Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

সূর্যোদয়

IMG_20240527_000547
Dr. Shyamal Kumar Mondal

Dr. Shyamal Kumar Mondal

Pediatrician
My Other Posts
  • May 27, 2024
  • 12:06 am
  • No Comments

কোশিনিকির দুই চোখের পাতা ধীরে ধীরে নেমে এলো। সাদা বিছানার উপরে একটা পাতলা বালিশ দিয়ে শরীরের উপরের অংশ কিছুটা উঁচু করা ছিলো। উর্দ্ধাংশটা ঢলে পড়া মাথার সাথে বাম দিকে কাৎ হয়ে পড়ল। শীর্ণকায় কঙ্কাল সম মুখাবয়বে একটা চির প্রশান্তি যেন তরঙ্গায়িত হল।

ইয়াশিকি একটু ঝুঁকে বললো, – গুডবাই ফ্রেন্ড।

তার পাশে তাইকুশি, হাইকু ও বিপিন বসেছিলো।

– সায়োনারা। সায়োনারা।

সবাই চিরবিদায় জানাল। শুধু বিপিনের মুখ থেকে বেরিয়ে এল, ‘হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ’।

এখন সকাল দশটা বাজে বাইরে ঘন মেঘ আষ্টেপৃষ্টে ছেয়ে আছে এই খাঁড়ি শহর সাকাই-কে।

বিছানার পাশে একটা সংকেত ঘন্টার রিমোট কন্ট্রোল ছিলো। একজন কাঁপা কাঁপা হাতে সুইচ টিপলেন। এক মিনিটের মধ্যে হালকা গোলাপি পোশাকের এক তরুণী এসে পাশে দাঁড়াল । কিন্তু সে শুধু মাথা নীচু করে নিমীলিত চোখের কোশিনিকি-কে দেখলো । কোন অস্থিরতা নেই তার উপস্থিতিতে। কোন তৎপরতা নেই। মৃত্যুপথগামী জীবনকে আরো কয়েক মুহুর্ত দীর্ঘায়িত করার প্রয়াস নেই তার মধ্যে।

এই ঘরের বাকি বোর্ডাররা যে যার বিছানায় চলে গেল। কোন দ্বিতীয় শব্দ উচ্চারণ করল না। ডাক্তার এলেন একটু পরে এবং তারপর কোশিনিকির নিথর দেহ সরিয়ে নেয়া হলো।

ওসাকা দ্বীপের এই মনোমুগ্ধকর খাঁড়ি বন্দর সাকাই-য়ের প্রত্যন্ত অংশে আয়োজিত সভায় পৌর চেয়ারম্যান মাত্র কয়েকটি শব্দমালা উচ্চারণ করলেন। – কোশিনিকি আমাদের হিরো, সম্পদ। উনি চলে গেলেন। দীর্ঘ একশো দশ বছর এই উদীয়মান সূর্যের দেশকে সেবা করেছেন। উই স্যালুট হিম।

কোন শব্দ নয়, কোন হাততালি নয়। উপস্থিত কুড়ি বাইশজন অতিবৃদ্ধ মানুষ আর কয়েকজন নিকট আত্মীয় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তার মধ্যে কয়েকজন বৃদ্ধ নারীও আছেন,তারা লাঠি ভর করে উঠে দাঁড়ালেন। সবাই নীরবতা পালন করলেন এক মিনিট।

তারপর উঠলো ন্যাশনাল লাইব্রেরির এক তরুনী, তাইমিচি। একটা প্রজেক্টার মেশিন অন করে সাদা দেওয়ালে আলো ফেললো । আজ কোশিনিকির ওবিচুয়ারি বা মৃত্যুর পরের শোক ও স্মরণ সভা । তার দীর্ঘ জীবনের গাথা বর্নিত হবে ডিজিটাল মাধ্যমে।

সন আঠেরোশ অষ্টআশি এক চাষীর ঘরে জন্ম কোশিনিকির ।

বাবা মা চাষ করে বাড়ির সামনে জমিতে। তাল পাতার গোল ছাতার নীচে মাথা বাঁচিয়ে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে দুই সন্তানকে বড় করে। কোশিনিকি বড় সে ও চাষে হাত লাগায়।

তখন মেইজি রাজত্বের শেষে তাইশো যুগের শুরু। কোশিনিকির বয়স মাত্র বারো বছর। স্কুলে পড়াশুনার সাথে গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলে।

এর কিছুদিন পর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তাইশো সরকার আমেরিকা ও ব্রিটিশদের সাথে মিত্রশক্তি হিসেবে যোগ দেয়। যুদ্ধ চলে চার পাঁচ বছর। হানাহানি রক্তারক্তি আর বহু জীবনাবসানের পর সেই মহাযুদ্ধের অবসান হয় স্প্যানিশ ফ্লু-র মহামারী দিয়ে। মিত্রশক্তির বিপক্ষে মহাশক্তিধর জার্মান।

প্যারিসের এক গন্ড গ্রামের মিলিটারি তাঁবুতে পরিচয় হয় বিপিন বন্দোপাধ্যায়ের সাথে কোশিনিকির। একই টেন্টে দুইটি মাত্র ছোট বিছানা । কফির মগ হাতে বিপিন ভাঙা ইংরেজিতে বললো, – তুমি জাপান আমি ইন্ডিয়া ভারত।

– ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া!

