Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

পাঠ্যপুস্তক যখন ইতিহাস বিকৃতির হাতিয়ার

Oplus_16908288
Suman Kalyan Moulick

Suman Kalyan Moulick

School teacher, Civil Rights activist
My Other Posts
  • November 16, 2025
  • 8:12 am
  • No Comments

সম্প্রতি এনসিইআরটি (ন্যাশানাল কাউন্সিল অফ এডুকেশানাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং) প্রকাশিত অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বই নিয়ে তথ্য বিকৃতি ও একটি বিশেষ মতাদর্শের ইস্তেহার বানানোর অভিযোগ উঠেছে।এই নিয়ে বিতর্ক এতটাই জোরালো হচ্ছে যে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং জম্মু কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় সমাজকর্মী ও ইতিহাস শিক্ষকরা পথে নেমেছেন। বইতে ওড়িশার পাইকা বিদ্রোহের উল্লেখ না থাকায় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। মজার কথা হল ভারতে অমৃতকাল শুরু হওয়ার পর থেকে সিলেবাসে প্রায় বুলডোজার চালিয়ে মধ্যযুগের ইতিহাস থেকে সুলতানি এবং মোগল যুগের কথা বাদ দেওয়া হচ্ছিল। কখনো শিক্ষার্থীদের উপর সিলেবাসের চাপ কমানো, কখনো বা অতিমারী জনিত মানসিক চাপ ছিল অজুহাত। এবার কিন্তু অভিযোগটা শুধু সুলতানি বা মুঘল সাম্রাজ্যের বিষয় নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায় যারা ধর্ম পরিচয়ে হিন্দু, তারাও ইতিহাস পাঠ নিয়ে সরব হয়েছেন। কার ইতিহাস, কোন্ ইতিহাস আমরা পড়ব সে নিয়েও বিস্তর চর্চা হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ভারতে এনসিআরটির সিলেবাস অনুসরণ করে সিবিএসই বোর্ডের সমস্ত স্কুল, সংখ্যাটা অন্তত ৩০,০০০। এছাড়া বিভিন্ন রাজ্য বোর্ডও তাদের সিলেবাস তৈরির সময় এনসিআরটি দ্বারা প্রভাবিত হয়।মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সিবিএসই বোর্ডের সিলেবাসে সোসাল সায়েন্স (সমাজ বিজ্ঞান) বিষয়ের মধ্যে থাকে ইতিহাস, ভূগোল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান।

একথা আমাদের সকলের জানা যে অধিকাংশ ভারতবাসীর সক্রিয় ইতিহাস পাঠের অভিজ্ঞতা কিন্তু স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ। তাই জনসমাজের অতীত চিন্তার গতি নির্দেশে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের ভূমিকা যে অপরিসীম তা শাসকের অজানা নয়। তাই দেখা যায় ক্ষমতার পরিবর্তনের সাথে সাথে ইতিহাস পাঠ্য পুস্তকের বিষয় ও ব্যাখ্যা পরিবর্তিত হয়। আর সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখায় যে বর্তমান শাসকদের ইতিহাস বদলে দেবার আগ্রহ প্রবল। কিছুদিন আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিহাস রচনার প্রশ্নে এক নিদান হেঁকেছিলেন। এই নিদানের মূল কথা হল– “কেউই আমাদের ইতিহাস রচনা করা থেকে আটকাতে পারবে না কারণ আমরা স্বাধীন”। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে নিজেদের নতুন করে স্বাধীন বলার পেছনে যে রাজনীতি রয়েছে, তা আসলে এই ‘নতুন’ ইতিহাসের অনুঘটক। এই নিদানের প্রভাব যে এনসিআরটি প্রণীত পুস্তকে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। আরো বড় কথা হল ইতিহাস বোধ, যুক্তি ও প্রমাণহীন ন্যারেটিভকে কিভাবে সরকারি ক্ষমতাবলে ইতিহাস বলে চালিয়ে দেওয়া যায় তার দুটো উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি। প্রথমটি একজন বিজেপি সাংসদের দাবি মেনে হলদিঘাটের যুদ্ধে রানা প্রতাপকে জয়ী ঘোষণা করা। আরকিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া রানা প্রতাপকে জয়ী ঘোষণা করে ফলক লাগিয়ে দিয়েছে হলদিঘাঁটিতে। দ্বিতীয়টি হল তাজমহল এক শিবমন্দির — এই সংক্রান্ত প্রচারকে জোরদার করা। এই নতুন ইতিহাস যাতে মানুষের মগজে স্থায়ী ভাবে প্রবেশ করতে পারে তার জন্য পরিপূরক হিসাবে আসছে বলিউড থেকে একের পর এক ইতিহাস বিকৃত সিনেমা।

