঠীকে।
৪) আর শেষে আসে পুতুলপুজো ব্যাপারটি। বাইরে থেকে আসা দু’টি ধর্মই একেশ্বরবাদী। এবং পুতুলপুজো বিরোধী। যদিও কঠোর পুতুলপুজো বিরোধীদের মধ্যেও ধর্মস্থানের ছবি টাঙানো বা অন্যান্য প্রতীকে ভক্তি যথেষ্ট জনপ্রিয় (অধুনা ফ্লেক্সের ছবিপুজো ধরছি না) যা এক রকমের পুতুলপুজোই।
কিন্তু বড়দিনের ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পুতুলপুজোর প্রচলন বেশি( পেরেকগাঁথা যিশু, মা মেরি ইত্যাদি)। আর বড়দিন উপলক্ষ্যে তো গির্জায় গির্জায় প্রায় ঝুলনের আবহ। বেথলেহেমের আস্তাবলে খড়ের বিছানায় শিশু যীশু। প্রাচ্যদেশ থেকে আসা গুটিকয় জ্ঞানী পুরুষ। খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজ করছে। যদিও সেই মরুদেশে বিরল, কিন্তু ক্রিসমাস বৃক্ষ থেকে ঝরে পড়ে অলীক তুষার। বিহ্বল মা ও জাগতিক পিতা(আসলে তো ঈশ্বরপুত্র!)।
এইটিও মূর্তিপূজকদের মধ্যে একধরণের ভক্তিরস ভরা একাত্মতার সংক্রমণ ঘটিয়েছে বই কি!
এই সবে মিলেই, অতএব বহুশতাব্দী-নিষিদ্ধ গোস্ত মানে বিফ খাওয়া হোক না হোক(ইদ আর বড়দিন যাদের উৎসব… তাদের দুই ধর্মেই যা সিদ্ধ),
সবাইকে জানাই… হ্যাপি উৎসব।