কপালে ফেট্টি বাঁধা কোশিনিকি কফিতে চুমুক দিয়ে হাত পা নেড়ে বোঝালো বিপিনকে। তারা কথায় দড় নয় তবুও আলাপচারিতা চলে। শব্দ আর ঈঙ্গিতে।

কোশিনিকি বলে, তার বাবা রাজি হয়নি তাকে যুদ্ধে পাঠাতে। তবে পেটের দায়ে সে এসেছে । জল-জাহাজের যুদ্ধে সে শিপ রেক-এ ( ভেঙে পড়া জাহাজ) জলে পড়ে যায় প্যারিসের কাছে এক পোর্টে । কোন রকমে উদ্ধার করে তাঁকে এই অস্থায়ী হাসপাতালের জিম্মায় দিয়েছে অ্যালায়েড বা মিত্র শক্তি। এর বেশি সে কিছু জানে না। এখন ভালো আছে, পরের সপ্তাহে ছুটি পাবে ।

বিপিন তার কথা ভাঙা ইংরাজি হিন্দি বাংলা আর হাত পা নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো ।

বরিশাল থেকে কলকাতা। তখন বঙ্গ ভঙ্গ দেশে লাগু হয়ে গেছে। তবে বিদ্রোহের আগুন ধিকি ধিকি করে লোকচক্ষুর অন্তরালে স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠছে। পূর্ব বাংলার বর্ডার পেরিয়ে রাজধানী শহর কলকাতা। জুটে গেলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে। গোপন ঘাঁটিতে ধরা পড়লেো । অন্ধকার সেলে কাটালো । তারপর সর্তসাপেক্ষ ছাড়া পেয়ে রেঙ্গুন পাঠিয়ে দেয়া হলো তাকে ।

রেঙ্গুনে পেটের দায়ে বৃটিশ সেনা বাহিনীতে যোগদান। বৃটিশ অধিকৃত ভারত সরকার যুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির সাথে যোগ দিলো। আর বিপিনের যাত্রা হলো ফরাসি দেশে । তবে সে ঠিক সম্মুখ যুদ্ধে নয়। সে গিয়ে ছিলো বাহিনীর কুক বা রান্নী হিসাবে । বিপক্ষের গোলা গুলি কি আর বেছে বেছে চাঁদমারি করে? ফিল্ড কিচেনে গোলা এসে পড়ে আর তার ফলস্বরূপ এক শীতের রাতে শরীরে আগুনের দ্বারা ক্ষত নিয়ে বিপিন এই অস্থায়ি হাসপাতালে ভর্তি।

বিশ্রাম ও চিকিৎসায় দু’জনেই মোটামুটি সুস্থ। পায়ে হাঁটার শক্তি আছে। এবার বেঁচে ফিরবে তবে পরের বার কি হবে জানা নেই।

পাশের টেন্টে একজন বৃটিশ সোলজার শরীরে বেশ অনেকগুলো গভীর ক্ষত এবং ভগ্ন অস্থি নিয়ে ভর্তি আছে তবে জ্ঞান লোপ পায়নি। সে রেডিওতে খবর শোনে। কোশিনিকি ও বিপিন তার কাছে যায়। তাকে সেবা ও সাহায্য করতে। তাই ভাষা পুরোপুরি না বুঝলেও সে যে অনেক কথা বলে তার দেশের, বিগ বেন-এর কথা বলে, শ্যেন নদীর কথা বলে, রাজ বাড়ির কথা বলে। তাদের মনোরম কাউন্টি ওয়েদারের কথা বলে। কোশিনিকি ও বিপিন মন দিয়ে শোনে। তারা দু’জনাই একটু ভাবুক প্রকৃতির।

আজ সন্ধ্যায় তিনজনে এক টেন্টে আছে। বৃটিশ সোলজারের টেন্টে বিছানা একটি। সে মাথার দিকে উঁচু করা বিছানায় শুয়ে আছে। দু’পায়ে ব্যান্ডেজ আর তার পা কাঠের তক্তায় সাপোর্ট দেয়া।

– গুড নিউজ ফ্রেন্ডস। ইনডিড আ গুড নিউজ।

যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ জয় ছাড়া আর গুড নিউজ কি হতে পারে ? কোশিনিকি ও বিপিন খুব খুশি হলো না। এই যুদ্ধে তাদের কোন লাভ নেই। তারা একটা কাজের খোঁজে এসেছে। যুদ্ধ মিটে গেলে, বেঁচে থাকলে ফিরে যাবে নিজের দেশে। কিছু পয়সা হাতে থাকলে চাষ করবে বা ব্যবসা শুরু করে।

সবে মেইজি রাজত্ব শেষ হয়েছে। বহির্বিশ্বে জাপান এখন শক্তিধর দেশ। তাইশো রাজ চলছে।

চিনের ওপর অবশ্যই আধিপত্য কায়েম আর তার সাথে বিশ্বে নিজের শক্তি জাহির করতে মিত্রশক্তির সাথে হাত মেলায় জাপানের তাইশো সরকার। রাজা তাইশো নিজে অবশ্য উদ্যোগহীন রাজপ্রতিনিধি ছিলেন। অসুস্থও ছিলেন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তার বিশেষ ছিলো না। অথচ শিল্প ও কারিগরী ক্ষেত্রে জাপানের উর্ধগতি মেইজি যুগে শুরু হয়ে তার সময়ে আরো আরো উন্নত হয় । তাদের রাজকীয় নৌবাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরে জার্মান, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির নৌবাহিনীকে মোকাবিলা করতে চায়। চিনা সীমানা করায়ত্ত করতে নৌবাহিনী জোরদার করে আর নতুন তরুন বাহিনীর সৃষ্টি করে। কোশিনিকি বাহিনীতে রাডার টেকনোলজিস্ট হিসাবে জয়েন করে । তাঁর একটা ট্রেনিং নেয়া ছিলো স্কুল পাশের পর।

তখন নৌ চলাচল ও বানিজ্য পথের সীমানা দখলদারি নেওয়া বানিজ্যে উন্নতির একটা বড় হাতিয়ার ছিলো। চীনা ক্ষেত্রে পশ্চিমী দেশগুলোর অনেক বেশি ছিলো বানিজ্যে আধিপত্য । জাপান ঘরের পাশের এই বাজার ধরতে মরিয়া ছিলো।

পূুূর্বাঞ্চলে জার্মানির জল পথের আধিপত্য ভাঙতে অ্যাংলো- জাপান জলসেনা বাহিনী গঠন করে জাপান ও বৃটিশ সরকার , যেখানে মোট সৈন্য সংখ্যা ছিলো পঁচিশ হাজার । জাপানের নিজস্ব সেনা ছিলো তেইশ হাজারের মতো। সেই বাহিনীর একজন কোনিশিকি।

দুজনে সুখের খবর শুনতে চাইলো।

– হোয়াটস দি নিউজ স্যার?

