মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমের শোষণ ও লুণ্ঠনকারী সাম্রাজ্যবাদী জোটের পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় – যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া প্রমুখ দেশ গৃহযুদ্ধে চূর্ণ; যখন দীর্ঘ যুদ্ধ, অবিরাম বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ, একের পর এক গণহত্যায় ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশ ছারখার হয়ে যাবার পর একদা রাশিয়া ও ইউরোপের সোনার হাঁস ইউক্রেন এবং প্যলেস্তাইনের পূর্বাংশ গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত; যখন সুদান, দক্ষিণ সুদান, ডি আর কঙ্গো, নাইজেরিয়া সহ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অংশ, মায়ানমার, পাকিস্তান প্রমুখ দেশ গৃহযুদ্ধে দীর্ণ; যখন বাংলাদেশ, মাদাগাস্কার প্রমুখ দেশ নৈরাজ্যে সমাকীর্ণ; যখন ভারত – পাকিস্তান, চিন – তাইওয়ান, থাইল্যান্ড – কম্বোডিয়া, পাকিস্তান – আফগানিস্তান প্রমুখ দেশের মধ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা তুঙ্গে – তখন মার্কিন সমরাস্ত্র শিল্পের প্রতিনিধি, আগ্রাসী শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী, নারী বিদ্বেষী, প্রমাণিত প্রতারক ও যৌন অপরাধী, অশালীন, খামখেয়ালী ও বাচাল ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এবং প্রকৃতি ও মানব বিরোধী গুণ্ডামি নতুন করে বিশ্ব জুড়ে প্রবল অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে; গড়ে তুলছে দখলদারি এবং ভয়ানক দূষণকারী মারণাস্ত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষার নিত্যনতুন আঞ্চলিক অনুপস্থিত যুদ্ধ (Regional Proxy Wars)। যার সাম্প্রতিক সংযোজন ক্যরিবিয়ান সমুদ্র সমীপে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা। দেড় দশকের কঠিন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞার (Sanctions) পর মার্কিন নৌবহর দেশটিকে ঘিরে অবরোধ (Blockade) করে দেশটির গলা টিপে ধরে প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তুলেছে। মাদক সন্ত্রাস (Narco – terrorism) দমন করার নামে তার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক তেল ভাণ্ডার কে গ্রাস করা।
মর্ত্যের স্বর্গঃ “ … And when the wind was out to sea
The wind was out to sea
She was taking leave of me
I said: Cheer up, there’ll always be
Sailors ashore on leave in Venezuela (2) … “
From Harry Belafonte’s song ‘Venezuela’
উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর সান্নিধ্যে অপরূপ সব সৈকত এবং মারগারিটা, লস রোকে প্রমুখ চোখ জুড়ানো সব ক্রান্তীয় দ্বীপপুঞ্জ। উত্তর – পূর্ব ও পূর্বে ত্রিনিদাদ – টোবেগো ও গাইয়ানা। উত্তর – পশ্চিম জুড়ে সুউচ্চ ও সুদীর্ঘ আন্দিজ পর্বতমালা। পশ্চিমে কলাম্বিয়া। বিস্তৃত মধ্যাঞ্চলে তৃণময় সমভূমি ও রুক্ষভূম। দক্ষিণে অ্যামাজন নদী অববাহিকার ক্রান্তীয় ঘন বনভূমি এবং ব্রাজিল। সিয়েরা নেভাদা জাতীয় উদ্যান, লাগে দি মারকাইবো বৃহৎ হ্রদ, বৃহৎ ওরিনোকুইয়া নদী, লা গুয়াজিরা মরুভূমি, প্রাচীন ঔপনিবেশিক শহর মারিদা – এইসব নিয়ে বৈচিত্র্যসুন্দর দেশ ভেনেজুয়েলা। সমুদ্রপথে সমৃদ্ধিশালী ভারতে পৌঁছনোর প্রচেষ্টার তৃতীয় অভিযানে ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার দলবল নিয়ে ১৪৯৮ তে বর্তমান ভেনেজুয়েলার নয়নাভিরাম বেলাভূমিতে পৌঁছন। স্পেনের রাজা – রানিকে তিনি জানিয়েছিলেন যে মর্ত্যের স্বর্গে পোঁছেছেন।
