সায়েবদের ক্রিসমাস আর আমাদের বড়দিন, কোনো উদযাপনের সঙ্গেই তাল রাখতে পারি না আর।
গোল কাঁচের ঢাকনাওয়ালা দিশি ওভেনে মায়ের হাতের কাজু-কিসমিস দেওয়া কেক কিংবা তেত্রিশ বছর আগের ন্যাশনাল মেডিক্যালের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে হঠাৎ খুশির ফোয়ারা তোলা পঁচিশে ডিসেম্বর — কোনোটাই আর ফেরত আসবে না এই জীবনে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখিনি কোনোদিন, কিন্তু আমার সেকেলে অতীতচারণে কেন যে বারবার ফিরে আসে ‘তেত্রিশ বছর’!
আমি কথা রাখতে পারিনি। সে-ও পারেনি। তাতে কি? কয়েক আলোকবর্ষ দূরের দুই গ্রহ তো রয়ে গিয়েছে আজও। নিজের অক্ষে, নিজস্ব প্রতিবেশে, ঘুরে চলেছে তারা আপন খেয়ালে।
মাঝখানে বয়ে যাচ্ছে পার্ক স্ট্রিট-বো ব্যারাক-রেড ওয়াইন-অঞ্জন দত্ত-নাহুমের কেক-সান্তা টুপি-চিড়িয়াখানা-জাদুঘর-ভিক্টোরিয়ার বাগান-গে রেস্টুরেন্ট-কুয়াশামাখা গঙ্গা। বিস্মরণের ছায়াপথ ফুঁড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসমাপ্ত দ্বিতীয় হুগলি সেতু। তখনকার ‘আমাদের দু’জনের’ মতো।
লোহাপুল জোড়া লাগে। জেলায় জেলায় আত্মীয়তা বাড়ে — দূর আসে কাছে। কিন্তু বহুপরিচিত অচ্ছেদ্যহৃদয় দুটো মানুষ আরও দূরে সরে সরে যায়। নেপথ্যে বেজে যায় অর্থহীন জিঙ্গল বেল।
সুরে সুর না মিললে ক্যারল হয় না, হয় ক্যাকোফোনি।
যেমন এখন হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ধর্মে আর অধর্মে, মনুষ্যত্বে আর পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায়, ঔদার্যে আর সংকীর্ণ হানাহানিতে।
সে চরম নাস্তিক ছিল।
আমি ছিলাম পরম ঈশ্বরবিশ্বাসী।
আজ অসুস্থ, অশক্ত শরীরে হয়ত তার দেবতাকে মনে পড়ে।
আমি কিন্তু সেই কিশোরীবেলার অভ্যাসে রক্তাক্ত, নগ্নবক্ষ, করুণ যিশুমূর্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বুকে ক্রসচিহ্ন এঁকে ডেকে উঠি না আর —
ও ক্রাইস্ট! সেভ মি!
কারণ আমি জানি, ঈশ্বর বহু আগেই এই নৃশংস গ্রহ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমাদের মাঝে তাঁকে আর কোনোদিনও ফেরানো যাবে না। যাবে না।