কোশিনিকির থেকে বিপিন ইংরেজিতে একটু সাবলীল ছিলো। একটু বুঝতে পারতো আর অল্প অল্প বলতে পারতো।
সাহেব যা বললো তা তর্জমা করলে দাঁড়ায়।

এখন যুদ্ধের কাজ কিছু লঘু আছে। কিছু সৈনিক চাইলে সিভিল জীবনে ফেরৎ যেতে পারে। তারা কিছু ইনসেনটিভও পাবে।

খবরে কোশিনিকির আনন্দ পাওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিলো। সে হোম সিক বা বাড়ির জন্য কাতর হয়ে পড়ে ছিলো।
সাত দিনের সিজারে জাপানি নৌ-সেনা জার্মানকে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করেছে। তাই জয় কিছুটা তরান্বিত হয়েছে। তাই এই মহাসুযোগ।

সে প্রায় উর্ধবাহু হয়ে নৃত্য করতে শুরু করলো। হয়তো বিপিনেরও খুশি হওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু তাকে গ্রাস করলো অন্ন চিন্তা। সে রেঙ্গুনে গিয়ে কি করবে ? যদি দেশে ফেরে সেখানে গিয়েই বা কি করবে?
সাহেব অবিচল দেশাত্মবোধে এখনও এক পায়ে খাড়া।

– সো ফ্রেন্ডস গুড বাই এন্ড এনজয় ইয়োর সিভিল লাইফ। আমাকে ফাইট করতে হবে। ফর মাই ল্যান্ড, ফর আওয়ার কুইন।

তাঁবুতে বসে দুই প্রাচ্য সৈনিক সলা করতে বসলো ।- চিয়ারস্ ।

কোশিনিকি উৎফুল্ল। – নো চিয়ার। নো স্যালারি নো ফুড নো ল্যান্ড। হোয়াট টু ডু?

কোশিনিকি তার সহযোদ্ধা বিপিনের সমস্যা অনুধাবন করার চেষ্টা করলেন।

– নিপন নিপন। ডু লাইক জাপান? গো ঊইথ মি?

তারপর ফিস ফিস করে দুই জনে যে সলা পরামর্শ করলেন তার সারমর্ম হলো হাসপাতালের রিলিজের সময় বিপিন একটু ভান করবে যেন সে কিছু মনে করতে পারছে না।তার স্মৃতিভ্রম হয়েছে । তার মনে পড়ছে না বাড়ির কথা, না দেশের কথা। অথচ সে বাড়ি যেতে চায়। তখন কোশিনিকি প্রস্তাব দেবে সে কিছু দিনের জন্য বন্ধুর সেবা করবে এবং সুস্থ হলে তাকে রেঙ্গুনের জাহাজে তুলে দেবে।

ডাক্তারদের টিম তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করলো। মতামত দিলো। – মে বি অ্যাকিউট শক সিনড্রোম। মে টেক উইকস অর মান্থস টু রিগেইন নর্মাল মেমারি । এটা বাহিনীর পক্ষেও বোঝা।

তারা লুফে নিলো কোনিশিকির প্রস্তাব। কাগজপত্র তৈরি, হলো সেভাবে।ওয়ার সাফারার, যুদ্ধের ভিকটিম। নিডস অ্যাবসোলিউট রেষ্ট ইন সাইকোপ্রোটেকটিভ এনভায়রনমেন্ট।

এরপর আর সময় নষ্ট করেনি দুই বান্দা। অফিস থেকে তাদের পাওনা গন্ডা বুঝে নিয়ে সুখবর প্রদানকারী সাহেবকে শেষ বারের মতো বিদায় জানিয়ে মিলিটারি ট্রাকে করে বন্দরের দিকে এগিয়ে গেলো।

ঠাসা ঠাসি করে যুদ্ধের কাজে লাগা নৌবানীর কার্গোতে কোন রকমে ডেকে ঠাঁই পেলো কোশিনিকি ও বিপিন। বিপিন হাভানা চুড়ুটের একটা প্যাকেট পেয়েছিলো ক্যাম্পের ক্যান্টিন থেকে। তার একটা ধরিয়ে আর একটা কোশিনিকির দিকে এগিয়ে দিলো।

– নো নো নো স্মোকিং। উই নো স্মোকিং ফ্রেন্ড। আমরা স্মোক লাইক করি না।

– ওঃ সরি তাহলে আমিও করব না।

ভাষার দূরত্ব রইল যেমন থাকে। কিন্তু দু’জন মানুষের কাছা কাছি আসতে খুব সময় লাগলো না। যুদ্ধ ফেরৎ আহত সৈনিকদের সম্মান সবদেশে সব মানুষই করে থাকে। তদুপরি স্বদেশ যে যুদ্ধ জয়ের মিশনে গেছে সে কাজ যদি সফল হয়।

একদিন ওসাকা নৌবন্দরে যুদ্ধ জাহাজ ভিড়লে হাজার হাজার জাপান বাসী সবাইকে ফুল মিষ্টি নিয়ে বরন করতে এলো। কোনিশিকির বাড়ি খুব দূরে নয়। তবে একটু ট্রেনে চেপে সফর করতে হবে সেটাও খুব কম দূরত্বের।

অবশেষে বিপিনের মনে হলো সে একটা ঠিকানা পেয়েছে। হয়তো নিজের নয় তবুও এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য, চাষবাস বাংলা দেশের মতো। বৃষ্টি হয় দেশের বর্ষার মতো। তার কাছে এটা অনেক পাওনা।

একটা পাহাড়ি গ্রামে তাদের বাড়ি। মাটি পাথর দিয়ে তৈরি ঘর। সে যে আসবে সে কথা কেউ জানতো না তবুও তারা অপ্রস্তুত হলো না। তাকে খুব যত্ন আত্তি করে আত্মীয়ের মতো বরণ করে নিলো।

চা জলখাবার খাওয়ার পর তারা বসেছিল বাড়ির বারান্দায়। এমন সময় ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামলো। খুব বৃষ্টি হচ্ছে তখন । কোনিশিকি তড়াক করে উঠে উঠোনে নেমে মা বাবার দিকে তাকিয়ে হাত পা নেড়ে কি সব বললো।

