আমরা যারা বামপন্থায় বিশ্বাসী, রাজনীতিই তাদের কাছে প্রথম, প্রধান, কখনো কখনো দ্বন্দ্বের একমাত্র পরিমণ্ডল ছিল। ধারণা ছিল, রাজনৈতিক লড়াইটা জেতা হয়ে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে অর্থাৎ বিপ্লবের পরেই সব কিছু হবে। পড়াশোনার ঘাটতি তো ছিলই (সেটাতো এখনো আছে); কিন্তু এ দেশে বামপন্থার প্রয়োগ যা দেখেছি, তা থেকেও আমাদের এই ধারণা হয়েছিল ।
ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কেও একই কারণে আমাদের ধারণা ছিল- এটি শ্রমিকদের বস্তুগত দাবী-দাওয়া আদায় করার একটি সংগঠন এবং যার কাজকর্মের পরিধি শুধু মাত্র কল -কারখনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।
শঙ্কর গুহ নিয়োগী আমাদের এই দুটো ধারণাই পাল্টে দেন। প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী তাঁর কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না; কিন্তু ছিল ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যে সংগঠনটা মূলত শ্রমিক সংগঠন, কিন্তু একই সাথে কৃষকদের মধ্যে এবং সমাজের মধ্যেও সমানভাবে সক্রিয় ছিল। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে, তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা কারখানা থেকে ছত্তিশগড় শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে চলে গেলেন শ্রমিক মহল্লায়। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি শ্রমিক সংগঠন, ১৯৭৯ সালে হয়ে গেল মুক্তি মোর্চা। উনি বললেন- ট্রেড ইউনিয়ন একটি ৮ ঘণ্টার সংগঠন নয়- এটা একটি ২৪ ঘণ্টার সংগঠন। লড়াইটা শুরু হলো জীবনের সব ফ্রন্টে। ১৮টি ( ১৭+১) ইউনিট খোলা হলো – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, খেলাধূলা, পরিবেশ ইত্যাদি। এই ব্যাপারে নিয়োজীর সহযোদ্ধা পুণ্যদার ( ডক্টর পুণ্যব্রত গুণ) লেখায় বিস্তারিত বর্ণনা পাবেন ।https://www.facebook.com/share/p/1MeGjq21Nr/?mibextid=wwXIfr.
পৃথিবীতেই নিয়োগীজিই প্রথম যিনি business unionism থেকে social unionism শুরু করেন ।
এর ফলে দল্লি -রাজহারার মানুষগুলো পরিবর্তিত হতে শুরু করলেন। মনুষ্যেতর জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষগুলো, শুধু নিজেরাই নয়, তাঁদের বাবুদেরও ভাবতে বাধ্য করলেন যে, দল্লি-রাজহারার প্রধান রাস্তার ডানদিকে যে একদল মানুষ বাস করেন, তাঁদের মতই যাঁদের হাত-পা, নাক-কান চোখ- মুখ আছে, যাঁদের খিদে পায়, যাঁদের অসুখবিসুখ হয়, যাঁদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায়…
আমার দেখা ভারতবর্ষের সবচেয়ে সৃজনশীল মার্ক্সিস্ট হলেন – শঙ্কর গুহ নিয়োগী। আজকের দিনে তাঁকে খুন করা হয়। এ দেশের অন্য যে বামপন্থী দলগুলো আছে, তারা এবং তাদের শ্রমিক সংগঠনগুলো আশ্চর্যজনকভাবে নিয়োগীজি বা ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা নিয়ে নীরব। এটা খুব অবাক লাগে!
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রশ্ন নিয়োগী r পর আর তার আন্দোলনের উত্তরাধিকারী কে দেখলাম না।তিনিই আরম্ভ তিনিই শেষ।আর জেটা বলার তার সমন্ধে নকশাল পন্থীদের সংগঠনগুলি তাকে বিশেষ পাত্তা দিত না।এটাও একটা আমাদের ব্যর্থতা।