১ ডিসেম্বর। আজ বিশ্ব এডস দিবস। এই দিন পালন করা শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। তারপর ৩৫ বছর অতিক্রান্ত। নদী দিয়ে প্রচুর জল বয়ে গেছে। এডসের কারণে মৃত্যুর খবর আজকাল তেমন শোনাই যায় না। যদিও এক সময়ে তা প্রায় ভয়ংকর মহামারীর মতো আকার ধারণ করেছিল। নিয়মিত চিকিৎসায় থাকলে, ওষুধ খেলে ভাল থাকা যায়। এই অসুখ নিয়ে তাই ভয় পাওয়ার কোনও মানে নেই।
এবারে আসা যাক, আমাদের দেশের এই রোগের পরিসংখ্যানের কথায়। অ্যাডাল্টস এইচ আই ভি প্রিভ্যালেন্স মানে ১৫ থেকে ৪৯ বয়সীদের মধ্যে এইচ আই ভির প্রিভ্যালেন্স কেমন? ভারতে প্রতি দশ হাজারে ২১ জন এই রোগে আক্রান্ত। আশার খবর হল, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এই সংখ্যা যথেষ্ট কম। আমাদের অ্যানুয়াল নিউ ইনফেকশন রেট বা প্রতি বছর নতুন করে এই অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার। দশ বছরের হিসেবে দেখা যায়, প্রায় ৪০% অসুখের হার কমে এসেছে। অন্যদিকে এডস-এর কারণে মৃত্যুর পরিমাণ বছরে ৪২ হাজারের মতো, যা বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় অনেক কম। যদি আমাদের রাজ্যের দিকে তাকাই তার ছবিটাও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। ভারতের এডস আক্রান্তের রাজ্যের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান অনেক নীচের দিকে। এখন ৩০ নম্বরে আছে। এটা সত্যি ভাল দিক।
এ তো গেল আলোর দিকের কথা। এবার আসি অন্ধকার দিকের কথায়। আমরা যদি জানতে পারি, আমাদের খুব পরিচিত, কিংবা দূরের চেনা অথবা যে কেউ এডসে আক্রান্ত তাহলে ধরে নিই সে হয় সমকামী অথবা যৌনকর্মী। সেই ব্যক্তির কোনও নীতিবোধ নেই, যে কারও সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হয়। তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি এবং অন্যদেরও তা করার পরামর্শ দিই। ব্যক্তি মানুষের থেকে অসুখটা তখন বেশি গুরুত্ব পায়। আমরা ভুলে যাই সেই ব্যক্তিও কারও ছেলে, ভাই, স্বামী কিংবা বাবা। তাঁকে সমাজ চ্যুত করলেও অসুখটা থাকে যাবে, বরং কুসংস্কারের অসুখটা আরও বড় আকার ধারণ করবে। আমরা ভুলে যাই শুধু শারীরিক সম্পর্ক নয়, সেলুন কিংবা বিউটিপার্লারের সূচ কিংবা রেজার থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এমার্জেন্সিতে রক্ত নেওয়ার সময় যথেষ্ট পরীক্ষা করার পরে রক্ত দেওয়া বা নেওয়া হলেও এই অসুখ তখন আসতে পারে। থ্যালাসেমিয়া কিংবা যে সব অসুখে প্রায়ই রক্ত নিতে হয় তাদের অনেকেই এইচ আই ভি আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মানুষ হিসেবে ভাল কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে কখনও কখনও ভুলও করতে পারে। আর যৌনকর্মীরা যে এডস আক্রান্ত হন তা কিছুটা পরিস্থিতির কারণে। সমাজ তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বলে সমস্যা হয়।
এ বছরের (২০২৩ এর) এডসের থিম হল রিমেম্বার অ্যান্ড কমিট অর্থাৎ আমরা এই রোগে প্রচুর মানুষকে হারিয়েছি। আমেরিকা কিংবা আফ্রিকার মতো অত পরিমাণ না হলেও আমাদের দেশেও অনেকেই এই রোগে মারা গেছে। শুধু নিজের দেশের নয়, অন্য দেশের বাসিন্দাদের মৃত্যুও আমাদের কাছে সমান দুঃখের। তাই বলা হচ্ছে এই বিশ্ব এডস দিবসে আমরা যেন তাঁদের স্মরণ করি, তাঁরা একদিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন। মনে রাখি তাঁদের পরিবারকে, যাঁরা অকালে আপনজনকে হারিয়েছে। যাঁরা এডসে আক্রান্ত তাঁদের পাশে সহমর্মী হয়ে পাশে দাঁড়ানো, সহানুভুতি দেখানো। তাঁদের বোঝানো যে তুমি যে অসুখে লড়াই করছো সেই যুদ্ধে আমরাও পাশে আছি। সবাই হয়তো এই যুদ্ধে জিততে পারবে না কিন্তু আমরা যদি তাঁদের পাশে দাঁড়াই তাহলে লড়াইটা লড়তে তাঁদের সুবিধা হবে।
তথ্যসূত্র: naco.gov.in
ছবি: Parijit Middya