প্রত্যুত্তরে তারাও কি সব বললে আর ঘরে ঢুকে টোকা জাতীয় মস্তকাচ্ছাদন বার করে কোনিশিকির হাতে ধরিয়ে দিল।

সে ছুটে নিজেদের জমির কিনারায় গিয়ে মাটি তুলে জমিতে জল ঢোকাতে সাহায্য করলো। বিপিনের মনে হলো বসে থাকা তো সময়ই নষ্ট, সে ঝাপিয়ে পড়ে কোনিশিকির কাছে চলে গেলো এবং হাতে হাত মিলিয়ে জমির বাঁধ দিতে সচেষ্ট হলো। এভাবে যতক্ষণ বৃষ্টি চললো তারাও জান প্রাণ লড়িয়ে জমির কাজ করলো। জমিতে অনেকটা জল দাঁড় করাতে পারল। যেহেতু তারা সৈনিকের কঠিন কাজ করে এসেছে তাই তারা সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়েনি। বরং কাজ করে যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ফেলল।

মাটিতে বসে নীচু টেবিলে তারা দুপুরে খেতে বসলে বিপিনের কিছু মজা বোধ হলো। কারণ আর কিছুই নয় তার বরিশালের বাড়িতে তারা ঝর ঝরে ভাত খেতো আর এখানে দলা পাকানো নরম ভাত আর তার পাশে বাটিতে মাছ সিদ্ধ কিছু সব্জি আর আচার। প্রায়-কাঁচা এমন ডিম আছে একটা একটু খোলা ছাড়ানো মুখের কাছে । আর আছে সুপ ।

বিপিন দেখলো সবাই একসাথে বসে খাওয়ার শুরুতে জাপানি ভাষায় যে রান্না করেছে তাকে অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ জানালো। নরম ভাত কাঠি দিয়ে আর সুপ বা সব্জি বাটিতে চুমুক দিয়ে সে যেভাবে দেশে ডাল চুমুক দিয়ে খেতো তেমনি ভাবে খাচ্ছে। তবে তেমন সুস্বাদু মনে হলো না।

ওসাকার এই প্রত্যন্ত গ্রামের পাহাড়ে ঘেরা সবুজ উপত্যকার মাঝে কোনিশিকির বাড়ি। কয়েকদিন বাদে গ্রামীণ লোকজন এসে কোশিনিকির বাবাকে নেমন্তন্ন করে গেলো। আজ সন্ধ্যা বেলায় পঞ্চায়েতের ঘরে সভা হবে। সবাই যেন আসে। আর কোশিনিকির বন্ধু ছেলেটি সেও যেন থাকে।

সবাই দল বেঁধে গেল সেখানে। তবে জনবসতি খুব কম। কেরোসিনের ল্যাম্পের আলোয় সবাই অল্প কয়েকটি কথা বললো। হাততালি দিলো। বিপিনকে তারা ফুলের তোড়া দিলো।

সে বুঝলো এখানে সে বন্ধু হয়ে গেছে।

যুদ্ধ ফেরত সৈনিক সে, যে দেশেরই হোক সম্মানীয় ব্যক্তি।

সবাই সুর করে গান গাইলো। পাহাড়ের কোলে অন্ধকার নেমে এসেছে আর বিপিনের মনে হলো সে বরিশালের নিজের গ্রামে রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এক টুকরো জমি দেয়া হলো বিপিনকে তাইশো সরকারের তরফ থেকে। কিছু চাষের সরঞ্জাম আর বীজ ও দেয়া হলো । তুমি চাষ করো, এখানে তুমি আমাদের লোক।

দুই বন্ধু কাজের শেষে দক্ষিণা বাতাসে জমির ঢালে বসে গল্প করে। কোশিনিকি বিপিনকে জাপানি ভাষা শেখায় আর তার নিজের শেখা বিদ্যা রাডারের কলা কৌশল শেখায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই বন্ধু খুঁজে বেড়ায় ধ্রুব তারা আর কালপুরুষ।

একদিন বিপিন বললে, – বন্ধু আমরা শহরে গিয়ে কিছু যন্ত্রপাতি কিনে আনি চলো। কখন বৃষ্টি বাদলা হয় সেটা যদি আন্দাজ করতে পারি তোমার রাডার বিদ্যে দিয়ে তো খুব সুবিধা হবে চাষিদের।

কোশিনিকির কখনো মনে হয়নি এটা করা যায়, কিম্বা করা উচিৎ? প্রকৃতি তার নিজস্ব ছন্দে পৃথিবীতে বিরাজ করে সেটার ওপরে খোদকারি করা কি ঠিক? তবে তারা তো কিছু সেভাবে কোন হস্তক্ষেপ করছে না এই জাগতিক কাজকর্মে । শুধু আগাম জানতে চাইছে আবহাওয়ার গতিপথ, গতিপ্রকৃতি ।

যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। কাছাকাছি শহরে তারা একদিন হাজির হলো খোঁজ খবর করতে। কি ভাবে এ কাজে এগোনো যায়? তবে মূল ভাবনাটা তারা গুপ্ত রাখলো।

জাপান রাজকীয় নৌবাহিনীর ড্রেস পরেই দুই বন্ধু গেলো। শুধু জানতে চাইলো সব যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় কিনা?
এভাবে দুই বন্ধু একটা কিছু করবে তাদের চাষ আবাদের বাইরে সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইলো ।

বিপিন একটা ঘর বাঁধলো । মানে সবাই মিলে বেঁধে দিলো তার ঘর। একটা বেড়া দেয়া এক টুকরো ঘেরাটোপের বাড়ি। কোশিনিকিদের বাড়ির কাছাকাছি। সে দেখতে দেখতে ভাষা রপ্ত করে ফেলে আর খাদ্যাভ্যাস ও পরিবর্তন করে নেয় । ওদের মতো কম খায় আর খুব কাজ করে, মানে কায়িক পরিশ্রম করে। আর বিনয়ী হয়। সে কোশিনিকির কাছে রাডারের ডিজাইন, কর্মপদ্ধতির পাঠ নেয়।

