যে কাঠবিড়ালি সেতুবন্ধ করতে পারেনি
“প্রকৃতির এই মহান বিস্ময় এখন যেমন আছে তেমনই থাকুক। আপনি এর উন্নতি করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি যা করতে পারেন তা আপনার বাচ্চাদের, আপনার বাচ্চাদের বাচ্চাদের এবং যারা আপনার পরে আসে তাদের জন্য এটি এমনভাবেই রাখতে পারেন, এ এক মহান দৃশ্য যা প্রত্যেক আমেরিকানের দেখা উচিত।” ১৯০৮ সালে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট।
আমেরিকার আদি অধিবাসীরা আজ থেকে তিন হাজার বছরেরও বেশি আগে এই অঞ্চলে থেকেছে। ১৫৪০ সালে এখানে স্প্যানিশরা প্রথম আসে। এখন এই ক্যানিয়ন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ।
(চিত্র ১, চিত্রঋণ Britannica)
(চিত্র ২ চিত্রঋণ Googlemap)
সুনির্দিষ্ট ভূতাত্ত্বিক ঘটনার ফলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হয়েছে। প্রায় দুশ’ কোটি বছর আগে পৃথিবীর ভূত্বকের দুটি প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, আগ্নেয়গিরির দ্বীপগুলির সারি একসাথে ভেঙে মিশে যায়, ও চরম তাপ এবং চাপের ফলে কঠিন পাথর তৈরি হয়। আজ সেই পাথরগুলি আজ গিরিখাতের নীচে দেখা কালো ‘বেসমেন্ট’। তার মধ্যে আছে ক্যানিয়নের সবচেয়ে প্রাচীন, ১৮৪ কোটি বছরের পুরনো Elves Chasm gneiss নামক পাথর। এই পুরানো পাথরের উপরে পলল শিলার স্তর জমে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের প্রতিটি অঞ্চল সেখানকার ইতিহাসের একটি অনন্য অংশের কাহিনী আমাদের শোনায়।
তারপর, ৭ কোটি থেকে ৩ কোটি বছর আগে, প্লেট টেকটোনিকস-এর ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চলকে উত্তোলিত হয়ে যায়। এভাবে তৈরি হল উঁচু এবং তুলনামূলকভাবে সমতল আজকের কলোরাডো মালভূমি।
অবশেষে, মাত্র ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ বছর আগে থেকে, কলোরাডো নদী তার মালভূমির মধ্যে নিজের পথ কেটে নামতে শুরু করে। এই নদী ও তার উপনদী মাটি ক্ষয় করে ক্যানিয়নের বিস্তৃতি ঘটায়। আজও প্রকৃতির এই শক্তিগুলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে ধীরে ধীরে গভীর ও প্রশস্ত করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের প্রায় দুশ’ কোটি বছর কলোরাডো নদী এবং এর উপনদীগুলি উন্মোচিত করেছে।
(চিত্র ৩, চিত্রঋণ Wikipedia)
গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন গিরিসংকট গঠনের সময়ে কাঠবিড়ালি এবং অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ক্যানিয়নের দুপাশে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আজ দুটি পৃথক কাঠবিড়ালি প্রজাতি গিরিখাতের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে বাস করে। অন্যদিকে, পাখি এবং অন্যান্য প্রজাতি সহজেই এই বাধা অতিক্রম করতে পারে, তারা একই প্রজাতি রয়ে গেছে।ক্যানিয়নের দুই পাশে দুই দল কাঠবিড়ালিদের মধ্যে প্রজনন সম্ভব নয়, তাদের জিন বিনিময় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু দু’পাশের পাখিদের মধ্যে প্রজনন বন্ধ হয়নি।
কাঠবিড়ালিদের দুটি দল যখন আলাদা হয়ে যায়, দুই দলে ‘বাই চান্স’ কিছু জিনগত ও বৈশিষ্ট্যগত ফারাক হয়ে যায়। হয়তো একদিকে কাঠবিড়ালিদের লেজের লোম ঘন, অন্যদিকের কাঠবিড়ালিদের লেজের লোম গড়পড়তায় কম। এ হল শুরুর পার্থক্য। বহুদিন আলাদা হয়ে থাকার ফলে এদের নানা বৈশিষ্ট্য পৃথক হয়ে যায়। তার প্রথম কারণ হল অভিযোজন। দুই দিকে পরিবেশ আলাদা, আর দু-রকম পরিবেশে দু-রকম অভিযোজন হয়।
অভিযোজন ছাড়া ‘জেনেটিক ড্রিফট’-এর জন্য দুই দলের জিন ও বৈশিষ্ট্য বদলে যায়। কিছু জিনগত প্রকরণ জীবের বাঁচা বা বংশবৃদ্ধিতে সুবিধা বা অসুবিধা কোনোটাই করে না। তবুও ‘বাই চান্স’, ঘটনাচক্রে, এক প্রজাতিতে কোনও জিনের একটি বিশেষ ধরন বেশি হয়ে যেতে পারে। ধরা যাক কাঠবিড়ালিদের ডোরার রং ধূসর আর বাদামি হতে পারে। কোনও ভাইরাস-জনিত মহামারিতে মাত্র পাঁচ জোড়া কাঠবিড়ালি বেঁচে রইল। ঘটনাচক্রে তাদের চার জোড়ার লেজ ধূসর। ভাইরাস কাঠবিড়ালির রঙ দেখে আক্রমণ করেনি, কিন্তু কাঠবিড়ালি গোষ্ঠিতে বাদামি লেজের জিন কমে গেল, এমনকি তা বিলুপ্তও হতে পারে। একে বলে এলোমেলো বা লক্ষ্যহীন প্রবণতা বা ‘র্যা ণ্ডম ড্রিফট’। র্যা ণ্ডম ড্রিফট বিচ্ছিন্ন প্রাণীগোষ্ঠীতে ভিন্নভাবে হয়। যতদিন কাঠবিড়ালিরা ক্যানিয়ন দিয়ে পৃথক হয়নি, ততদিন তাদের ড্রিফট একই সঙ্গে হত। কিন্তু ক্যানিয়ন সৃষ্টির ফলে দুই গোষ্ঠীতে ড্রিফট পৃথকভাবে হতে শুরু করল।
এখন গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কে তিন ধরনের কাঠবিড়ালি আছে। দক্ষিণ রিমের এবার্ট কাঠবিড়ালি (চিত্র ৪, চিত্রঋণ Wikipedia), উত্তর দিকে কাইবাব কাঠবিড়ালি (চিত্র ৫, চিত্রঋণ Whalebite), এবং গোল্ডেন ম্যান্টলড গ্রাউণ্ড কাঠবিড়ালি (চিত্র ৬, চিত্রঋণ Wikipedia)।
রামচন্দ্রের সেতুবন্ধন-সংকটে কাঠবিড়ালি সাহায্য করেছিল (দোহাই, তথ্যসূত্র চাইবেন না!), কিন্তু গিরিসংকটের দুদিকে সেতুবন্ধনে তাকে কেউ সাহায্য করেনি।
তথ্যসূত্র
১) https://www.nps.gov/grca/learn/nature/grca-geology.htm
২) https://knowablemagazine.org/article/physical-world/2019/deeper-understanding-grand-canyon
৩) https://grandcanyontourguide.com/grand-canyon/wildlife-grand-canyon/