০৪/১০/২০
ধর্ষণ। অর্থাৎ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট। তার আর বিয়ে হবে না। কেননা শাস্ত্রে অক্ষত যোনির বিবাহ বিধান বলা আছে। অহো অতীব চমৎকার। বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ চালু করার সময়ও এই একই কথা উঠেছিলো। সুতরাং বন্ধুগণ নারীর যোনিতেই থাকে তার শুদ্ধতা-পবিত্রতা আর নারীত্ব। নারীমুক্তির সুন্দর অগ্রগতি হচ্ছে।
আসলে এককালে নারীধর্ষণ কথাটারই বিশেষ গুরুত্বই ছিলো না। বিদেশেও। এটা একটা স্বাভাবিক লজ্জা ছিলো। একটা গোপন বেদনার মতো – অবশ্যম্ভাবী রাত্রির মধ্যে উজ্জ্বল হাসির মধ্যে গোপন রাখা হতো। এমনকি ধর্ষিতা নারীর অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভ আইনী পদ্ধতিতে নষ্ট করার অধিকারও ছিলো না। ১৯৭০ সালে আমেরিকার দ্বিতীয় নারীমুক্তি আন্দোলনের সময় এই দাবীগুলো নথিভুক্ত হয়। এবং ধর্ষণ কথাটার বিরুদ্ধে জনসমর্থন গড়ে উঠতে শুরু করে। আমাদের দেশের মুনি ঋষিআর দেবতারা বেশীরভাগই ধর্ষণ স্পেশালিস্ট ছিলেন। সেটা দেবরাজ ইন্দ্রই হোক বা দেবপুরোহিত বৃহস্পতিবাবু! হিসেব মতো পৃথিবীর সবথেকে ধর্ষিত দেশ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা [ভারত? এখানে তো মণীষা বাল্মীকি আদৌ ধর্ষিত হয় না। তাকে ভালবেসে সরকার সৎকার (?) করে দিয়েছে। তাহলে?] একটি মেয়ের – আপনার স্ত্রীর এমনকি একজন দেহপসারিনীরও খদ্দের পছন্দ করার এবং ইচ্ছে অনিচ্ছে প্রকাশ করার অধিকার আছে।
আমাদের এই সব বিষয়ে কিছু ন্যাকা চমচম আদর্শ আছে। আমার লেখা “ধর্মেও আছি জিরাফেও আছি ধর্ষণেও” আমার এক গভীর বন্ধুর বেজায় পছন্দ হয়। ও সেটি ওদের পত্রিকায় ছাপতে মনস্থ করে। ওদের বাকি সব গাম্বাট শিশুখোকা পিতামাতারা বিরোধিতা করে। ওটা নাকি প্রাপ্তবয়স্ক। অথচ টিভিতে উন্মোচিত স্তন বিজ্ঞাপন – ডামি ব্লাউজ ছেঁড়া ধর্ষণ আর চোলিকে পিছে কি আছে – স—ব তারা ঐ সব গ্যাঁদগ্যাঁদে শিশু শিশু ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বসে তারিয়ে তারিয়ে চাখে। অথচ ধর্ম কিভাবে মেয়েদের ভোগ করেছে সেটা সন্তানকে জানাতে গেলেই হিব্রুপটাৎ হয়ে যাচ্ছেন। এখানে সর্বত্র এই অদ্ভুত দ্বিচারিতা কাজ করে। যার ফলে বয়োঃসন্ধিকালের বাচ্চারা তথ্যহীন নারীবিদ্বেষ আর কামনাজালে বাঁধা পড়ে। সৎ হোন। সন্তানকে যৌনশিক্ষা আর সমাজচেতনায় আলোকিত করুন। এবং অবশ্যই নারীর অধিকারটুকু সম্বন্ধে শেখান।
কদিন আগে বিদেশে একজন মহিলা একটি পুরুষকে ধর্ষণ করে শাস্তি পেলেন। হ্যাঁ মশয়। বেশ রসপান্তুয়া খবর, তাই না? একটি মেয়ের আবার যৌন ইচ্ছে থাকতে পারে এবং সে সেটা পূরণ করার চেষ্টা করতে পারে এটা একটা আশ্চর্জি খবর বৈকি। হ্যাঁ সব নারীরই কামনা থাকে – শারীরিক তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। ওরা কেবলমাত্র একজন হোঁদলকাত্তিক স্বামীর পয়সার জন্য বিছানায় যায় না। ওরা বাধ্য হয়। আমাদের শেখানো হয় মেয়েরা কেবল সংসার করবে – বাচ্চা বিয়োবে – ব্যস।
পারলে সিমোন দ্য ব্যোভেয়ারের লেখা সেকেন্ড সেক্স বইটি পড়বেন। কেন এরকম কথা চালু আছে? শারীরিক ক্ষমতার ভিত্তিতে পুরুষ তার অধিকার বজায় রাখতে চায়। এটাকে বিজিগীষা বলতে পারেন। এবং এই ফাঁকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার সোনার মওকা পেয়ে যাচ্ছে। কাজকম্মে প্রতিযোগিতা কমছে। এবং দুর্বল নারীকে ঘরে রেখে অত্যাচারের চূড়ান্ত স্যাডিজম চলছে। তবে হয়তো আজও কোনও গৃহবধূর সত্যজিতের ব্যারিটোন শুনে কাম জেগে ওঠে -কেউ রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে বুড়োর প্রেমে পড়ে যায়। অথবা বিস্রস্তবাস কোনও বধূ “যেমন আছো তেমনি এসো আর করো না সাজ … কাঁকন যদি খসে পড়ে নাইগো তাহে লাজ – মেঘে মগনপূর্ব গগন বেলা নাইরে আজ” পড়ে কলেজের কোনও সহপাঠীর প্রেমে মধ্যরাতের একলা অন্ধকারে সিক্ত হয় – তাহলে?
এমন দিন তো আসতেই পারে যেদিন মেয়েরা বলবে এসো হে পুরুষসিংহ এসো দেখি তোমার পৌরুষ – তৃপ্ত করো আমাকে- এসো তোমাকে ভোগ করি – সেইদিন পুরুষ ভয় পাবে। সেদিন যোনিকেন্দ্রিক নারীত্ব – আর কুমারীপ্রথার বিলোপ হবে। নারী শিখবে জীবনের পাঠ – পাবে উপার্জনের অধিকার । শারীরিক শক্তি বা শারীরিক গঠনের বাইরে গিয়ে তৈরি হবে সমজগতের নবধারণা। তৈরি হবে নারীর যৌন স্বাধীনতার ধারণা।
আমি একজন দাড়িওয়ালা টেকো আধবুড়ো – যার নাকি এই বয়সে ইয়ে খুব বেড়ে যায় তাহলে আমি হঠাৎ এইসব লিখতে বসলাম কেন? আসলে আমার হৃদয় কিডনি রক্তকণিকা চোখ সব কিছুই এক নারীশরীর থেকেই তৈরি হয়েছে – এটা শেষবেলায় তার প্রতি আমার প্রণতি।
Pronam
না । প্রণাম কেবল মা বাবার জন্য তোলা থাক ।
খুব সুন্দর লেখা। অভিনন্দন।
ধন্যবাদ । পুরোটাই তথ্য ।
ধন্যবাদ ।
ভালো লেখা। দারুন ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