স্কুল শিক্ষার পর আর পড়াশুনা বিশেষ হয়নি। তবে হাতের কাজ শিখতে সেগুলোর সামান্যই তার কাজে এসেছে। নিঁখুত হাতের কাজ বেশি প্রয়োজনীয় হলো।

সে বাংলাদেশের গ্রামে দেখতো অনেক বাড়িতে হাঁস মুরগী পালন করে তবে তাদের মতো পরিবারে সেটা ছিলো বারন। কিন্তু সেই প্রথা ও পরিচিতি এখানে খোয়ালে কিছুই এসে যায় না। সে খোঁয়াড় বানিয়ে হাঁস মুরগীর সাথে শূকর পালন শুরু করলো। কোশিনিকির পরিবার বাহবা দিলো। গ্রামের প্রান্তে হাটে বসে বিপিন ডিম মুরগী হাঁস শূকর বিক্রি করে । লোকজন এসে তার পাশে বসে জানতে চায় সে কেমন করে এসব শিখলো।

আর যেদিন ঝম ঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ে সে আবাল বৃদ্ধ বনিতাদের নিয়ে চামড়ার ছোট বল বানিয়ে খেলার মাঠে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই করে।

আর রাতে নিজে রান্না করে খায় আর কোশিনিকির কাছে বিদ্যাভ্যাস করে। রাডার তৈরির কাজ করে।
এক মেলাতে কোশিনিকি এক পাগলের মতো কর্ম করে বসলো । হাত মাইকে হেঁকে হেঁকে বললে, – জেনে নিন,জেনে নিন আপনার উন্নতির কথা জেনে নিন।

বিপিনকে ছাইনির বাইরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, – এক এক করে ঢোকাবে। এক ইয়ান জন প্রতি।

এখানে মানুষ জন শান্ত প্রকৃতির আর একঘেয়ে জীবনের মধ্যে বৈচিত্র্য অনুভব করতে কয়েকজন তাঁবুর বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাদের দেখাদেখি আরো কয়েকজন জুটে গেলো। সবাই চাষি বাসি মানুষ।

বিপিন একবার ঢুকে দেখে কোশিনিকি ঠিক কি করছে । মন্ত্র পড়ার মতো কানে কানে কিছু বলছে আর যারা তাঁবু থেকে বার হচ্ছে তারা খুশি মনে বেরোচ্ছে। কাউকে কিছু বলছে না।

মেলার শেষে বিপিন বললে, – বন্ধু তুমি কি মন্ত্র দিলে।

– আমি রাডারে পেলাম সামনে ভারি মেঘ আছে। সবাইকে বললাম। শুখনো কাঠ জোগাড় করে ঘরে তুলে রাখো। জমি আল দাও আর বীজ কিনে রাখো একটু বেশি বৃষ্টিতে ভালো ফলন হয় এমন শষ্যের।

– যদি না লাগে তোমার অনুমান।

– আমি জলে ভর্তি মেঘ ধরতে পারি যন্ত্রে। কোথায় আছে কতটা বৃষ্টি হতে পারে তাও বুঝতে পারি। তোমাকে সব শিখিয়ে দেব।

সত্যি সত্যিই সাত দিনের মধ্যে খুব বৃষ্টি হলো। হুড় মুড় করে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। অনেকে তাদের পরামর্শে লাভবান হলো। আর সবাই এসে দেখা করে তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে লাগলো। তারা জানতে চাইলো আগামী কয়েক মাসের জলহাওয়ার খবর। অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস। কোশিনিকি বললে, – আমি জানলে তোমাদের সবাইকে জানাবো।

উদ্যোগের যুদ্ধটা শুরু হলো তখন থেকে। কোশিনিকি রাতদিন এক করে পড়াশুনা করে কিছু সত্যানুসন্ধানের চেষ্টা করলো । গাঁওবুড়োদের সাথে কথা বললো । বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে গেলো । জ্ঞানীলোকের সাথে কথা বললো । তবে তার মূল অনুসন্ধানের সুলুক গোপন রাখলো । একদিন ছুটতে ছুটতে কোশিনিকি বিপিনের কাছে এসে ভেঙে পড়লো আমি দু’ সপ্তাহের পূর্বাভাস ধরতে পারছি, তার বেশি এগোতে পারছি না। অথচ সবাই আরো দূর ভবিষ্যতের খবর জানতে চায়।

দুজনে খুবই ভেঙে পড়লো । তার মধ্যে বিপিনের মাথায় এলো একটা বুদ্ধি।

– তোমরা দূরের জাহাজে কি করে বার্তা পাঠাতে?

কোশিনিকি জানালো পদ্ধতি।

তখন বিপিন বললে,- আমরা এইরকম ছোট ছোট যন্ত্র সব খরিদ্দারের বাড়িতে বসিয়ে আসবো। রোজ একবার করে পরের দু সপ্তাহের আবহাওয়ার সংবাদ জানিয়ে দেবো। আপাততঃ তারা এটাতে সন্তুষ্ট থাকবে।

কোশিনিকি কথাটা ধরতে পারলো । রেডিও তরঙ্গে বিভিন্ন ট্রান্সমিশনের খবর সংগ্রহ করে একটা ধারণা এবং স্থানীয় এলাকায় জলবায়ুর খবর জোগাড় করে পরিবেশন করতে হবে। তাহলে জানতে হবে ইংরাজি ভাষা। শোনা ও বোঝা। আর তাকেই পরিবেশন করতে হবে জাপানি ভাষায়। একটা স্থানীয় সংবাদের রিলে স্টেশন।