মহার্ঘ্য এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ভাণ্ডারে পূর্ণ একদা লাতিন আমেরিকার সবচাইতে ধনী দেশ ভেনেজুয়েলার মোট আয়তন ৯.১৬ লক্ষ বর্গ কিমি (বিশ্বের মধ্যে ৩২ তম), জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি (৫৩ তম), জনঘনত্ব ৩২ / কিমি ২ (১৮৪ তম)। ২৩ টি রাজ্য এবং রাজধানী কারাকাস জেলার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো (Federation) নিয়ে বলিভারিয়ান রিপাবলিক অফ ভেনেজুয়েলা। সরকারি ভাষা স্প্যানিশ ছাড়াও ২৬ টি আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত। জনসংখ্যার ৫২% মেস্তিজো (Mestizo) অথবা মোরেনো অর্থাৎ স্থানীয় আমেরানডিয়ান, ইওরোপিয়ান ও আফ্রিকানদের কয়েক প্রজন্মের মিশ্রণ। চলতি কথায় এদের মুলাটো, পারদো অথবা জাম্বাসও বলা হয়ে থাকে। ৪৩ % শ্বেতকায়। ৪% কৃষ্ণকায় এবং ১% জনজাতি, আরব ইত্যাদি। জনসংখ্যার ৯৩% খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ( ৮১% ক্যাথলিক, ১১% প্রটেস্টান্ট, ১% অন্যান্য), ৬% নাস্তিক এবং ১% ঐতিহ্যবাহী বিরঙ্গো প্রমুখ। মুদ্রা বলিভার হলেও মার্কিন ডলার বহুল প্রচলিত। ২০২৩ এ জিডিপি (পিপিপি) ছিল ১০৮.৫১ বিলিয়ন ডলার (মোট আয়ের দিক থেকে বিশ্বের ৬৯ তম দেশ), মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৪,০৬৮ ডলার (১২৭ তম) এবং মানব উন্নয়ন সূচক (HDI) ০.৭০৯ (১২১ তম)।
ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত খতিয়ানঃ উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও স্থানীয় জনজাতিরা বসবাস করতেন এবং তাঁদের টিমোডো – কুইকা প্রভৃতি সভ্যতা ও সংস্কৃতি ছিল। স্প্যানিয়ারডসরা এসে এখানে বলপূর্বক উপনিবেশ স্থাপন করেন। স্থানীয় জনজাতিদের অনেককে হত্যা করা হয়, তাঁদের নারীদের ধর্ষণ করা হয়, সম্পদ লুঠ করা হয়। ১৫২২ এর মধ্যে সম্পূর্ণ ভেনেজুয়েলা স্পেনের উপনিবেশে পরিণত হয়। প্রুশিয়ার সঙ্গে স্পেনের বোঝাপড়ায় জার্মান রা এখানকার একাংশে ১৫২৮ – ’৪৬ অবধি উপনিবেশ নির্মাণ করেন। অনেক ঘটনা পরম্পরার পর জেনারেল মিরান্দার নেতৃত্বে ১৮১১ তে ভেনেজুয়েলা স্পেনের থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফার্স্ট রিপাবলিক গঠন করলেও স্পেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যান ভেনেজুয়েলার জাতীয় এবং লাতিন আমেরিকার মহাদেশীয় নায়ক সাইমন বলিভার (১৭৮৩ – ১৮৩০), আন্তনিও সুক্রে প্রমুখ বিপ্লবীরা। তাঁরা ১৮১৩ তে ভেনেজুয়েলায় দ্বিতীয় রিপাবলিক গড়েও ব্যর্থ হয়ে পুনরায় ১৮১৭ তে নিউ গ্রানাডা এবং তৃতীয় রিপাবলিক গড়ে তোলেন। স্প্যানিয়ারডসরা আবার সেটি দখল করে নেন। এরপর বলিভারের বাহিনী যুদ্ধে স্প্যানিয়ারডসদের পরাজিত করে ১৮১৯ তে নিউ গ্রানাডা, ১৮২১ এ পানামা ও ভেনেজুয়েলা, ১৮২২ এ ইকুয়েদর, ১৮২৪ এ পেরু এবং ১৮২৫ এ বলিভিয়াকে স্বাধীন করে। এরপর তাঁরা ইকুয়েদর, পানামা, ভেনেজুয়েলা, কলাম্বিয়া এবং পেরু ও ব্রাজিলের একাংশ নিয়ে গ্র্যান কলাম্বিয়া গড়ে তোলেন। পরে জোস পায়েজের নেতৃত্বে ১৮৩১ এ ভেনেজুয়েলা গ্র্যান কলাম্বিয়া থেকে স্বাধীন হয়।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে উদীয়মান সামরিক শক্তি ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামরিক বিজয়ে প্রাধান্য পাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমসময়ে ১৯২২ এ ভেনেজুয়েলায় খনিজ তেল আবিস্কারের পর আরও বেশি করে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। বিদেশী বহুজাতিক তেল কোম্পানি গুলি ভেনেজুয়েলার তেল অনুসন্ধান, উত্তোলন, শোধন, সরবরাহ ও বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বিপুল মুনাফা অর্জন করতে থাকে। এই সময় মার্কিন প্রভাবিত একের পর এক সামরিক একনায়ক তাদের স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী শাসন