১৬ই এপ্রিল আর জি কর হাসপাতালে পি বি জে অডিটোরিয়াম এ ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট এর চতুর্থ গণ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হল।
৯ অগাস্ট আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষার্থী চিকিৎসকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দিন থেকে কলকাতা বা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলন শুরু হয় সেই আন্দোলন শুরু করেন এক দল তরুন তুর্কি। যখন মরা বিকেলে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে নিভন্ত সূর্য, চারপাশে ভারি হয়ে আসছে বাতাস, সহমর্মিতা সংহতি নৈতিকতা এই প্রিয় শব্দ গুলো ক্রমশ অচেনা হয়ে গিয়ে অধিকতর পরিচিত হয়ে উঠেছে ঈর্ষা আত্মকেন্দ্রিকতা দুর্নীতি আর সন্ত্রাস, সেই ক্রান্তি লগ্নে প্রমিথিউসের কাজ করেন এই জুনিয়র ডাক্তার রা-অনির্বাণ আলোর মশাল নিয়ে শুরু হয় নতুন পথ চলা। জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে অগ্রণী যোদ্ধার মত সিনিয়র চিকিৎসকরা ছিলেন প্রথম দিন থেকেই। প্রায় আট মাস ব্যাপী এই আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে নাগরিক সমাজের মধ্যেও।
দ্রোহের গৌরব যাত্রায় স্বাস্থ্য ভবনের অবস্থান তুলে নিয়ে প্রথম গণ কনভেনশন হয় ২৭ সেপ্টেম্বর SSKM হাসপাতালের অডিটোরিয়াম এ। ২ অক্টোবর মহালয়ার দিন স্কোয়ার থেকে মহামিছিলের শেষে ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত কনভেনশন, ধর্মতলায় অনশন অবস্থান সমাপ্ত করে ২৬ অক্টোবর R G Kar এ কনভেনশনের পর ১৬ এপ্রিল আর জি কর হাসপাতালেই চতুর্থ গণ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হল। জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকদের উপর সরকারি আক্রমণ, শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য, উদ্বেগজনক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি – এই সামাজিক সঙ্কটের পরিস্থিতি তে WBJDF এর এই কনভেনশন খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কনভেনশন শুরু করেন অভয়ার মা বাবা। মঞ্চে সন্তানহারা মা বাবার উপস্থিতি, মঞ্চের পিছনে জায়ান্ট স্ক্রিনে তাঁদের চোখে জ্বলে ওঠা আগুন দ্রোহের শপথকে দৃঢ় করে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আমন্ত্রিত প্রধান বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, মিরাতুন নাহার, জহর সরকার, সুমন চট্টোপাধ্যায়, শামিম আমেদ এবং ইন্দ্রাণী দত্ত। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস এর তরফ থেকে বলেন ডঃ হীরালাল কোনার এবং অভয়া মঞ্চের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ডঃ তমোনাশ চৌধুরী। WBJDF এর পক্ষ থেকে বলেন ডঃ দেবাশিস হালদার, ডঃ অনিকেত মাহাতো , ডঃ আস্ফাকুল্লা নাইয়া এবং ডঃ অর্ণব মুখোপাধ্যায়।
বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, মিরাতুন নাহার এবং অন্য সব বক্তারাই এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণ বর্জিত অভূতপূর্ব আন্দোলন বলে স্বীকার করে নেন। বোলান গঙ্গোপাধ্যায় আন্দোলনের প্রাথমিক পর্বের সাফল্য যেন দিকভ্রান্ত না করে সেই বিষয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেন। মিরাতুন নাহার সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের দুর্নীতিকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আক্রমণ করেন। প্রাক্তন আমলা এবং সাংসদের বক্তব্যের মূল বিষয়ও ছিল নিয়ন্ত্রণহীন প্রশাসনিক দুর্নীতি, যার ফলে পচন ধরে গেছে সমাজের সর্ব স্তরে। অ্যাডভোকেট শামিম আহমেদ আদালতের লড়াই-এর বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রয়াত পঙ্কজ দত্তের স্ত্রী ইন্দ্রাণী দত্ত WBJDF-কে ধন্যবাদ জানান এই কনভেনশনে তাঁকে আমন্ত্রণ করার জন্য। তিনি বলেন শুধু পঙ্কজ দত্তের প্রতি প্রশাসনের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে নয়, অভয়ার বিচার, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে আছেন। সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায় এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান। ডঃ দেবাশিস হালদার, ডঃ অনিকেত মাহাতো , ডঃ আস্ফাকুল্লা নাইয়া এই অদলীয় আন্দোলনের চরিত্র যে রাজনৈতিক তা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন।
ডঃ অর্ণব মুখোপাধ্যায় আট মাস আগে সূচনা পর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত WBJDF আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে স্লাইড শো-র মাধ্যমে দেখান। এর পর কি ভাবে প্রাথমিক পর্বে WBJDF এর ফান্ড গড়ে ওঠে ব্যাখ্যা করেন এবং আন্দোলনের কাজে সঞ্চয় ও খরচের একটি সুচারু হিসাব পেশ করেন। WBJDF-এর আর্থিক অস্বচ্ছ্বতা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারের উপযুক্ত জবাব হয় এই অডিট রিপোর্ট। WBJDF ফান্ডে উদ্বৃত্ত অর্থ ভবিষ্যতে অভয়া আন্দোলন, শিক্ষক আন্দোলন এবং দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্পের জন্য খরচ করা হবে বলে জানান ডঃ অর্ণব মুখোপাধ্যায়।
অনুষ্ঠানের শেষে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট এর ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
যে আগুন নিয়ে চিকিৎসকরা শুরু করেছিলেন এই আন্দোলন সেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে নাগরিক সমাজে। এই শিখাকে প্রজ্জ্বলিত রাখার জন্য নগরের সীমা অতিক্রম করে গ্রামে গঞ্জে মফস্বলে ছড়িয়ে দিতে হবে দ্রোহের বহ্নি। WBJDF-এর পরবর্তী গণ কনভেনশন দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ এবং আন্দোলনকে বিস্তারের দিশা দেখাবে এই আশা রইল।