অষ্টম শ্রেনির আলোচ্য বইটির নাম “এক্সপ্লোরিং সোসাইটি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড দি বিয়ন্ড”। ২০১৪ পরবর্তী সময় থেকে ভারতে মধ্যযুগের ইতিহাসে সুলতানি ও মোগল যুগের ইতিহাসকে নেহাৎই পাদটীকায় পরিণত করার যে ধর্মযুদ্ধ এনসিআরটি শুরু করেছিল, এ বইতে তা সম্পূর্ণ হয়েছে। সুলতানি ও মুঘল শাসকদের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্থাপত্যবিদ্যায় যে অবিস্মরণীয় অবদান, তাকে কার্যত মুছে ফেলা হয়েছে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল মোগল শাসকদের মূল্যায়ণের পদ্ধতি। আকবরের ধর্মনীতি ও সহিষ্ণুতা আজকের শাসকের কখনোই স্বীকার করেন না। তাই আকবরকে বলা হয়েছে সহিষ্ণুতা ও নৃশংসতার সংমিশ্রণ। বাবর নিছক নৃশংস বিজেতা এবং আওরঙ্গজেব এক ভয়ঙ্কর ধ্বংসকারী। আর পরিপ্রেক্ষিতহীন, বিকৃত মূল্যায়ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ঘৃনার সঞ্চার করবে, তা জেনেই এক বিধিসন্মত সতর্কীকরণ দেওয়া হয়েছে। এই চরম হাস্যকর সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে যে পূর্বের সেই হিংসা ও নৃশংসতার জন্য বর্তমানে কোন সম্প্রদায়কে দায়ী করা উচিত হবে না।

অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল মারাঠাদের জন্য ২২ পাতা বরাদ্দ। মারাঠারা বেশিরভাগ সময় এক আঞ্চলিক শক্তি ছিল, এই ইতিহাসকে এই বইতে ভুলিয়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্য যথেচ্ছ তথ্য বিকৃতি করা হয়েছে। হিন্দুদের রক্ষাকর্তা হিসাবে মারাঠা সাম্রাজ্যকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মারাঠা নায়করা যে দাক্ষিণাত্যে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন সুলতান ও মুঘলদের অধীনে রাজকর্মচারী হিসাবে কাজ করেছেন, এই ইতিহাসকে বলা হয়নি। অথচ শিবাজির বাবা শাহজী ভোঁসলে ছিলেন বিজাপুরের সুলতানের অধীনে সুবেদার। ইতিহাসবিদরা দেখিয়েছেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে ৯৬ জন মারাঠা মনসবদার ছিলেন, যার মধ্যে ১২ জন পাঁচ হাজারি মনসবদার। একথারও উল্লেখ নেই যে মারাঠা সাম্রাজ্য বেশিরভাগ সময় ছিল এক শিথিল কনফেডারেশন যেখানে সিন্ধিয়া, হোলকার, গাইকোয়ার, ভোঁসলেরা প্রায় স্বাধীন ছিল ও তাদের মধ্যে তীব্র অন্তঃবিরোধে মারাঠা সাম্রাজ্যের স্বল্প সময়ের মধ্যে পতন ঘটে। মারাঠা সাম্রাজ্যকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে শিবাজিকে ভারতে নৌবাহিনীর জনক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসে একথা সাক্ষ্য প্রমাণ সহ উল্লেখ আছে যে ভারতে প্রথম নৌশক্তি গড়ে ওঠে চোল সম্রাট রাজেন্দ্র চোলের উদ্যোগে। ইতিহাসবিদরা দেখিয়েছেন কিভাবে চোলদের দাপটে বঙ্গোপসাগর এক হ্রদে পরিণত হয়েছিল। একই ভাবে বাংলায় মারাঠা বর্গীদের নৃশংস আক্রমণ, খুন, ধর্ষণ ও লুঠের উল্লেখ নেই। এনসিআরটি ইতিহাসের পরম্পরা বজায় রাখতে বাবরকে নৃশংস, ক্রুর বিজয়ী আখ্যা দিতে পারে কিন্তু সেই একই যুক্তি লুঠেরা মারাঠাদের উপর প্রযুক্ত হয় না। আসলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ যে ব্রাহ্মন্যবাদী মতাদর্শকে আদর্শ মানে তার উৎস হল ব্রাহ্মণ প্রতিপালক পেশোয়াতন্ত্র। এই ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের ধারক ও বাহক পেশোয়াতন্ত্র ছিল বর্ণবিদ্বেষী। জ্যোতিবা ফুলে তার একাধিক রচনায় এই মতাদর্শের বিরোধিতা করেছেন। এই পিতৃতান্ত্রিক মারাঠাতন্ত্রকে আদর্শ ভারত হিসাবে চালাবার সংঘ অ্যাজেন্ডাকে রুপায়িত করছে এই বই। বলিউডের সাম্প্রতিক মারাঠাদের কল্পনা মিশ্রিত চারটে সিনেমা বাজীরাও মস্তানি, পানিপথ, তানাজী এবং ছাবা যে মারাঠা গরিমাকে প্রকাশ করে, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পাঠ্যপুস্তকও সেই অনৈতিহাসিক ধারাকেই অনুসরণ করছে। সবচেয়ে দেখার মত বিষয় হল মারাঠাদের জন্য বাইশ পাতা বরাদ্দ হলেও হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস রচনার আরেকটি উপাদান রাজপুতদের জন্য আলোচ্য বইতে মাত্র দুটি পাতা বরাদ্দ। তোমর, চৌহান, সোলাঙ্কি, প্রতিহার, চান্ডেলারাও বইতে উল্লেখিত হয়েছে মাত্র। এর কারণটাও রাজনৈতিক। সংঘ পরিবারের অন্যতম তাত্ত্বিক ও সরসংঘচালক এম এস গোলওয়ারকর তার ‘বিচার নবনীত’ গ্রন্থে রাজপুতদের ঐতিহ্যকে ‘দুর্বলতা’ ও ‘এক গলত্ আউর আত্মঘাতী আকাঙ্খা কি প্রতীক’ বলেছেন। হিন্দুত্বের রাজনীতির প্রচারকদের এই রাজপুত বিয়োজন আসলে মারাঠা শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পরিকল্পনারই অংশ।

ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশে মাইসোর রাজ্যের হায়দার আলি (১৭৬১-১৭৮২) এবং টিপু সুলতানের (১৭৮২-১৭৯৯) গৌরমময় ভূমিকাও অনুল্লেখিত। অথচ ব্রিটিশরা তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহীশূরের সঙ্গে চারবার যুদ্ধ করে। টিপুর বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ ও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন জায়গা পায় না পাঠ্যপুস্তকে। একইভাবে বাদ পড়ে যায় মহাবিদ্রোহের বহু আগে ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ওড়িশায় সংগঠিত পাইকা বিদ্রোহ (১৮১৭)। তবে নবীন পট্টনায়কের প্রতিবাদের পর এনসিআরটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিষয়টা পরবর্তীতে যুক্ত করার। পলাশী যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনায় মীরজাফরকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দেওয়া হয়েছে কিন্তু মুর্শিদাবাদের দরবার রাজনীতিতে ব্রিটিশদের হয়ে চক্রান্তের শরিক রায়বল্লভ জগৎশেঠ, উমিচাঁদের বিশ্বাসঘাতকতার উল্লেখ নেই। এই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইতিহাসের সংযোজন ও বিয়োজন শুধু অষ্টম শ্রেণির বইতেই ঘটছে, বিষয়টা এমন নয়। এর আগে সপ্তম শ্রেণির বইতে মুঘল সম্রাটদের কীর্তির তালিকা বই থেকে সটান বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুঘলক, খলজি, মামেলুক, লোদি প্রভৃতি সুলতানি শাসনের বিভিন্ন বংশের ইতিহাস বাতিল হয়েছে। যুক্ত হয়েছে ভারতভূমির পবিত্রতার আখ্যানের জন্য চারধাম যাত্রা, বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ, শক্তিপীঠ, এমনকি কুম্ভমেলাকে যুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বইতে হিন্দু সমাজের অভিশাপ বর্ণপ্রথাকে বলা হয়েছে গণতান্ত্রিক সমাজের অংশ যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে ভুল ভাবে প্রযুক্ত হয়। জওহরলাল নেহেরু ও ইসলাম সম্পর্কে আলোচনাতেও যথারীতি কাঁটছাট করা হয়েছে। এই গোটা বিষয়টাই হচ্ছে এক বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্কুল শিক্ষার হাল-হকিকত নিয়ে আলোচনার জন্য তৈরি হয়েছিল এনসিআরটি। গোটা দেশের জন্য এক নির্দিষ্ট পাঠক্রম আর আদর্শ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণ করা ছিল তার লক্ষ্য। সিবিএসই বোর্ড সংখ্যায় কম হলেও এবং রাজ্য বোর্ডগুলোর নিজের বই থাকা সত্বেও একথা অনস্বীকার্য যে ভারতের অতীত কীভাবে ছোটদের পড়ানো হবে, তার একটা রূপরেখা এই বইগুলো তৈরি করে দিতে পেরেছিল। প্রথম পর্বে এই বই লেখার সূচনা হয় ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের হাতে, পরে এই প্রকল্পে যোগ দেন নুরুল হাসান, সতীশ চন্দ্র, রামশরণ শর্মা, বিপান চন্দ্র, অর্জুন দেবের মত প্রথিতযশা ঐতিহাসিকরা। ভারতের অতীত ব্যাখ্যার ঔপনিবেশিক যুক্তিকাঠামো, ধর্মের ভিত্তিতে কালবিভাজন পরিহার করে জোর দেওয়া হল যৌক্তিক, তথ্য নির্ভর ইতিহাস ব্যাখ্যার উপর। নায়ক-খলনায়কের সাদা- কালো দ্বন্দ্বের বদলে স্থান পেল অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ। বিতর্ক সেদিনও ছিল। ছিল অঞ্চল ও কেন্দ্রের টানাপোড়েন। রাজ্য বোর্ডের বইগুলোতে নিজ নিজ অঞ্চলের ইতিহাস বেশি থাকলেও এনসিআরটির কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল জাতীয় ইতিহাস রচনার। কিন্তু ১৯৯৯ সালে এনডিএ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে প্রথমবার চার দশকের পুরানো বইগুলোকে বাতিল করে নতুন একগুচ্ছ বই লেখা হয়। সেই সময় প্রথম বলা হয় নতুন ইতিহাস রচনার ভরকেন্দ্রে থাকবে হিন্দু জাতীয়তাবাদ। তখনই শুরু হয় পুরানো বইগুলোর রচয়িতাদের দেশদ্রোহী, কমিউনিস্ট, হিন্দু বিরোধী বলে দাগানো। ২০০৪ খ্রীস্টাব্দে ইউএপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার নতুন করে পাঠ্যপুস্তক লেখার কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার এসে প্রথমেই ঘোষণা করেন যে এতদিন চলে আসা ইতিহাস অভারতীয়, শুরু হয় সংঘ নির্ধারিত মতাদর্শ মেনে ইতিহাস রচনা। একথা সবাই স্বীকার করেন যে ইতিহাস কোন জড়ভড়ত বিষয় নয়, নতুন তথ্য ও সূত্রের আলোকে অতীত আলোচনা নানান ভাবে সংশোধিত হয়। কিন্তু ইতিহাস নিছক কল্পনা নয়, তার একটা আলোচনা পদ্ধতি রয়েছে, রয়েছে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের নিরন্তর সংলাপ। বিশেষ করে স্কুল পাঠ্য ইতিহাস বইতে অতীত নির্মানের জন্য পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবই ও শিক্ষাপদ্ধতি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তাই এই ইতিহাস বই রচয়িতাদের দায় ও দায়িত্ব অনেক বেশি।

