২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে কলকাতা শহরের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে রোগীমৃত্যু ঘিরে গোটা যায় ভয়ংকর হামলা, আক্রমণ, ভাঙচুর। আহত হন বেশ কিছু চিকিৎসাকর্মী। শুরু হয় বিপুল বিতর্ক। রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসক ২২ ফেব্রুয়ারি সব বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে এক অভূতপূর্ব মিটিং করেন, যা সরাসরি সম্প্রসারিত হয় প্রতিটি স্থানীয় দৃশ্য-শ্রাব্য সংবাদ মাধ্যমে।
তাৎক্ষণিক ভাবেই প্রস্তাবিত হয় রাজ্যের চিকিৎসা সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রক একটি নয়া কমিশন।
এর ঠিক আটচল্লিশ ঘন্টার মাথায় আর একটি বেসরকারি হাসপাতাল জড়িয়ে পড়ে আর একটি রোগীমৃত্যু পরবর্তী দুর্ভাগ্যজনক বিতর্কে যার ফলে পদত্যাগ করেন হাসপাতালের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্ত্রী।
অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে, এর মাত্র সাতদিন পরে, ৩ মার্চ রাজ্যবিধানসভায় প্রস্তাবিত এবং গৃহীত হয় চিকিৎসা সংক্রান্ত এক নতুন প্রাদেশিক আইন (অথবা, পুরোনো আইনের এই নব সংস্করণ)– যার পুরো নাম West Bengal Clinical Establishments (Registration, Regulation and Transparency) Bill, 2017
এর পর থেকেই রাজ্য জুড়ে সৃষ্টি হয় এক অস্বস্তিকর, অনাকাঙ্খিত এবং ভয়ংকর পরিস্থিতি। একের পর এক চিকিৎসা সংস্থা, চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীদের ওপর নেমে আসতে থাকে আক্রমণ। তার কিছু স্বতঃস্ফূর্ত হলেও, বেশির ভাগটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নতুন আইন করা হয়েছিল, শুধুমাত্র বেসরকারি হাসপাতালের কথা ভেবে, কিন্তু আইন বলবৎ হবার পাঁচ বছর পর দেখা যাচ্ছে, সিংহভাগ আক্রমণের অভিমুখ হয়েছেন, হচ্ছেন, সরকারি ডাক্তাররাই।
দাবি সামান্যই, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার, রোগী-চিকিৎসকের সুসম্পর্কের আর সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা। নেমে আসতে থাকলো একের পর এক আক্রমণ।
আদালতের দ্বারস্থ হলেন চিকিৎসকরা, সুবিচারের আশায়।
সংগঠিত হতে থাকলো, মিটিং, কনভেনশন। এলো চিকিৎসক নিরাপত্তার জন্য এস ও এস app, কোথাও বা চিকিৎসক সমাজ আত্মরক্ষার জন্য নিজেদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে চাইলেন মার্শাল আর্টে।
ঘনীভূত হলো অন্ধকার। চিকিৎসক সমাজের কাছে এ এক ভয়ঙ্কর সময়। দুঃসহ, নিরাশ্রয়, বিপন্ন, অসহায়।
এই যুগ তথ্য-প্রযুক্তির, আরো নির্দিষ্ট করে বললে, সোশ্যাল মিডিয়ার। এই অভূতপূর্ব মন্থনকালের প্রভাব আছড়ে পড়লো সেই ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও।
ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জন্ম নিলো চিকিৎসকদের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক নতুন সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (WBDF)।
জোট বাঁধলেন চিকিৎসক সমাজ।
দিনটা ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ।