১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতিষ্ঠিত হল। আজ তার প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকী। তার অনুষ্ঠানিক নাম ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’। প্রতি বছর এই দিন একটি বিষয় বেছে নেওয়া হয়। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের বিষয় হল ‘আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য’। কোভিড-১৯ মহামারী থেকে পরিবেশ-বান্ধব ও স্বাস্থ্যকর পৃথিবীকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার দিকে তাকিয়ে বিষয়টি বাছা হয়েছে। ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও গ্রহের স্বাস্থ্যকে এক সঙ্গে আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রে স্থাপন করা এর ঘোষিত উদ্দেশ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস বলছে, সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার চাই, গ্রাম ও শহরগুলি বাসযোগ্য হতে হবে, অর্থনৈতিক কারণে জলবায়ু ধ্বংস করা চলবে না। যে সব মানুষেরা পরিস্থিতির কারণে দুর্বল, তাঁরা দীর্ঘ, সুখী এবং সমৃদ্ধ জীবন থেকে বঞ্চিত হবেন না।
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে বলছে, এই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে সংস্থাটি “মানব ও গ্রহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপগুলির উপর বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে এবং মঙ্গলময় সমাজ গঠনের জন্য একটি আন্দোলন গড়ে তুলবে।”
প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে ১.৩ কোটিরও বেশি মৃত্যু পরিবেশগত কারণে হয় এবং জলবায়ু সংকট হল একটি স্বাস্থ্য সংকট। তাই নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সত্যিই কিছু করতে পেরেছে? পারবে? আমরা কি সত্যিই এমন বিশ্ব কল্পনা করতে পারি যেখানে সবাই পরিষ্কার বাতাস, জল এবং খাদ্য পাবে? যেখানে অর্থনীতি সবার স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের জন্য চালিত হবে?
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়েবসাইটে জানাচ্ছে, আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তের জন্য জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য সংকট এসেছে। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে ৯০% এরও বেশি মানুষ অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নেয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মশারা আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং দ্রুত রোগ ছড়াচ্ছে। চরম আবহাওয়ার ঘটনা, জমির ক্ষয় এবং জলাভাব মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে এবং তাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। দূষণ এবং প্লাস্টিক আমাদের গভীরতম মহাসাগরের তলদেশ, সর্বোচ্চ পর্বত, এবং আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে তাদের পথ তৈরি করেছে। প্রক্রিয়াজাত, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানীয় বিশ্বব্যাপী স্থূলতা-রোগ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের এক-তৃতীয়াংশ তৈরি করে ক্যান্সার এবং হৃদরোগ বাড়াচ্ছে।
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরবর্তী দশকগুলিতে বিশ্ব জুড়ে আগের চাইতে বেশি হারে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা ও ব্যক্তি মানুষের অধিকার সম্পর্কে একই কথা কিন্তু প্রযোজ্য নয়। একই সময়ে গরীব দেশগুলি গরীবতর হয়েছে, একই দেশের মধ্যে ধনী-গরীব ফারাক বেড়েছে, এবং গত তিন দশকে এই প্রবণতা দ্রুততর হয়েছে। বায়ু দূষণ, রাসায়নিক ও জৈব প্রদূষণ বেড়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন এখন এক বাস্তব ঘটনা। পরিবেশ থেকে জনস্বাস্থ্যের বিপুল ক্ষতিকে আটকানোর জন্য কেবলমাত্র স্বাস্থ্য আর তার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলে চলে না। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার বাইরে যাবার চেষ্টা করতেও পারে না।
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট বলছে, “অর্থনীতির বর্তমান নকশা আয়, সম্পদ এবং ক্ষমতার অসম বণ্টনের দিকে পরিচালিত করে… একটি সুস্বাস্থ্যের অর্থনীতির লক্ষ্য হল মানুষের মঙ্গল, সমতা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব। এই লক্ষ্যগুলি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ, কল্যাণকর বাজেট, সামাজিক সুরক্ষা এবং আইনি ও আর্থিক পদক্ষেপ দ্বারা অর্জন করা যায়… আমাদের গ্রহ এবং মানব স্বাস্থ্যকে ধ্বংসের চক্র ভাঙার জন্য আইনী পদক্ষেপ, কর্পোরেট সংস্কার এবং মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বেছে নেবার জন্য সমর্থন এবং উৎসাহিত করা প্রয়োজন।”
প্রশ্ন হল, বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
.
তথ্যসূত্র
১) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট (https: //www.who.int/campaigns/world-health-day/2022