চালিয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশ কিছু ইওরোপীয় ভেনেজুয়েলায় চলে আসেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৯৯ অবধি ভেনেজুয়েলার শাসন ক্ষমতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং Royal Dutch Shell, Gulf, Standard Oil প্রমুখ তেল কোম্পানিগুলির স্বার্থ রক্ষাকারী তথাকথিত ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক পুতুল সরকারগুলি (Puppet Regimes of the Banana Republic) নিজেদের চতুর্থ রিপাবলিক ঘোষণা করে বিরাজ করতে থাকে। ভেনেজুয়েলার জাতীয় সম্পদ তেল থেকে বিদেশী বহুজাতিক তেল কোম্পানি গুলির বিপুল মুনাফার আংশিক অংশীদার হয়ে ওঠেন এখানকার শ্বেতাঙ্গদের একাংশ ধনী অভিজাত শ্রেণী এবং সরকারের কিছু মন্ত্রী, আমলা, সামরিক অফিসার। সাধারণ কৃষক, জনজাতি, শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ কায়ক্লেশে জীবন অতিবাহিত করেন। এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বিপ্লবী দল বারবার আন্দোলন গড়ে তুলে দমিত ও ব্যর্থ হয়।
দেশের অর্থনীতিতে ধাক্কাঃ ১৯৭৩ এ মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের আবহে আন্তর্জাতিক তেল সঙ্কটের সময় এই ধরনের সমস্যা আরও কেন্দ্রীভূতভাবে মোকাবিলার জন্য প্রেসিডেন্ট কার্লোস পেরেজ ১৯৭৬ এ ভেনেজুয়েলার তেল কোম্পানিগুলির জাতীয়করণ করে PDVSA (Petroleos de Venezuela, S.A.) একটিমাত্র সরকারি তেল সংস্থা গড়ে তুললেও পরবর্তীতে বিদেশী তেল কোম্পানি গুলি এতে বিনিয়োগ ঘটিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। প্রসঙ্গত ভেনেজুয়েলা OPEC (Organization of the Petroleum Exporting Countries) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৮০ এর দশকে বিশ্ব জুড়ে মার্কিন কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মন্দা (Recession), সেই কারণে চাহিদা হ্রাস, বিকল্প শক্তির আবিষ্কার ও মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব এবং রাশিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, ব্রাজিল, গাইয়ানা প্রমুখ Non – OPEC দেশগুলিতে অধিক উৎপাদনের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে যায়। ফলে মার্কিন ও বিদেশী বহুজাতিক সংস্থা আয়োজিত তাদের মুনাফা কেন্দ্রিক কেবলমাত্র অধিক মাত্রায় তেল উৎপাদন ও রপ্তানির তেল নির্ভর ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। কোকো, কফি, খাদ্যশস্য, ফল, সবজি প্রভৃতি রপ্তানীকারী কৃষিপণ্য সহ কৃষি ব্যবস্থায়; ইস্পাত, সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়াম, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল, প্রসেসড ফুড প্রভৃতি রপ্তানীকারী শিল্পপণ্য সহ শিল্প ব্যবস্থায়; পরিবেশ বান্ধব পর্যটন শিল্প প্রভৃতি বিনিয়োগ ও উদ্যোগের অভাবে এগোতে পারেনি। গড়ে ওঠেনি কোন বিকল্প অর্থনীতি। এছাড়াও শাসকেরা তেলের টাকায় দেদার খরচ ও অপচয় করে, ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্বল পরিচালনা ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেন। ফলে মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ওইসময় তেল কোম্পানি এবং দেশের ধনী অভিজাতরা পুঁজি ও সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নেন। অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও বেড়ে যায়। সঠিক নীতি, দক্ষতা ও নিয়ন্ত্রণহীন দুর্বল সরকারগুলি এই অভাবনীয় সঙ্কট মোকাবিলায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধের রাস্তায় হাঁটেন। দেখা যায় এর ফলে উৎপাদন হ্রাস, খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের আরও বৃদ্ধি, দুর্নীতি, কালোবাজারি, অপরাধ বেড়ে চলে।