বিপিন মোটামুটি ইংরাজি জানে।

সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করা হলো। কি হতে চলেছে পরবর্তী পদক্ষেপ। জাপানিরা নতুন টেকনোলজি খুব পছন্দ করে নাড়া ঘাঁটা করতে। প্রাত্যহিক জীবনে হয়তো তারা প্রাচীন পন্থী কিন্তু নিত্য নতুন জিনিস আবিষ্কারের খিদে তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে আগ্নেয়গিরির দ্বীপমালা এই জাপান প্রায় তিরিশ হাজার বছরের মানব বসতির দেশ।
নিজের জমিতে চাষ বাস, সমুদ্রে মাছ ধরা আর বনজ সম্পদ আহরণ করে চালিয়ে এসেছে । এই তিন প্রধান পেশার সাথে এখন ইলেকট্রনিকস ও ভারী শিল্পের ব্যবহার ও উৎপাদন শুরু হয়েছে। বিশেষতঃ মেইজি রাজত্বে যার শুরু এবং বর্তমান তাইশো রাজত্বে সেটা বহমান আছে।

বর্ষায় ঘন মেঘে এখানে আকাশ ছেয়ে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে তেড়ে বৃষ্টি আসে । আবার আকাশে রাতে বড় চাঁদ ওঠে। বিপিন হাল চাষ করে । তবে গরুর বদলে তার এক জোড়া খচ্চর আছে। অনেকে ঘোড়া বা গাধা দিয়ে চাষ তুলে নেয়। হালের গরুও আছে তবে কম।

টোকিও থেকে কয়েকটা ট্রান্সমিশন রিসিভিং সেট নিয়ে এসেছে কোশিনিকি। সেটার সাহায্যে খবর রিলে করে দেখেছে তারা, কাজ ভালোই হচ্ছে । তবে তাঁরা চাইছে নিজেরা হ্যান্ডমেড সেট তৈরি করতে। কম খরচে অনেক বেশি প্রোডাকশন করতে চাইছে ।

গাঁয়ে গঞ্জে হাত মাইকে দু’জনে প্রচার করছলো । লিফলেট বিলি করলো । লোকে অনেক কথা জানতে চাইছে। জাপানি ভাষা বড় খটমটে লাগে বিপিনের কাছে, খাবার সে নিজে রান্না করে খায় তাই অসুবিধা হয় না। কিন্তু ভাষা সে কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না।

এক এক করে মাস এগিয়ে যায়। কিন্তু তারা বসে নেই। নিউজ ট্রান্সমিশন আস্তে আস্তে শুরু হয়েছে। তার সাথে আবহাওয়ার খবরটা তারা অনেকটা গুরুত্ব দিয়ে ফোরকাস্ট করছে। চাষীদের কিছুটা উপকার হওয়ায় তারা খুব উৎসাহিত বোধ করতে লাগলো। বলতে গেলে বিশেষ করে কাজ করে বর্ষণের বাতাসের খোঁজে তাদের ব্রডকাস্টিং সংস্থা। সেখানে একদিন বসন্তের ডাক এলো। চেরিফুলের সমারোহের মাঝে কোশিনিকির জন্য কণে বা পাত্রী জোগাড় হলো এবং তাদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হল।

পাত্রীর বাড়ি কাছাকাছি আর একটি গ্রামে একই অঞ্চল অফিসের আওতার মধ্যে। ঘটকের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ। পারিবারিক বিয়ে। কোন সমস্যা নেই। তবে গোল বাধালো কোশিনিকি নিজেই। সে চাইলো বিপিনও বিয়ে করুক। তবে সে এখানের বাসিন্দা হতে পারবে স্থায়ীভাবে।

বিপিন বুঝেছিল তাকে এখানে থাকতে হলে নাগরিকত্ব চাই আর বিদেশিদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার সহজ উপায় জন্মগত ভাবে এখানকার কোন নাগরিকার সাথে বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে আবদ্ধ হওয়া। তাই তার আপত্তির কোন মানে হয় না । সে কোশিনিকির প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।

সমস্যা বাধলো অন্য জায়গায়। ঘটক, এদের ভাষায় বলে নাকোডো-কে দ্বায়িত্ব দেয়া হলো পাত্রী জোগাড় করতে। সে হয়রান হয়ে গেল।যদিও মেইজি রাজত্বের পর শিল্প হু হু বাড়ছে। গ্রামীন সংস্কৃতিকে গ্রাস করছে শহরের নব ও প্রগেসিভ সংস্কৃতি। কিন্তু উদারমনা পাত্রী আর মেলে না।

একদিন সে সমস্যার ও সমাধান হলো। কোশিনিকির হবু স্ত্রীর এক দূর সম্পর্কীয় বোন এগিয়ে এলো এই যুদ্ধ ফেরত সৈনিককে মালা দিতে। প্রশাসনের লোকাল বডি এটাকে সায় দিতে দুটো বিবাহ একসাথে অনুষ্ঠিত হলো। সমারোহ হলো। খাওয়ানো হলো লোকজন এবং স্থায়ী জাপান সরকার এদের বিবাহকে খুবই গুরুত্ব দিল। সিন্টো ধর্মমতে তাদের বিবাহ সম্পূর্ণ হয়।

এক এক করে বছর ঘুরে যায়। তাদের ব্যবসা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। বিপিনের স্ত্রী বৈবাহিক সূত্রে হিন্দু হলেও বিপিন মনে প্রানে জাপানি হতে লাগলো। সে এদের সংস্কৃতি অনুসরণ করতে লাগলো।

বিপিন ও কোশিনিকির যৌথ ব্যবসা খুবই ভালো চলতে থাকে। কিন্তু দুজনের কেউই গ্রাম ছেড়ে আর শহরে যায়নি। যদিও আর্থিক দিক দিয়ে সে ক্ষমতা তাদের যথেষ্ট হলো।

তারপর কত দশক পেরিয়ে দুই ভিনদেশি মানুষ জীবনের শেষ কয়টি বছর বৃদ্ধাশ্রমের পাশাপাশি ঘরে বসত যাপন করলো।

কোশিনিকির স্মরণে অনেকে অল্প অল্প দুচার কথা বললো। কথা বেশি বলতে চায়না কেউ। লাইব্রেরির মেয়েটি তার ডকুমেন্টেশনের স্বার্থে যা যা নথি জোগাড় করেছিল তার সাথে সবার অডিও ক্লিপিংসগুলো যোগ করে দিল।
মিটিং বা অবিচুয়ারি স্মরণ সভা তখনও শেষ হয়নি। কারন কোশিনিকি ইলেকট্রনিকস এর যৌথ সি ই ও বিপিন ব্যানার্জি তখনও কিছু বলে নি। যৌথ মালিকানাধীন এই সংস্থার শেয়ারের উর্দ্ধগতি যে মানুষটির হাত ধরে সেই বিপিন এখনও শ্রোতা।