ইতিহাসের কোন ছাত্রেরই একথা অজানা নয় যে জ্ঞান চর্চার যে কোন শাখার মত ইতিহাস হল সত্যের খোঁজ। পক্ষপাত তা ধর্মীয়, জাতিগত, আঞ্চলিক বা জাতীয় — যাই হোক না কেন, সর্বদা পরিত্যাজ্য। প্রত্যেকটি জাতির ইতিহাস আসলে বিশ্ব ইতিহাসের অংশ। তাই নিজের দেশের ইতিহাস লেখার নামে, এক পক্ষীয় প্রমাণের উপর ভর দিয়ে অপরের উপর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নেহাৎই এক অবাস্তব প্রকল্প। কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি ও তাদের মার্গদর্শক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ যে নতুন ভারত ইতিহাস রচনা করতে চায় তাকে ইতিহাস চর্চার কষ্টিপাথরে প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। আর্যজাতির ইতিহাস হোক বা সরস্বতী নদী কেন্দ্রিক সভ্যতা বা গোমাতা নির্ভর ঋকবৈদিক ভারত– সব ক্ষেত্রেই কষ্ট কল্পনা তাদের একমাত্র আশ্রয়। যেহেতু হিন্দু- মুসলিম বিরোধ ১৯২৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জন্মের সময় থেকে তার বিস্তারের অন্যতম শর্ত তাই তারা মধ্যযুগের ইতিহাসকে এমনভাবে দেখাতে চায় যা সংঘ প্রতিষ্ঠাতা হেডগাওয়ারের ‘যবন সর্পের হিসহিস’ ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এজন্য মুসলমান শাসক মাত্রেই অত্যাচারী, অধঃপতিত, ধ্বংসকারী, নৃশংস। কিন্তু মধ্যযুগকে অন্ধকার যুগ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা ধোপে টেকে না। মধ্যযুগেই হিন্দু ধর্মতত্ত্ব, জ্ঞান – বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি। সায়নের ঋকবেদ ভাষ্য, কুলুকার সমাজবিধি, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় একাধিক সাহিত্য রচনা, ভক্তিবাদী আন্দোলন, তুলসিদাসের রামচরিতমানস, হিন্দুস্তানী ধ্রুপদী সংগীত, কর্নাটক সঙ্গীত, নতুন স্থাপত্য রীতি– সবই মধ্যযুগের ফসল। বিদেশে জনপ্রিয় ভারতের দুটো অভিজ্ঞান তাজমহল ও লালকেল্লাও মধ্যযুগের ফসল। তাই আজ সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নামকরণ করে বা ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন ভারতের গৌরবগাথা রচনা করা হচ্ছে, তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দুর্ভাগ্য হল এনসিআরটির মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও আজএই বিকৃতির শরিক।