১৯৮০ এর দশক থেকে ভেনেজুয়েলায় শুরু হওয়া এই অর্থনৈতিক সংকটের, যা আজও বহমান, অভিঘাত তীব্রভাবে জনজীবনে প্রভাব ফেলে। ১৯৮৯ তে কারাকাসে গণ বিদ্রোহ, ভাঙচুর, ব্যাপক লুটপাট (Caracazo)। ১৯৯২ তে সেনাবাহিনীর দুবার অভ্যুত্থান (Coup)। ১৯৯৩ তে প্রেসিডেন্ট পেরেজের অভিশংসন (Impeachment)। বলিভারপন্থী ও সমাজতান্ত্রিক সামরিক অফিসার এবং MBR 200 দেশপ্রেমিক বিপ্লবী আন্দোলনের জনপ্রিয় নেতা হুগো চাভেজ, Project Venezuela এর জনপ্রিয় নেতা হেনরিখ রোমারের সঙ্গে মিলে জোরালো প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৯৮ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চাভেজ বিজয়ী হন এবং ১৯৯৯ তে কার্যকাল শুরু করে গণ পরিষদ (Constituent Assembly) এবং নতুন সংবিধান (New Constitution) প্রবর্তন করেন। ঘোষণা করেন পঞ্চম রিপাবলিক স্থাপনের। এরপর তাঁর নেতৃত্বে লাতিন আমেরিকা পন্থী (Pan Hispanic), সমাজতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী – দেশপ্রেমিক বলিভারের আদর্শে এবং তার সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ধারণার মিশেলে এক বলিভারপন্থী ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের (Bolivarian Revolution) সূচনা করেন। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি খোলা বাজার (Free Market) ও সামাজিক কর্মসূচির (Social Programmes) মিশেলে Rhine Capitalism অবলম্বন করেন। অন্যদিকে তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার Neo Liberal Economy এর ঘোষিত ও সোচ্চার বিরোধী, সুতরাং তাদের চক্ষুশূল। তারাও নানাভাবে তাঁর বিরোধিতা শুরু করে। বারবার তাঁর সরকার ফেলে দেওয়ার, তাঁকে হত্যা করার, সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চলতে থাকে। ডিপ স্টেট ও সি আই এ সক্রিয় হয়ে ওঠে।
চাভিসমো (Chavismo): হুগো চাভেজের (১৯৫৪ -২০১৩) মতবাদকে এক কথায় চাভিসমো বলা হয় যা একসময় সমগ্র পৃথিবীর নজর কেড়ে নিয়েছিল। ২০০৫ এ চাভেজ চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে আসেন এবং কলকাতা ঘুরে যান। চাভেজ ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র – সেনা অফিসার, বেসবল প্লেয়ার, কবি, প্রেমিক, বিপ্লবী, বাগ্মী, জনপ্রিয় প্রতিবাদী নেতা, চার বারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং দেশ ও লাতিন আমেরিকা মহাদেশের নেতা। শহরের মধ্যবিত্ত মেস্তিজো ক্যাথলিক বৃহৎ পরিবারে জন্ম। পিতা ছিলেন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সামরিক মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে সেনা বাহিনীর অফিসার হিসাবে কর্মজীবনে প্রবেশ। প্রথম দিকে মাও ও হোজা পন্থী রেড ফ্ল্যাগ কমিউনিস্ট গেরিলাদের দমনে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত থাকেন। প্রথমে লাতিন আমেরিকান লিবারেশন থিওলজি তে আকৃষ্ট হলেও ক্রমে সাইমন বলিভার থেকে চে গেভারা বিভিন্ন বিপ্লবীরা এবং সমাজতন্ত্র তাঁকে প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট করে। সামরিক বাহিনীর মধ্যে থেকেও সমমনোভাবাপন্ন সঙ্গীদের নিয়ে তিনি বিপ্লবী কার্যকলাপ পরিচালনা করেন। প্রথমে গোপন Venezuelan People’s Red Army (ELPV), তারপর গোপন Bolivarian Revolutionary Army (EBR 200) এবং শেষে ১৯৮২ তে গোপন The Revolutionary Bolivarian Movement (MBR 200) সংগঠন গড়ে তোলেন। স্বৈরতন্ত্রী শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৯২ তে দুবার অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ব্যর্থ হয়ে কারাবন্দী হন। দুবছর পর