মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলে বেড়াচ্ছিলেন যে এসআইআর করতে দেবেন না, ঠিক তখনই, মানে আজ থেকে মাস দুই আগে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা জরুরি ডিউটির চিঠি পাচ্ছিলেন, যার অবজ্ঞা করলে তাঁদের চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে৷ তাঁরা চিঠি পাচ্ছিলেন ঊর্ধ্বতন রাজ্য সরকারি কর্মীর থেকে। আমাদের রাতদখল মঞ্চে কর্মরত মেয়ে-ট্রান্স-ক্যুয়ার মানুষেরা রয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ-ও এই চিঠি পান পুজোর আগেই। তাই তাঁদের থেকে সেসব আপডেট-ও আমরা পাচ্ছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমার ডিউটির চিঠি আসেনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বেতনভুক কর্মী যে থাকে না, সরকারি কর্মীদেরই যে সেসব কাজ করতে হয়, তা আমরা সবাই জানি। রাতদখল ঐক্যমঞ্চ এসআইআর ও বিহারের এসআইআর-এর ব্যাপারটি ভালভাবে বুঝে নিতে দুই বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি সভা আয়োজন করে পুজোর আগে।
কীভাবে হল এই কর্মীদের ট্রেনিং? তা নিয়ে বিশদে বললে তাঁরা যে বিপদে পড়বেন, সেই কথাও কর্মীদের বলা হয়েছে। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে পুরো কাজটি সারতে গেলে আবারও বিহারের মতো তাড়াহুড়ো-জনিত ভ্রান্তির সম্ভাবনা আছে।
এসআইআর আপাতভাবে নাগরিক তালিকার সংশোধন, যা নিয়মিতভাবে হয়। কিন্তু তাড়াহুড়োর বিষয়টি বিহারের ক্ষেত্রে ছিল সন্দেহজনক। এবং ফল হিসেবে বাদ পড়েছেন মূলত প্রান্তিক শ্রেণি, প্রান্তিক ধর্ম এবং প্রান্তিক লিঙ্গের (মেয়ে, ট্রান্স, ক্যুয়ার) মানুষ। কীভাবে নাগরিকদের এই ভিক্টিমাইজেশন পশ্চিমবঙ্গে আটাকনো যাবে? মনে হয়, এক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল। মানে, বুথ স্তরে কারা মৃত বা উধাও ভোটার আর কারা নতুন ভোটার, তা নানা রাজনৈতিক দলের বুথ স্তরের কর্মীরাই ভাল জানেন। সেরকম কোনো উদ্যোগ দেখিনি। শাসক দলের বুথ স্তরের কর্মীরাও এসব জানেন, কিন্তু তাঁদের একতরফা এই ‘সাহায্য’ করতে বললে তাঁরা নিজেদের সমর্থক ভোটারদের প্রতি পক্ষপাত দেখাতে পারেন।
কেউ কেউ বলছেন এসআইআর এনআরসি-র আগের ধাপ বা ছদ্মবেশে এনআরসি। হতে পারে। কিন্তু যেখানে নাগরিক তালিকা সংশোধনের ছদ্মবেশটি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে আমাদের প্রতিবাদের ভাষাও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন৷ এনআরসির মতো এক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে দেখানো দরকার যে বহু প্রজন্ম ধরে এদেশে থাকা ভোটারও বাদ পড়ছে। তা না করে অস্পষ্ট বক্তব্য সমন্বিত মিছিল বা সভায় এসআইআর-পন্থীদেরই হাত শক্ত করছে। সেই নির্দিষ্ট কেস-স্টাডি ভিত্তিক প্রতিবাদ খুব একটা দেখতে পাচ্ছি না।
যাইহোক, শুরুর কথায় ফিরে যাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আছেন। তাঁর কর্মীরা গত দু-তিন মাস ধরে ডিউটির চিঠি পাচ্ছেন, ট্রেনিং নিচ্ছেন— এসব তিনি জানতেন না, তা অসম্ভব। গত তিন মাস ধরে রাজ্য সরকারের তরফেই এর প্রস্তুতি চলছে, কর্মীরা গতকাল থেকে নয়, গত তিন মাস ধরেই জানেন যে এসআইআর হবেই৷ শাসকদলের মিথ্যাচার আর দ্বিচারিতা লোকজন খেয়েও যাচ্ছে, এটা অদ্ভুত।
এমতাবস্থায় সিপিএম-এর ফেসবুক-লিখন কারও কারও মনোমতো না হলেও, তারা এই পশ্চিমবঙ্গীয় এসআইআর-এর কু-নাট্যে পাতি সাইড ক্যারেক্টার, ইনসিগনিফিক্যান্ট ক্যারেক্টার। তাই তাদের পিছনে লেগে যে লাভ খুব একটা নেই, এইটুকু মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।