সবাই নিশ্চুপ। এখানে কোন কিছুতে কাউকে জোর করা হয় না। বিপিন বাম হাতে সরু লাঠি ভর করে ক্ষীণ শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর দক্ষিন হাতটি তুললেন । তিনি কিছু বলতে চান।

সবাই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মানসূচক শরীরের উর্দ্ধাংশ সামনে নত করলো। শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হলো।

– আমি এখন একজন জাপানি। কিন্তু জন্মসূত্রে ভারতীয় এবং বাঙালী। কোশিনিকি আমার বন্ধু এবং গুরু। এখানে মানে জাপানে আসার আগের আমি এবং এখনকার আমি-তে কিছু মিল আছে বটে কিন্তু না- মিলটাই অনেক বেশি। আমাদের সংস্কৃতি পরিবার কেন্দ্রীয়। গ্রামীন জীবনে আমরা অভ্যস্ত। এটা বড় মিল।

কিন্তু ভারতীয় আমি ছিলাম উদ্যোগহীন। কিন্তু কোশিনিকির কাছে আমি শিখি জীবনে কি ভাবে উদ্যোগ উপলব্ধ করতে হয়। তার কাছ থেকে শিখি কিভাবে উদয়াস্ত খাটতে হয়। খাটনিটা একটা প্রতিদিনের অভ্যাস। আমাদের কোম্পানি খুব ছোট নয়। কিন্তু আমরা দু’ জনেই গ্রামীণ ও অতি সাধারন জীবনযাত্রা পছন্দ করতাম। আমার একটা গাড়ি ছিলো যতদিন অফিস করতাম আমি কোশিনিকির গাড়িতে চড়েই যেতাম অথবা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করতাম। শুধু আলাদা জায়গায় বড় মিটিং থাকলে অনন্যোপায় হয়ে নিজের গাড়ি ব্যবহার করতাম।
কথা বলতে বলতে হাঁফ ধরে যাচ্ছিল বিপিনের। তিনি দীর্ঘায়ু। গড় বাঙ্গালীর চেয়ে অনেক বেশি দিন তিনি বেঁচে আছেন। তাঁর এবং কোশিনিকির পরবর্তী তিন প্রজন্ম চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কয়েক বছর হলো তাদের মনে হচ্ছে অনেকদিন হলো ওরা নিজেরা বেঁচে আছে । এরপর আরো বেশি দিন বাঁচলে অন্যের বোঝা হয়ে যাবে । হাঁটা চলা না করতে পারলে তখন জঞ্জালের মতো ব্যবহার করবে সবাই । তখন বিপিন পরামর্শ করে তার চিরকালের বন্ধু কোশিনিকির সাথে।

তারা আইনি পরামর্শ নেয় দু’টি কঠিন সিদ্ধান্ত সরকারের কাছে নিবেদন করার জন্য। একটা ওল্ড এজ হোম খোলার। সরকারের তাতে কিছু আপত্তি ছিলো না । দ্বিতীয় আবেদন অনেকটা স্বার্থপরের মতো মনে হয়েছে সরকারের কাছে। তারা সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। একটা মধ্যপন্থা নিতে হয়েছে শতবর্ষ উত্তীর্ণ নাগরিকদের এই সংগঠনকে।
তাঁরা চেয়েছিলেন স্বেচ্ছামৃত্যু। আইন সঙ্গত মৃত্যু। কিন্তু শীর্ষ কোর্ট তাদের বিমুখ করে। তারা হাতজোড় করে বলেন। আমাদের কাছে পূর্বপুরুষরা ঈশ্বর। আমরা এই কঠিন সিদ্ধান্ত তাদের নিতে সম্মতি দিতে পারি না। তারা একটু নরম কিছু আবেদন করুন।

‘:কোশিনিকি ইলেকট্রনিকস’ এর যুগ্ম পরিচালক এবার একটা মধ্যপন্থার প্রস্তাব দেন। সরকার মেনে নেয়।

– আমি কোশিনিকির সাথে পরামর্শ করি। দু’ দু’টি বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী আমরা। জাপানের এই রকেট গতির উত্থানের সৈনিক আমরা। জাতির বোঝা হয়ে আমরা থাকতে চাই না। আমাদের পরবর্তী তিনটি প্রজন্ম শারীরিক ও বৌদ্ধিক দিক দিয়ে সর্বোতভাবেই সক্ষম। আমাদের এই পৃথিবীতে থাকা মানে কিছু জায়গা দখল করা আর কিছু ক্ষয় করা। নতুন করে ‘ মৃত্যু ‘ ছাড়া আমাদের দেয় আর কিছু নেই এই পৃথিবীকে । অ্যাপেক্স কোর্ট আমাদের স্বেচ্ছামৃত্যু মেনে নেয় নি। আমরা তখন চাইলাম একটা নতুন আবেদন রাখতে।

কমিউনিটি হলে উপস্থিত সব সদস্যই জানে সেই নির্মম প্রস্তাবটি গ্রহণ করতেও কোর্টকে কতটা দ্বিধান্বিত হতে হয়েছিল।

তবে শেষ অবধি কোর্ট মেনে নেয়। না হলে কোশিনিকিকে হয়তো আরো কিছুদিন দেখতে পেতাম। কিন্তু সে স্বেচ্ছায় কোর্টেরই সিদ্ধান্তে অবিচল রইলো । অবশ্য সে আছে আমাদের মধ্যে ও থাকবে অনন্ত ।

ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্
নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহং পুরানো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে

অপরাহ্নের শেষ আলোর চিহ্ন মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কমিউনিটি হলের সূর্যালোক সংবেদনশীল কৃত্রিম আলোগুলো জ্বলে উঠছে। প্রশস্ত কাঁচের জানালার ওপাশে তেল রঙে আঁকা ছবির মতো দৃশ্যে একটা পাহাড়ের পিছনে সূর্য ঢলে পড়ছে। অনুচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই হল থেকে দেখা যাচ্ছে চূড়ার কাছে জোনাকির মতো অসংখ্য আলোক বিন্দু টুপ টাপ করে জ্বলে উঠছে। তাদের মাথার ওপরে নিয়ন আলোয় ‘কোশিনিকি ইলেকট্রনিকস’ নামের বড় বড় অক্ষরগুলো জেগে উঠছে।

অনুষ্ঠানের শেষ বক্তা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেই ছোট্ট মেয়েটি। যে এতক্ষণে সভা পরিচালনা করছিল। বলতে উঠলো সে। – জন্ম থেকেই এই মানুষটিকে আমি চিনি। আর তাকে জানতে থাকি জ্ঞান হওয়া ইস্তক। এই কোশিনিকি সাম্রাজ্যের একজন পার্টনার এবং শতাধিক বছরের পুরোনো কোশিনিকি হাউজের একজন রেসিডেন্ট। শতাদ্বী প্রাচীন বাড়ি সামান্যই ঘসা মাজা হয়েছে, তবে তিনি নিজে অপরিবর্তিত আছেন দশকের পর দশক। আমার পূর্ব পুরুষ তিনি আমার গবেষণা পত্রের মূল চরিত্র। তিনি আমার জন্মদিনে ফুলের স্তবক উপহার দিতেন। গাছের পাতা উপহার দিতেন। শেষ অবধি দিয়ে গেছেন একটা বড় শতাংশের শেয়ার এই কোশিনিকি কোম্পানির। আমার গবেষণা পত্রের একটা অধ্যায় শেষ হলো। থিসিস জমা দেয়ার সময় হয়ে এলো। শুধু উপসংহারটুকু আমাকে তৈরি করতে হবে।

তিনি আর বাঁচতে চাইছিলেন না। কোর্টের কাছে তাঁরা যে অ্যাপিল করেছিলেন সেটা, ‘ অসুস্থতায় আর কোন চিকিৎসার সাহায্য নেবে না’। আমরা তাঁর সম্মান রাখতে পেরেছি কারণ কোর্ট তাদের আবেদনের মান্যতা দিয়েছে । গত কয়েক বছরে তাঁর খাদ্য তালিকা ছিলো একেবারে না খেয়ে থাকার মতো। বলা যেতে পারে এটা আত্মহননের নামান্তর। আজ তিনি সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তিনি সব সময় আমাদের মধ্যে আছেন।

তিনি দীর্ঘজীবি হোন একথা আর বলতে পারবো না। শুধু বলতে পারবো তিনি অমর হোন।

সভাগৃহে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে একজন প্রাক্তন সৈনিককে সম্মান জানাতে নিরবতা পালন করলেন। বিপিন অশক্ত ডান হাতে শেষ স্যালুট জানালো।

মৃদু আওয়াজে হলের সাউন্ড সিস্টেমে রয়্যাল নেভির জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলো।

(শেষ)

PrevPreviousরাজা রামমোহন রায়: অন্য চোখে ২
NextWHO and Its Transformation – A Journey from 1978 to 2024Next
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

।। ফিল্ড ডায়েরি ।। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী উত্তরবঙ্গ, অক্টোবর, ২০২৫

November 1, 2025 No Comments

প্রাইমারি ডিজাস্টার রেসপন্স হিসেবে বন্যা ও ভূমিধ্বসে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সপ্তাহব্যাপী অভয়া স্বাস্থ্য শিবিরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আমরা এক এক করে সকলের সাথে ভাগ করে

স্বপ্নকথা

November 1, 2025 No Comments

আমাদের সময়ে মেডিকেল কলেজগুলোয় ডাকসাইটে মহিলা বস(মানে শিক্ষক) ছিলেন হাতে গোনা। তাও শুধুই পেডিয়াট্রিক্স আর গাইনিতে। পেডিয়াট্রিক্সে ছিলেন প্রফেসর শান্তি ইন্দ্র। আমি কোনওদিনও তাঁর ক্লাস

“অমিতাভ – অ্যাংরি ইয়ং ম্যান” – পর্ব ১

October 31, 2025 No Comments

অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে একটা বড় লেখার ইচ্ছে ছিল। সেদিন সময় হয় নি, আজ লেখাটার শুরু করা যাক এই ভাবে। এই শতাব্দীর সূচনালগ্নে, ইউনিসেফ

সুন্দরবন ও নিবারণদের বারমাস্যা

October 31, 2025 4 Comments

এবার নিবারণরা এসেছিল পাড়ার কালী পুজোয় তাদের চড়বড়ি তাসা পার্টি নিয়ে সেই ‘সোদরবন’ থেকে। দলে ওরা মোট পাঁচজন – নিবারণ, নিরাপদ, নিখিল, নিরঞ্জন আর নিরাপদর

সরকার মানুষের স্বার্থে আমাদের দাবিগুলো পূরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ দ্রুত নিক।

October 31, 2025 No Comments

২৬ অক্টোবর, ২০২৫ আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে, আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের নৃশংস খুন ও ধর্ষণের প্রেক্ষিতে এবং লাগাতার আন্দোলনের চাপে নবান্ন

সাম্প্রতিক পোস্ট

।। ফিল্ড ডায়েরি ।। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী উত্তরবঙ্গ, অক্টোবর, ২০২৫

West Bengal Junior Doctors Front November 1, 2025

স্বপ্নকথা

Dr. Arunachal Datta Choudhury November 1, 2025

“অমিতাভ – অ্যাংরি ইয়ং ম্যান” – পর্ব ১

Dr. Samudra Sengupta October 31, 2025

সুন্দরবন ও নিবারণদের বারমাস্যা

Somnath Mukhopadhyay October 31, 2025

সরকার মানুষের স্বার্থে আমাদের দাবিগুলো পূরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ দ্রুত নিক।

West Bengal Junior Doctors Front October 31, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

586493
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]