মুক্তি পেয়ে MBR 200 এবং সহযোগী দলগুলিকে নিয়ে গণ আন্দোলন শুরু করেন। পরে ২০০৭ এ United Socialist Party of Venezuela (PSUV) গঠন করেন। ১৯৯৮ এর নির্বাচনে ৫২% ভোট পেয়ে জিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০০, ২০০৬ ও ২০১২ নির্বাচনে এবং ২০০৪ এর রেফারেন্ডামে বিজয়ী হন, যদিও নির্বাচন গুলিতে প্রভাব খাটানোর অনেক অভিযোগ ছিল। ২০০২ থেকে চালু করেন Bolivarian Missions। এর জন্য যেরকম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন আবার শিক্ষা ক্ষেত্রে পাঠক্রম সংস্কার (বলিভারপন্থা ও সমাজতান্ত্রিক বিষয় গুলির অন্তর্ভুক্তি) এবং শিল্প সংস্কার (তেল সহ সমস্ত শিল্পের সম্পূর্ণ জাতীয়করণ, তেল শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ) দেশের মধ্যবিত্ত, ধনী ও অভিজাতদের বিরূপ করে তোলে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সমস্যা মিলে গণ বিক্ষোভের জন্ম নিয়ে ২০০২ তে তাঁকে গদীচ্যুত করলেও অচিরে সেনাবাহিনীর সাহায্যে ক্ষমতায় ফিরে আসেন।
জনগণের গণতন্ত্র, সম্পদের সম বণ্টন, আর্থিক স্বাধীনতা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা চাভেজ ভূমিসংস্কার, সার্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, জনমুখী অর্থনীতি এবং তৃণমূল স্তরের গণতন্ত্রের উদ্যোগ নেন। তেলের রপ্তানি বাড়িয়ে তার থেকে আসা অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র মোচন প্রকল্প গুলিতে ব্যয় করেন (Heavily Subsidized Government Programmes) । জনসাধারণের ব্যাবহারের জন্য পেট্রোলিয়াম, খাদ্যশস্য, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে প্রচুর সরকারি ভর্তুকি দেন। তৃণমূল স্তরে Communal Council গড়ে তোলেন। এরফলে সামাজিক ও শ্রেণী কাঠামোর পরিবর্তন না হলেও এবং রাতারাতি দারিদ্র দুরীকরণ না ঘটলেও ভেনেজুয়েলার ৮২% দরিদ্র এবং ৫৩% অতিদরিদ্র মানুষের কিছুটা সুরাহা হয়। কিন্তু দেশের তেল নির্ভর অর্থনীতির ক্রমাগত মন্দা এবং মার্কিনের নেতৃত্বে পশ্চিমি দুনিয়া, বিদেশী বহুজাতিক তেল কোম্পানি এবং দেশের অভিজাততন্ত্র সৃষ্ট আর্থিক অবরোধ তাঁর প্রকল্পগুলিকে বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে দেয় না। অন্যদিকে ভারত, ইতালি, স্পেন, ভেনেজুয়েলার থেকে অশোধিত তেল (Crude Oil) আমদানি করতে থাকে এবং সেই থেকে চিন হয়ে যায় ভেনেজুয়েলার তেলের প্রধান ক্রেতা। চাভেজও দেশের মধ্যে অভিজাততন্ত্রের সর্বাত্মক বিরোধিতা করেন এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও মার্কিন নয়া উদারতাবাদী বিশ্বায়িত অর্থনীতির সোচ্চার বিরোধিতা করেন। তিনি সমকালীন লাতিন আমেরিকার বাম নেতাদের, কুবার ফিদেল ও রাউল কাস্ত্রো, বলিভিয়ার ইভো মোরালেস, ইকুয়েদর এর রাফেল কোরিয়া, নিকারাগুয়ার দানিয়েল অরতেগা প্রমুখ, নিয়ে মার্কিন বিরোধী Pink Tide Movement শুরু করেন এবং Bolivarian Alliance for the Americans, Union of South American Nations, the Community of Latin American and Caribbean States, the Bank of South, আঞ্চলিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক TeleSUR ইত্যাদি গড়ে তোলেন।
