মাননীয় কেন্দ্রীয় সরকার বাহাদুরের (পড়ুন বীরকেশরী ভারতপুঙ্গব প্রধানমন্ত্রীর) দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে বর্তমান বিদ্যালয়গামী প্রজন্ম, যাদের বয়স আট-দশ-বারো-চোদ্দ, তারা নাকি স্থূলতার শিকার হয়ে পড়ছে।
কারণ অতিমাত্রায় জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড, ভাজাভুজি, অস্বাস্থ্যকর তৈলাক্ত খাবার ইত্যাদি।
সরকারের এই পর্যবেক্ষণ কেবলমাত্র শহরাঞ্চলের মধ্য এবং উচ্চবিত্ত পরিবারভুক্ত শিশুদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, এই কথার স্পষ্টীকরণ করে সমস্ত সরকার পোষিত স্কুলে নির্দেশ আসছে (বা হয়ত এসেও গিয়েছে), যে সরকারি খরচে চলা মিড ডে মিল প্রকল্পে তেল/স্নেহপদার্থে খরচ ১০ শতাংশ কম করতে হবে। বিকল্প হিসেবে ‘বেকড’ অথবা ‘রোস্টেড’ খাবারের কথা বলা হয়েছে।
সরকারি মিড ডে মিল প্রকল্পে শিশু পিছু বরাদ্দ প্রাথমিক স্তরে ছ’টাকা উনিশ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ন’টাকা ঊনত্রিশ পয়সা। এই টাকায় খিচুড়ি/সয়াবিন/আধখানা ডিম/আধহাতা লাবড়া ইত্যাদি আর কি কি দেওয়া সম্ভব আমার জানা নেই — আমার দুর্ভাগা দেশের ততোধিক দুর্ভাগা শিক্ষক-বন্ধুরা বিশদে জানাতে পারবেন।
তাঁদের কথা ভেবে আমার কান্না পায়।
আজ থেকে বিশ-বাইশ বছর আগে আমার রাজ্যের এক পিছিয়ে পড়া জেলার, পিছিয়ে পড়া ব্লকের ততোধিক পিছিয়ে পড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মাধ্যমিক স্কুলের বাচ্চাদের মিড ডে মিল খাওয়ার সাক্ষী হতে হয়েছিল হেলথ ক্যাম্প করতে গিয়ে।
সেই অভিঘাত আজও ভারাক্রান্ত করে তোলে অশ্রুগ্রন্থি।
ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান সহ অন্যান্য নেতা মন্ত্রীদের হাত ধরে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক তৈল-বরাদ্দ সংবরণের এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও করতেও পারে হয়ত।
কিন্তু আমলারা? যাঁরা শিক্ষিত? যাঁরা সংবেদী? যাঁদের বাস্তবের গা ঘেঁষে চলতে হয়? তাঁরা কেউ প্রধান নেতার এমত ‘অমানবিক’ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন না বা করার প্রয়োজনীয়তাটুকুও অনুভব করলেন না?
ঠাণ্ডা ঘরে থেকে থেকে রক্ত কি এতটাই শীতল হয়ে গিয়েছে তাঁদের, যে অমেরুদণ্ডী সরীসৃপের মতো বুকে হেঁটে চলে রাজনীতি-ব্যবসায়ীদের নিত্য পদলেহন না করতে পারলে বেতন হজম হচ্ছে না?
নাকি সক্কলের মধ্যেই ফরাসি রাণী মেরি আঁতোয়ানেতের ভূত ভর করেছে?
“ওরা রুটি কিনতে পারছে না? তাহলে কেক খাক”!