আমরা অনেকেই যা আশঙ্কা করছিলাম, সেটাই হচ্ছে বারবার। আরও বাড়বে।
আর জি কর কাণ্ডের পর অপরাধীদের আড়াল করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে রাজ্য প্রশাসন সব সম্ভাব্য অপরাধীদের মনে সাহস জুগিয়েছেন। সবাই জেনেছে যে অপরাধ যতই গুরুতর হোক, বড় মাথাদের আড়াল করা হবে যদি তারা ক্ষমতা-কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যত বড় আন্দোলনই হোক না কেন, সঠিক যোগাযোগ থাকলে শাস্তি পেতে হবে না। এখন পর্যন্ত অভয়া আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ক্রমাগত প্রশাসনিক উদ্যোগে হেনস্থা করে সেই বার্তাকেই জোরদার করা হচ্ছে। কয়েকজন দুর্বলতর শ্রেণীর অপরাধীকে কঠিন শাস্তির নিদান শুনিয়ে এতবড় বার্তাটিকে মুছে দেওয়া যাবে না। ক্ষমতার অপরাধীরা জেনে গেছে যে তারা যা ইচ্ছে করতে পারে।
তার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি কখনো বালিগঞ্জের আইন কলেজে, কখনো দুর্গাপুরের মেডিকেল কলেজে৷ সাম্প্রতিক ঘটনাটির ভিক্টিম যেহেতু ওড়িশার, এতে রাজ্যের সম্মান সরাসরি জড়িত এবং জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে, তাই প্রশাসন হয়ত এক্ষেত্রে সদর্থক পদক্ষেপ করবে৷ অন্তত এখন পর্যন্ত রাজ্যের পুলিশ অপরাধের অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি। অপরাধীরা অতি ক্ষমতাধর না হলে সুবিচারের সম্ভাবনা বাড়বে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার আপনার জীবন নিরাপদ নয়, কারণ কিছুটা রাজনৈতিক যোগাযোগসম্পন্ন বা পয়সাওয়ালা সব অপরাধীই ভাবতে শিখে গেছে যে তারা যা ইচ্ছে করতে পারে। এমনকি ছোট অঞ্চলের চুনোপুঁটি মস্তানদের মধ্যেও এই বিশ্বাস জন্মেছে। তাদের কেউ কেউ হয়ত শেষ অব্দি শাস্তি পাবে, কারণ আসলে তারা অতটা ক্ষমতাধর নয়, কিন্তু শাস্তির আগের দিন অব্দি নিজেদের অজেয় ভাবতে থাকবে, কারণ সেটা ভাবতে তাদের শেখানো হয়েছে ২০২৪-এ। সেই ভাবনার বশবর্তী
হয়ে অপরাধগুলো তারা করে ফেলবে, কারণ উদাহরণমূলক ডেটারান্ট অনুপস্থিত, বরং বিপরীত উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে।
একটা অপরাধকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে আইনের শাসনের যে ক্ষতি করা হল, তা মেরামত করতে বহু বছর লাগবে। শুধু আমরা ভুগছি না, পুলিশ প্রশাসনের অন্দরমহলের অভিমত এই যে তাঁদেরও ভুগতে হচ্ছে এই কারণে।