এসবের পরেও দেশের মধ্যে আর্থিক মন্দা এবং তজ্জনিত রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করাটাই চাভেজের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তেল শিল্পে ২০০২ – ’০৩ অব্ধি চলা ধর্মঘট তাঁর সরকারকে প্রবল বিড়াম্বনার মধ্যে ফেলে দেয়। মুদ্রাস্ফীতি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব, কর্মসংস্থান ও আয়ের অভাব, বিক্ষোভ, আন্দোলন, কালোবাজারি, অপরাধ, দুর্নীতি বেড়ে চলে। এগুলি সামলাতে চাভেজ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার, বিরোধীদের দমন করার এবং প্রেসকে স্তব্ধ করার এবং আত্মপ্রচারের রাস্তা নেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, স্বৈরাচারী আচরণ, ব্যাভিচারী কার্যকলাপ, স্বজনপোষণ, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রচার, নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন ইত্যাদি এবং তাঁর সরকারের ক্ষেত্রে অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও দমনের অভিযোগ গুলি আসতে থাকে। ২০১১ তে কুবাতে চিকিৎসা করতে গিয়ে তাঁর পেলভিক ক্যানসার ধরা পরে। চিকিৎসা এবং বারংবার অস্ত্রোপচারের পরেও ২০১৩ তে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী, পার্টি নেতা এবং দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিকোলাস মাদুরো কে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করে যান।
মাদুরো জমানাঃ নিকোলাস মাদুরো (জন্ম ১৯৬২) অরাজকময় কঠিন পরিস্থিতিতে ২০১৩ তে ক্ষমতায় বসেন। দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান একদা বাস চালক মাদুরো ক্ষমতা সংহত করে চাভেজের শুরু করা জনমুখী প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর সময়ে ২০১৪ তে ভেনেজুয়েলায় Universal Health Coverage চালু হয় এবং শ্বেতাঙ্গ চিকিৎসক রা সহযোগিতা না করায় কুবা থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের এনে ২০০২ থেকে চালু হওয়া Mision Barrio Adentro কে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তেল রপ্তানি বাড়িয়ে সেই টাকায় সরকারি প্রকল্পগুলি চালু রাখা হয়। ২০১৩ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাদুরো অল্প ব্যবধানে জিতলেও বিরোধী Democratic Unity Roundtable কারচুপির অভিযোগ আনে। তেল নির্ভর অর্থনীতির মন্দা, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি (Hyperflation), নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব, সংক্রামিত রোগ ও শিশু মৃত্যু বৃদ্ধি, দারিদ্র, অপুষ্টি , পরিবেশ দূষণ, উৎকোচ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, অপরাধ, দাঙ্গা, দেশ জোড়া প্রতিবাদ, বিরোধীদের আন্দোলন মাদুরো সরকারকে বিব্রত করে তোলে। একসময় মানুষকে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহের জন্য কলাম্বিয়ান সীমান্ত খুলে দিতে হয়।
এর উপর ২০১৪ তে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আবার কমে যাওয়ায়, সরকারি তেল কোম্পানির বিদেশে থাকা সম্পদ্গুলি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ায় এবং দেশের সংসদে বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়ায় মাদুরোর বিপদ বাড়ে। তিনিও ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন এবং বিরোধী দের দমন পীড়নের রাস্তায় হাঁটেন। বেশ কিছু বিরোধী নেতা নিখোঁজ হয়ে যান, অনেকে খুন হন, বাকিরা কারাবন্দী। রেজিমেন্টেড স্বৈরশাসন চালু হয় এবং ১৯১৬ তে Economic Emergency জারি করা হয়। প্রেসকে স্তব্ধ করা ছাড়াও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ আসতে থাকে। মার্কিনের নেতৃত্বে পশ্চিমি দুনিয়া ভেনেজুয়েলার মাদুরো সরকারের বিরোধিতায় নেমে পড়ে। দেশের মধ্যে সাংবিধানিক সংকট (Constitutional Crisis) দেখা গেলে মাদুরো বিরোধীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ২০১৮ এর নির্বাচনে তাঁর জয়লাভকে বিরোধীরা ব্যাপক কারচুপি অভিহিত করে। ২০১৭ তে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ভেনেজুয়েলার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা (Economic Sanctions) আরোপ করেন যাকে বহু দেশ অনুসরণ করে। ঐ বছরেই ভেনেজুয়েলাকে Default Country ঘোষণা করা হয়। ২০১৯ থেকে ট্রাম্প মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক – সন্ত্রাসের (Narco – Terrorism) অভিযোগ এনে ভেনেজুয়েলাকে আর্থিক অবরোধ (Economic Embargo) চাপিয়ে ঘিরে ফেলেন। অরাজক পরিস্থিতিতে এবং অর্থনীতি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ায় ৮০ লক্ষ ভেনেজুয়েলার নাগরিক বিদেশে পালিয়ে যান (Venezuelan Refugee Crisis)। ২০২৪ এ মাদুরো বিরোধী আন্দোলন জোরদার হলে তিনি বিরোধীদের উপর দমন পীড়ন বাড়িয়ে দেন, তাঁদের অনেককে নির্বাচনে অংশ নিতে দেন না এবং ২০২৪ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে একতরফা জয়লাভ করেন। ইতিমধ্যে মাদুরোর দ্বিতীয় ও বর্তমান স্ত্রী, মাদুরো যার দ্বিতীয় ও বর্তমান স্বামী, সিলিয়া ফ্লরেসের, যিনি একসময় চাভেজের আইনজীবী ছিলেন, দুই ভ্রাতুষ্পুত্র প্রচুর কোকেন সহ হাইতি তে ধরা পড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাদুরো সরকারকে চাপে রাখতে আরও সুবিধা হয়।
এত কিছুর পরেও মাদুরোর বৈশিষ্ট্য তিনি জনগণের একাংশের ও সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে রয়েছেন এবং প্রবল শক্তিধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। রাশিয়া ও চিনের সাহায্য নিয়ে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলেছেন। প্রাচীনকাল থেকে সমৃদ্ধিশীল এবং তেল আবিষ্কারের পর ধনী হয়ে ওঠা ভেনেজুয়েলায় এখন কান্না, আর্তি, অভাব, অরাজকতা এবং গৃহযুদ্ধের পরিবেশ। জনগণের যখন চরম দুর্গতি তখন একদিকে রাশিয়া আর চিনের সমর্থন নিয়ে মাদুরোর PSUV, Fatherland of All Party (PPT), MRT, Podemos, UPV প্রভৃতি দলকে নিয়ে গড়ে তুলেছে Great Patriotic Pole (GPP)। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমি দেশগুলির সমর্থন নিয়ে বিরোধীদের জোট Mesa de la United Democratic, যেখানে রয়েছেন A New Era (UNT), Project Venezuela, Justice First, Movement of Socialism (MAS) প্রভৃতি দল। পারস্পরিক যুযুধমান দুই পক্ষ। উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে মাদুরো সরকারকে ফেলতে এবং মাদুরোকে গ্রেফতার করতে ট্রাম্প বৃহত্তম USS Gerald Ford মার্কিন রণতরী সহ যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছেন ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি। ক্যারিবিয়ান সাগরে টর্পেডো ও ড্রোন দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন কলাম্বিয়ার মৎস্যজীবীদের কয়েকটি বোট।
মাচাদো সংবাদঃ কট্টর দক্ষিনপন্থী, ট্রাম্প ও নেতানেয়াহু র একনিষ্ট সমর্থক, প্রাক্তন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ই্নজিনিয়ার, বিরোধী নেত্রী মারিয়া কারিনো মাচাদো (জন্ম; ১৯৬৭) – র বৈশিষ্ট্য তিনি ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে চাভেজ ও মাদুরোর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন এবং প্রবল পীড়ন, গ্রেফতারি ও অন্য ঝুঁকির মধ্যেও দেশের মধ্যে আত্মগোপন করে আন্দোলন পরিচালনা করছেন। প্রাক্তন এই সাংসদ সদস্যকে মাদুরো সরকার ২০২৪ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে দেয়নি। তাঁর প্রধান লক্ষ্য মাদুরো সরকারের অবসান। তিনি তেল শিল্পে বেসরকারিকরণের পক্ষে। তিনি প্রথমে Sumante, তারপর Democratic Unity Roundtable, বর্তমানে Vente Venezuela দলের এবং Unity Platform এর নেত্রী। ২০২৪ এ ভ্যাকলভ হাভেল হিউম্যান রাইটস পুরস্কার ও শাখারভ পুরস্কার এবং ২০২৫ এ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হন।
৩০.১০.’২৫