PrevPreviousআহমদ রফিক: নিভে গেল বাঙালি-বিবেকের উজ্জ্বল প্রদীপ!
Nextআমাদের পয়সায় সুপ্রিমে পাড়বে সে ডিমNext
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

পা মিলিয়ে পথ চলা: গণস্বাস্থ্য আন্দোলন এবং ডঃ পুণ্যব্রত গুণ

November 18, 2025 No Comments

“চাই এক শোষণ মুক্ত জগৎ। চাই সবার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ও শিক্ষা। চাই সবার জন্য স্বাস্থ্য। জানি আমি চাইলেই এসব কিছু হওয়ার নয়। হতে

নিয়মিত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেলে কী সর্দি কাশি কম হয়?

November 18, 2025 No Comments

স্বাস্থ্যের সত্যি মিথ্যে ১৪ নিয়মিত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেলে কী সর্দি কাশি কম হয়? সাধারণ সর্দি কাশির চিকিৎসায় কি ভিটামিন সি ব্যবহার করা উচিৎ? উত্তরঃ

যে পাঁচটি খাবার খেলে ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়

November 18, 2025 No Comments

“রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া কবি – বামপন্থীদের গালাগালি একটি ফ্যাক্ট চেক”

November 17, 2025 No Comments

বামপন্থীরা (বা কমিউনিস্টরা) রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া বলে গালাগালি করেছিল – দক্ষিণপন্থীদের দ্বারা এই বহুল প্রচারিত কুৎসা নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন। প্রথম কথা এটি একটি অর্থ সত্য

এ কোন ‘বাংলা’?

November 17, 2025 No Comments

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জেল থেকে ঘর ওয়াপসি ঘটলো। জেল থেকেই উনি বেসরকারি ঝাঁ চকচকে নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেই নার্সিং হোমের দরজা দিয়ে

সাম্প্রতিক পোস্ট

পা মিলিয়ে পথ চলা: গণস্বাস্থ্য আন্দোলন এবং ডঃ পুণ্যব্রত গুণ

Gopa Mukherjee November 18, 2025

নিয়মিত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেলে কী সর্দি কাশি কম হয়?

Dr. Aindril Bhowmik November 18, 2025

যে পাঁচটি খাবার খেলে ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়

Dr. Kanchan Mukherjee November 18, 2025

“রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া কবি – বামপন্থীদের গালাগালি একটি ফ্যাক্ট চেক”

Dr. Samudra Sengupta November 17, 2025

এ কোন ‘বাংলা’?

Sukalyan Bhattacharya November 17, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

590873
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]